• ফুটবল

আ ফেইরিটেল অব দ্য লায়ন্স অব তেরাঙ্গা

পোস্টটি ২০৪৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

২০০২, বুবা দিওপ, রূপকথা...

হ্যাঁ, প্রথমবারের মতো এশিয়ায় আয়োজিত ফিফা বিশ্বকাপের সেই রূপকথা।

তখন সেনেগাল দলটার এমনিতেই বেশ সুসময় যাচ্ছিলো। গোল্ডেন জেনারেশন যাকে বলে। দলের বেশিরভাগ প্লেয়ারদের নামও আবার অদ্ভুতভাবে অনেকটা একইরকম। বুবা দিওপ, মালিক দিওপ, দিওফ, দাফ, দিয়াও, দিয়াত্তা...রেগুলার একাদশের ছয়জন প্লেয়ারের নাম একসাথে শুনলে আমি নিজেও বেশ কনফিউজড হয়ে যাই।

সে যাই হোক। ২০০২ সালে একই বছরে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস আর বিশ্বকাপ দুটোই অনুষ্ঠিত হয়। তবে আফ্রিকান টুর্নামেন্ট টা হয়েছিলো বছরের একদম শুরুতে। শুরু থেকেই অসাধারণ পারফর্ম করে প্রথমবারের মতো ফাইনালে চলে যায় সেনেগাল। ফাইনালেও পুরো ম্যাচ অসাধারণ খেলে দল। ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! সেখানে প্রথম দুই শটে লক্ষ্যভেদ করলেও পরের তিনটা শট জালে ঢুকাতে ব্যর্থ হয় তেরাঙ্গার সিংহরা। তাতে ২-৩ গোলে পরাজিত হয় সেনেগাল।

তাতে মনোবল হারায়নি সিসে-দিওপ-কামারা রা। প্রথমবারের জায়গা করে নেয় বিশ্বকাপের মঞ্চেও।

image_search_1590155278646

মে এর শেষে শুরু হয়েছিলো সে আসর। সেনেগালের ভাগ্যটা খারাপই বলা যায়। প্রথমবার খেলতে এসেই গ্রুপ সঙ্গী হিসেবে পায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, বিশ্বকাপে সবসময়ের অন্যতম ফেভারিট লাতিন জায়ান্ট উরুগুয়ে আর ফর্মের তুঙ্গে থাকা ডেনমার্ক কে। এক কথায় গ্রুপ অব ডেথ।

ফ্রান্সের তখনকার দলটাকে শুধু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বললে ভুল হবে। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা টিম ছিলো ওইটা। তবে দুর্বলতা বলতে ছিলো দেশমের অবসর, আর ইঞ্জুরির কারণে দলের মূল তারকা জিদানের ছিটকে যাওয়া।

প্রথম ম্যাচেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখি হতে হয় সেনেগালকে। আর ভাগ্যবিধাতাও মনে হয় তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। অনেক চেষ্টা করেও কিছুদিন আগে ট্রফি জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসা দলটির গোলমুখ উন্মোচনে ব্যর্থ হলো থেয়েরি অরি-দাভিদ ত্রেজেগেদের ফ্রান্স। আর ওইদিকে কাউন্টার এটাক চালিয়ে যাচ্ছিলো সেনেগালও। ফল আসলো হাতে নাতে। থুরাম-দেসাইলি-লিজারাজু দের ইস্পাত কঠিন ডিফেন্স ভেদ করে গোল করে বসেন পাপা বুবা দিওপ। আর ঠেকায় কে! প্রথম ম্যাচেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়লাভ করে সেনেগাল। রচিত হয় তর্কসাপেক্ষে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটন।

image_search_1590155118906

দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় ডেনমার্কের। প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ে কে হারানো ডেনমার্ক কেও চেপে ধরে সেনেগাল। এ ম্যাচেও ১-১ গোলে ড্র নিয়ে ফেরে।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে লাতিন জায়ান্ট উরুগুয়ের বিপক্ষেও প্রায় ইতিহাস রচনা করে ফেলেছিলো সেনেগাল। সুওনে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু উরুগুয়েও মনোবল না হারিয়ে লড়াই করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তিনটি গোলই শোধ করে দেয়, ড্র হয় এ ম্যাচটাও।

এক জয় ও দুই ড্রয়ে অপরাজিত থেকেই গ্রুপ পর্ব শেষ করে সেনেগাল, গ্রুপ রানারআপ হিসেবে কোয়ালিফাই করে শেষ ষোল তে।

এখানে এসে তারা মুখোমুখি হয় এফ গ্রুপে ইংল্যান্ড আর্জেন্টিনা কে সরিয়ে দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া সুইডেনের। তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্লেয়ার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের সেটি ছিলো প্রথম বিশ্বকাপ।

image_search_1590155214703

ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় সুইডেন। এগার মিনিটের মাথায় সেনেগালের জালে বল ঢুকান হেনরিক লারসন। পিছিয়ে পড়ে যেন আরও উদ্যমী হয়ে ওঠে দল। আক্রমণ পালটা আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। অবশেষে সাঁইত্রিশ মিনিটে গিয়ে হেনরি কামারার গোলে সমতায় ফেরে সেনেগাল।

বাকি সময়ে দুইদল একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যায়, কিন্তু গোলের দেখা পায়নি আর কেউই। ১-১ গোলে শেষ হয় মূল নব্বই মিনিট।

অবশেষে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অবশেষে আসে সেই অসাধারণ মুহূর্ত। ১০৪ মিনিটের মাথায় গোল্ডেন গোল করেন কামারা। ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সেনেগাল। বাকি সময়ে বহু চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি সুইডেন, জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যায় আলিউ সিসের দল।

কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের মুখোমুখি হয় সে বিশ্বকাপের আরেক বিস্ময় তুরস্ক। জাপানের ওসাকা শহরের নাগাই স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে পুরো সময় আক্রমণ প্রতি আক্রমণ চালিয়ে যায় উভয়দলই। কিন্তু গোলমুখ খুলতে পারেনি কেউই। গোলহীন ভাবেই শেষ হয় মূল সময়। এ ম্যাচটিও গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আগের ম্যাচে গোল্ডেন গোলে জয়লাভ করেছিলো সেনেগাল, আর এবার তারাই এর শিকার হয়। অতিরিক্ত সময়ের চার মিনিটের মাথায় গোল্ডেন গোলটি করেন ইলহান মানসিজ। সেমি ফাইনালে পৌঁছে যায় তুরস্ক, শেষ হয় তেরাঙ্গার সিংহদের স্বপ্নযাত্রা।

image_search_1590155510411

বিশ্বকাপ থেকে ফিরে এসে আবারও পিছিয়ে পড়তে থাকে সেনেগাল, হারিয়ে যেতে থাকে সেই গোল্ডেন জেনারেশন। পরের তিন বিশ্বকাপে আর জায়গাই করে নিতে পারেনি। গতবারের বিশ্বকাপে ষোল বছর পর আরও একবার জায়গা করে নিয়েছিলো, তবে পেরোতে পারেনি গ্রুপ পর্ব।

শুধু বিশ্বকাপেই নয়, আফ্রিকান নেশনস কাপেও একই দশা। ২০০৬ সালে সেমিফাইনাল খেলার পর ২০১৬ পর্যন্ত বাকি পাঁচটি টুর্নামেন্টের তিনটি তে গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেনি, বাকি দুটিতে তো অংশই নিতে পারেনি।

তবে সম্প্রতি আবার আশার আলো ফুটে উঠেছে সেখানে। বিশ্বসেরা ফরওয়ার্ড সাদিও মানের চোখে চোখ রেখে আবারও স্বপ্ন দেখছে সেনেগালবাসী। সর্বশেষ গত বছরের নেশনস কাপে আরও একবার ফাইনালে উঠেছিলো দল, তবে এবারও ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।

তবে কি এটা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিরই লক্ষণ? আরও একবার বিশ্বকাপে চমক দেখাতে যাচ্ছে তেরাঙ্গার সিংহরা?

image_search_1590155510411

দুই বছর পর আরও এক বিশ্বকাপ। হয়তো অপেক্ষা করছে আরও কিছু নতুন নতুন চমক। সেসব চমকের শামিল হতে পারবে কি এই সেনেগাল?

এখন শুধু দেখার পালা...