• ফুটবল

টোটাল ফুটবল - দ্যি মোস্ট সারপ্রাইজিং ট্যাক্টিস অফ ফুটবল

পোস্টটি ২৪৪৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

B2KdSmzআধুনিক ফুটবলের যাত্রা শুরু হয় ১৮৭০ সালের দিকে। শুরু দিকের দিনগুলোতে ফুটবলের মাঠের ট্যাক্টিস কিংবা ফরমেশন ছিলো খুবই অদ্ভুদ ধরণের!ছোটবেলায় আমরা পাড়ায় ফুটবল খেলতে নামলে যেমন সবাই একসাথে স্ট্রাইকার হয়ে যেতাম, প্রতিপক্ষের কাছে বল গেলেই যেভাবে সবাই মিলে একসাথে বল কেড়ে নেওয়ার চেস্টা করতাম, তখনকার দিকের ট্যাক্সিসও ছিলো অনেকটা এমন!
ছিলো ১-২-৭, ২-২-৬ কিংবা ২-৩-৫ এর মত অদ্ভুত সব ফরমেশন! এরপর কালের বিবর্তনে মাস্টারমাইন্ড কোচরা আনতে থাকের একের পর এর বিখ্যাত ট্যাক্টিস! অইসব ট্যাক্টিসের আবার কাউন্টার ট্যাক্টিস নিয়ে আসেন অন্য আরেকজন মাস্টারমাইন্ড! এভাবে  দিনকেদিন ফুটবল হয়ে উঠে আরো বেশি প্রতিযোগিতামূলক, আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্য!

তবে ফুটবলের সবচেয়ে প্রোডিজিয়াস এবং সারপ্রাইজিং ট্যাক্সিস বলা হয় 'টোটাল ফুটবল' কে! ১৯০০ সালের দিকে যার ভিত গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন আয়াক্সের কোচ 'জ্যাক রেনল্ডস', পরবর্তীতে ৭০' এর দশকে এর পরিপূর্নতা দেন আয়াক্সের আরেক কোচ 'রাইনাস মাইকেলস' এবং তারই শিষ্য 'ইয়োহান ক্রুইফ'। 
,
,
'রাইনাস মাইকেলসের' আগে আরো অনেক কোচই তাদের টিমকে টোটাল ফুটবলের আদতে খেলিয়েছেন। এর মধ্যে, ৪০' এর দশকে আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেট, ৫০' এর দশকে পুস্কারের হাঙ্গেরি কিংবা ইংল্যান্ডের বার্নলি, ৬০' এর দশকে ব্রাজিলের সান্তোস উল্লেখযোগ্য।
তবে টোটাল ফুটবলের সবচেয়ে ইফেক্টিভ প্রয়োগ এবং টোটাল ফুটবলকে সবচেয়ে জনপ্রিয় করে তোলেন 'রাইনাস মাইকেলস' এবং 'ইয়োহান ক্রুইফ'।
,
,
৭০' এর দশকে 'টোটাল ফুটবল' এর আগে ফুটবলে ছিলো ইতালীর 'কাতানেচ্চিও' ফুটবলের জয়জয়কার। 'কাতানেচ্চিও' ছিলো খুবই ডিফেন্সিভ ধরনের ফুটবল ট্যাক্টিস। "ফুটবলে ১ গোল বেশি না দিয়ে, ১ গোল কম কন্সিড করেও ম্যাচ জিতা যায়" এই লাইনটাই ছিলো 'কাতানেচ্চিও' ট্যাক্টিসের মূল ভিত্তি। এই ট্যাক্সিসের ফরমেশন ছিলো ৫-৩-২। যেখানে ৫ ডিফেন্ডারের মধ্যে ৪ জন প্রতিপক্ষের এট্যাকারদের 'ম্যান টু ম্যান' মার্কিং করে রাখতেন। বাকি ১ জন ছিলো সুইপার ডিফেন্ডার। এই ট্যাক্টিস প্রয়োগ করে ৬০' এর দশকে ইন্টার মিলানের কোচ 'হেরেরা' প্রচুর সফলতা পান। কিন্তু "টোটাল ফুটবলের" জাগরণের পর "কাতানেচ্চিও" ট্যাক্টিস ব্যার্থতার মুখ দেখা শুরু করে।
,
,
"টোটাল ফুটবল" হলো এমন একধনের ট্যাক্টিস যেখানে একমাত্র 'গোলকিপার' ছাড়া অন্য কোনো প্লেয়ারেরই নির্দিষ্ট কোনো পজিশন থাকে না। প্লেয়াররা নিজেরদের মধ্যে অনবরত সাবলীল ভাবে পজিশন সোয়্যাপ করতে থাকে! 'রাইট মিড' উপরে উঠে গেলে 'রাইট উইংগার' নিচে নেমে এসে অই জায়গা কভার দেয়, 'লেফট ব্যাক' উপরে উঠে গেলে 'লেফট মিড' অই জায়গায় চলে যায়। এভাবে অনবরত একের পর এক পজিশন সোয়্যাপ করার ফলে 'ম্যান মার্কিং' সিস্টেম পুরো মাঠে মারা যায়!
প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা কনফিউজড হয়ে যেতেন যে তারা কি পিছিয়ে যাওয়া ফরওয়ার্ডকে মার্ক করবে নাকি সামনে এগিয়ে আসা ডিফেন্ডারকে মার্ক করবে!
এই কনফিউশানের সুযোগ নিয়ে আচমকাই দেখা যেতো প্রতিপক্ষের ডিবক্সের ভিতরে কোনো প্লেয়ার স্পেস পেয়ে গেছেন! ফলাফল যা হওয়ার তাই হতো, গোওওওওল! এভাবে 'টোটাল ফুটবল' 'ম্যান মার্কিং ফুটবলের' ভিতটাই নাড়িয়ে দেয়!
,
,
'রাইনাস মাইকেলসের' আয়াক্সের টিমে 'টোটাল ফুটবলটা' সবচেয়ে ভালো বুঝতেন 'ক্রুইফ'! তাই তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠতো 'রাইনাসের' ট্যাক্টিস!
কাগজে কলমে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে ক্রুইফকে দলের সেন্টার ফরওয়ার্ড হিসেবে নামানো হলেও, মাঠে নেমে তিনি কখনো রাইট উইং, কখনো লেফট উইং, কখনো এট্যাকিং মিড, কখনো আবার ডিফেন্সে যেয়েও দলের জন্য স্পেস ক্রিয়েট, চান্স ক্রিয়েট কিংবা গোল করতেন! এভাবে পুরো মাঠ চষে বেড়িয়ে পুরো খেলাটাই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি!
,
,
এই 'টোটাল ফুটবলের' উপর ভর করেই আয়াক্স তাদের ইতিহাসের সেরা সময়টা কাটায়!
১৯৭১-৭২ আর ১৯৭২-৭৩ সিজন মিলিয়ে আয়াক্স তাদের হোম গ্রাউন্ডে টানা ৪৬ ম্যাচে জয় পায়!!!
এই সময়ের মধ্যে তারা ম্যাচ হারে মাত্র একটি!
'রাইনাস' এবং 'ক্রুইফ' মিলে জিতে নেয় ৮ লিগ টাইটেল, ৩ টি ইউরোপিয়ান কাপ এবং ১টি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ!
১৯৭৪ বিশ্বকাপে এই টোটাল ফুটবলের উপর ভর করেই নেদারল্যান্ডস পৌঁছে যায় বিশ্বকাপ ফাইনালে!

পরবর্তীতে ১৯৮৮-১৯৯৬ সালে বার্সেলোনার ম্যানেজার থাকাকালীন 'ইয়োহান ক্রুইফ' টোটাল ফুটবলকে আরেকটু সমৃদ্ধ করে "Juego de posicion" নামে বার্সায় প্রয়োগ করেন। যার অপর নাম 'তিকি তাকা'! পরবর্তীতে এই 'তিকি তাকা' দিয়েই পেপ গার্দিওয়ালা গড়ে তোলের বার্সার ইতিহাসের ভয়ংকর এক টিম, বার্সাকে এনে দেন তাদের ইতিহাসের সেরা সাফাল্য।
,
,
'টোটাল ফুটবল' যেমন নান্দনিক, ঠিক তেমনি অন্তত হার্ড একটা ট্যাক্টিস! এই ট্যাক্টিসে দলের সব প্লেয়ারকেই হতে হয় ভার্সেটাইল, মাঠের সব জায়গায় সমান নজর রাখতে হয়, সর্বদা স্পেস ক্রিয়েশনের চিন্তা করতে হয়! এইজন্য যেকোনো টিমই এই ট্যাক্টিস ফলো করতে পারে না!

তবে টোটাল ফুটবলেরও উইক জোন আছে! '৭৪ এর ফাইনালে জার্মানি "ভিজিল্যান্ট ম্যান মার্কিং" করে টোটাল ফুটবলকে আটকে দিতে পেরেছিলো! বর্তমানে 'জোনাল মার্কিং' হলো 'টোটাল ফুটবলের' অন্যতম বড় শত্রু!
,
,
কিন্তু "টোটাল ফুটবল" যেভাবে 'ম্যান মার্কিং' এর ভিত নাড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকে সারপ্রাইজ দিয়েছিলো তা অন্য কোনো ফুটবল ফিলোসোফিই করতে পারে নি! এইজন্য টোটাল ফুটবলকে বলা হয় "দ্যি মোস্ট সারপ্রাইজিং ট্যাক্টিস অফ ফুটবল"!