• ক্রিকেট

ক্রিকেটে বাংলাদেশের নেপথ্যে উত্থানের কারিগর (পর্ব- ২)- সারোয়ার ইমরান

পোস্টটি ১৪৪৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সারাবছর ই তো পর্দায় ক্রিকেটার দের খেলা দেখে দেখে আমরা সময় কাটাই,কিন্তু আমরা কজন এদেশের ক্রিকেটারদের গড়ে উঠার পেছনে দেশীয় কোচদের দেশের ক্রিকেটে অবদান সমন্ধে জানি?দেশের ক্রিকেটের বর্তমান সাফল্যের  পেছনে কিন্তু তাদের ই অবদান। এদের বিসিবি না করে সঠিক মূল্যায়ন না করে আমাদের মিডিয়া না মূল্যায়ন পায় আমাদের থেকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যখন সাধারনত নিজ দেশের স্থানীয় কোচদের মূল্যায়ন করা হয়, কারণ স্থানীয় কোচরা যেভাবে ক্রিকেটারদের পালস বুঝে সেরাটা বের করে আনেন।বাংলাদেশী কোচ রা বোর্ড থেকে পর্যাপ্ত সম্মানী পান না উল্টো অবহেলার শিকার হয়ে থাকেন।
তামিম সাকিব একটু ফর্ম হীন হলেই কোন বিদেশী কোচের দ্বারস্থ হন না।তারা তাদের দুর্দিনে দেশীয় কোচদের কাছে  দীক্ষা গ্রহণের জন্য চলে আসেন। কারণ তারা এসব কোচদের কাছে ক্রিকেটের হাতেখড়ি  পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের আজকের অবস্থানের পেছনে আমাদের দেশের কোচদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশের  ক্রিকেটের আনসাং হিরোদের জানার জন্য এই প্রচেষ্টা।বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনের অন্যতম প্রধান কোন সারোয়ার ইমরান স্যারের অবদান নিয়ে জানার জন্য দ্বিতীয় পর্বে আয়োজন।

 

রুবেলের ভাষ্যমতে -

"আমার ক্রিকেটার হওয়ার পিছনে যে মানুষটার অবদান আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না। আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা কোচ তিনি। বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারদের শ্রদ্ধাভাজন একজন কোচ। সারোয়ার ইমরান স্যার"

মাশরাফি,তাপস বৈশ্য, রুবেলের মত গতিতারকা বোলার তারই আবিষ্কার।বাংলাদেশের অধিকাংশ গতিতারকা সরোয়ার ইমরানের অবিস্কার।

 

বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের কোচ ছিলেন সরোয়ার ইমরান

অনেকের চোখে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইতিহাসের সেরা কোচ সরোয়ার ইমরান। তার কোচিং ক্যারিয়ার সুদীর্ঘকালের। ১৯৮৪ সালে তিনি কোচিং জগতে পা রাখেন।১৯৮৭-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রিকেটের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।২০০০ সালে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বিসিবির হই পারফরম্যান্স ইউনিটের হেড কোচের দায়িত্ব পালন করেন। শত শত খেলোয়াড় তিনি দেশকে উপহার দেন তার বর্ণাঢ্য কোচিং ক্যারিয়ারে।তার কোচিংয়ে বাংলাদেশ এশিয়ান গেমসে প্রথম স্বর্ণপদক লাভ করে ক্রিকেটে প্রথম স্থান অধিকার করার মাধ্যমে।
তবে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবেন কারণ বাংলাদেশের টেস্টে অভিষেক ঘটে তার কোচিংয়ে।২০০০ সালে ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের কোচ ছিলেন তিনিই।২০০২-০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিনি বাংলাদেশের কোচ ছিলেন।২০১৪ সালে তিনি আবার জাতীয় দলের সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পান ।২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব ছিল তার উপর।ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে  আবাহনী, ভিক্টোরিয়া, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের শিরোপা জয়ের কারিগর ,বিপিএলে তার কোচিংয়ে দল দুইবার ফাইনাল খেলেছিল,প্রথম বিভাগ ক্রিকেট সহ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সম্ভাব্য সকল শিরোপা কয়েকবার জিতেছেন। কিন্তু এত অর্জনের পরেও তিনি বিসিবি থেকে পদে পদে পেয়েছেন লাঞ্ছনা গঞ্জনা। বিসিবি তাকে অনেকবার স্থায়ী সহকারী কোচ করার ঘোষণা দিলেও তাকে স্থায়ী  করেনি,তাকে বারবার বিভিন্ন ছোটখাট দায়িত্ব দিয়ে অবমূল্যায়ন করা হত। বিসিবির পেস বোলিং হান্ট ও অনেকদিন দেখাশোনা করেছেন তিনি।
শেষমেষ তিনি এসব আর সহ্য করতে না পেরে বিসিবি থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন। হতাশায় তিনি বিসিবির কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের দাবি জানান।

কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া বদলানো উচিত

২০২০ এর বিপিএলে তাকে সিলেট থান্ডার্স এর দায়িত্ব দেয়া হলেও বিসিবির সাথে ঝামেলার কারণে তাকে সরিয়ে দলের মেন্টর ও উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হয়। এভাবেই বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন বোর্ড থেকে দেশের হাজার হাজার ক্রিকেটার তৈরির এই মহানায়ক। লজ্জায় ,ঘৃনা, ক্ষোভে। বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে দূরে সরে আছেন কিছুটা তিনি।

অর্জন

  • বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ ২০০০-২০০৩, সহকারী কোচ ২০১৪ সাল।২০০৭ সালে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কোচ।
  • ক্রিকেটে বাংলাদেশের এশিয়ান গেমসে প্রথম স্বর্ণপদক লাভ গুয়াংজুতে তার কোচিংয়ে
  • ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনী, ভিক্টোরিয়া, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের শিরোপা জয়ের রূপকার।

 

 

এত অবদান রাখা সত্ত্বেও সারোয়ার ইমরান ইমরানরা যখন বিসিবি থেকে বারবার উপেক্ষার স্বীকার হন তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের আকাশে মেঘ জমে এবং ক্রিকেট সংকটে পড়ে... বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমানে দৈন্যদশা হয়তবা কোচদের অবমূল্যায়নের ফল।