• ক্রিকেট

সেই দিনের কৌশিক

পোস্টটি ৬৩০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আপনি সেইদিনের সেই কৌশিক যাকে দেখে এই জেনারেশনের অনেকেই শিখেছি পাড়ার ক্রিকেটে কিভাবে কলার উঁচু করে ক্রিকেট খেলা যায়! মাশরাফির এই হার মানার মানসিকতা, ইঞ্জুরি নিয়ে লড়ে যাওয়া আমি সচক্ষে দেখেছি!

 

ছোটবেলায় আপনার বোলিং স্টাইল অনুকরণ করেনি এমন বাংলাদেশী কিশোর খুব কমই পাওয়া যাবে, কলার উচিয়ে বল করাকে ক্রিকেটের ড্রেসকোড বানিয়ে দিয়েছেন এই নিপাট ভদ্রলোক। সেই ২০০৫-০৬ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অস্থিরতা দিনগুলোতেওবিনোদনের উৎস বলতে একমাত্র ছিল আপনার বোলিং ছোটবেলা পাড়ার ক্রিকেটে আমার কলার উঁচু করে বল করতে আসার স্ট্যান্স দেখে অনেকে আমাকে আপনার ভার্সনের পিচ্চি মাশরাফি বলেও ডাকতো!

 

সেই নব্বইয়ের জেনারেশনের শৈশবকালে বল হাতে হয়েছিল আবির্ভাব, নব্বইয়ের জেনারেশন পেরিয়ে আজ পড়াশুনা শেষে চাকুরীর বাজারের খরিদ্দার, আর তার এখন বিদায়লগ্ন , পড়ন্ত বিকেলের গোধুলী বেলা! inbound1164822196599282433inbound8806464938629961540

 

ভাঙ্গাচোরা ইনফ্রাস্টাকচার নিয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর নিয়মিত ইনিংস পরাজয় খাওয়া, একের পর এক সিরিজ ব্যর্থতা একটা দল যারা প্রায় প্রতিদিনই ৮,৯ নম্বরে খালেদ মাসুদ পাইলট অথবা অলক কাপালি বা সানোয়ার হোসেনের ব্যাটের উপর ভর করে কোনরকম ১০০,১৫০+  করতো ব্যপারটা এইরকম ছিলো আশরাফুল আউট বিটিভি অফ খেলা বন্ধ আবার বোলিং এর সময় মাশরাফির ওভার আসলে টিভি অন করে দেখা শুরু! 

সেই তারেক আজিজ, তালহা জুবায়ের, তাপস বৈশ্যর সাথে শুরু, এরপর আসলো সৈয়দ রাসেল, শাহাদাত হোসেন, নাজমুল হোসেনরা, শুভ তারাও কেউই একটা সময় পরে রইলোনা, পেস শিবিরে জুটি বাধলেন রুবেল, শফিউলদের সাথে, এরপর যোগ দিলো তাসকিন, মুস্তাফিজ, আবু হায়দার রনি এখন আসছে নতুন খালেদ, রাহী, এবাদতরা - কত বোলার আসলো গেলো, রইলো এক মাশরাফি। একটা দেশের পেস বোলিং এর পাইওনিয়ার পার্সন হবার জন্য এরচেয়ে বড় কিছু আর প্রয়োজন হয়না  বাংলাদেশের একটা পেস বোলিং জেনারেশন উঠে এসেছিল এই মাশরাফিকে দেখে! 

 

২০০৭ এর সাউথ আফ্রিকার বিশ্বকাপের সময়টা মাঞ্জারুল ইসলাম রানা বাইক দুর্ঘটনায় যখন মারা যান এরপরের ম্যাচেই ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে ভারতের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীতের সময় মাশরাফির চোখ ভেজা কান্না, মাঞ্জা ভাইয়ের জন্য জ্বর নিয়ে খেলে ২য় ওভার করতে এসেই দুর্দান্ত সেবাগের মেডেল স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলা তারপর রবিন উথাপ্পা,অজিত আগারাকার, প্রভিন কুমারকে আউট যেই বোলিং স্পেলের মাধ্যমে ক্রিকেট বিশ্বকাপে সর্বপ্রথম ভারতকে হারানো ভারতীয় সাম্রাজ্যের পতন! ওই বছরই ভারত দেশে সিরিজ খেলতে আসলে রমেশ পাওয়ার কে মারা কাওকর্নার অঞ্চল দিয়ে টানা ৪ বলে ৪ ছয় সবসময়ই স্মৃতিতে অম্লান! খুড়িয়ে খুড়িয়ে বোলিং করে ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সেই ডমিনেটিং ব্যাটিং এর বিরুদ্ধে একক প্রতিরোধে দাঁড়িয়ে থাকা এলেক্স হেলসকে আউট করে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসা এরপর রুবেলের শেষ উইকেট নেওয়ার পরে সেই বুনো উল্লাস ! আহা শৈশব আহা কৈশর আহা সেই দিনগুলো ! 

 

 এখনকার ক্লাস টু থ্রির বাচ্চা পোলাপাইন বলে ফেলে মাশরাফি দেশের ক্রিকেটের জন্য কি করেছে, যারা এক সময় একটা জয়ের জন্য অপেক্ষা করেছে ২ বছর, আপনার বোলিং স্পেল শেষে সাথে সাথে বিটিভি অফ করে দেওয়া জেনারেশন,  বাংলাদেশের জয়ের পর টিএসসি রাস্তায় রং খেলা যারা দেখেছে তারাই শুধু বলতে পারবে এসব! 

 

কালে ভদ্রে পাওয়া সাফল্য ছাড়া কোন রকম চলতে দেখেছি বাংলাদেশ দলকে ২০১১ পর্যন্ত! পরবর্তী সময়ে আমাদের ক্রমোন্নতি হওয়া ক্রিকেটে একজন মহানায়ক দরকার ছিলো, যেটা সব জাতিরই দরকার হয়, একজন ফাদার ফিগার দরকার ছিলো। আমরা সেটা পেয়েছি ২০১৫ এর উপকূলে এসে! 

 

২০১৪ সালে ভাঙ্গা চোরা এক দল একের পর একের হার,জয় কি জিনিস তা প্রায় ভুলেই যাওয়া,  একের পর এক সিরিজ ভরাডুবির পর সেই দলকে টেনে নিয়ে আবার স্বপ্ন দেখানো, ২০১৫ বিশ্বকাপ কোয়াটার ফাইনাল খেলানো,২০১৬ সালে এশিয়া কাপ ফাইনাল, ২০১৭ চাম্পিয়ান্স ট্রফি সেমিফাইনাল, ২০১৮ এশিয়া কাপ ফাইনাল, ২০১৯ ত্রি-দেশীয় সিরিজ জয় সবই সাফল্যই এসেছিল তার নেতৃত্বে যদিও তর্কাতীতভাবে ২০১৫ এর ওয়ার্ল্ডকাপের কালটা আমাদের সেরা সাফল্য!

 

এই ফেসবুকের ক্ষুদ্র সময়ের টাইমলাইনে আপনিই নিয়মিত ছিলেন। আরও কিছুদিন থাকবেন। কলার উঁচিয়ে আপনার ছুটে আসা দেখে অনেক কিশোরই ক্রিকেটার হতে চেয়েছি, পেসার হবার স্বপ্ন দেখেছে! আপনার মাঝে অনেকেই নিজেকে হারিয়ে ফেলি, আপনার মুগ্ধতায় বিভোর হয়, ঘোর কাটে না। দেবদা প্রশ্নও করেছিলেন সাকিবকে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফি কি কোন মিথ? আমাদেরও মাঝেমধ্যে মনে হয়, আপনি কি বাস্তব, নাকি কোন কল্পনা? 

 

ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর তো হয়ে গেল এখন আর গোটা কয়দিনের অপেক্ষা এরপর চিরকালের জন্যই ২২ গজকে বিদায় বেলার পালা! 

 

আমরা নস্টালজিক হবো, স্মৃতির পাতায় আপনাকে হারিয়ে খোজার চেষ্টা করবো, ফেলে আসা কোন এক উপন্যাসে ডুব দেবো। নস্টালজিয়ায় ভরা সেই উপন্যাসের প্রতিটা পাতায় স্বর্নাক্ষরে একটা নায়কের নামই লেখা থাকবে স্পষ্ট অক্ষরে। সেটা মাশরাফি! সেই উপন্যাস পড়তে পড়তে আবেগে রুদ্ধ হবো আমি, চশমার কাঁচে বাস্প জমবে। সেই বাস্প মুছে আমরা আবার জীবনে ফিরে যাবো, যে জীবন চায়ের কাপের টুংটাং শব্দে বাঁধা পড়ে থাকে, যে জীবনে নয়টা-পাঁচটার পাঁচালি লেখা হয় হররোজ। 

 

আজ আপনাকে নিয়ে আজকে হাজারো পোস্ট হবে, পরিসংখ্যান আর আবেগের খাতায় শতশত কালির আচড় পড়বে, বয়সটাও অনেক হয়েছে যদি সম্ভব হয় অন্য অধিনায়কের নেতৃত্বেই পার্ফরম্যান্স দিয়ে সম্মানের সাথে বিদায় নিবেন।