• ফুটবল

গোল্ডেন বুটজয়ী থেকে ড্রাগ এডিক্টেড : মারিও জারদেলের গল্প

পোস্টটি ২২৪০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

"সিগারেট থেকে শুরু শেষ কালে হিরোইন, মাঝখানে মাদকের দাসত্ব প্রতিদিন...

বৃথা যৌবন যায়, অপচয় হয় প্রাণ, ড্রাগের নেশায় শুধু মিছি মিছি হয়রান..."

আমাদের ছোটকালে বিটিভি'র এই সচেতনতা মুলক বিজ্ঞাপনের কথা নিশ্চয়ই মনে থাকবে সবার। মাদকের মরণ থাবায় নিঃশেষ হওয়ার উদাহরণ আমাদের চারপাশে নেহায়েতই কম নয়। নেশার থাবায় চোখের সামনে অনেকের অধঃপতন দেখি আমরা প্রায়শই।

ক্রিড়া বিশ্বেও মাদকের নেশায় অনেক নক্ষত্রের পতন কিংবা অনেকের ক্যারিয়ারে ছন্দপতন এমনকি অধঃপতনের উদাহরণ একেবারেই অল্প নয়! আজ তেমনই একজনের গল্প শুনাই, গল্পের শিরোনাম হতে পারে অনেকটা এমন - "গোল্ডেন বুট উইনার থেকে ড্রাগ এডিক্টেড- একজন মারিও জারদেলের গল্প"


২৫ আগস্ট, ২০০০। উয়েফা সুপার কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ এবং গালাতাসারে। ফুটবল দুনিয়ার চোখ বিশেষ একজন ফুটবলারের উপর, তিনি হলেন পর্তুগীজ ফরওয়ার্ড লুইস ফিগো! বিতর্কিত এক ট্রান্সফার সাগা'র পরে এই পর্তুগীজ আইকনের প্রথম প্রতিযোগিতামুলক ম্যাচ ছিলো এটি। মাদ্রিদের হয়ে ফিগোর প্রথম ফুটবল ম্যাচ কেবলই একটি ফুটবল ম্যাচ ছিলোনা; ছিলো চক্রান্ত, তিক্ততা আর উত্তেজনায় ঠাসা এক ট্রান্সফার সাগা শেষে মাদ্রিদের জার্সি গায়ে নিজেকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার সূচনালগ্ন। কেনোই বা একজন ফিগো কে চিরশত্রু বার্সার ডেরা থেকে মাদ্রিদে ছিনিয়ে আনা, কেনোই বা একজন ফিগোর জন্যে দলবদলের ইতিহাসের মাদ্রিদের সর্বোচ্চ মুল্য হাঁকানো - ফিগোর এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিলো প্রথম ম্যাচ থেকেই। উয়েফা সুপার কাপের ফাইনালে তাই মাদ্রিদ গালাতাসারের লড়াইয়ের চাইতেও নজরের কেন্দ্রবিন্দু লুইস ফিগো'র দিকে।

অথচ ম্যাচ শেষে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অন্যজন; রিয়াল মাদ্রিদের নতুন নাম্বার ১০'র উপরে থাকা আলোকপাত যেনো মুহূর্তেই কেড়ে নিলেন অন্য আরেকজন, তিনি হলেন গালাতাসারের নতুন সাইনিং ২৬ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান মারিও জারদেল!

খেলার ৪১ তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে জাদরেলের প্রথম গোল, ৭৯ মিনিটে রাউলের পেনাল্টি গোলে রিয়ালের সমতা। পুরো মাঠজুড়েই রিয়ালের আধিপত্য থাকলেও ঠিকঠাক ফিনিশের অভাবে গোল হচ্ছিলোনা। খেলার অতিরিক্ত সময়ে তুর্কি ফেইথ আইকেলের লো ক্রসে প্রায় ৮ মিটার দুর থেকে জাদরেলের শট, ইকার ক্যাসিয়াস কে ফাঁকি দিয়ে বল সরাসরি জালে! গোওঅঅঅঅল! গালাতাসারের নতুন ইনক্লুড ব্রাজিলিয়ান মারিও জাদরেলের অসাধারণ এক গোলে উয়েফা সুপার কাপের শিরোপা জিতে নেয় টার্কিশ এই ক্লাবটি!

রিয়াল মাদ্রিদ কে হারিয়ে সুপার কাপ জিতে নেওয়া নিঃসন্দেহে মারিও জারদেলের অন্যতম সেরা স্মৃতি, অন্যতম সেরা অর্জন, এই ম্যাচেই মিডিয়ার আলাদা নজর কেড়েছিলেন তিনি, তবুও মারিও জারদেল'কে যে বিশ্ব এদিনই প্রথম চিনেছে এমনটি কিন্তু নয়!

জারদেলের জন্ম ১৯৭৩ সালের ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ব্রাজিলে। ৬ ফুট ২ ইঞ্চির এই ফরওয়ার্ড ফুটবলে আসার পর থেকেই একজন দক্ষ হেডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন, উচ্চতাই এক্ষেত্রে তাকে এগিয়ে রেখেছিলো বলা যায়।

0030DE0700000258-3238258-image-a-30_1442492893735

ব্রাজিলের ভাস্কো দা গামার হয়ে যুব ক্যারিয়ার শুরু করলেও, প্রফেশনাল ফুটবল শুরু করেন তিনি গ্রামিও'র হয়ে, ১৯৯৫ সালে। ঐ বছর খেলার তেমন সুযোগ না পেলেও তার ক্লাব কোপা লিবার্তোদোরেস শিরোপা জিতে নেয় উক্ত সিজনে। পর্যাপ্ত সুযোগ না পেলেও জারদেল তার প্রতিভার জানান দেয় ঠিকই। ফলস্বরূপ ঐ বছরেই তার ডাক আসে ইউরোপ থেকে।

মারিও জারদেল যোগ দেন পর্তুগীজ ক্লাব পোর্তো তে। ইউরোপে আসার পর থেকেই একটুও পিছুপা হতে হয়নি জাদরেল কে; বরং যেনো খুব পরিচিত আর খুব জানাশোনা মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন জারদেল স্বমহিমায়! ইউরোপে পা রেখেই নিজেকে ইউরোপের টপ ফরওয়ার্ডদের একজন হিসেবে নিজেকে চিনিয়েছিলেন!

পোর্তোতে নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সোনালী সময় পার করেন মারিও। ইউরোপে নিজের প্রথম সিজনেই ৪৫ ম্যাচে ৩৭ গোল জানান দেয় আরো একজন ব্রাজিলিয়ান হয়তোবা ইউরোপে নিজের জাত চেনাতে এসেছেন, আরো একজন সাম্বাবয় হয়তোবা এসেছেন ইউরোপে নিজের পারফর্ম্যান্সের ছাপ রাখতে! হচ্ছিলোও ঠিক তাই; পরের সিজনগুলোতে অর্থাৎ '৯৭-'৯৮ মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে ৩৯ গোল, '৯৮-'৯৯ মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে ৩৮ গোল, '৯৯-'০০ মৌসুমে ৪৯ ম্যাচে ৫৪ গোল, ততদিনে এই ব্রাজিলিয়ান কে ফুটবল বিশ্বের নতুন প্রতিভা হিসেবে পরিচিত করে ফেলেছে!

পোর্তোর মারিও ছিলেন অনন্য, অসাধারণ। লীগ ম্যাচ কিংবা চ্যাম্পিয়নস লীগ সবখানেই দুর্দান্ত প্রতাপে গোল করেছেন মারিও। মারিও'র দূরপাল্লার শটে গোল, কিংবা ট্রেডমার্ক সব হেডার এখনো স্মৃতিতে এখনো বুদ সেই সময়ের পোর্তো সমর্থকেরা!

পোর্তো ক্যারিয়ারে ১২৫ ম্যাচে ১৩০ গোল, গড়ে প্রতি ম্যাচে ১.০৪ গোল নিঃসন্দেহে অসাধারণ, যেকোন ফুটবলারের জন্যে ঈর্ষণীয়!

উল্লেখ করা আবশ্যক, পোর্তোর হয়ে ৯৮-৯৯ মৌসুমে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জিতেন মারিও, ৯৯-০০ মৌসুমেও ছিলেন ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা তবে লীগ স্ট্যান্ডার্ডে পিছিয়ে থাকায় গোল্ডেন বুট জেতা হয়নি মারিও'র। এরপর গালাতাসারের হয়েও ০১-০২ সালে জিতে নেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট।

mario-jardel-bota-oro

টানা চার সিজন ইউরোপের মঞ্চে দাপটের সঙ্গে পারফর্ম করা মারিও কে নিয়ে ধারণা করাই যায় যে ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে হয়তোবা অনেক উঁচুতে আসীন করবেন তিনি! অনেকে ভেবেও রেখেছিলেন যে আসন্ন ২০০২ বিশ্বকাপে একগাদা তারকার ভীরে হয়তোবা ব্রাজিল দলের অন্যতম সেরা অস্ত্র হতে পারেন এই ফরওয়ার্ড!


২০০০-০১ সিজনে প্রায় ২৮ মিলিয়ন ইউএস ডলারে পোর্তো থেকে টার্কিশ ক্লাব গালাতাসারে তে যোগ দেন মারিও জারদেল।

নিজের প্রথম ম্যাচেই মাদ্রিদ কে ২-১ গোলে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপ জিতে তার ক্লাব গালাতাসারে (ইতোমধ্যে উল্লেখ্য)। এছাড়া লীগের প্রথম ম্যাচে একাই ৫ গোল করে পোর্তোর পরে গালাতাসারেতেও নিজেকে মেলে ধরার আভাস দেন মারিও! হয়েছিলো ঠিক তাই, ৩৪ গোল করে সিজন শেষ করা মারিও ঐ সিজনেও জিতেছিলেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট।

একের পর এক সিজনে মারিও যেনো নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিলেন, নিজেকে চেনাচ্ছিলেন নতুন নতুন রুপে। তবে গালাতাসারে তে এক সিজনের বেশি থাকতে পারেননি তিনি; পরিবেশের সাথে খাপ না খাওয়াইতে পারা, অভ্যন্তরীণ ঝামেলা, সতীর্থ খেলোয়াড়দের সাথে ঝামেলায় সিজন শেষেই পাড়ি জমান আরেক পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং সিপি তে!


ততদিনে ফুটবল ভক্তদের কাছে গোলমেশিন নামে খ্যাতি পেয়ে গেছেন মারিও, বনে গেছেন মারিও থেকে সুপার মারিও! ২৬ বছর বয়সী মারিও মাত্র ৫ সিজনেই ২০০ ক্লাব ক্যারিয়ার গোলের খুব কাছে! বলা হয়ে থাকে, সকালের সুর্য দেখেই নাকি টের পাওয়া যায় সারাটা দিন ঠিক কেমন যাবে। মারিও'র সোনালী আর সুন্দর শুরুটা দেখে যদি আপনি ভেবে থাকেন, সকালের সুর্যের মতোই সারাটাদিন হাস্যজ্বল আর রৌদ্রজ্বল সুর্যের আলোয় কাটাবেন, তবে আপনার আশায় গুড়ো বালি!

পারফরম্যান্সে যেখানে নিজেকে পাহাড় বেয়ে চুড়ায় আসীন করার কথা, সেখান থেকে মারিও'র গল্পটা কেবলই দুঃখের, ব্যার্থতার! অফলপ্রসু দলবদল, বিবাহ বিচ্ছেদ, বিশৃঙ্খল জীবনযাপন, ক্লাবের নিয়মকানুন ভঙ্গ, জাতীয় দলে অবহেলিত থাকা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোকেইন আসক্তি - জারদেল কে একজন পরাজিত যোদ্ধা হিসেবে পরিচয় করিয়েছে!

বলা বাহুল্য, মাঠে জারদেলের গোল করার ক্ষমতা যতটা প্রখর ছিলো, ততটাই দুর্বল ছিলো জাদরেলের মানষিক সক্ষমতা! নিজের মনের উপরে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ ছিলোনা জাদরেলের, অল্পতেই ভেঙে পড়তেন, হতাশায় নিমজ্জিত হতেন! মনে আছে, লীগ স্ট্যান্ডার্ডে পিছিয়ে থাকায় ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পরেও সিজনে গোল্ডেন বুট হাতা ছাড়া হওয়া?! জারদেল এই ঘটনায় এতই ভেঙে পড়েন যে তিনি হতাশা কাটাতে কোকেন নেওয়া শুরু করেন! তবে কোকেন নেওয়ার শুরু যে এখানেই নয় তা ২০১৪ সালে এক ইন্টারভিউয়ে স্বীকার করেন মারিও!

তুরস্কে গিয়ে যখন নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না, ক্লাবে নিজেকে নানাবিধ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি, কোকেইন আসক্তি আরো চেপে বসে জাদরেলের!


পর্তুগীজ লীগ, তৎকালীন স্ট্যান্ডার্ডে অনেক পিছিয়ে থাকার পরেও পোর্তোর মারিওকে আলাদাভাবেই চিনেছিলো ইউরোপবাসী। তবে সেসময়ের অলস্টার একাদশের ব্রাজিলে বরাবরই উপেক্ষিত ছিলেন মারিও। মুলত লীগ স্ট্যান্ডার্ডে পিছিয়ে থাকা এক লীগের পারফর্ম্যান্স কে মূল্যায়ন করেনি তৎকালীন ব্রাজিল ম্যানেজমেন্ট; আবার রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনহো, কিংবা জুনিনহো, ডেনিলসন কিংবা ব্রাজিলের লীগে অসাধারণ পারফর্ম করা লুইজাও, কাকা, এডিলসনের ভীরে সেসময়কার বাস্তবতায় পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয়নি মারিও জারদেল'কে! ২০০১ কোপা আমেরিকা স্কোয়াডে থাকলেও সুযোগ পাননি ঠিকঠাক, তবুও ক্লাবে অসাধারণ পারফর্ম করা মারিও স্বপ্ন বুনেছিলেন '০২ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়ানোর! তিনি বলেছিলেন - "স্কলারি চাইলেই আমাকে সহ দল পরিকল্পনা সাজাতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করছেন না! বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পেলে আমি মানষিক ভাবে চরম ভেঙে পড়ব!" বিভিন্ন লীগে নিয়মিত পারফর্ম করা একগাদা তারকাদের ভীরে তৎকালীন কোচ স্কলারির অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিলো বিশ্বকাপের জন্যে সঠিক দল নির্বাচন করা। একদিকে ফরওয়ার্ড লাইনে অটো চয়েজ কিছু মুখ, অন্যদিকে লীগ স্ট্যান্ডার্ডে পিছিয়ে থাকা পর্তুগীজ কিংবা টার্কিশ ক্লাবে খেলা মারিও জারদেল, এছাড়াও ক্লাবের ডিসিপ্লিনারি ইস্যুতে নেগেটিভ মার্কিং প্রতিযোগিতা থেকে একেবারেই দুরে ঠেলে দেয় মারিও জারদেল'কে! তবে সমৃদ্ধ এক ক্লাব রেকর্ড থাকার পরেও মাত্র ১০ ম্যাচ ব্রাজিলের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়া এবং জাতীয় দলে মারিও জারদেলের বরাবরই উপেক্ষিত থাকাটা ব্রাজিলিয়ান অনেক গণমাধ্যম ভুতুড়ে বলে আখ্যায়িত করেন পরবর্তী সময়ে!

বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পাওয়াটা মারিও কে চরম হতাশায় নিমজ্জিত করে; এসময় মারিও এতটাই কোকেইনে আসক্ত হয়ে পড়েন যে পরবর্তীতে এ আসক্তি থেকে আর বের হতে পারেননি তিনি।

স্পোর্টিং সিপি তেও প্রথম সিজনে অসাধারণ ছিলেন তিনি, করেছিলেন ৪২ ম্যাচে ৫৫ গোল! কিন্তু ২০০২ বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়েই সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়! হতাশা নিমজ্জিত মারিও নিজেকে আরো প্রমাণ করার চেস্টার বদলে ডুবেছিলেন কোকেনের নেশায়! ক্লাব কর্তৃপক্ষের সাথে ঝামেলা, ডিসিপ্লিন ভঙ্গের শাস্তি সহ নানান কারণে পরের সিজনে খেলতে পেরেছিলেন মাত্র ২০ ম্যাচ! ঐ সিজনে ১২ গোল করলেও, ক্লাব ছাড়তে হয় তাকে!

একজন কোকেইন আসক্ত মারিও জাদরেলের আর ঘুড়ে দাড়ানো হয়নি।বরং নেশার মোড়কে নিজেকে এতটাই আবৃত করে রেখেছিলেন যে, কদিন আগেই ইউরোপের মঞ্চে আগুন ঝড়ানো পারফর্ম করা মারিও ক্লাবগুলোর ফ্লপ সাইনিং খ্যাতি পাচ্ছিলেন!

মুলত ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে না থাকাটা মারিকে অবহেলা আর অবাঞ্চনার আঘাতে পিষ্ট করে, সেই আঘাত তাকে এতটাই জর্জরিত করে যে সেই আক্ষেপ কিংবা হতাশা থেকে তিনি আর কখনোই বের হতে পারেননি! প্রিয় ফুটবলের জায়গায় কোকেইন হয়ে উঠে তার নিত্যকার সঙ্গী! এইসময়েই পরিবারের প্রতি অমনোযোগীতায় স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় মারিও'র। ফলে মানষিক ভাবে আরো ভেঙ্গে পড়েন তিনি!

পরবর্তী ৮ বছরে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া সহ ব্রাজিলের নিম্নস্তরের প্রায় ১৪ টি ক্লাবে খেলেন তিনি; কোথাও পুরো একবসিজন কিংবা কোথাও অর্ধেক সিজনের বেশি কাটাতে পারেননি তিনি! সর্বশেষ ২০১১ সালে ফুটবল থেকে অবসর নেন তিনি!

২০১৪ সালের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ব্রাজিলিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেম্বার অফ ডেপুটি নির্বাচিত হোন তিনি! যদিও পরবর্তীতে ড্রাগ ট্রাফিকিং, ভোট কারচুপি, মানি লন্ডারিং সহ নানান অভিযোগে বহিস্কৃত হোন তিনি! এরই মাঝে মাদক আইনে কারাগারেও ছিলেন তিনি!

মারিও'র পিক সময়ে তিনি ছিলেন ফুটবলের আশীর্বাদ স্বরুপ! কিন্তু কেবল মানষিক দৃঢ়তার অভাব আর কোকেইন আসক্তি যেনো এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন দেখে ফুটবল বিশ্ব! ব্রাজিলের মতো দলে সুযোগ পাওয়া লাখো ফুটবলারের স্বপ্ন, এই সোনার হরিণ কেউ ছুঁতে পায় আবার কারো কাছে চিরকাত অধরাই রয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করতে না পারার আক্ষেপে মাদকাসক্ত হয়ে একজন সম্ভাবনাময় ফুটবলার তার ক্যারিয়ার নস্ট করবেন, তা কখনোই কাম্য নয়! কে জানে, সঠিক পথে থাকলে হয়তোবা আমরা সেদিনের জারদেল কে আজ আরো অনেক সাফল্য সজ্জিত দেখতে পেতাম!