• ক্রিকেট

সাকিবের আইপিএলে যাওয়াতে বিসিবির যে লাভ

পোস্টটি ২৩৩৬২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আহ, সাকিব আল হাসান! যেমন খুশি তেমন কান্ড ঘটান। দেশের  ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও যেন তাকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। তিনি ছুটি চান, ছুটি পেয়েও যান। এবং এর আগেও প্রশ্ন উঠেছে দেশের প্রতি তারঁ নিবেদন নিয়ে। কিন্ত যখন সে ছুটি হয় আইপিএলের জন্য তখন তা নিয়ে প্রশ্নের স্রোত হয়ে উঠে আরও বেগবান।

সাকিব আল হাসান টেস্ট খেলতে পছন্দ করেন না, এমন গুঞ্জন বাংলার ক্রিকেটাকাশে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। সাকিব টেস্ট ছেড়ে দিতে চান না একেবারে, কিন্ত বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলার চেয়ে তারঁ কাছে গুরুত্ববহ আইপিএলে খেলা। যদি তাই না হতো, তবে তিনি টেস্ট ক্রিকেটটাই একেবারে ছেড়ে দিলেন না কেন? 

যে বিসিবির অধীনে সাকিব আল হাসান সেই বিসিবির যেকোন সিদ্ধান্ত মানতেই তো বাধ্য তিনি। সাকিব চাইলেন ছুটি, আর অমনি অমনি দিয়ে দেয়া হলো তাকে ছুটি। ন্যাশনাল ডিউটির পরে যদি সুযোগ থাকতো তখন দেয়া যেত আইপিএলে খেলার অনুমতি। কিন্ত না! ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান বললেন, কেউ না চাইলে তো আর তাকে জোর করে খেলানো যায় না। যদি জোর করে খেলানো নাই যায় তবে দেশের খেলা রেখে ফ্র‍্যাঞ্চাইজি এক লীগে খেলার জন্য অনুমতিও তো দেয়া না যেতে পারতো। বিসিবি এমনটা করতে পারেনি। এর পিছনের কারণ কি হতে পারে? বিসিবি কি সাকিব আল হাসানের কাছে জিম্মিই হয়ে গেল?

দিনে দিনে ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটাঙ্গন। অর্থের ঝনঝনানি দেয়া এসব লীগে ক্রিকেটারদেরও রয়েছে ঝোক। এমনকি কেউ কেউ দেশের হয়ে খেলার চেয়েও বেশি প্রাধান্য দেন এসব লীগে খেলাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররাই এর সবচে বড় ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অবশ্য প্রাধান্যতার এ বিষয় সব ধরনের লীগের জন্য যে তা কিন্ত নয়। বিশেষ করে তা বিশ্বের সেরা লীগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের জন্যেই। তো ক্রিকেটারদের আইপিএলে খেলতে দিলে সে ক্রিকেটারের বোর্ডের এতে কি কোন লাভ আছে? প্রত্যক্ষ লাভটা আইপিএলে খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামোর একটা অংশ খেয়াল করলেই খুজে পাওয়া যায়।

আইপিএলের নিলামে কোন খেলোয়াড়কে যত টাকায় কেনা হয়, তাই ঐ খেলোয়াড়ের বেতন এবং তিনি এক মৌসুমে উপস্থিতির জন্যই তা পাবেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্যমতে কোন খেলোয়াড়ের যত বেতন হয় তার ২০ শতাংশ বিসিসিআই (দ্যা বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া) ওই খেলোয়াড়ের বোর্ডকে প্রদান করে। তবে সেটা ওই খেলোয়াড়ের বেতন থেকে কেটে নয়, বিসিসিআইয়ের আইপিএল কেন্দ্রীয় রাজস্ব পুল থেকেই তা দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে। আর খেলোয়াড় তাঁর বেতনের পুরো টাকাটাই পান। ধরুন, ইংল্যান্ডের একজন ক্রিকেটার বিক্রি হলেন ১০ কোটি টাকায়, তো আইপিএলে যদি সে ক্রিকেটার উপস্থিত থাকেন তাহলে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড পাবে এর ২০ শতাংশ অর্থাৎ ২ কোটি টাকা।

সাকিব আল হাসানকে কলকাতা নাইট রাইডার্স ২০২১ সালের আইপিএলের নিলামে প্রায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় কিনেছে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজে ছুটি নিয়ে সাকিব যাবে আইপিএলে খেলতে। তো এতে বিসিবির কি লাভ? বিসিবি পাবে এর ২০ শতাংশ পরিমাণ টাকা। তার মানে বিসিবির কোষাগারে জমা হবে প্রায় ৭৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

সাকিবের একমাত্র বাংলাদেশী সঙ্গী হিসেবে আইপিএলে যাওয়ার সুযোগ আছে মুস্তাফিজুর রহমানের। তবে মুস্তাফিজ আইপিএল খেলতে যাবেন কি না সে সিদ্ধান্ত বিসিবি ছেড়ে দিয়েছিল মুস্তাফিজেরই উপর। এবং মুস্তাফিজ বলেছেন তাঁর কাছে আগে দেশ, পরে আইপিএল। যদি দেশের খেলার পরে বা দেশের দায়িত্ব থাকে না এমন সময়ে আইপিএলে খেলার সুযোগ থাকে তখনই বিসিবির অনুমতি পেলে তিনি যাবেন আইপিএলে। চতুর্দশ আইপিএলের আগে নিলামে মুস্তাফিজুর রহমানকে রাজস্থান রয়্যালস কিনেছে তারঁ ভিত্তিমুল্য ১ কোটি ১৭ লাখ টাকায়। যদি মুস্তাফিজ আইপিএলে খেলতে যান তাহলে সেখানেও আছে বিসিবির লাভ। বাহাতি এ পেসারের আইপিএলে খেলার বিনিময়ে বিসিসিআইয়ের থেকে বিসিবির কোষাগারে জমা হবে প্রায় ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। মুস্তাফিজের আইপিএলে যাওয়া-না যাওয়া বলে দিবে সময়ই। এবার না-হয় আবার ফিরা যাক সাকিবেই।

বিসিবি সাকিবকে ছুটি দিল। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাড়াল যে- সাপও মরল, লাঠিও ভাঙ্গলো না। সাকিবের পছন্দের ফরম্যাটের তালিকায় সবশেষেই আছে টেস্ট। সে টেস্ট না খেলে আইপিএলে খেলতে পারলে সাকিব অবশ্যই তাই খুশি হবেন। এদিকে বিসিবিও এতে কিছুটা আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হলো। তবে শুধুই যে আর্থিক দিকের কারণেই বিসিবি সাকিবকে দেশের বদলে আইপিএলে খেলার অনুমতি দিয়ে দিবে, সেটাও ধারণা করা যায় কি? আসল কারণ কি আমরা কেউই জানিনা। আমরা যেটা করতে পারি, সেটা হচ্ছে শুধুই অনুমান। আর কিছু প্রশ্ন, যেসবের উত্তর আদৌ পাবো কিনা তাঁরও উত্তর জানিনা।

বিসিবি সভাপতিও জানিয়ে দিয়েছেন যে চাইবে সেই খেলতে পারবে ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট, দেশের খেলা থাকলেও। এতে বিসিবি আর্থিক দিয়ে কিছুটা লাভবান হলেও ক্ষতিটা যে হবে আমাদের ক্রিকেটেরই!