• ক্রিকেট

অসময়ে সুসময়ের গান

পোস্টটি ১২৫২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আর যাই বলুন, এটা স্বীকার করতে তো বাধা নেই যে ভারতের ক্রিকেটের দ্রুতগতির এ উন্নতির পথে সবচে বেশি ভুমিকা আইপিএলেরই। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের মানোউন্নয়নেরও এতে আছে নিঃসন্দেহে অবদান। তবে আইপিএলের অবদানও অনস্বীকার্য। এখানে শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররাই তো খেলেন না, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেরা বা বিশ্বের সেরারা খেলে থাকেন। সেই তাদের সংস্পর্শে এসে, তাদের বিপক্ষে খেলে শেখার তো আছে অনেক কিছুই। অথচ একজন উঠতি ক্রিকেটারের জন্য একসময় এরকম ক্রিকেটাররা যেন ছিলেন অন্য জগতের বাসিন্দা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাড়তি চাপের অন্যান্য কারণের সঙ্গে নিশ্চয়ই এটিও ছিল একটি কারণ। সেই তাদের সঙ্গে খেলা, এক ড্রেসিং রুমে বসা, কথা বলা। এতে কি হলো? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে চাপ সেটা একেবারে মুছে গেলো সেইসব উঠতি ক্রিকেটারদের মন থেকে। তার প্রমাণ তো কিছুদিন আগেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দিয়েছেন ইশান কিশান ও সুর্যকুমার যাদব। একজন নিজের অভিষেকেই সাবলীল ফিফটি হাকিয়েছেন। আরেকজন প্রথম বলেই এসে ডিফেন্সিভ খেলবেন, সামনে তাঁর জফরা আর্চার। তিনি করলেন কী, ফাইন লেগ দিয়ে মেরে দিলেন ছয়। সে শটের ছবি বহুদিনের জন্য আপনার মনে গেথে থাকার কথা!

আইপিএলটা আসলে কি করল? সোজা কথা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপটাই কমিয়ে দিল। আইপিএলের চাপটাও তো কম নয়! তবে সে চাপে তাঁরা ঠিক পারফর্ম করেই আন্তর্জাতিকে পা রাখেন বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ তাদের তেমন কাবু করতে পারেনা। আইপিএলের এত গুণগান গাওয়ার একটাই কারণ। আমাদেরও যে এমন একটা লীগ আছে। বিপিএল! যেন আমাদের এক হতাশার নাম। 

পাকিস্তানের ক্রিকেট লীগ বিপিএলের পরে এসেও তাঁরা এখন এগিয়েই। আমাদের তো ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকই বারবার পরিবর্তন হতে থাকে, তাতে পরিবর্তন আসে ফ্র্যাঞ্চাইজি নামেও। আর আইপিএলের ফ্যানবেজ কিংবা জনপ্রিয়তার অন্যতম একটা কারণ তো এই একই ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকাই। চেন্নাই সুপার কিংস বলতে আপনি বুঝেন এমএস ধোনি, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স বলতে রোহিত শর্মা। তামিম ইকবাল তাঁর লাইভ চ্যাটেও এমন কোনও পদ্ধতি নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। যাতে ফ্র্যাঞ্চাইজির পরিচয়ে তাদের পরিচয় হয়, তাদের পরিচয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির পরিচয় হয়। আচ্ছা সেটা না-হয় আপাতত বাদই দিলাম!

আমাদের আশা- আসবে সুদিন, আসবে সুসময়। যে সময়ে ক্রিকেটবিশ্বে আলাদা একটা স্থানে পৌছাবো আমরা। তা এখন আবার এই অসময়ে সুসময়ের গান কেন? আমাদের ক্রিকেটের মাঠেও যাচ্ছে অসময়, মাঠের বাইরেও অসময়। মাঠের বাইরে চলছে কথার খেল। ক্রিকেটার এসে তাঁর কথা বলেন মিডিয়াতে, বিসিবিও বলে মিডিয়াতে। তাতে স্পষ্ট হয় এ দুপক্ষের পারস্পরিক সম্পর্কটা কেমন। এই অসময়ে তাই সুসময়ের আশা ফুরাবার গান, কারণটা সাকিবের লাইভ।  আইপিএলকে ঘিরে সাকিব বিতর্কের অবসানের চেষ্টাস্বরুপ ওই লাইভে সাকিব বলেছেন এই আইপিএলের সুফলের কথা, সাথে আমাদের বিপিএলেরও কথা। আর তাতেই পুরোনো আক্ষেপ জেগেছে নতুন করে। তা বিপিএলই কি শুধু আমাদের সে সুসময়ের আশা ফুরাতে পারবে? তা ফুরানোর সম্ভাবনাও তো কম নয়! তবে সাথে যে ঘরোয়া ক্রিকেটেরও মানোউন্নয়নের মাধ্যমে এতে থাকতে হবে অবদান, তা কেই-বা না জানে!

296315.6

আমাদের বিপিএলে অভিযোগের অন্ত্য নেই। ব্রডকাষ্টিং সমস্যা, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও গভর্নিং কাউন্সিলের মধ্যকার সমস্যা, ক্রিকেটারদের দেনা-পাওনার হিসাবটা এখন হয়তো কমেছে। আরও কত কি! অন্য সব জায়গায় ফিক্সিংয়ের ধরন একরকম, এখানে দলের মালিক কর্তা-ব্যাক্তিরাই সেচ্ছ্বায় হারতে চান, করান ফিক্সিং- শোনা যায় এসবও। অদৃশ্য সে জগতে বরং না-ই যাই!

সবচে বড় কথা। এই বিপিএল দিয়ে আমাদের ক্রিকেটের লাভটা কি হলো? ক্রিকেটাররা এই বিপিএলেই তৈরি হয়ে যাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। হায়! অথচ আমাদের ক্রিকেটাররা তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই বছরের পর বছর খেলেও ঠিক সে মানের ক্রিকেট খেলার জন্য তৈরি হতে পারেন না। কারণ ওই যে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ধারেকাছেও নয়! তা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কিছুটা ছায়া ফেলা যেতে পারতো বিপিএলে। সেই বিপিএলই যে জড়িয়ে আছে কত আক্ষেপে! 

বারবার ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম বদলাবে না, ফ্র্যাঞ্চাইজির পরিচয়ে পরিচয় হবে ক্রিকেটারদেরও। সবশেষে টাকা আসবে, টাকায় ভালো ভালো ক্রিকেটাররা আসবে, তাতে লাভবান হবে আমাদের ক্রিকেটাররা। হোম এন্ড এওয়ে সিস্টেম না হলেও অন্তত ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ঢাকা পাথওয়েতে বিপিএল চলবে না। স্টেডিয়াম সংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে পিচের মানও বৃদ্ধি পাবে। আইপিএলের এত জনপ্রিয়তার অন্যতম একটা কারণ দর্শকরাই তো! সেখানে আমাদের দর্শকদের কথা যেন ভাবাই হয় না! যদি ভাবাই হতো, তাহলে এত নিম্নমানের ব্রডকাস্টিং হতো কিনা সন্দেহ। তাই ভালো ধারাভাষ্যকারদের সঙ্গে খেলাটা টিভিতে দেখে অন্তত মাঠের খেলার বাইরের কিছুর জন্য দর্শকদের মনে যেন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিরক্তিও না আসে সেদিকেও একটু নজর দেয়া উচিত। এসব কিছু অবশ্যই কোনও রকেট সাইন্স না! সবার মতো বিসিবিও বুঝে! শুধু বাস্তবায়নই করে না। কেন করে না? তা জানা যায় না। এ অজানা তো জানে তারাই!