• ক্রিকেট

ক্রিকেটে বাংলাদেশের নেপথ্যে উত্থানের কারিগর (পর্ব-৫)- ওয়াহিদুল গণি ও খালেদ মাহমুদ সুজন

পোস্টটি ১২৭৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সারাবছর ই তো পর্দায় ক্রিকেটার দের খেলা দেখে দেখে আমরা সময় কাটাই,কিন্তু আমরা কজন এদেশের ক্রিকেটারদের গড়ে উঠার পেছনে দেশীয় কোচদের দেশের ক্রিকেটে অবদান সমন্ধে জানি?দেশের ক্রিকেটের বর্তমান সাফল্যের  পেছনে কিন্তু তাদের ই অবদান। এদের বিসিবি না করে সঠিক মূল্যায়ন না করে আমাদের মিডিয়া না মূল্যায়ন পায় আমাদের থেকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যখন সাধারনত নিজ দেশের স্থানীয় কোচদের মূল্যায়ন করা হয়, কারণ স্থানীয় কোচরা যেভাবে ক্রিকেটারদের পালস বুঝে সেরাটা বের করে আনেন।বাংলাদেশী কোচ রা বোর্ড থেকে পর্যাপ্ত সম্মানী পান না উল্টো অবহেলার শিকার হয়ে থাকেন।
তামিম সাকিব একটু ফর্ম হীন হলেই কোন বিদেশী কোচের দ্বারস্থ হন না।তারা তাদের দুর্দিনে দেশীয় কোচদের কাছে  দীক্ষা গ্রহণের জন্য চলে আসেন। কারণ তারা এসব কোচদের কাছে ক্রিকেটের হাতেখড়ি  পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের আজকের অবস্থানের পেছনে আমাদের দেশের কোচদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশের  ক্রিকেটের আনসাং হিরোদের জানার জন্য এই প্রচেষ্টা। শেষ পর্বে আসুন  দেখে নেই যারা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন তাদের অন্যতম ওয়াহিদুল গণি এবং খালেদ মাহমুদ সুজনের অবদান নিয়ে আলোচনা  -

ওয়াহিদুল গণি

হাজার ক্রিকেটার তৈরির কারিগর ওয়াহিদুল গণি। ছবি :রাইজিং বিডি



বাংলাদেশের কোচিং জগতের  অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ওয়াহিদুল গণি।তবে তিনি অন্যান্য কোচদের চাইতে আলাদা কারণ তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ছিলেন।ছিলেন লেগ স্পিনার। ছিলেন অমিত প্রতিভাবান ,কিন্তু বাংলাদেশ তার সময়ে পিছিয়ে থাকায় এক ওয়ানডে খেলেই তার ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। তবে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের দাপুটে খেলোয়াড় ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি   কোচিং জড়িয়ে যান।বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি আশরাফুলের গুরু হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। শাহারিয়ার নাফিস, মোহাম্মদ শরীফের,লেগ স্পিনার আমিনুল বিপ্লবের  মত জাতীয় দলের ক্রিকেটার তার আবিষ্কার। তার প্রতিষ্ঠিত  'অঙ্কুর’ নামক ক্রিকেট কোচিং একাডেমী বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।শাহরিয়ার নাফিস, মোহাম্মদ শরীফদের মোহাম্মদ আশরাফুলের এই  একাডেমী থেকেই বেড়ে উঠা। বাংলাদেশের জয়ী  অনূর্ধ্ব-১৯ দলের গতিতারকা সাকিব তার একাডেমির ছাত্র। ওয়াহিদুল গণির একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি তার একাডেমিতে শিশু ক্রিকেটারদের পরিচর্যা করেন এবং তাদের থেকে কোন ফি নেন না। অঙ্কুরের দরজা সবার জন্য খোলা,সবাই এখানে আসতে পারেন । তবে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন তারাই যারা প্রতিভাবান,পরিশ্রমী ও ক্রিকেটের জন্য যেকোন  ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত। অঙ্কুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে  ৫০ ছাত্রের জন্য ওয়াহিদুল গণি আট থেকে দশ, ১০ থেকে ১২ ও ১৩ থেকে ১৬ তিনটি বয়সভিত্তিক দল গড়েছেন। বর্তমানে ওয়াহিদুল গণি বিসিবির স্পিন কোচ হিসেব দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে নীরবে নিভৃতে দেশের ক্রিকেটের জন্য অবদান রেখে চলেছেন ওয়াহিদুল গণি কোন স্বীকৃতি ছাড়াই।তবে বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি হতাশ কিছুটা,বর্তমান পরিস্থিতি অনেক টা হতাশার সুরেই ব্যাক্ত করেন

জানালা ভাঙা,নেট কম, পয়সার অভাবে তিনি সেগুলো ছিঁড়লেও বদলাতে পারছেন না।

 

খালেদ মাহমুদ সুজন

বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ বলছিলেন -

ইনি সেই মানুষ, যিনি বিশ্বকাপের আগে তাদের সমস্ত পরিকল্পনা করেছিলেন

 

সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিবর্তনে বেশি ভূমিকা রেখেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন ।ছবি : The daily Star

ইনি হলেন খালেদ মাহমুদ সুজন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কোচ,তবে বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত বটে।তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সাবেক খেলোয়াড়।১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান বধের অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি।খেলোয়াড় হিসেবে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শেষ করে তিনি কোচিংয়ে যোগ দেন।  বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম রূপকার তিনি। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন অনূর্ধ্ব ১৯ দলের খেলোয়াড়দের ২০১৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকে পরিচর্যা করছিলেন।সে সময় অবশ্য টেকনিকাল ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সুজনের মাস্টার প্ল্যানের কারণে অনূর্ধ্ব ১৯ দল গত দুবছরে ৩০ টি ম্যাচ খেলেছে।জাতীয় দলের কোচের ভূমিকা পালন করেন দুইবার।তার কোচিং ক্যারিয়ার বেশিদিনের না ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সব শিরোপা জিতেছেন তিনি কোচ হিসেবে। কোচ হিসেবে বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটস কে শিরোপা জিতিয়েছেন,ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনীকে ২০১১ ও ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।
খেলোয়াড় মাহমুদ উল্লাহর উত্থানের পেছনে সুজনের অনেক  অবদান। সম্প্রতি এক  অনুষ্ঠানে সুজনের উদ্দেশ্যে  রিয়াদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন

‘কোচিং দর্শনে আমি যদি আমার সেরা তিন কোচের কথা বলি তাহলে প্রথমে আমি সুজন ভাইয়ের কথা বলবো। উনি আমার অনেক বড় অনুপ্রেরণা। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে উনি আমাকে গাইড করেছেন। উনার সাথে একসাথে ক্রিকেট খেলেছি, ওনার কোচিংয়ের অধীনেও আমি খেলেছি। তো শুরুতে সুজন ভাইয়ের কথা বলতে হবে।’

মাহমুদউল্লাহ ছাড়াও  বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে অনেক ক্রিকেটারের উত্থানের পেছনে সুজন স্যারের অবদান আছে। মুস্তাফিজুর,তাসকিন,সৌম্যকে জাতীয় দলে খেলানোর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন তিনি।

 

ছবি: Sportskeeda

অর্জন

  • বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ের পর্দার অন্তরালের কারিগর
  • অল্প সময়ের জন্য জাতীয় দলের কোচ ২০১৭,২০১৯
  • বিপিএলে ডাকা ডায়নামাইটস কে শিরোপা জিতিয়েছেন ২০১৬ সালে
  • ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনীকে ২০১১ ও ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন করেছে

বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য যে পরিমাণ অবদান এই কোচদের বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড তাদেরকে মূল্যায়ন করেনা।জাতীয় দলের  কোচ হিসেবে  দেশীয় কোচদের নিয়োগ দিতে বিসিবির অনীহা চরমে। বিসিবির বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন এমন দেশি কোচদের সঙ্গে বিদেশি কোচদের পারিশ্রমিকের অনুপাত ১৫:১ কিংবা ২০:১।যথাযথ মূল্যায়ন না পেয়ে অনেক কোচ ই আড়ালে চলে গেছেন,নতুনরা কোচিং জগতের অনিশ্চিত পেশায় জড়াতে চান না। যারা কোচিং এ আছেন কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। মোহাম্মদ রফিক প্রায় দশ  বছর ধরে ক্রিকেট কোচিংয়ে জড়িত,কিন্তু এখনো বিসিবি তাকে বয়সভিত্তিক দলের দায়িত্ব দেয়নি। দেশে সতীর্থদের এরকম অবহেলা দেখে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের মত সাবেক ক্রিকেটাররা কোচিং জগতে এসেই বিদেশ বিভুঁইয়ে পড়ে আছেন বিসিবির অবহেলার কারণে। বিসিবির উচিৎ দেশের ক্রিকেটের আজকের অবস্থানের পেছনের কারিগরদের  উপযুক্ত স্বীকৃতি দিয়ে তাদের  ক্রিকেটের  উন্নয়নে কাজে লাগানো।