• ক্রিকেট

হারিয়ে যাওয়া প্রতিভা-৪র্থ পর্ব

পোস্টটি ২৭১৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ম্যাথু সিনক্লিয়ার

 

নতুন শতকের শুরুতে ম্যাথু সিনক্লিয়ারকে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে সম্ভবনাময় ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য করা হত। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রচুর রান করে ১৯৯৯ সালে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক।আর অভিষেকটা কোর্টনি ওয়ালশের নেতৃত্বে সেই সময়ের মারমার কাটকাট ফাস্ট বোলিংয়ের বিরুদ্ধে।কিন্তু সিনক্লিয়ার সেইসব জোরে বোলারদের দাপটকে পাত্তা না দিয়ে এমন এক অভাবনীয় খেল খেলে দিল যা নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে হৈ চৈ পড়ে যায়।তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক টেস্টে সর্বোচ্চ ২১৪ রানের বিশ্ব রেকর্ডে ভাগ বসায়।তার আগে ১৯৭২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লরেন্স রো ব্যাটিং পজিশনের তিনে নেমে একদম ২১৪ রান করেছিল। কাকতলীয়ভাবে সেই ইনিংসটি ছিল সিনক্লিয়ারের দেশ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। প্রতিভা তো ছিলই সেইসাথে এমন একটি দুর্লভ রেকর্ডের মালিক হয়ে সিনক্লিয়ার কিউই দলের তারকায় পরিণত হয়।স্টিফেন ফ্লেমিং,ক্রিস কেয়ার্নস,নাথান অস্টলের মত তারকা ভরা নিউজিল্যান্ড দলে নতুন তারকারুপে উদয় হয়। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের বাউন্সি উইকেটে অ্যালান ডোনাল্ড,শন পোলকদের আগুন ঝরা গতিময় বোলিং সামলে ১৫০ রানের এক অনবদ্য ইনিংস।এই শতরান তার সঠিক ব্যাটিং টেকনিকের প্রতিফলন।সেই বছরের শেষের দিকে দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়াকার,সামি,সাকলাইন, মুশতাকদের মত বাঘা বাঘা বোলারদের সামলে দ্বিশতক তার তারকা খ্যাতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।সেইসাথে কিউই দলের ব্যাটিং স্তম্ভে পরিণত হয়ে যায়।

 

অভিষেকের পর থেকে সিনক্লিয়ারের ক্যারিয়ার মসৃণ পথেই এগিয়ে চলছিল।২০০৩ সালে হঠাৎ করেই তার ব্যাটে পুরনো জেল্লা ফিকে হতে শুরু করে, ক্রমশঃ তার ব্যাটিং গড় নামছিল। প্রতিভাবান এই কারনে দল নির্বাচকরা তাকে সুযোগ দিয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্টের সিরিজে চার ইনিংসে সর্বসাকুল্যে ২১ রান করার পর দল থেকে বাদ পরে।ঘরোয়া ক্রিকেটে রান আর নিয়মিত ওপেনারের ইনজুরিতে বাংলাদেশ সফরের জন্য দলে জায়গা হয় তার।দুই টেস্টের সেই সিরিজে ওপেনারের নতুন ভূমিকায় নির্বাচকদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয় যারফলে অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানে দলের সাথে উড়তে পেরেছিল।কিন্তু অস্ট্রেলিয়া নামক কঠিনতম পরীক্ষায় ডাহা ফেল।চার ইনিংসে দুটি শূন্য, রান আসে মাত্র ৭১।রান তোলার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় দলে অনিয়মিত হয়ে যায়।মাঝে দু চার ইনিংসে ভাল খেলে আবার লাগাতার ব্যর্থ - খোড়াতে খোড়াতে চলতে থাকে সিনক্লিয়ারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।এভাবে চলতে চলতে ২০১০ সালে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আবার সুযোগ আসে নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার।কিন্তু সেখানেও উল্লেখযোগ্য কিছু করতে ব্যর্থ হয় তার ব্যাট। তারপর দেশের হয়ে খেলার আর ডাক আসেনি।পছন্দের তিন নম্বরে ব্যাট করে জীবনের শেষ ইনিংসে আসে ২৯ রান।

 

 

 

images (10)

 

 

এক দশকেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যুক্ত থেকে ৩৩টির অধিক টেস্ট খেলতে পারেনি।৩২ গড়ে ১৬৩৫ রান।আর ৫৪ টি ওয়ানডে ম্যাচে ১৩০৪ রান।লিস্ট এ , প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ মিলে তার সংগ্রহ ২০০০০ ওপরে সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবমিলে ৩০০০ রানের গণ্ডি ছাড়িয়ে যেতে না পারা সত্যি বড় বিষ্ময়।অথচ প্রতিভার ঘাটতি ছিল না।সেই সময়ে সম্ভবনাময় ব্যাটসম্যান হিসেবে মার্টিন ক্রো, স্টিফেন ফ্লেমিং,নাথান অস্টলের উত্তরসূরী হিসেবে সিনক্লিয়ারের নামই ছিল সর্বাগ্রে।হয়ত সেই চাপটা সামলে নিজের মত করে না খেলতে পারেনি বলেই ব্যর্থ তারকার তালিকায় নাম লিখিয়েছে।টেস্ট অভিষেকে দ্বিশতক করা, পরের মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে একই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করা, কিংবা রানের খরায় ভুগে ক্ষণে ক্ষণে দল থেকে বাদ পড়ে যাওয়া, আবার ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বৃষ্টি ঝরিয়ে দলে ফিরে আসা- সিনক্লেয়ারের ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল একটা রোলার কোস্টারের মতো।

 

চলবে...

 

 

 

 

Images courtesy: www.gettyimages.com

তথ্য সূত্র : www.cricbuzz.com