• অন্যান্য

সংগ্রাম, নিন্দুকের রোষানল কিংবা বিশ্বজয়! গল্পটা পগবার..

পোস্টটি ১২৭৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

'মা, আমার জন্য একটিবার ট্রফি'টা তুলে ধরো তো..

: আমার ভয় করছে বাবা। তুই-ই ধর, আমি পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। 

'কিচ্ছু হবে না মা, ভয় পাচ্ছো কেন! এই ট্রফিটা তো তোমারও। আর এই নাও, এটা গলায় পরে ফেলো..' বলেই বিশ্বকাপজয়ী মেডেলটা মায়ের গলায় পরিয়ে দিলো পগবা।

: আরে আরে, এটা আবার দিচ্ছিস কেন বাবা; তুই জিতেছিস তোর গলাতেই থাক। 

 

'মা, তুমি দেখি সেই ছোটবেলার মতোই কথা বলছো। আমি যখনই কিছু জিততাম তুমি সব ক্রেডিট আমাকেই দিতে। অথচ আমি জিততাম তোমাকে জিতে দেয়ার জন্য মা, সেকি তুমি জানোনা আজো!'

হেসে ফেললেন মা। তার চোখে অশ্রু ঝরছে। এটা আনন্দের অশ্রু। ছেলেটা তার বরাবরের পাগলাটে৷ সেই ছোটবেলা থেকেই মা'কে ছাড়া তার চলেই না। ফিফা গালা নাইটে যাবি, তুই যা না একা; কিংবা তোর বান্ধবীকে নিয়ে। বায়না ধরে বসলি আমাকে তোর সঙ্গে রেট কার্পেটে হাটতে হবে! আচ্ছা ঝামেলা করিস তো তুই! বড় হয়েছিস এখন তো মা'কে ছাড়া পথ চলতে শিখ। তা না, হাসিকান্নার দিনগুলোতে তার পাশে আমাকে চাই৷ 

 

cM1cR3mjx4

 

ছোটবেলার কথা মনে পড়ে 'মরিবা'র। ফ্লোরেন্টিন আর ম্যাথিয়াসের সাথে কতশতবার সে ঝগড়া করেছে এই ফুটবল খেলা নিয়ে। অলস সময়ে ভাইয়েরা খেলার সঙ্গী হিসেবে পগবাকে নিতো ঠিকই, তবে সেটাকে সঙ্গী বলা ভুল হবে— শত্রু বলাই ভালো হবে। অভাব অনটনের সংসার থেকে উঠে এসে আজ তার তিন সন্তান-ই পেশাদার ফুটবলার হয়েছে৷ এ নিয়ে মরিবা'র আহ্লাদের শেষ নেই। যখনি বড় কোনো ম্যাচ, তিনি জায়নামাজে বসে পড়েন প্রার্থনা করতে। প্রাণ খোলে দোয়া করেন সন্তানদের জন্য। মায়েদের প্রার্থনা কি আর বিফলে যায়! 

 

বিশ্বকাপ ফাইনালের আগেরদিন কথা হয়েছে তার সঙ্গে৷ সে বলেছে 'মা দোয়া করো, আর কিচ্ছুটি চাই না।' আমি জানতাম ফ্রান্স যথেষ্ট ভালো খেলছে৷ তারাই চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছে৷ তবে ভয়ও ছিলো৷ যদি আমার পগবা'টা জিততে না পারে? কেঁদেকেটে একাকার করে ছাড়বে; ও যা ইমোশনাল! 

 

ম্যাচের দিন গ্যালারিতে বসে ছিলেন মা। সাথে পগবার বাকি দুই ভাই। উচ্ছ্বাস উৎকন্ঠা আর ভয়ংকর কৌতুহল নিয়ে তারা ম্যাচ দেখলো৷ শেষ বাঁশি না বাজতেই পগবার দু'ভাই তো পাগলের মতো আনন্দে আত্মহারা হয়ে মা'কে জড়িয়ে ধরলো। আর স্মরন করিয়ে দিলো- বলেছিলাম না মা, আমাদের পগবাটা হারবে না। মা, তুমি খুশি তো? 

মা চোখ মুছেন। কি বলে পাগলেরা! আমার ছেলে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর আমি খুশি হবো না? তোরা তো জানিস না কত কষ্ট বুকে চেপে করে তোদের বড় করেছি। আজ আমার খুব আনন্দের দিন ম্যাথিয়াস৷ তোর ভাইটা আমাকে সত্যিকার অর্থেই গর্বিত করেছে। আজ রাত্রের জন্য হলেও আমি ভুলে যাবো আমার ছেলের প্রতি মানুষের সব তিরষ্কার, তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞার কথা। নিন্দুকেরা কি বুঝবে, সব ছেলেরাই তাদের মায়ের কাছে রিয়েল চ্যাম্পিয়ন...

-

স্টেডিয়ামে আন্যাউন্সম্যান্ট শুনা গেলো। পুরো দল তাদের পরিবারের সাথে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করছে। আর এখানে আমার সন্তানেরা আমার পুরো পৃথিবী আজ আলোকিত করে দিয়েছে। এইযে শতশত ক্যামেরা আমার দিকে তাক করে আছে, তার কিছুই আমি চাইনি। আমি চেয়েছিলাম কেবল আমার সন্তান যেন তার মা'কে একদিন গর্বিত করে। 

 

মরিবা'র মতো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল সংগ্রামী মায়েরা ভালো থাকুন। 

ও হ্যাঁ, জন্মদিনের শুভেচ্ছা, পগবা..

 

© আহমদ আতিকুজ্জামান।