• ক্রিকেট

ক্রিকেটে বাংলাদেশের নেপথ্যে উত্থানের কারিগর (পর্ব- ৪)-ওসমান খান

পোস্টটি ৮৭৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সারাবছর ই তো পর্দায় ক্রিকেটার দের খেলা দেখে দেখে আমরা সময় কাটাই,কিন্তু আমরা কজন এদেশের ক্রিকেটারদের গড়ে উঠার পেছনে দেশীয় কোচদের দেশের ক্রিকেটে অবদান সমন্ধে জানি?দেশের ক্রিকেটের বর্তমান সাফল্যের  পেছনে কিন্তু তাদের ই অবদান। এদের বিসিবি না করে সঠিক মূল্যায়ন না করে আমাদের মিডিয়া না মূল্যায়ন পায় আমাদের থেকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যখন সাধারনত নিজ দেশের স্থানীয় কোচদের মূল্যায়ন করা হয়, কারণ স্থানীয় কোচরা যেভাবে ক্রিকেটারদের পালস বুঝে সেরাটা বের করে আনেন।বাংলাদেশী কোচ রা বোর্ড থেকে পর্যাপ্ত সম্মানী পান না উল্টো অবহেলার শিকার হয়ে থাকেন।
তামিম সাকিব একটু ফর্ম হীন হলেই কোন বিদেশী কোচের দ্বারস্থ হন না।তারা তাদের দুর্দিনে দেশীয় কোচদের কাছে  দীক্ষা গ্রহণের জন্য চলে আসেন। কারণ তারা এসব কোচদের কাছে ক্রিকেটের হাতেখড়ি  পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের আজকের অবস্থানের পেছনে আমাদের দেশের কোচদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশের  ক্রিকেটের আনসাং হিরোদের জানার জন্য এই প্রচেষ্টা।আসুন দেখে নেই যারা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে দেশের কোচিং জগতের অন্যতম লিজেন্ড ওসমান খান সমন্ধে  -

 

বাংলাদেশে একমাত্র নজির বলতে পারেন বাবা কোচ, বাবার পথ অনুসরণ করে ছেলে ও কোচ। ওসমান খানের বাবা চান্দ খান বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম কোচ। এ নিয়ে খানিকটা তিনি উচ্ছাসিত।ওসমান খানের মতে

এটা বিরল ঘটনা না, বাংলাদেশে একমাত্র নজির

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি।এরপর তিনি বাংলাদেশ ভারত সাংস্কৃতিক চুক্তির আওতায় ক্রিকেট  কোচিং এ ডিপ্লোমা কোর্স করতে ভারতের পাতিয়ালায় যান । সেখান থেকে ফিরেই বোর্ডে কাজ শুরু করেন,দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান কোচ হিসেবে ক্রিকেটার খুঁজে বের করতে। এরপর তিনি আবাহনীর দায়িত্ব নেন ১৯৮৩ সালে,ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ছয় বছরে চার বার শিরোপা জিতেন।ওসমান খান বিখ্যাত বাংলাদেশের ক্রিকেটে  মাশরাফি বিন মুর্তজাকে আবিষ্কারের জন্য। এছাড়া দেশের ক্রিকেটের অসংখ্য খেলোয়াড় তার নিজের হাতে গড়া।বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাইপলাইন তার নিজের অনেক দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল।এরপর পালাক্রমে মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়নের দায়িত্ব।ঘরোয়া ক্রিকেটে রয়েছে অসংখ্য শিরোপা তার।  ১৯৯৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্ব নিয়ে ওসমান খান শ্রীলঙ্কা কে হারিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রথম আন্তজার্তিক শিরোপার মুখ দেখান।ওসমান খানের কোচিং এ ১৯৯৬ সালের এসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।যেটি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম স্বীকৃত শিরোপা।১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ দলের কোচ প্রথমে তিনিই ছিলেন।আকরাম বুলবুল নান্নুদের গুরু তিনিই।পরে গর্ডন গ্রিনিজ দায়িত্ব নিলে তাকে সরে যেতে হয়। এরপর বিসিবি তাকে আর মনে রাখেনি। কিন্তু আইসিসি  ট্রফি জয়ের পর তাঁকে চরম অবমূল্যায়নের স্বীকার হতে হয়। ক্রিকেট বোর্ডের সবাই পুরস্কারের বন্যায় ভেসে গেলেও তিনি  কোন  স্বীকৃতি পাননি।এরপর রাগে ক্ষোভে অভিমানে  বিসিবি থেকে দূরে যান,প্রায় ৫ বছর বোর্ড থেকে দূরে সরে থাকেন । এরপর অভিমান  ঝেড়ে ২০০২ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের কোচের  দায়িত্ব পালন করেন।

 

তিনি এরপর  ২০০৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত  'এ' দলের দায়িত্ব পালন করেন।। ২০১০ সালে তিনি জাতীয় পর্যায়ের কোচিং থেকে অবসর নিয়ে নেন।

অর্জন

  • ১৯৯৬ সালের এসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ ওসমান খানের কোচিংয়ে
  • ১৯৯৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্ব নিয়ে মালয়েশিয়ায় শ্রীলঙ্কা কে হারিয়ে প্রথম আন্তজার্তিক শিরোপার মুখ দেখান বাংলাদেশকে
  • প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে চারবার শিরোপা জয় করেন

 

ওসমান  খান বাংলাদেশের ক্রিকেটে শুধু দিয়ে গেছেন ,পাওয়ার মত এখনো কোন অর্জন তার ঝুলিতে আসেনি, বোর্ড ও তাকে মূল্যায়ন করেনি। মিডিয়াও তার ব্যাপারে কিছুটা উদাসিন বা বিরাগভাজন।তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস তাকে একদিন মুল্যায়ন করবে।