• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: শুভ কামনা টাইগার্স।

পোস্টটি ২৭৪৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেটের মহোৎসব শুরু হয়ে গেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়েই। ক্রিকেট মহাযজ্ঞে এবার টানা ৬ষ্ঠ বারের মতো খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অতীতের সব গুলো আসর থেকে এবারের বাংলাদেশ দল অনেক বেশি অভিজ্ঞ, গোছালো এবং শক্তিশালী। ১০ দলের বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশও শিরোপার অন্যতম দাবীদার এবারের আসরে। অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যে বাংলাদেশ দলটাও হয়েছে ব্যালেন্স টিম। ভাল করার মতো সব উপাদানই বিদ্যমান টাইগার দের বর্তমান বিশ্বকাপ দলে।

২২ গজের ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে কে জিতবে কে হারবে, কে সেমিফাইনাল খেলবে আর কারা গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যাবে এসব নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। সাবেক তারকা ক্রিকেটার, সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম, লিজেন্ডারি ক্রিকেটাররা নানামুখী প্রেডিকশনও করছে দল গুলো নিয়ে। স্যোশাল মিডিয়ায় চলছে নানামুখী ক্রিকেটীয় ঝড়। ক্রিকেট উত্তাপ বেশি লক্ষণীয় আমাদের সাব কন্টিনেন্টালে।

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে ২ তারিখ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে। বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকাকে হারানোর সুখ স্মৃতি সঙ্গী করে বাংলাদেশ মাঠে নামবে। ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইট পর্বে তখনকার শক্তিশালী সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল তরুণ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।  তখনকার বাংলাদেশ দল ছিল তরুণ, আর এখনকার বাংলাদেশ অভিজ্ঞতায় টয়টুম্বুর একটি দল। দলে মাশরাফির মতো অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন ও পেসার যেমন আছে ঠিক তেমনি মোস্তাফিজের মতো তরুণ, বিশ্ব ক্রিকেটের আলোচিত পেসারও আছে। সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ও নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার যেমন বাংলাদেশ দলের শক্তি, একইভাবে মিরাজের মতো পরিশ্রমী, উদ্যমী, ভবিষ্যৎ নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডারও আছে স্কোয়াডে। তরুণ আর অভিজ্ঞদের মিশেলে চমৎকার একটি স্কোয়াড হয়েছে বিশ্বকাপের জন্য।

১০ দলের বিশ্বকাপে সবাই এবার একে অন্যের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। প্রত্যেক টি দলই ৯টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে গ্রুপ স্টেজে। এরপর পয়েন্ট তালিকায় সেরা চার দল নিয়ে হবে সেমিফাইনাল। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দল গুলোর ভিড়ে কতটা সম্ভাবনা বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার? জবাবে টাইগার প্রেমীরা নিশ্চয় শতভাগ বলতে কার্পণ্য করবে না। কারণ তারা বিশ্বাস করে টাইগাররা এবার শিরোপা ঘরে তুলতেই বিশ্বকাপ খেলতে গেছে।

বাংলাদেশ তাদের সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসের পালে বাড়তি হাওয়া লাগাবে আয়ারল্যান্ডে ট্রাইনেশন সিরিজে জয় লাভ করা। প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ কোনো শিরোপা জিতেছে গত মাসে, ইংল্যান্ডের চেনা কন্ডিশন আয়ারল্যান্ডে। এটি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে বিশ্বকাপে।

বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে জয়লাভ করাটা অনেক বেশি জরুরী। কারণ প্রথম ম্যাচে হারলে বাকী ম্যাচ গুলোতে ভাল করতে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর প্রথম ম্যাচে হারলে সেটা আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরায়। যার ইফেক্ট টুর্নামেন্টের বাকী ম্যাচ গুলোতে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে তখন। আফ্রিকা তাদের প্রথম ম্যাচ ইংল্যান্ডের সাথে বাজে ভাবেই হেরেছে, এটা বাংলাদেশের জন্য আরেকটি প্লাস পয়েন্ট। তবে ভাল সংবাদের সাথে খারাপ সংবাদও আছে। প্রথম ম্যাচ হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের সাথে ম্যাচটি জান প্রাণ দিয়ে খেলার চেষ্টা করবে। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে তাদের যে এই ম্যাচে জয় পাওয়াটা অতীত জরুরী।

সব কিছুরই, শুরু টা ভাল হওয়া চাই। আর বাংলাদেশের ভাল করার যথেষ্ট সুযোগ এবং সক্ষমতা রয়েছে। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে জয়ের বিকল্প নেই। প্রথম ম্যাচ থেকেই সেই টার্গেট পূরণে সচেষ্ট হতে হবে।

ইংল্যান্ডের কন্ডিশন বড়ই বেখাপ্পা বটে। এই রোদ তো এই আবার ঝুম বৃষ্টি। যখন তখন আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যায় এখানে। কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতেই বাংলাদেশের এতো আগে চলে যাওয়া। সুতরাং, কন্ডিশন মাথা ব্যথার কারণ হবে না আশা করা যায়। তবে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আফ্রিকার মতো দল গুলো ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে বাড়তি সুযোগ সুবিধা পায়। তাদের পেসাররা এরকম কন্ডিশনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। বিশ্বকাপের শুরুর দুটি ম্যাচে উপমহাদেশের দল গুলোর, তাদের পেস, বাউন্সের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ সেটাই প্রমাণ করে। তবুও জানি, বিশ্বাস করি, ভাল করবে বাংলাদেশ। ১৭ কোটি মানুষের ভালবাসা যে তাদের সাথে আছে। অগণিত ক্রিকেট প্রেমীর দোয়া তাদের সাথে আছে। স্বপ্ন একটাই, সারথি ওরা পনেরো জন। শুভ কামনা বাংলাদেশ। স্বপ্ন জয় করেই দেশে ফিরবে, বিশ্ববিজয়ী বীর হিসেবে মাথা উঁচু করে ঘরে ফিরবে বাংলার দামাল ছেলেরা। এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। দোয়া এবং ভালবাসা তোমাদের জন্য।

 

 

প্রথম ম্যাচের একাদশ কেমন হতে পারে, এটা নিয়েও ক্রিকেট প্রেমীরা যথেষ্ট সন্দিহান। তবে একটু ভালভাবে ভাবলে দেখা যাবে মাত্র দুই একটি যায়গায় হয়তো পরিবর্তন হবে বা হতে পারে। তা না হলে নিয়মিত একাদশ, যেটা বিভিন্ন মাধ্যমে সম্ভাব্য একাদশ হিসেবে দিচ্ছে, তেননটাই হবে।

ওপেনিংয়ে তামিম খেলছেন তাতে তো কোনো সন্দেহ নাই, ঠিক তেমনি ৩ নাম্বারে সাকিব, ৪ নাম্বারে মুশফিক, ৬ নাম্বারে মাহমুদুল্লাহ ৯ নাম্বারে মাশরাফি ১০ নাম্বারে রুবেল ও ১১ নাম্বারে যে মোস্তাফিজ খেলবেন তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এখন আসি ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী কে হবেন, সৌম্য না লিটন? দুজনই কিন্তু ফর্মে আছেন। তাই কে হতে পারে বিশ্বকাপে তামিমের সঙ্গি? উত্তরটা অনেকেই হয়তো সৌম্যের পক্ষেই দিবেন, আমিও তাই দিব। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ধারাবাহিক এই ওপেনার। শেষ ৩ ওডিয়াইয়ের সব গুলোতে অর্ধশতক করেছে সে। ৫ নাম্বারে কে খেলবে? সবাই ভাবছেন, এটা আর তেমন কঠিন কি, এখানে তো মিঠুনই খেলে। সো, সে-ই খেলবে, আমিও তাই রায় দিচ্ছি। তবে কোনো ভাবে মিঠুন না খেললে এই পজিশনে তখন মাহমুদুল্লাহ খেলবে তা নিশ্চিতই। ৭ নাম্বারের দাবিদার দুজন.. মোসাদ্দেক, সাব্বির। আমি বলবো তিন জন। যদি প্রাথমিক ভাবে সাব্বির কে বাদ দেওয়া হয় এবং সৌম্য ওপেন করে তাহলে লিটন এই পজিশনে খেলার দাবীদার। আর তাকে এই পজিশনে খেলতেও দেখেছি আমরা এর আগে। তবে এই পজিশনের জন্য সাব্বিরই এগিয়ে যদিও মোসাদ্দেক ট্রাইনেশন সিরিজের ফাইনালে কাব্যিক ইনিংস খেলে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ট্রফি জয়ের নায়ক বনে গেছিল। যাইহোক, তাদের মধ্যে একটা মৃদু লড়াই হবে এই পজিশনের জন্য, তা বলাই যায়। আমি সাব্বির কে এগিয়ে রাখবো। লাস্ট, ৮ নাম্বার পজিশন। কে খেলবে এই পজিশনে? সাইফুদ্দীন, মিরাজ সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। যদি ৩ পেসার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ, তবে এই পজিশনে মিরাজ সুনিশ্চিত । আর যদি চার পেসার নিয়ে একাদশ গঠন করে তাহলে সাইফুদ্দীন অবশ্যই খেলবে এই পজিশনে। বাকী রইলো আবু জায়েদ। যদি কোনো কারণে রুবেল বা মোস্তাফিজ খেলতে না পারে, বা একাদশ থেকে বাদ পড়ে যায় তাহলেই কেবল রাহীর একাদশে খেলার সুযোগ তৈরি হবে, অন্যথায় তার সুযোগ হচ্ছে না আক্ষরিক অর্থে সেটা বলাই যায়।

বিশ্বকাপের জন্য একাদশঃ ১ তামিম ২ সৌম্য ৩ সাকিব ৪ মুশফিক ৫ মিঠুন ৬ মাহমুদুল্লাহ ৭ সাব্বির ৮ সাইফুদ্দীন ৯ মাশরাফি ১০ রুবেল ১১ মোস্তাফিজ। এই একাদশ সফল হতে থাকলে ব্রেক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

যদি বা হাতি ডান হাতি কম্বিনেশন করতে যায় তাহলে কিছুটা পরিবর্তন সাধন হবে। তখন লিটন তামিমের সঙ্গি হবে আর সৌম্য খেলবে ওয়ান ডাউনে। বাংলাদেশ ৩ পেসার নিয়ে খেললে সাব্বির মোসাদ্দেক দুজনের, আবার লিটন সৌম্য দুজনের কিংবা মিরাজ সাব্বির দুজনের খেলার সম্ভাবনা তৈরি হবে। অন্যথায় তাদের মধ্য থেকে এক জন করেই খেলার সম্ভাবনা বেশি।

শুভ কামনা বাংলাদেশ। আমরা আছি তোমাদের সাথে। এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিতে।