• ফুটবল

ট্রিবিউট টু নেইমার

পোস্টটি ৬০২৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ফুটবল'টা কারো কাছে নিছক একটি খেলা, কারো কাছে কেবলই বিনোদনের মাধ্যম! কিন্তু এই ফুটবল'টাই কারো কাছে শুধু খেলা নয়, বরং জীবনে চলার পথে সবচেয়ে বড় পাথেয়, বেঁচে থাকার অন্য নাম, দুঃখ কিংবা দুর্দশাকে পাশ কাটিয়ে একটুখানি সুখের পরশপাথর!

মানুষ হিসেবে কেউই কখনো শতভাগ সুখী নয়, ছোট্ট এই জীবনে আমাদের অসংখ্য না পাওয়া, অসংখ্য অপ্রাপ্তি, অসংখ্য বুক চাপা কস্ট! কোথাও বা অর্থকড়ির অভাব, কোথাও বা প্রেয়সীকে হারানোর অভাব, আবার কোথাও বা সব পেয়েও আরো উচ্চতায় না পৌছাতে পারার আক্ষেপ; হতাশা কিংবা মারাত্মক দুর্দশা, চরম পর্যায়ের খারাপ থাকার মাঝেও ফুটবল কে বেঁচে থাকার পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করা মানুষগুলো ফুটবল মাঠের ৯০ মিনিটে ভালোথাকার সব কারণগুলো খুঁজে নেয়, যেখানে সমস্ত খারাপগুলো ভুলে নতুন সূর্যদয়ের সাথে নতুন শুরুর প্রেরণা পায়, এক পশলা সুখ খুঁজে পায়!

প্রিয় দল কিংবা প্রিয় খেলোয়াড়ের ব্যর্থতা হয়তো পরিস্থিতিকে অন্য মোড়ে নেয়; কিন্তু ফুটবল নামক গোলকধাঁধা হতে প্রাপ্তির জায়গায় এই অপ্রাপ্তি হয়তো নিছকই ক্ষুদ্রকায়!

ইহজগতের কোটি কোটি ফুটবল ফ্যানের মাঝে আমি নিতান্তই এক ক্ষুদ্র, সামান্য একজন। আমার ভালোবাসা কিংবা ঘৃণায় কোন ফুটবলারের কিংবা অন্যান্য ফ্যানদের কিচ্ছুটিই যায় আসবেনা। কিন্তু একটা মানুষকে ভালোবাসার ফল আমার আমিকেই পুরো ভালো রাখতে পারে, আনন্দে রাখতে পারে, হতাশামুক্ত রাখতে পারে, অনুপ্রানিত করতে পারে।

ফুটবল কে ভালোবেসে যদি হৃদয়ে স্থান দেই, তবে তার হৃদস্পন্দন এই মানুষ'টা; নেইমার!

মানুষটা একটা ভালোবাসার নাম, আবেগের নাম!! কারো আবেগ কিংবা ভালোবাসা'কে কোন মানদন্ডে পরিমাপ করে এমন সাধ্যি কার!!

আপনার কিছু মানুষ থাকেনা, আপনার পরিবার কিংবা আপনজন, যারা আপনার যেকোন ভালোলাগার কেন্দ্রবিন্দু তে থাকে?? যারা আপনার প্রতিদিনের রুটিনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে?? এই মানুষটাকে তাদের থেকে ঠিক আলাদা করবো কোথায়??

গত ১০ বছরে মানুষটা কলিজায় মিশে গেছে, অস্তিত্বে মিশে গেছে, অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে!! এ ভালোবাসা কে ছোট করে দেখে এ সাধ্যি কার!!

সপ্তাহে দুই ম্যাচ ডে বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলাতে মানুষটার খেলা দেখার জন্যে অপেক্ষায় থাকা, ম্যাচ ডে'র সকাল থেকে খেলা শুরু হউয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটা মুহুর্ত যেনো একেকটা যুগ, সাথে পরম আনন্দ এই ভেবে যে আজ মানুষটার খেলা দেখবো, যেই আনন্দে সকল চাপ কিংবা খারাপ লাগা কিংবা হতাশাকে ভুলে থাকা যায়!!

মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ে ড্রাগ এডিক্টেড হয়; এই মানুষটাকে অস্তিত্বে মিশে নিছি তো, ড্রাগের প্রয়োজন আছে?? এই মানুষটার একেকটা গোল এসিস্টে যে পরিমাণ সুখানুভূতি ছুয়ে যায়, তা দিয়ে পাহাড়সম ডিপ্রেশন কেটে উঠা যায়!!

হ্যা, এইভাবেই এতটাই নিজের সাথে মিশে গেছে মানুষটা!!

প্রচন্ড মন খারাপ; ইউটিউবে মানুষটার কিছু ক্লিপ দেখে নিলাম! মনটা যেনো ভালো হয়ে যায়!!

মানুষটার ইন্সটা স্টোরি কিংবা ফটো ক্যাপশনে ব্যাবহার করা ছোটখাটো মোটিভেশনাল স্পিচ যেনো অন্য যেকোন মোটিভেশন কে হার মানায়!!

ভালোবাসি মানুষটাকে; ১০ টা বছর ধরে ভালোবাসি!

নেইমারের নাম শুনেছিলাম, ২০০৯ এ; সম্ভবত কোন পত্রিকায়, 'নতুন রবিনহো' কিংবা 'নতুন পেলে' বিশেষণে। ১০ বিশ্বকাপের পর তো মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ইতিহাসের সর্বসেরা দলটার দায়িত্ব মাথায় নিয়ে নিজের অভিষেক ঘটিয়ে ফেললেন। সেই সময়ে মানুষটাকে নিয়ে যে প্রত্যাশার পারদ ছিলো, অস্বীকার করার উপায় নেই গত ১০ বছরে হয়তো তার অনেককিছুই পুরণ করতে পারেননাই মানুষটা। বর্তমান ফুটবল বিশ্বে তার বর্তমান অবস্থান কোথায়, তার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কোথায় বা কতটুকু, ১০ বছর ধরে মিডিয়া সহ কত রকমের চাপের মাঝে নিজ ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, 'ইঞ্জুরি'কে বন্ধু হিসেবে বরণ করে নেওয়া, প্রিয় দল ব্রাজিলকে ১০ টা বছর ধরে টানা, গত ১০বছরে নেইমারের অর্জন কিংবা ব্যার্থতা; নেইমারের নামের পাশের আলোচনা সাপেক্ষ বিষয়বস্তু এসবই!

গত ১০ বছরে কি পরিমাণ সমালোচনা, মিডিয়া আর দেশবাসীর চাপ, ইঞ্জুরির মাঝে দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে নেইমার আজ ২৮ তম জন্মদিনের সামনে; সমালোচকরাও হয়তো অস্বীকার করবেন না!

২০১৩ কনফেডারেশন্স কাপ এখন পর্যন্ত নেইমারের সবচেয়ে সফলতম টুর্নামেন্ট; খেলেছিলেন দুর্দান্ত প্রতাপে, নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে! একইসাথে দেখিয়েছিলেন ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন! কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ব্রাজিল বিশ্বকাপ নেইমার কে উপহার দিলো ইঞ্জুরি নামক বিভিষীকা! চিকিৎসক বলেছিলেন, জুনিগা'র সেই আঘাত আরেকটু নিচে লাগলেই চিরদিনের জন্যে পঙ্গুত্ব বরণ করতেন নেইমার!

১৮ বিশ্বকাপের আগ মুহুর্ত, নতুন করে আবারো স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন নেইমার! বিশ্বকাপের আগ মুহুর্তে এসে ইঞ্জুরিতে পড়েন নেইমার! প্যারিসের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুরোপুরি সেরে উঠার জন্যে অপারেশন করান; ক্যারিয়ার রিস্ক আছে, জেনেও কেবলমাত্র দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলবেন বলে নেইমারের বিশ্বকাপের আগের ৩ মাসের ইঞ্জুরি থেকে রিকভার করার জন্যে যে প্রচেষ্টা আর পরিশ্রম দেখিয়েছিলেন তা নেইমারের ডেডিকেশনের অনন্য দৃষ্টান্ত! চিকিৎসকের ভাষায়, নেইমারের স্বদিচ্ছা ছিলো বলেই এত দ্রুত রিকভার করা সম্ভব ছিলো! ইঞ্জুরি থেকে সদ্য মাঠে ফিরা নেইমার এবারও পারলেন না!

২০১৯ ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকা খেলবেন বলে প্রস্তুত হচ্ছিলেন; ইঞ্জুরির কষাঘাতে আবারো স্বপ্নভঙ্গ নেইমারের!

দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ না থাকার অভিযোগ উঠেছে, ট্যাক্স ফাঁকির মামলা পেয়েছে, মিথ্যা রেইপ কেসে ফাঁসতে হয়েছে, বোন কে জড়ায়ে অশালীন সংবাদ বেড়িয়েছে! গত ইঞ্জুরি থেকে উঠার পর ডাক্তার বলেন, নেইমারের মেটাটারসেল নাকি ভবিষ্যতেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এরপরেও নেইমার দমে যাননি! এখনো ব্রাজিলবাসীর স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে ব্রাজিলকে প্রতিনিধিত্ব করছেন পাঁচ তারকা খচিত জার্সি গায়ে! নেইমার বারেবারে ফিরে এসেছেন, বারেবারে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সমালোচনার জবাব দিয়েছেন, পারফর্ম করেছেন!

নেইমার নামক আশা প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তি'র সমীকরণ মিলানো হয়তো কঠিন; কিন্তু নেইমার নামক একজন ব্রাজিলিয়ান যোদ্ধার প্রতি ভালোবাসা সম্মান আর চাওয়ার কোন শেষ হয়না, যিনি গত ১০ বছর ধরে ব্রাজিলের জার্সিতে ব্রাজিল'কে তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে যাচ্ছেন, ভক্তদের উচ্ছাসে মাতাচ্ছেন, প্রিয় দল ব্রাজিল'কে এগিয়ে নিচ্ছেন! ব্রাজিলবাসীর পরম আরাধ্য অলিম্পিক জিতিয়েছিলেন কড়া সমালোচনা আর দুয়ো উপেক্ষা করে, কিংবা সেলেসাওদের হয়ে ১০ বছর যাবৎ ধারাবাহিক পারফরম্যান্স হয়তো এই মুহুর্তে নেইমার কে ব্রাজিলের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় রাখা নিয়ে দ্বন্দ হতে পারে; কিন্তু নেইমার ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা পারফর্মার, এ নিয়ে বোধ করি কারোই সন্দেহ থাকার কথা না!

ফুটবল যদি আমার বায়ুমন্ডল হয়, নেইমার আমার অক্সিজেন! ক্যারিয়ারে যদি নেইমার আর কিচ্ছুটিও কখনো উপহার না দিতে পারে; কোন রাগ বা অভিমান থাকবেনা আমার অন্তত এই মানুষটার উপর! বৃদ্ধকালেও বলব আমার কৈশোর যৌবন একটা মানুষের মন্ত্রমুগ্ধে কেটেছে, একটা মানুষকে অস্তিত্বে নিয়ে বেড়ে উঠেছি, মানুষটা নেইমার! সত্যিকারের ভালোবাসায় কখনও কি কোন শর্ত আর স্বার্থ থাকে বলেন??

আমার একজন সত্যিকারের মোটিভেশন, আমার একজন সত্যিকারের আইডল।

নেইমারের সেই "1% chance, 99% faith" ট্রেডমার্ক স্পীচের কথা মনে আছে তো?? যতদিন বেঁচে থাকবো, জীবনে চলার পথে সকল বাধায় এই একটা মোটিভেশন ই যথেষ্ট, মনে সাহস যোগাতে, প্রেরণা যোগাইতে। নেইমার তো এমনই। কতশত লাখো কোটি ভক্তের নয়নের মণি। নেইমার তো এমনই। কতশত লাখো কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা। দরিদ্র এক ঘর থেকে উঠে এসে ব্রাজিল কে ফুটবলবিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করা, নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় আসীন করা নেইমার - কতশত যুবক, বালক কিংবা আমার মতো একটা পাগল প্রজন্মের এগিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনা। কতশত লাখো কোটি হতাশাগ্রস্থ মানুষ স্বপ্ন দেখে নতুন করে বাঁচার নেইমারের "1% chance, 99% faith" এ, পায় সফলতা অর্জনের দীপ্তিময় সাহস।

সৃষ্টিকর্তা যেনো মানুষ'টার প্রতি একটু সন্তুষ্ট হয়, তাকে সুস্থ রাখে! স্বপ্ন দেখি তাহলেই হয়তো, নেইমার নামক আশা প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির খাতাটা পুরোপুরি মিলবে; একদিন হয়তো নেইমার কে ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বলায় আর কোন দ্বন্দ্ব থাকবেনা; ব্রাজিলবাসী তথা নেইমারের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পুরণ হবে, কিংবা ব্রাজিলের ট্রফি খাতায় আরো প্রাপ্তি যোগ হবে!

ভালো থেকো সবসময়, প্রিয় নেইমার! ভালো রেখো সবসময়, প্রিয় নেইমার! বেঁচে থাকো নিজ উদ্যামে, আমাদের প্রেরণা হয়ে, ভালোবাসায়, মন্ত্রমুগ্ধে! "নেইমার" মানুষটাই আমাদের জন্যে অনেক বড় পাওয়ার, বড় আনন্দের, বড় সৌভাগ্যের!

শুভ জন্মদিন নেইমার, শুভ জন্মদিন! ❤