• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: "ফ্যান্টাসটিক ফাইভ" পর্ব।

পোস্টটি ২৭২৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ অন্যতম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দল। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার মূল শক্তি দেশের ক্রিকেটের "পঞ্চপাণ্ডব" খ্যাত পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার। যারা প্রত্যেকেই প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন। 

কাপ্তান মাশরাফি বিন মুর্তজা, সহ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম, ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল খান ও সাইলেন্ট কিলার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফ্যান্টাসটিক ফাইভ বা পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস লিখতে গেলে এর বৃহৎ অংশ জুড়েই তাদের নিয়ে লিখতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যা কিছু অর্জন তার প্রায় পুরোটাই এনাদের হাত ধরেই এসেছে। দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় বা শ্রেষ্ঠ যত জয় আছে, তাতে তাদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। ঐতিহাসিক বিজয় গুলোতে সম্মিলিত ভাবে কিংবা ইন্ডিভিজুয়ালি পঞ্চপাণ্ডবরা অবদান রেখেছে।

পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে কেবল মাশরাফিই একটু সিনিয়র, তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা ২০০১ সালে। বাকী চার জনেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা প্রায় সমসাময়িক সময়ে। বিভিন্ন দেশের লিজেন্ডারি ক্রিকেটারদের একটা যুগ থাকে, যাদের ঘিরে ঐ দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যায়। যেমন ভারতের ক্রিকেটের স্বর্ণযুগে তাদের ফেভুলাস ভাইভের রাজত্ব ছিল। সৌরভ গাঙুলি, ভিভিএস লক্ষণ, রাহুল দ্রাভীর, শচীন টেন্ডুলকার ও অনিল কম্বলে ছিলেন তাদের ক্রিকেটেত স্বর্ণালি যুগের অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাচ ক্রিকেটার, তাদেরকেই বলা হতো ভারতের ফেভুলাস ফাইভ। যাদের মাধ্যমে অসংখ্য ম্যাচ জিতেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। তারা পুরো একটা যুগ ভারতের ক্রিকেট কে নেতৃত্ব দিয়েছে, ক্রিকেট বিশ্ব কে করেছে শাসন। ঠিক তেমনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফ্যান্টাসটিক ফাইভ বলা হয় সাকিব, তামিম, মুশি, ম্যাশ ও মাহমুদুল্লাহ কে। অসংখ্য ম্যাচ জয়ের নায়ক এই পঞ্চপাণ্ডব।

কোনো ম্যাচে এই পঞ্চপাণ্ডব একসাথে জ্বলে উঠলে সেই ম্যাচে বাংলাদেশের জয় সুনিশ্চিত। বাংলাদেশ ক্রিকেটের দলীয় বা ব্যক্তিগত, সব অর্জনেই ফেভুলাস ফাইভের কর্তৃত্ব বিদ্যমান। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে, সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে, উইকেট কিপারে, ফিল্ডিংয়ে, সব খানেই পঞ্চপাণ্ডব। সকল অর্জন তারা নিজেদের মধ্যেই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের মোস্ট সিনিয়র এই পাচ ক্রিকেটার আবার খুব ভাল বন্ধুও বটে। নিজেদের মধ্যে তাদের বুঝাপড়াও দারুণ।

সাকিব, তামিম, মুশি, মাহমুদুল্লাহ ও ম্যাশের আন্তর্জাতিক ওডিয়াইতে সম্মিলিত ম্যাচের সংখ্যা ৯৮০টি। ৯১০ ইনিংসে ব্যাট করে তাদের সম্মিলিত রান হচ্ছে ২৩ হাজার ৪শত ২০ রান। পঞ্চপাণ্ডবের সম্মিলিত অর্ধশতক ১৪০টি। শতক ২৭টি। পঞ্চপাণ্ডবদের মধ্যে তামিম মুশফিক ছাড়া বাকিরা বল হাতেও অবদান রাখেন। তাদের ওডিয়াইতে সম্মিলিত উইকেট সংখ্যা হল ৫৯০টি। তাদের গড় বয়স হচ্ছে ৩২.৪ বছর। মোস্ট সিনিয়র পারসন কাপ্তান ম্যাশ, আর পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে বাকিদের তুলনায় বয়সে তরুণ, তামিম ইকবাল খান। ফ্যান্টাসটিক ফাইভের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গড় ক্যারিয়ারের বছর হচ্ছে ১৩.১৬ বছর করে। এরমধ্যে ম্যাশের ক্যারিয়ার সবার আগে শুরু হয়েছে। তুলনামূলক ভাবে পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যারিয়ার শুরু করেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

ব্যক্তিগত অর্জনে পঞ্চপাণ্ডবের পাচজনই দেশের যেমন সেরা, ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক ভাবেও তারা বিশ্ব ক্রিকেটে বিভিন্ন বিভাগে সেরাদের কাতারে রয়েছে। 

কাপ্তান ম্যাশ, দেশের ইতিহাসে সেরা ক্যাপ্টেন। তার নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। এছাড়া ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও প্রথম বারের মতো সেমি ফাইনাল খেলে তারই অনন্যসাধারণ নেতৃত্ব গুণে। ক্যাপ্টেনসিতে  বর্তমান বিশ্বের সেরাদের মধ্যে তার অবস্থান। তার নেতৃত্বেই গত ৩ আসরে দুইবার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ।  দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও বাংলাদেশ কে সর্বাধিক ম্যাচ জিতানো অধিনায়ক ম্যাশ, ব্যক্তিগত অর্জনেও সেরা। তিনি বাংলাদেশের হয়ে ওডিয়াইতে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।  তার অসংখ্য ম্যাচ জয়ী বোলিং ফিগার রয়েছে।

সাকিব আল হাসান, বর্তমানে ওডিয়াইতে ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান অল রাউন্ডার। তার সম্পর্কে এক কথায় বলা যায়, তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। বিশ্ব বাংলাদেশ ক্রিকেট কে প্রথম চিনেছে সাকিবের মাধ্যমেই। তার নামের পাশে রয়েছে অসংখ্য অর্জন ও খ্যাতি।

তামিম ইকবাল খান। বাংলাদেশের হয়ে সব ফরমেটে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক তিনি। সর্বাধিক সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানও তিনি। বর্তমানে ওডিয়াইতে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ওপেনারও তামিম ইকবাল খান।

মুশফিকুর রহিম, বাংলাদেশ ক্রিকেটের মোস্ট ডিপেন্ডেবল ব্যাটসম্যান বলা হয় তাকে। তার ব্যাটিং টেকনিক অনন্যসাধারণ।  টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশি ওডিয়াইতে বাংলাদেশের সেরা উইকেটরক্ষক। বর্তমানে ভারতের মাহেন্দ্র সিং ধোনীর পর বিশ্বের সেরা উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমই।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, দেশের হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি হাকানো ব্যাটসম্যান তিনি। বিশ্বকাপে পর পর দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি করা একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানও সে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সেরা ফিনিশারও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দেশের হয়ে সর্বাধিক ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি তার দখলে।

 

ব্যক্তিগত অর্জনে কিংবা দলীয় অর্জনে তারাই বাংলাদেশ ক্রিকেট, তাদের ঘিরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট, একথা বলাই যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই পঞ্চপাণ্ডব। তাদের একসাথে ১০০ ম্যাচ খেলার গৌরব, একসাথে ৫০টি ম্যাচে জয় লাভ করার অনন্য কীর্তি ছাড়াও তাদের কতশত কীর্তিগাথা রয়েছে যা বলে শেষ করা দায় । তাদের কীর্তি লিখে উপন্যাস রচনা করা যাবে।

বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের সব অর্জনে তারাই অগ্রগামী। তাদের ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট কল্পনা করাই অসম্ভব। মাহমুদুল্লাহ ছাড়া বাকিরা নিজেদের ৪র্থ বিশ্বকাপ খেলবে এবারের আসরে। রিয়াদ তার তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলবে এই বিশ্বকাপে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভাল করার স্বপ্ন দেখছে পঞ্চপাণ্ডবদের কাধে ভর করেই। তাদের ঘিরেই আমাদের যত স্বপ্ন।

বাংলাদেশের অগণিত ক্রিকেট প্রেমীর বিশ্বাস, ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের আধিপত্য করা যাদের মাধ্যম্যে, তাদের হাতে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটি দেখা। হাজারো ক্রিকেট প্রেমীর বিশ্বাস, বাংলাদেশ বিশ্বকাপেত সোনালি ট্রফি ছোঁয়ার জন্যই বিশ্বকাপ খেলতে গেছে। আর আমাদের বিশ্বাস ভরসায় রূপান্তর হওয়ার মূল কারণ আমাদের আছে অভিজ্ঞতায় টয়টুম্বুর ফ্যান্টাসটিক ফাইভ। বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বে আমাদের পঞ্চপাণ্ডবদের তুলনায় অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা খেলোয়াড় খুবই নগণ্যই বলা চলে। আর একই দেশের এতজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়তো কোনো দেশেরই নেই।

পঞ্চপাণ্ডব আমাদের দেশের জাতীয় সম্পদ। আমাদের স্বপ্ন দেখার প্রেরণা। বিশ্বকাপে পঞ্চপাণ্ডবদের অভিজ্ঞতা আর তরুণদের পারফর্মেন্সে স্বপ্নের ট্রফি আমদেরই হবে, এটাই প্রত্যাশ আমাদের।

শুভ কামনা বাংলাদেশের জন্য। শুভ কামনা পঞ্চপাণ্ডবদের জন্য। তারা কোনো ম্যাচে একসাথে পারফর্ম করলে সে ম্যাচ যে বাংলাদেশই জিতবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর পুরো টুর্নামেন্টে ফ্যান্টাসটিক ফাইভ জ্বলে উঠলে শিরোপা  এবার আমাদের ঘরেই আসবে। ইনশাআল্লাহ।