• ফুটবল

জিদান কি মাদ্রিদের সর্বকালের সেরা কোচ?

পোস্টটি ৪৫৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

রিয়াল মাদ্রিদ সর্বকালের সেরা কোচ কে? এই প্রশ্ন যদি করা হয় অনেকেই বলবে মিগুয়েল, আবার অনেকেই বলবে ডেল বস্ক, আবার বর্তমান জেনারেশনের অনেকেই   জিদানের নামটা এই লিস্টে আনতে চাইবে!FB_IMG_1657392563943 
তবে একবিংশ শতাব্দীর কথা বললে ডেল বস্কের উপর সম্মান রেখেই বলা এইখানে সবার আগে জিদানের নামটাই উঠে আসবে!

জিদান আসার আগে মাদ্রিদ অনেকটাই সাফার করছিল আনচেলত্তির তার শেষ সিজনে ছিলেন ট্রফিলেস তারপর মাদ্রিদ ম্যানেজমেন্ট তাকে চাকুরিচ্যাুত করে ডাগআউটে আনেন রাফা বেনিতেজকে! রাফা বেনিতেজও সেখানে শূন্য দলের কম্বিনেশন নষ্ট, একের পর এক বাজে রেজাল্ট, এল ক্লাসিকোতে ধরাশায়ী, কোপায় লজ্জাজনকভাবে বিদায় মাদ্রিদ বোর্ড শেষ মেষ না পেরে তাকে হাফ সিজনেই বিদায় জানান!

এরপর সেই ক্রান্তি কালে অন্ধকার হাতে নিয়েই সব জল্পনা কল্পনা ছাড়িয়ে কাস্তিয়া থেকে মেইন টিমের ডাগ আউটে আসেন জিদান! হাফ সিজনেই পেয়েও ১২ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকেও লা লিগার জন্য ফাইট করে যান ১০ জন নিয়ে এল ক্লাসিকো জিতে আসেন জিদান! শেষ ম্যাচ লাস্ট গেইম উইকে বার্সার কাছে মাত্র ২ পয়েন্টে লিগ হারান! তবে লা লিগা হারালেও শেষ মেষ চ্যাম্পিয়ান্স হাত ছাড়া হতে দেননি! মাত্র ৫ মাসের ম্যানেজারিয়াল ক্যারিয়েরেও মাদ্রিদের মত ক্লাব সেই সিজন শেষ করেন ইউরোপীয় কম্পিটিশনের সব চেয়ে বড় ট্রফি দিয়েই!
এরপর আবার ইউয়েফা সুপার কাপ! ফার্ষ্ট সিজনেই ম্যাচ হারেন ১ টি যেখানে ট্রফির সংখ্যা ছিল ২ টি!

২০১৬-১৭ সিজনঃ এই সিজনে মাদ্রিদ কোপা দেল রে বাদে সকল সম্ভভ্য ট্রফি জিতেন নিজেদের বেস্ট ফুটবলটা খেলেই! ১৭-১৮ সিজনে পেপে, মোরাতা, হামেস চলে যাওয়ার পর ডমেস্টিকে প্রথম দিকে একটু স্ট্রাগল করে যার কারনে জিদানও তার গেম প্লে বা ফুটবলীয় ফর্মেশনে পরিবর্তন আনেন! ৪-৩-৩- থেকে ডায়মন্ড মিডফিল্ড রোলে ইস্কোকে রেখে ৪-৪-২ তে সুইচ করেন যেটার মাধ্যমে তিনি তার চিরচেনে (হুগো ডি য়ে রা) পজিশনবেশড ফুটবল থেকে ক্রসিং নির্ভর ফুটবল ইম্পলিমেন্ট করার চেষ্ট করেন প্রথম দিকে একটু স্ট্রাগল করলেও শেষের দিকে এই ক্রসিং ফুটবল পার্ফেক্টলি ফিট করে এবং জিদান ডমেস্টিকে ফার্ষ্টের দিকে ম্যাচ হেরে লিগ হারিয়ে ফেললেও শেষ মেষ চ্যাম্পিয়ান্স লিগ আর হাতছাড়া হতে দেননি!.
টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ান্স লিগ জিতে রেকর্ড বুকে নাম লিখান জিদান! যদিও এর পর অধ্যায়টা সকল মাদ্রিদ ফ্যানদের জন্য একটু কষ্টেরই ছিল! অল্প সময়ে এত বড় সাফল্য এনে দেওয়া মাদ্রিদের সর্বকালের অন্যতম সেরা কোচ এবং মাদ্রিদের সর্বকালের অন্যতম সেরা প্লেয়ার দুইজনই মাদ্রিদ ত্যাগ করেন!

এরপরের লোপেতিগি এবং সোলারির অধ্যায় সবারই জানা! একের পর এক ম্যাচে হার, এলক্লাসিকোতে নিয়মিত ধরাশায়ী,  চ্যাম্পিয়ান্স লিগে আয়াক্সের কাছে হিউম্যালিয়েশন! পরে দুইজনই কোচেই শেষ মেষ নিজের পদ থেকে সড়ে দাড়ান! কি এক ডিজেস্টার সময়! মাদ্রিদ কোচও চিন্তিত মাদ্রিদের এই বিষফোড়া কাটানের জন্য অনেক ঔষধই চেষ্টা করেন কিন্তু বারবার ব্যর্থই হন এন্টোনিও কন্তে থেকে শুরু করে আলেগ্রি, নাগেলসম্যান একে একে সবাই রিজেক্ট করেন অফার! অতঃপর মাদ্রিদ বোর্ড অনেক চড়াই উতড়াই বাছাইয়ের পরে পেয়ে যায় ওষধ। ঔষধের নাম ক্রিষ্টিয়ানো জিদান। মাদ্রিদে আসলো। মাদ্রিদের সবকিছু ঠিক ঠাক করে আবার সচল করলো। সেই সচলের ফলাফল স্বরুপ মাদ্রিদ পুনরায় ট্রফি জন্ম দিতে থাকলো। 

অসুখ সারালো মাদ্রিদ বাচলো আর সবাইকে গা এলানোর সুজোগও করে দিল। এরপরে বেটা চলেই গেল। সেই বেচে যাওয়া সম্প্রদায়ও এখন আর জিদানকে ক্রেডিট দিতে চায় না বরং তারা বলে জিদানই ইয়ং প্লেয়ার নষ্টের মূল!

মৌরিনহোর সময় জিদান ছিলেন স্পোর্টিং ডিরেক্টর ধারনা করা যায় সেই সময় জিদান স্পোর্টিং ডিরেক্টর হয়ে না আসলে মাদ্রিদের ফিনানশিয়াল অবস্থা আজকে ঠিক বার্সার মতোই হতো! জিদান পূর্ববর্তী স্পোর্টিং ডিরেক্টদের প্রজেক্টগুলো বা মাদ্রিদের সেই সময়ের ট্রান্সফারের গুলো মনে আছে কোন ট্রফি হারালেই ট্রান্সমার মার্কেটে গিয়ে ইচ্ছামত টাকা ঢালা প্রপার কোন প্ল্যানিং ছাড়া!

প্লেয়ার হিসেবে জিদানকে অতটা মনে নেই কেননা তাকে তার প্রাইমে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি যতটুকু মনে পড়ে সেই ২০০৬ বিশ্বকাপের স্মৃতই টুকুই! কোচ জিদান মাদ্রিদে মনে থাকবে তার "Never Say Dyeing " এটিটিউডের জন্যই! পয়েন্ট হচ্ছে সব প্লেয়ারই মাঠে নামে কিন্তু সবাই তার বেস্ট ফুটবলটা খেলেন না যখন মাঠে নামেন! মাদ্রিদের অনেক প্লেয়ারই আছে হিউজ পরিমান বেতন নেন কিন্তু সেই পরিমান পারফরম্যান্স দেন না বা আমরা যতটা আশা করি! এখানেই ব্যক্তিগত জিদান তার নিজের একটা ব্যক্তিগঅত ফিলোস্ফি বা  একটা "নেভার সে ডাইং" একটা এটিটিউড রেখে গিয়েছেন! এর উপির নির্ভর করেই মাদ্রিদ লাস্ট সিজনে ভঙ্গুর এক দল নিয়ে লা লিগা সহ স্প্যানিস সুপার কাপ জিতেছেন! আর এই সিজনে এত এত সমস্যা নিয়েও লাস্ট গেইম উইক পর্যন্ত ফাইট দিয়েছেন দলকে ইউসিএল সেমি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছেন!

আরেকটা কথা হচ্ছে মর্ডান ফুটবল স্পেন্ড না করা ছাড়া কোন ভাবেই সাকসেস পাওয়া সম্ভব না! যেখানে জিদানের ম্যানাজারিয়াল ক্যারিয়ারে নেট স্পেন্ডিং ছিল মাত্র ৫৫ মিলিয়ন!  এখন অনেকেই বলতে পারেন জিদান রেডিমেড স্কোয়াড পেয়েছেন বা ইয়ং প্লেয়ার ডেভেল করেননি! কিন্তু জিদানের থিওরি এতোদিনে পরিষ্কার। আপনার ট্রেনিং এ সচল থাকতে হবে এবং আপনার সময় আসলে আপনাকে সময় সুযোগ দেয়া হবে। জোভিচ, ওডেগার্ড কেউই এই সময়টা জিদানকে দেয়নি। তার উপর ভরসা রাখতে পারেনি।

ওডেগার্ড যদি থেকে যেত জিদানের উপর ভরসা রাখতো সে নিশ্চয় শেষের টাফ সিডিউল গুলোতে ইজিলি  ক্রস মদ্রিচ কিংবা ক্যাসেমিরোর  রোটেট করে খেলতে পারতো!  আমি মনে করি এই প্রেশার মোমেন্টে সাব হিসেবে খেলা আর্সেনালে খেলা থেকে তার ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের জন্য আরও বেশি ইফেক্টিভ হইতো! আর যেই আর্সেনালে সে গেইমটাইমের জন্য গিয়েছিল সেখানে টানা ৮ ম্যাচই তাকে স্মিথ রো বেঞ্চ করেছে! স্টার্ট পেয়েছে মাত্র ৮টি!

ভিনিশিয়াস আর রদ্রিগো দুইজনই অল্পবয়সী ফরোয়ার্ড। জিদানের আন্ডারে মাত্র ২০ বছর বয়সে ২০/২৫ গোল দেবে এই আশা করাও বোকামি! রেজাল্ট আর প্লেয়ার ডেভেলপমেন্ট দুইটা একসাথে হয়না এই মর্ডান ফুটবলে! জিদানকে যেমন ডেভেলপমেন্টের জন্য কিছু  প্লেয়ার দেওয়া হয়েছে সেই সাথে রেজাল্টও চাওয়া হয়েছে! মাদ্রিদের মত ক্লাবে আপনি রেজাল্ট দুই তিন ম্যাচ না দিতে পারলেও চাকরি নিয়ে টানাটানা পড়ে যায়! রদ্রিগো জিদানে আন্ডারে অভিষেক করে ভাল সিজনই কাটিয়ে চ্যাম্পিয়ান্স লিগ হ্যাট্রিক সহ দুই সিজনে দলের গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার ছিলেন! আর ওডেগার্ড যেই পজিশনে খেলেছেন সেখানে এখন বিশ্বের সেরা প্লেয়ার গুলোই খেলছেন। ক্রুস মদ্রিচকে বেঞ্চ করে ওডেগার্ডকে কোন কোচ খেলাতেন এখন?  জিদানও সেইম কাজ করছে।

জিদানের উপর যারা ভরসা রেখেছে তাকে টাইম দিয়েছে সে  ঠিকই ডেভেলপ করেছে। এসেন্সিও কিংবা লুকাস ভাস্কেজ নাচো এরা কয়েক বছর আগে  সম্ভবনাময়ী প্লেয়ার ছিলো। মাদ্রিদের মত ক্লাবে সময় পেতে একটু দেরি হবেই সেই দেরিতে হলেও এরা সবাই তার প্রাপ্যটা জিদানের থেকে আদায় করে নিয়েছে! নাচো রাইট ব্যাক, লেফট ব্যাক সব পজিশনেই খেলেছেন কিন্তু জিদান তার ক্যারিয়ার আজকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে  সিবি হিসেবে সেইম ভাস্কেজ কেও রাইট ইউং ব্যাক পজিশনে নিয়ে তার ভার্সেটালিটি দেখিয়ে দিয়েছেন!

জিদান আসার আগে ক্যাসেমিরোকে খুব কম মানুষই চিনতো । তাকে মূল দলে এনেছেন থ্রি পিটে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার ছিলেন, এখন ওয়ার্ল্ড ফুটবলের  তর্ক সাপেক্ষে সেরা ডিফেন্সিভ মিড!

অপরদিকে আমরা যদি জিদানের ৫ বছরের ম্যানেজিং ক্যারিয়ার দেখি তাহলে দেখতে পাবো আমরা তাকে তার চয়েসের কয়জন প্লেয়ার কিনে দিয়েছি এক হ্যাজার্ড ছাড়া?

৪০ মিলিওনের বেশি খরচ করে যেই পটেনশিয়াল ৪ জন খেলোয়াড়কে জিদান সাইন করেছিলেন সবাই দিন শেষে অনেকাংশে সফল এটলিস্ট যারা জিদানকে ডেভেলপ করার সুযোগ দিয়েছেন! জোভিচ, মেন্ডি, মিলিতাও, রড্রিগো । জোভিচ এবং মিলিতাও তেমন একটা সুযোগ পায়নি তাদের পজিশনে বিশ্বসেরারা থাকার কারনে, আরেকটা বিষয় হচ্ছে জিদানের পূর্বে কোচ যারাই ছিলেন আনচেলতি থেকে শুরু করে মৌরিনহো তারপর আবার লোপে এবং সোলারি কেউই কখনো বেঞ্জেমাকে ছাড়া খেলেননি, মারিয়ানো নতুন সাইনিং থাকা সত্ত্বেও তো তখন সোলারি কিংবা লোপে কেউই গেইম দিতে পারেননি!
এমনিতেই মাদ্রিদের যেই ফ্রন্ট লাইন বেঞ্জেমা কোন রকম সিনিয়র প্লেয়ার হিসেবে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার জায়গায় জোভিচকে চান্স দিলে কি এমনই বা করতে তার মধ্যে জোভইচ ছিল ডিসিপ্লিনের বাইরে ঠিক মত টিম মিটিংয়ে অংশ নেননা! রুলস রেগুলেশন মেলে চলেন না!
মিলিটাও অপেক্ষা করেছে জিদানকে টাইম দিয়েছে মিলিতাও তার পজিশনের সেরাদের যখন ইনজুর্ড হয়ে জায়গা ছেড়ে দেয়ার অপেক্ষা করেছে! আর আজকে সাবাই মিলিতাও পারফর্মেন্সে প্রসংশায় পঞ্চমুখ!
ভাগ্যের কি পরিহাস জোভিচ জানুয়ারিতে জিদানকে বিপদে ফেলে লোনে চলে গিয়েছে। এখন কমিলিতাও এখন সেরা ইয়াং ট্যালেন্টদের ভেতরে একটা আর জোভিচ নিয়মিত বেঞ্চেই কাটাচ্ছেন হাফ সিজন খেলে গোল পেয়েছেন মাত্র ৪টা জিরো এসিস্ট! শেষ মেষ ফ্রানকুর্ট কোচ গেইম টাইম দিতেই তাকে রাজি না!

মেন্ডি আর ভিনি, রড্রিগো যথেষ্ট সময় পেয়েছে মিলিতাওকে ডেভেলপ করেছে। শুধু জোভিচই একমাত্র প্লেয়ার যে জিদানকে সময় দিতে চায়নি।

এছাড়াও সার্জি আরিবাস, মার্বিন পার্ক, মিগুয়েল গুতিয়েরেজ, হুগো ডিরো, ব্লন্কো সবাই জিদানে আন্ডারে ডেব্যু করেছে! মিগুয়েল, আরিবাস, ব্লান্কো তিনজন শেষ দিকে দলের গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার ছিলেন জিদান আন্ডারে তারা তাদের রোল প্লে করেছেন!

শুধুমাত্র এক হ্যাজার্ডের একটা সাইনিং বড় সাইনিং যেটা নিয়ে জিদান ব্যর্থ বড়, এখানে ভাগ্যেরও ব্যাপার আছে মাদ্রিদের মেডিকেল টিম, হ্যাজার্ডের ফিটনেস সবকিছুই একটা বড় ইস্যু ছিল!

দিন শেষে জিদান সেকেন্ড টার্মে প্রমান করেছেন সে রোনালদো ছাড়া তিনি সফল! যেসকল ইয়াং প্লেয়ার তাকে সময় দিয়েছেন তাদের তিনি সঠিক ভাবেই ব্যবহার করেছেন! যেই ইএসপিএন, গোল.কম জিদানকে লালিগার টপ ফোরেই রাখেনি তাদের প্রেডিকশন ডাউট ভুল প্রমান করেই মাদ্রিদের ২য় অধ্যায়ের ইতি টেনেছেন!