• ফুটবল

এমিলিয়ানো'র মৃত্যু কিংবা ফুটবলের এক ট্রাজিক অধ্যায়!

পোস্টটি ৬১৩৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

'চ্যানেল আইল্যান্ড' অধ্যুষিত উত্তরদিকের শেষ সীমায় অবস্থিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের 'বিলিউইক অফ গার্নসি'র অন্যতম একটি অংশ- নাম অল্ডার্নি। অল্ডার্নি মূলত একটি দ্বীপ; আয়তনে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ'দের মধ্যে যার অবস্থান দ্বিতীয়তম। হাজার দু'য়েক মানুষের বসবাসের জায়গা অল্ডার্নি একদিন ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের অংশ হবে- তা হয়তো কেউ কোনদিন কল্পনাও করেনি।

এই লেখায় আমরা জানবো কিভাবে অল্ডার্নি একজন স্বপ্নবাজ তরুণের নির্মম মৃত্যুর সাক্ষী হবে৷ পাশাপাশি জানবো- অল্ডার্নিতে মৃত্যুবরণ করা সেই তরুণের জীবনের একটুকরো ইতিহাস। গ্রামের মাঠ থেকে তরুণের ফুটবলের পদচারণা কোথায় গিয়ে থাকে; তাও জানবো। তবে তার আগে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে।

মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুরু। ২১ তারিখ; চ্যানেল আইল্যান্ডের ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশে উড়ছে আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের এয়ারক্রাফট নির্মাতা প্রতিষ্টান 'পাইপার এয়ারক্রাফট' এর একটি ছোট্ট বিমান। পাইলট ছাড়াও পাঁচ যাত্রী বহন করতে সক্ষম বিমানটির নাম 'পাইপার- পিএ ৪৬ মালিব্যু'। বিমানটি যাত্রা শুরু করেছিলো ফ্রান্সের মেট্রোপলিটন শহর নান্তেস থেকে; গন্তব্য ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ শহর।

বিমানে যাত্রীর আসনে আছেন সদ্য নান্তেস থেকে রেকর্ড পরিমান ট্রান্সফার ফি'র বিনিময়ে ইংলিশ প্রিমিয়ারলীগের ক্লাব কার্ডিফ সিটি'তে যোগ দেয়া টগবগে এক তরুণ; যার ফুটবল আদর্শ ও অনুপ্রেরণা কেবল ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্তিনা'র অলটাইম টপ গোল স্কোরার, আর্জেন্টাইন বিধ্বংসী স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। তবে ১২০ গজের ফুটবল পিচে তার খেলার ভঙ্গিমা'কে বিবিসি স্পোর্টস তুলনা করে থাকে ইংলিশ স্ট্রাইকার জেমি ভার্ডির সাথে। সেই তরুণের পুরো নাম 'এমিলিয়ানো রাউল সালা তাফারেল।'

আর্জেন্টিনার মধ্য-পূর্ব প্রদেশ সান্তা ফি'র চুলুলু গ্রামে ৩১ অক্টোবর ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করা এই তরুণের প্রতিভা বিকশিত করে, ফুটন্ত গোলাপের ন্যায় ঝরে যাওয়ার ইতিবৃত্ত জানবো আমরা৷ তবে নান্তেস থেকে উড়ে আসা বিমানটিকে অল্ডার্নি দ্বীপের আকাশে দাঁড় করাতে চাই আমি। আর জানাতে চাই কি ঘটতে চলেছে তরুণের সাথে; যে কিনা মাত্র দু'দিন আগে ঠিক এই এয়ারক্রাফটে চড়ে, ঠিক এই একই পাইলটের সঙ্গী হয়ে নান্তেসে পৌঁছেছিল।

খুব স্বাভাবিকভাবেই অল্ডার্নি দ্বীপের আকাশে উড়ছিলো সেটি; তারপর হঠ্যাৎ করে-ই যেন তা উধাও হয়ে গেলো স্থানীয় রাডারকেন্দ্র থেকে! দুঃখজনকভাবে, ফুটবল তার এক তারা'কে হারিয়ে যেতে চলেছে।

২ দিন পরের ঘটনা। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের এয়ার সার্চ জানায় 'এমিলিয়ানোর বেঁচে থাকার কোনো আশা-ই নেই এখন।' তারচেয়ে বড় কথা- বিমানের কোনো ধ্বংসাবশেষ পর্যন্ত খোঁজে পায়নি তারা!

ঠিক সে মূহুর্তে, আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেস ভিত্তিক জাতীয় স্পোর্টস দৈনিক 'ওলে'র এক রিপোর্টে প্রকাশ হয় মৃত্যুর দুয়ারে থাকা এমিলিয়ানো'র একটি ভয়েস মেসেজ৷ কে জানতো এটাই ছিলো তার জীবনের শেষ বার্তা! বন্ধুদের উদ্দেশ্য সেই ভয়েস মেসেজে এমিলিয়ানো বলেন-

'হ্যালো, আমার ভাইয়েরা; তোমরা কেমন আছো সবাই? আমি খুব পরিশ্রান্ত। আমি এখানে নান্তেসে ছিলাম; সবকিছুর প্রচুর কেয়ার করেছি, এবং এটা কখনোই থেমে থাকবেনা৷ যাইহোক ছেলেরা, আমি এখন প্লেনে আছি৷ আর মনে হচ্ছে এটা এমনভাবে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে যেন টুকরো টুকরো হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে নিক্ষেপিত হবে! আমি এখন কার্ডিফে যাচ্ছি, এটা ক্রেজি! আমরা আগামিকাল শুরু করবো, নতুন দলের ছেলেদের সাথে বিকেলে ট্রেইনিংয়ের মাধ্যমে। দেখা যাক কি হয়; তা তোমাদের কি অবস্থা বন্ধুরা? সব ঠিকঠাক? যদি দেড় ঘণ্টাখানেক পরে আমার কোনো খবর না পাও, তারা নিশ্চয়ই কাউকে পাঠাবে আমাকে খোঁজার জন্য; তারা কখনোও খুঁজে পাবেনা আমাকে! কিন্তু বন্ধুরা, তোমরা জানতে পারবে। আমি সত্যিকার অর্থেই আতঙ্কগ্রস্ত।'

অথচ এখানেই জীবন শেষ হওয়ার কথা ছিলোনা সালা'র। কার্ডিফে উড়ে এসেছিলেন দু'দিন আগে। এসেই ক্লাব ম্যানেজমেন্টের সাথে চুক্তি'টা সেরে নিয়েছিলেন। এবং গ্যারি ম্যাডেল'কে পিছনে ফেলে বনে গিয়েছিলেন ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি প্লেয়ার! মেডিক্যাল সম্পন্ন হওয়ার পরে ১৯ ফেব্রুয়ারীতে এজেন্ট মার্ক ম্যাকে' তাকে পাইপার-এপি ৪৬ বিমানে তুলে দেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো নান্তেসে থাকা তার বন্ধুবান্ধবদের বিদায় জানিয়ে আসা এবং ২১ ফেব্রুয়ারীতে কার্ডিফে এসে পৌঁছানো। অবশ্য, কার্ডিফ সিটি এফসির ম্যানেজার নেইল ওয়ার্নক তাকে আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন নিউক্যাসেলের বিপক্ষে ম্যাচটি উপভোগ করার জন্য; দেশে ফেরায় তা আর সম্ভব হলোনা।

২৪ জানুয়ারি। গার্নসি পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানায় ৩ দিনের অভিযানে কোনো ধ্বংসাবশেষ মিলেনি। এমিলিয়ানোর মৃতদেহ খোঁজতে টানা আট ঘন্টা অভিযান চালায় ৩ টি প্লেন, ৫ টি হেলিকপ্টার এবং ২ টি লাইফবোট! অবশেষে তারা ক্ষান্ত দেয়ার ঘোষণা দেয়।

কিন্তু মর্মান্তিক এই ঘটনা সাড়া ফেলে দেয় ফুটবল দুনিয়ায়। এভাবে একজন ফুটবলারকে হারিয়ে যেতে দিতে পারেনা তারা। এমিলিয়ানোর স্বদেশি কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনা, লিও মেসি কিংবা আগুয়েরো- হিগুয়েইনেরা উদ্ধারকার্য চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট মাউরিস্যিও ম্যাক্রি বিনীতভাবে ব্রিটিশ এবং ফ্রেঞ্চ প্রশাসনকে অনুরোধ জানান, তারা যেন ক্ষান্ত না দেয়৷ এক অনলাইন জরিপে ৬৫০০০ মানুষ সাক্ষর দিয়ে অনুরোধ জানায় এমিলিয়ানো'কে খোঁজে বের করতে! অতপর, তার পরিবার ঘোষণা দেয় ব্যাক্তিগত উদ্যোগে অনুসন্ধান চালানোর জন্য, তবে তার জন্য চাই ফান্ড। সেটার যোগানের ব্যবস্থা হয়ে যায় সালা'র রিপ্রেজেনটেটিভ 'স্পোর্টস কাভার' নামক এক সংস্থার মাধ্যমে। মুহুর্তের সে ফান্ডে জমা হয় ২৮০,০০০ হাজার মার্কিন ডলার! ২৬ জানুয়ারি থেকেই দুটো বোট নিয়ে মেরিন সাইন্টিস্ট ডেভিড ম্যারন্স এর নেতৃত্বে অনুসন্ধান শুরু হয়।

দিন যায়, সমুদ্রের জল গড়ায়। অনুসন্ধানে কিছু বেরিয়ে আসেনা। সবাই যখন আশা ছেড়ে দিতে যাচ্ছিলো, ঠিক তখনি আশার আলোকবর্তিকা হয়ে হাজির হলো 'এয়ার এক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ' এর একটি তথ্য! তারা জানায়, ফ্রান্সের কোনোও এক বীচে এয়ারক্রাফটের দুটো সিট পাওয়া গিয়েছে এবং শীঘ্রই মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হবে। ঘোষণার ৪ দিন পেরিয়ে গেলে ৬ ঘন্টা পর যখন নতুন প্লান নিয়ে খোঁজা শুরু হবে; ঠিক তখনি পতিত বিমানের ধ্বংসাবশেষ খোঁজে পাওয়া যায়। ৪ ফেব্রুয়ারী সমুদ্রের ৬৩ মিটার গভীরে ধ্বংসাবশেষ খোঁজে পান তারা; তিন দিন লেগে যায় মৃতদেহ বের করে নিয়ে আসতে!

৭ ফেব্রুয়ারিতে উদ্ধার করা মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় 'পোর্ট অব আইল্যান্ড' এ। সেখানের 'ডরসেট পুলিশ' সালার ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্ত করার মাধ্যমে সালা'র মৃত ঘোষণা নিশ্চিত করে। ১১ ফেব্রুয়ারীর পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয় সালা'র মাথায় গুরুতর আঘাত মৃত্যুর কারণ! ১৬ ফেব্রুয়ারিতে তার বেড়ে উঠার জায়গা প্রগ্রেসো'তে শেষকৃত্য অনুষ্টান সম্পন্ন হয়।

এবার আপনাদের আবারো ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই ১৯৯০ সালের ৩১ অক্টোবরে। ট্রাক ড্রাইভার বাবা হরাস্যিও সালা এবং মা মার্সেডিস তাফারেলের ঘরে জন্ম নেন এমিলিয়ানো রাউল সালা তাফারেল। দারিও নামের এক ভাই ও রমিনা নামের এক বোন নিয়েই সালা'র সংসার। গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা'কে আইডল মনে করা কিশোরের ফুটবলে পদযাত্রা বয়স ১৫ পেরুবার আগে থেকেই। কর্ডোবা'র সানফ্রান্সিসকো'তে তারা চলে আসার পর এক স্কাউট দলের নজরে পড়ে যায় সে। স্কাউট দলটির সাথে সরাসরি যোগসূত্র ছিলো স্পেনিশ ক্লাব 'রিয়াল মায়োর্কা' এবং ফ্রেঞ্চ ক্লাব ব্রোডক্স এর। স্কাউট দলের সাথে খেলার সম্মতি জানালে, তারা 'সিডি সোলেডাড বি' দলের হয়ে খেলার সুযোগ করে দেয়। ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মোট ৬টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় সে।

২০০৯ সাল। সালা স্পেনের গ্রানাডায় বাস করে তখন। সেখান থেকে পর্তুগিজ চ্যাম্পিয়নশীপের দল ক্র্যাটোর হয়ে খেলার জন্য অফার পায় সে। তখন সেই ক্লাবে খেলতেন এক আর্জেন্টাইন ফুটবলার যিনি পর্তুগালের হয়ে খেলার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। সালা সে ক্লাবের হয়ে ১ টি ম্যাচ খেলে, এবং সেই ম্যাচে একাই দুটো গোল করে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে সে ক্লাব ছেড়ে দিয়ে চলে যায় এই মর্মে যে, তার গার্লফ্রেন্ড খুব বিপদে আছে; তাকে যেতে হবে!

২০ বছর বয়সী এক তরুণের জন্য ব্রোডক্স ক্লাব স্বপ্নের মতো ব্যাপার। তবে স্বপ্নবাজ এ তরুণ ব্রোডক্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেলো ২০১০-১১ মৌসুমে। তখনকার ব্রোডক্স ক্লাবের তরুণ কোচ মার্সেলো ভাদা এবং তার ছেলে ভ্যালেন্টিন ভাদার সাথে কিছুদিন একসাথেই ছিলো এমিলিয়ানো; কারণ তারাও এমিলিয়ানোর অঞ্চলের মানুষ ছিলেন। তবে স্বপ্নবাজ তরুণের জীবনে আশার কাঙ্ক্ষিত ফুল ফুটলোনা৷ বেঞ্চে বসে থাকতে থাকতে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত, রাগান্বিত ছিলো সে। টিমে পর্যাপ্ত সময় খেলার সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলো। ক্লাবের সিনিয়র টিমে তার অভিষেক হয়েছিলো পরেরবছর ফেব্রুয়ারিতে, কাপ ডি ফ্রান্সের রাউন্ড অফ সিক্সিটিনের ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে।

ব্রোডক্সে কোনোভাবেই সুবিধা করতে না পেরে সালা চেয়েছিলো স্পেনিশ কোনো ক্লাবে যেতে। কিন্তু তার এজেন্টের অপারগতায় তা আর হয়ে উঠেনি; ফলে তাকে ফ্রান্সেই থেকে যেতে হয়। তবে এবার লোনে যোগ দেন ডিভিশন ৩ এর ক্লাব 'ইউএস অর্লিন্সে'। অর্লিন্সের কোচ তাকে বছরখানেক আগে থেকেই নজরে রেখেছিলেন। দলে পেয়ে উচ্ছ্বসিত কোচ অলিভার ফ্যাপোলি তাকে বর্ণনা করতেন এভাবে- 'দ্যা বেস্ট প্লেয়ার ইন দ্যা টিম, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই'। কোচের এমন অভিব্যক্তি কি আর হেলায় ফেলতে পারেন সালা? প্রতিদানস্বরুপ ক্লাবের জার্সিতে ৩৭ ম্যাচেই করে ফেললেন ১৯ গোল! পাশাপাশি লীগে ৮ম অবস্থানে থেকে মৌসুম শুরু করতে সাহায্য করেন ক্লাবকে৷

২০১৩ সালের জুলাইয়ে আবারো লোনে লীগ ২ এর ক্লাব 'চ্যামোইস নায়োর্টিয়াসে'র সাথে চুক্তিবদ্ধ হন সালা৷ ১২ ম্যাচে হ্যাট্টিকসহ ১১ গোল, এ তো গেলো কেবল অর্ধ-মৌসুমের হিসাব। সালা ক্লাবের হয়ে ১ মৌসুমে রেকর্ড পরিমান ১৮ গোলসহ সব প্রতিযোগিতায় ২০ টি গোল করেন সেবার। '১৪-১৫ মৌসুমে ব্রোডক্সের সিনিয়র দলে আবারোও ডাক পান সালা; তবে ১১ ম্যাচে তার পা থেকে আসে একটিমাত্র গোল। ফলস্বরূপ, তাকে আবারোও লোনে পাঠায় ক্লাবটি। পরবর্তী গন্তব্যে 'এসএম সিন' ক্লাবের হয়ে ৫টি গোলও করেন তিনি।

জুলাই ২০, ২০১৫ সাল। ৫ বছরের চুক্তিতে ব্রোডক্স থেকে সালা পাড়ি জমান ফ্রেঞ্চ লীগ ওয়ানের দল নান্তেসে। ২০১৫-১৬ মৌসুম শুরুর দিন-ই অভিষেক হয়ে যায় ক্লাবের জার্সিতে। তবে প্রথম গোলটি আসে ডিসেম্বরে, অ্যজাসিও ক্লাবের বিপক্ষে। জানুয়ারির ট্রান্সফার ইউন্ডোতে ইংলিশ ক্লাব ওলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স সালার জন্য ৩ মিলিয়ন পাউন্ডের অফার দেয়; যদিও তা নাচক করে দেয় নান্তেস! প্রথম মৌসুমে মাত্র ৬ গোল নিয়েও ক্লাবের টপস্কোরার হিসেবে মৌসুম শেষ করেন সালা।

পরবর্তী মৌসুমে ১২ গোল দিয়ে আবারোও ক্লাবের টপ স্কোরার হিসেবে নিজের পজিশন অক্ষুণ্ণ রাখেন; ঠিক সমান সংখ্যক গোল দিয়ে টানা ৩ মৌসুম ক্লাবের টপ স্কোরার হন এমিলিয়ানো সালা। ২০১৮-১৯ মৌসুমের শুরুতেই নতুন কোচের সুনজর থেকে বাদ পড়েন সালা। তবে অক্টোবরে ক্লাবটির কোচ বরখাস্ত হলে, আবারোও আশার দেখা মিলে। কোচ হিসেবে নিয়োগ পান 'ভাহিদ হালিলহোজদিক', এবং দলের দায়িত্ব নেয়ার দিন-ই সালা ক্লাবের হয়ে হ্যাট্টিক করে বসেন! অক্টোবর মাসজুড়ে ৩ ম্যাচে ৪ গোল করায় পুরষ্কার স্বরুপ লীগ ওয়ানের 'প্লেয়ার অব দ্যা মান্থ' লাভ করেন তিনি। ডিসেম্বরের শুরুতে এম্বাপ্পের সাথে যৌথভাবে লীগ ওয়ানের সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও মার্সেইল্লের বিপক্ষে ৫ ডিসেম্বরে করা গোলটিই ছিলো ক্লাবের হয়ে তার শেষ গোল!

লেখার এই পর্যায়ে আমরা আবারো ফিরে এসেছি ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারিতে। যেদিন হাস্যোজ্জ্বল এই তরুণ হেটে গিয়েছিলো 'দ্যা ব্লু-বার্ড'দের কার্ডিফ সিটি স্টেডিয়ামের করিডোর ধরে। ১২০ বছরের পুরাতন এই ক্লাবে হয়তো কত নতুন রেকর্ড-ই না হতে পারতো তার খেলায়! অথচ ভাগ্যবিধাতা লিখে বসলেন অন্য এক কাব্যগাঁথা! নিয়তির নিষ্টুর পরিহাস তাকে নিয়ে কেবল ছলনা-ই করলোনা; মৃত্যু দুয়ারে তাকে আমন্ত্রন জানালো। ফুটবল বিধাতা হয়তো সেদিন-ই চেয়েছিলেন, সদা হাস্যোদ্দীপ্ত এ তরুণের ফুটবল পিচে ঘাস মাড়ানোর প্রয়োজন নেই। সে খেলবে সপ্তমাকাশে; সাদা মেঘেদের সাথে। আর তাইতো দু'দিন পরেই নিয়ে নিলেন তার প্রাণ!

bat8gbhg_emiliano-sala-afp_625x300_16_February_19

লেখাগুলো কি-বোর্ডে সাজাতে কি কষ্টটাই না হচ্ছিলো আমার; না জানি মৃত্যু সংবাদের আকষ্মিকতায় এমিলিয়ানো সালা'র পরিবার- বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কিংবা সহচর'দের কি আর্তনাদটাই শুনতে হয়েছে ফুটবল বিধাতাকে। ফুটবল এমন ট্রাজিক মূহুর্তের সাক্ষী খুব কমই হয়েছে- এ কথা অকপটে বলা যায়; তবে সালা'র মৃত্যুতে বিশ্ববাসীর আর্তনাদ দেখেছে সবাই। ফুটবলের সবুজ ঘাসে নয়, সালা'কে এখন খেলতে হবে সু-উচ্চ আকাশের সাদা মেঘেদের সাথে; রাত্রি নেমে এলে লাখো তারার মাঝে ঝলঝল করবে কখনোও কার্ডিফের হয়ে খেলতে না পারা এক ফুটবলারের বিমূর্ত মুর্তি! তবে পরবাসী এমিলিয়ানোর জন্য ক্লাবের ৯ নাম্বার জার্সিটা আজীবনের জন্যই তুলে রেখে দিয়েছে নান্তেস ক্লাব; এই-বা কম প্রাপ্তি নাকি?
ওপারে খুব ভালো থেকো সালা; খুব...

© আহমদ আতিকুজ্জামান।