• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: মাহমুদুল্লাহ পর্ব।

পোস্টটি ৬০৩৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডবদের একজন তিনি। নিরবে নিভৃতে নিজের কার্য সমাধা করেন বলে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে "সাইলন্ট কিলার" নামে পরিচিত। তাকে নিয়ে আলোচনা বেশি হয় না, খবরের শিরোনামেও খুব একটা দেখা যায় না মাহমুদুল্লাহ কে অথচ তিনি তার কাজ ঠিকই করে যাচ্ছেন নিরবে নিভৃতে। এই জন্যই তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের "নিরব ঘাতক" নামে পরিচিত ভক্তদের কাছে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাহমুদুল্লাহর পথচলার এক যুগ হতে চললো। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এখন তিনি দলের অন্যতম ভরসার পাত্র। সাকিব তামিমদের সমসাময়িক সময়েই আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। এরপরের পথচলা ছিল বন্ধুর। তবে গত ৭-৮ বছর ধরেই বাংলাদেশ দলের নিয়মিত সদস্য অসংখ্য ম্যাচ জয়ের নায়ক, ময়মনসিংহের এই সূর্য সন্তান।

২৫ জুলাই ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ওডিয়াইতে অভিষেক হয় "দ্য সাইলেন্ট কিলার" খ্যাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। এরপর থেকে অবিরত খেলে যাচ্ছেন দেশের হয়ে ৩৩ বছর বয়স্ক এই ক্রিকেটার। ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়েই লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলেছেন রিয়াদ। মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের শেষ ঠিকানা ছিলেন তিনি। তবে গত কয়েক বছরে মিডল অর্ডারে খেলছেন মাহমুদুল্লাহ। এখনো অবধি ১৭৫ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে রিয়াদ। ১৫১ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৪.১৫ গড়ে করেছে ৩৭৫৭ রান। বেস্ট ১২৮*। স্ট্রাইক রেট ৭৮.০৪। ওডিয়াই ক্যারিয়ারে এখনো পর্যন্ত ৩টি শতক ও ২০ টি অর্ধশতক করেছে মাহমদুল্লাহ। ওডিয়াইতে রিয়াদের ছক্কা রয়েছে ৫১টি। তামিম, সাকিব ও মুশির পর বাংলাদেশের হয়ে ওডিয়াইতে ৪র্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বল হাতেও দলে দারুণ অবদান রাখতেন মাহমুদুল্লাহ। জেনুইন অলরাউন্ডার হিসেবে খেললেও সাম্প্রতিক সময়ে বোলার মাহমুদুল্লাহর দেখা মিলে কালেভদ্রে। তবে ডান হাতে অফ স্পিন টাও যে তিনি ভাল করেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৭৫ ম্যাচের ১৩২ ইনিংসে বল করে ৭৬ উইকেট শিকার করেন তিনি। বেস্ট ৪ রানে ৩ উইকেট। ইকনোমি ৫.১৭। বর্তমান বাংলাদেশ দলে উইকেট শিকাররের দিক থেকে সাকিবের পর তারই অবস্থান। দলের প্রয়োজনে যে কোনো সময়ে বল করার সক্ষমতা রাখেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দিতে তার জুড়ি মেলা ভার। অথচ তিনি এখন শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বোলার মাহমুদুল্লাহ কে হারিয়েই ফেলছি আমরা।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার ব্যাটিং গড় সবচেয়ে বেশি। তার আশে পাশেও নেই অন্য কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান  ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের  শতক ছিল না। ২০১৫ বিশ্বকাপে সেই অপূর্ণতা দূর করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১ম বাংলাদেশি ও এখনো পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশি  ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাও আবার পর পর দুই ম্যাচে দুই শতক! মাহমুদুল্লাহর ওডিয়াই তিনটি শতকের ৩টিই আইসিসি ইভেন্টে। দুটো বিশ্বকাপে আর অন্যটি ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। নিউজিল্যান্ড এর সাথে সে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব আল হাসানও।

মাহমুদুল্লাহ বিশ্বকাপ অভিষেক ২০১১ সালে। ২০১১ ও ২০১৫, দুই বিশ্বকাপে মোট ১০টি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। তাতে সর্বাধিক ৫৬.৭১ গড়ে ৩৯৭ রান করে সে। রানে সাকিব মুশফিক ও তামিমের পরে তার অবস্থান হলেও ব্যাটিং গড়ে তার ধারেকাছেই নেই কেউ। সর্বোচ্চ ১২৮*, যা নিউজিল্যান্ড এর সাথে করেছিল। সেঞ্চুরি দুইটি হাফ সেঞ্চুরি ১টি। বল হাতেও ৪ উইকেট রয়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে।

২০১১ ও ২০১৫ দুই বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ড কে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর ইংল্যান্ড কে হারানো দুই ম্যাচেই নেপথ্য নায়ক ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু বাংলাদেশের পারফর্মেন্স ছিল হতাশাজনক। উইন্ডিজের সাথে মাত্র ৫৮ রানে অল আউট হওয়ার মতো লজ্জাজনক পরিস্থিতির সামনাসামনি হতে হয়েছে টাইগারদের। চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের সাথেও বাংলাদেশের পারফর্মেন্স খারাপ দিকেই এগোতে থাকে। ৮ উইকেট হারানোর পর চট্টলার দর্শকরা স্টেডিয়াম ছেড়ে যেতে থাকে। উইকেটে তখন ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর ১০ নাম্বারে ব্যাট করতে নামেন পেসার শফিউল ইসলাম সুহাস।  শফিউল কে নিয়ে সেই ম্যাচে ঐতিহাসিক বিজয় এনে দেন মাহমুদুল্লাহ। শফিউল ও রিয়াদ, দুজনেই ২৪ রান করে অপরাজিত ছিল সে ম্যাচে।

২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেটে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের জন্য জীবন মরণ ম্যাচ। হারলে বাংলাদেশের বিদায় বিশ্বকাপ থেকে, আর জিতলে ইতিহাস।  প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার সুযোগ। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচের মহানায়ক ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। ১০৩ রানের অসামান্য এক  ইনিংস খেলে ম্যাচের মহানায়ক বনে যান তিনি। অবশ্য সেই ম্যাচের ১ম অংশের পাট করেছিলেন রিয়াদ। আর সমাপ্তি পাট করেছিলেন পেসার রুবেল হোসেন। তার জাদুকরী দুই ডেলিভারি আজও মানুষের চোখে ভাসে। তার অসাধারণ দুই ডেলিভারি তে ইংল্যান্ড কে বিদায় করে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড বধ মানেই মাহমুদুল্লাহ, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না আশা করছি।

বাংলাদেশ দলে ফিনিশার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই শ্রেষ্ঠ। এখনো পর্যন্ত দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড মাহমুদুল্লাহরই। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে আছেন মাহমুদুল্লাহ। তার শেষ তিন আন্তর্জাতিক ওডিয়াই ম্যাচের সবগুলোতেই তিনি অপরাজিত ছিলেন। সর্বশেষ তিন ইনিংসে তার রান ছিল যথাক্রমে ৩০*, ৩৫* ও ১৯*। বিশ্বকাপের আসরেও মাহমুদুল্লাহ তার সাম্প্রতিক ফর্ম বজায় রাখবেন এটাই আশাবাদ তার কাছে।

বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম ভদ্র মার্জিত ও ধর্মভীরু মাহমুদুল্লাহ বিশ্বকাপেও তার সাইলেন্ট মুড বজায় রাখবেন এটাই চাওয়া তার কাছে। নিরবে নিজের কার্য সমাধা করে দলের জয় নিশ্চিত করতে অবদান রাখবেন সেটাই প্রত্যাশা।  তবে বিশ্ব আসরে ৩য় বারের মতো খেলতে যাওয়া মাহমুদুল্লাহর কাছে অসংখ্য ভক্তদের চাওয়া, শুধুই ব্যাটসম্যান না, বরং অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহর অলরাউন্ডিং পারফর্মেন্স দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণে সারথি হওয়া। শুভ কামনা মাহমুদুল্লাহ।  শুভ কামনা বাংলাদেশের জন্য।