• ক্রিকেট

ঝড়ের বেগে ২০০'র পথে

পোস্টটি ১১৯১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বলা হয়ে থাকে, টেস্ট ক্রিকেটটা নাকি ধৈর্য্যের খেলা। একজন ক্রিকেটারের জন্য আসল পরীক্ষা তো টেস্ট ক্রিকেট। এখানে কে কম বলে বেশি রান করছে তা দেখা হয় না। দেখা হয়, কে সবচেয়ে বেশি বল খেলছে। কে কত লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে পারে। 

 

তবে, এমন কিছু  ব্যাটসম্যানও আছেন।  যাদের কাছে টেস্ট,ওয়ানডে কিংবা হালের টি-টুয়েন্টি সবকিছুই যেন একই। টেস্ট ক্রিকেটটাই অনেকে টি-টুয়েন্টি বানিয়ে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। এই তালিকায় আছে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, বিরেন্দর শেওয়াগ, নাথান অ্যাস্টল,  ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও হার্শেল গিবসের মতো বড় বড় নাম।  

 

কম বল মোকাবেলা করে বা কম সময়ে  যারা দ্রুততম  ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। তাদের নিয়ে আলোচনা করা যাক-

 

 

বলের হিসাব 

 

নাথান অ্যাস্টল ( নিউজিল্যান্ড) 

 

এই কিউই ক্রিকেটার ৮১ টা টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন হাজার চারেকের উপরে।  টুকটাক বোলিং ও করতেন। তাঁর একটা রেকর্ড এখনো অক্ষুণ্ণ রয়ে গেছে। ঠিক ১৯ বছর আগে একটা রেকর্ড করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড। সবচেয়ে কম বল খেলেই। মাত্র ১৫৩ বল খেলেছিলেন। সময় নিয়েছিলেন মাত্র ২১৭ মিনিট। ২০০২ সালে ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ২২২ রান। যা তাঁর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিকও এই কিউই ব্যাটসম্যান।  

 

বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)

 

টেস্ট ক্রিকেটের শীর্ষ অলরাউন্ডার। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই স্টোকস যেকোনো দলে জায়গা পেতে পারেন।   বোলার হিসেবেও কি নয়? 

 

টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তিনি। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে তো প্রথম। ২০১৬ সালে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এমন কীর্তি গড়েন তিনি। খেলেছিলেন মাত্র ১৬৩ বল। 

 

বিরেন্দর শেওয়াগ (ভারত) 

 

ক্রিকেট বিশ্বের সম্ভবত সবচেয়ে  ভয়ংকর ওপেনার ছিলেন। তাঁর কাছে টেস্টও যেন টি-টুয়েন্টি।  তাঁর খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমারও। ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার যিনি টেস্টে পাঁচটা দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির মালিক।এরমধ্যে তিনটাই বিদেশের মাটিতে। তাঁর সবচেয়ে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরিটা মাত্র ১৬৮ বলে! 

 

টেস্টে দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিকও তিনি। মাত্র ২৭৮ বলে করেছিলেন। দ্রুততম '২৫০' রানের রেকর্ডও তাঁর। শচীন টেন্ডুলকারের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতেও ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। টেস্টে ট্রিপল ও ওয়ানডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র দুইজন ক্রিকেটার। এরমধ্যে বিরেন্দর শেওয়াগও একজন। আরেকজন ক্রিস গেইল।  

 

ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (নিউজিল্যান্ড)   

 

ক্রিকেটে যার নিখাদ ভদ্রলোক ভাবমূর্তি।  ব্যাট হাতে নামলে যেন ঠিক তাঁর বিপরীত। রীতিমত বিধ্বংসী হয়ে উঠেন। বোলারদের উপর চড়াও হন।

 

 ২০১৪ সালে শারজায় তা হাড়েহাড়ে  টের পেয়েছিল পাকিস্তানী বোলাররা।তাদের পিটিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ম্যাককালাম।  মাত্র ১৮৬ বলে।   

 

হার্শেল গিবস (দক্ষিণ আফ্রিকা) 

 

বোলারদের জন্য রীতিমত আতঙ্কের নাম ছিলেন। বিশ্ব ক্রিকেটে ছয় বলে যে  ছয় ছক্কা মারা যায়। তা প্রথম দেখিয়েছিলেন এই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। পরে তাঁর রেকর্ডে যুবরাজ সিং ও ভাগ বসিয়েছেন। টেস্টে ২০০৩ সালে পাকিস্তানী বোলারদের উপর একবার তাণ্ডব চালিয়েছিলেন গিবস।  কেপটাউনে পাক বোলারদের ঘুম হারাম করে তুলে নিয়েছিলেন দ্বিশতক। মাত্র ২১১ বলে। 

 

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া) 

 

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম একবার বলেছিলেন, " গিলক্রিস্টকে বোলিং করে কোনোদিন স্বস্তিতে থাকতে পারবেন না। ওভারের সেরা বলটাও সীমানা ছাড়া করতে পারে সে"।

 

বোলারদের ত্রাস ছিলেন এই অজি উইকেটরক্ষক।টেস্টে অষ্টম দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি তাঁর। ২১২ বল খেলেছিলেন। ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গে এমন কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। 

 

স্যার ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড)  

 

সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন।  টেস্টে ক্রিকেটে অনেক স্মরণীয় কীর্তি আছে তাঁর।আশির দশকে ভারতে বিপক্ষে দ্য ওভালে এমনই এক কীর্তি করেছিলেন। টেস্টে নবম দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। 

 

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) 

 

ক্রিস গেইল নামটাই যথেষ্ট। তাঁর সম্পর্কে নতুন করে বলার কী দরকার! ব্যাট হাতে যিনি বোলারদের খুন করতে পারেন। টেস্টে ট্রিপল,  ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন মাত্র দুইজন ক্রিকেটার। তাদের একজন তিনি। ২০১০ সালে গলে শ্রীলংকার বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মাত্র ২২১ বলে!  

 

এছাড়া  শ্রীলঙ্কান অরবিন্দ ডি সিলভা,  উইন্ডিজ অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডার, ইংলিশ ক্রিকেটার গ্রাহাম টর্প, ভারতীয় মহেন্দ্র সিং ধোনী এবং স্যার জর্ডান গ্রিনিজ দ্রুততম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন। 

 

সময়ের হিসাব

 

স্যার ডন ব্রাডম্যান (অস্ট্রেলিয়া) 

 

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে মানা হয় তাঁকে। যার ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪! যেকোনো খেলায় এমন ঈর্ষনীয় সাফল্য সম্ভবত আর কারও নেই। ১৯৩০ সালে এই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং মাস্টারক্লাস  ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যা সময়ের হিসেবে সবচেয়ে দ্রুততম।মাত্র ২১৪ মিনিটে দ্বিশতকে পৌঁছান তিনি। শুধু তাই নয়, একই সময়ে, একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আরো একটা ডাবল করেছিলেন মাত্র ২৩৪ মিনিটে। 

 

স্টেনলি ম্যাকেবি (অস্ট্রেলিয়া)  

 

এই অজি ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৩৮ সালে নটিংহ্যামে এক অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন। ২৩২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মাত্র ২২৩ মিনিটে।  এরমধ্যে শেষ ৭২ রান করেন ২৮ মিনিটে। স্যার ডন ব্রাডম্যান এটা তাঁর জীবনে দেখা সেরা ইনিংসে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। 

 

ভিক্টর ট্রাম্পার (অস্ট্রেলিয়া)  

 

ভিক্টর ১৯১১ সালে অ্যাডিলেডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১৪ রান করেছিলেন।  যা সময়ের হিসেবে চতুর্থ দ্রুততম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি।  

 

ওয়ালী হ্যাম্যান্ড  (ইংল্যান্ড)  

 

এই ইংলিশ কিংবদন্তি ক্রিকেটারের ২২ টা আন্তর্জাতিক শতক আছে। তাঁর প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ার আরো সমৃদ্ধ।  ৫০ হাজারের মতো রান এবং ১৫০ এর উপরে সেঞ্চুরি আছে। ১৯৩৩ সালে অকল্যান্ডে কিউইদের বিপক্ষে  ডাবল করেছিলেন মাত্র ২৪০ মিনিট ক্রিজে থেকে। 

 

এছাড়া অস্ট্রেলিয়ান এডওয়ার্ড গ্রেগরি এবং ইংলিশ ক্রিকেটার ডেনিশ কম্পটন কম সময়ে দ্বিশতক করার কীর্তি গড়েন।