আত্মঘাতী উদাসীনতা ক্ষমা করেনি বীরকেও
পোস্টটি ১৮২৮ বার পঠিত হয়েছেসৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ট উপহার প্রতিটি মানুষের জন্য তার মানবদেহ। বৈজ্ঞানিক উপায়ে মানব দেহের নিয়ম মাফিক পরির্চযা যে কোন স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য অনিবার্য । কিন্তু নিয়মের ব্যপতয় ঘটেছিল ঢাকার ফুটবলের নক্ষত্র মনেম মুন্নার জীবণে । এই অসাধারন ফুটবল প্রতিভার জন্ম হয়েছিল ১৯৬৬ ইং সালে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে নারায়নগঞ্জে। সময়ের ¯্রােতের সাথে সাথে আল্লাহ প্রদত্ত ফুটবল প্রতিভাকে চরম অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে শানিত করে সুঠাম দেহের অধিকারী ও কিং ব্যাক ফুটবলার হিসাবে সারা বাংলাদেশে ক্ষ্যাতি অর্জন করেছিলেন মুন্না মাত্র ২০ বছর বয়সে। ১৯৮৭-১৯৯৭ ইং সাল পর্যন্ত এক টানা ১০ বছর দাপটের সাথে মাঠ কাঁপিয়েছিলেন ঢাকা আবাহনী ক্লাবের হয়ে। অধিনায়ক হিসাবে ট্রফি জিতেছিলেন ক্লাব ও জাতীয় দলের জন্য। এমনকি কলকাতা ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাবের পক্ষেও বহুবার খেলে দেশের জন্য সন্মান বয়েনিয়ে এসেছিলেন। ১৯৯১ সালে আবাহনী ক্লাব তাকে চুক্তিবদ্ধ করেন ২০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে, যা ছিলতখন এই উপ-মহাদেশে সর্বোচ্চ ।
১৯৯৫ ইং সালে মালয়শিয়ার সেলেংগর প্রদেশে এ,এফ, সি ও বাফুফের উদ্যোগে ৩ সপ্তাহের জন্য এক সকার একাডেমির ক্যাম্পে জার্মান কোচ অটোফিস্টার, আমি ও মুন্নাসহ জাতীয়ফুটবল দল অংশ গ্রহনকরি । মূলত সেই ক্যাম্পেই মুন্নার সাথে আমার ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। আমি আমার স্পোর্টস মেডিসিনের কোচিংয়ে অংশ গ্রহন করা ছাড়াও প্রত্যেক ফুটবলারের হেল্থ প্রোফাইল তৈরী করতাম।একদিন হটাৎ মুন্নার বøাড প্রেসার মেপে চমকে উঠলাম কারণ তার বিপি ছিল ১২০/১৭৫ মিঃমিঃ- মার্কারী । কিন্তু মুন্না হাসছিল আর ব্যঙ্গো করে বলেছিল -“ ডাক্তার তুমি ঘাবড়ে গেলে, এখন নিশ্চয়ই আমাকে এক গাদা ঔষধ আর উপদেশ দিবে, এ রকম বিপি আমার প্রায়ই থাকে!” । আমি তাকে বোঝালাম ও ঔষধ দিলাম-কিন্তু মুন্না ছিল নির্বিকার ও উদাসীন । পৃথিবীতে বোধ হয় প্রত্যেক প্রতিভাবানরাই নিজস্ব ব্যাক্তিগত জীবনে মুন্নার মত উদাসীন হয়। আমি বাফুফেকে রিপোর্ট করলাম কিন্তু কেউ আমলে নিলনা। সৌদি আরব ও বাহারাইন ট্যুরের সময় তাকে আবারও বোঝালামএবং সে কথা দিল দেশে ফিরে সে ফুল চেকআপ করবে । কিন্তু দেশে ফিরেও নানাবাহানা । হটাৎ ১৯৯৭ ইং সালে তার পারফরম্যান্স ড্রপ করল-জাতীয় দল থেকে হটাৎ ছিটকে পড়লো । ভিতরে ভিতরে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলেও কখনও মুখে প্রকাশ করতনা, বা কাউকে জানাতে চাইতোনা।
১৯৯৯ইং সালে হটাৎ বাসার বাথরুমে অজ্ঞান হয়েপড়ে গেল, স্থানীয় ডাক্তার তখন তার বিপি দেখে ভয় পেয়ে গেলেন এবং তৎক্ষনাথ পপুলার ডায়াগনষ্টিকে পরিক্ষার জন্য পাঠালেন। পপুলারের ডাক্তার রিপোর্ট দেখে সুধু বলেছিলেন-“সর্বনাশ, আপনার কিডনিতো প্রায় শেষ”। তখন মুন্নার টনক নড়লো, ভয় পেলো এবং খুব সল্প কয়েক দিনের মধ্যেই সে ব্যাংককে গেল রোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। ব্যাংককে ডাক্তার বললেন - “ অবিলম্বে ডায়ালাইসিস এবং কিডনী ট্রান্সপ্লান্টটেসন ”। দেশে ফিরে কিডনী হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সুুরু করলো এবং ২০০০ ইং সালের প্রথম দিকে ইন্ডিয়ার ব্যাঙ্গালুরে যেয়ে আপন বোনের কিডনী দিয়ে ট্রান্সপ্লান্টটেসন করে দেশে ফিরলেন । ২০০০- ২০০২ ইং সাল পর্যন্ত নিয়ম মাফিক ভাবে ভালো আবস্থায় থাকলেন । ২০০৩ ইং সাল থেকে ২ টি গুরু দায়িত্ব কাঁধেনিলেন-আবাহনী ক্লাবের ফুটবল ম্যানেজার ও বাংলাদেশ যুবলীগের ক্রীড়াসম্পাদক । কিন্তু ২০০৪ ইং সালে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলাকালীন সময়ে হটাৎ ভাইরাল এ্যাটাকে অসুস্থ হয়ে পড়লেন, অসুস্থতা ভয়াবহতার দিকে রূপ নিলো, হাসপাতালে ভর্তি কার হলো, কিডনীতে আবারও ইনফেকসন ধরা পড়ল এবং প্রিকমা স্টেজে চলে গেলেন। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আইসিইউতে তাকে রাখা হলো । বেশ কিছু দিন যমে-মানুষে টানাটানির পর ২০০৫ ইং সালের ১২ই ফেব্রæয়ারিতে দেশ বরেণ্য ফুটবলার নিয়তির লেখাকে আর ডিফেন্ড করতে না পেরে, না ফেরার দেশে চলে গেলেন লক্ষ লক্ষ ভক্তকে কাঁদিয়ে।
মুন্নার গৌরবময় স্মৃতি বুকে জড়িয়ে আজও আবেগ আপ্লুত হন তার প্রিয়তমা স্ত্রী সুরভী মনেম,কণ্যা দানিয়া, ছেলে আজমান, আমার মত অনেক বন্ধু এবং লক্ষ লক্ষ ভক্ত ।
সুতরাং ক্লাব/ফেডারেশান গুলোর উচিত জাতীয় দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের হেল্থ প্রোফাইল, নিয়মিত হেল্থ চেকআপ ও হেল্থ ইনসুরেন্স, সৎ ও বাধ্যতামূলক ভাবে আইন করে চাল ুকরা। পরিশেষে চিকিৎসাশাস্থ্রের ভাষায় আবারো বলবো- “রোগ প্রতিরোধ করা , রোগ মুক্তির চেয়ে শ্রেয়”।
- 0 মন্তব্য