• ফুটবল

কাতার ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২২ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়

পোস্টটি ১২৫১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

(ডাঃ গোলাম শওকত হোসেন-চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক ও লেখক)

আগামী নভেম্বর ২০, ২০২২ তারিখে কাতারে ২২তম ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সেরা ৩২ দল ( ৫টি ফুটবল কোনফেডারেশন থেকে) নিয়ে; যার শুধু ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জন্যই কাতার ব্যয় করেছে ২০০ বিলিয়ন ডলার। পৃথিবীর ৩৫০ কোটি মানুষের প্রাণের খেলা ফুটবল বা সকার, ফিফার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২১১টি ন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশনস, ফিফার প্রোজেক্টেড বাজেট-রেভিনিউ হচ্ছে২০২২সালে .৬৭ বিলিয়ন ডলারআসন্ন ২০২২সালের ফিফা কাতার ওয়ার্ল্ডকাপের (দ্যা গ্রেটেস্ট সো অন আর্থ)চ্যাম্পিয়নের জন্য ধার্য ৪২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪০০কোটিটাকা); রানার্সআপরে জন্য ধার্য ৩০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৮০কোটি টাকা) আর তৃতীয় স্থানধারীর জন্য ২৭ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৬০কোটি টাকা)

তবেআরববিশ্বে / তথা মধ্য প্রাচ্চে৯২বছরেরফিফাওয়ার্ল্ড কাপের ইতিহাসে এটাই প্রথম আসর। নানা মুনিরের নানা মতানুসারে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে সে সময় যেহেতু তাপমাত্রা ৪০/৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকবে তাতে খেলোয়াড়রা তাদের স্বাভাবিক নৈপুণ্য দেখাতে পারবে না। তবে কাতার সেই কথা মাথায় রেখে ১০০% সোলার, রিসাইকেল ও ক্যাসকেড এনার্জিকে কাজে লাগিয়ে আটটি স্টেডিয়ামেই কুলিং সিস্টেমের বাবস্থা করেছে;স্টেডিয়াম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে লোকাল ও রিইউজএবল ম্যাটেরিয়াল; রাস আবু ওবাদ স্টেডিয়াম তৈরি করেছে ডিমাউনটএবল টেকনোলোজিকে কাজে লাগিয়ে অর্থাৎ টুর্নামেন্ট শেষে পুরো স্টেডিয়ামটি খুলে ফেলা যাবে;মরুর বুকে রিসাইকেল ওয়াটারের মাধ্যমে শ্যামল-সবুজ বনানী তৈরি করেছে; দর্শকদের জন্য নতুন করে ১০০ টিরও বেশি ৪/৫ স্টার ষ্ট্যাণ্ডার্ড হোটেল তৈরি করেছেযাতে প্রায় ১২ লক্ষ অতিথিকে স্থান দিতে পারে; বহু ক্রুজ শিপ তইরি করেছে যার এক একটি দশ হাজার মানুষকে ধারণ করতে পারে, মাসকটের নাম “লাইব” যার অর্থ “অতি চৌখোস খেলোয়াড়”; অফিসিয়াল গানের নাম হচ্ছে-“হায়্যা হায়্যা” যার অর্থ “একসাথেই থাকা ভালো”; খেলার জটিল সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ব্যবহার করা হবে “ভার”-টেকনোলোজি বা “ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফ্রিং”; “সেমি অটো অফ-সাইড সিস্টেম”ব্যবহার করা হবে ১২ টি ক্যামেরা ২৯ টি ডাটা পয়েন্টের মাধ্যমে; প্রতিটি বলে থাকবে সেন্সর; খেলাধুলারপবিত্রতাকেধারণকরারজন্যরাশিয়াকেঅংশগ্রহনকরতেদেওয়াহচ্ছেনাইউক্রেনআক্রমনেরকারণে; ফিলিস্তিনিদেরউপরনির্যাতনেরজন্যইসরাইলীদেরকাতারে খেলা দেখার জন্য ফিলিস্তিনি পরিচয়ে আসতে হবে (যদিও এ নিয়ে তারা লবিং করছে); এনার্জি-সেভিংসের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এলইড লাইট যা নন-টকসিক ও বেশি টেকসই; প্রতিটি স্টেডিয়ামেই তৈরি করা হয়েছে স্লাইডিইং ছাঁদ যা আবহাওয়ার প্রয়োজন অনুযায়ী খোলা বা বন্ধ করা যাবে; সবস্থানেই থাকবে ওইয়াই ফাই ও সেলফোন / ল্যাপটপ রিচারজের সিস্টেম; ডিসএব্লেডদের বসার সুবন্দোবস্ত; দৃষ্টিশক্তিহীনদের জন্য বনোকেল সিস্টেম যাতে তারাও খেলা উপভোগ করতে পারে; স্পেসাল মানুষদের (অটিস্টিক) জন্য থাকবে “সেন্সরি ভিউইং রুম”; রাস্তা খোঁজার জন্য রাস্তাতেই থাকবে নেভিগাসন ডিভাইস; ৫জি নেটওয়ার্কের বাবস্থা থাকবে;মিনিমাম ওয়াটার ওয়েস্টটেজ সিস্টেমে ওয়াস রু্মের ব্যবহার; পরিবেশ বান্ধব ইলেকট্রিক বাস; সর্বাধুনিক সমরারাস্ত্র সজ্জিত পুলিস, আর্মি, নেভি, এয়ার ফোর্স, ডগ-স্কোয়াড, বোম-স্কোয়াড দিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বাবস্থা ইত্যাদি।

চাঁদেরও যেমন কলঙ্ক আছে ঠিক তেমনিভাবে কাতার ফিফাওয়ার্ল্ড কাপের ভেনু সিলেকশন নিয়েও কাতারের বিরুদ্ধে ফিফার কর্মকর্তাদের ঘুস দেওয়ার সত্য মিথ্যার গুঞ্জন আছে ওয়ার্ল্ড কাপ দেখার সৌভাগ্যবান বাক্তিরা যারা টিকিট পেয়েছে তাদের মধ্যে বিশেষ করে অ্যামেরিকা বা ইউরোপ বা দূর প্রাচ্চের বহু  ফুটবল প্রেমিরা কাতারের নানা রুলস-রেগুলেসন নিয়ে এখন নানা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। কারণ সকল আয়োজন সত্ত্বেওপ্রথমত তাপমাত্রা নিয়ে শঙ্কিত; ইসলামিক উপাসনালয়গুলোর আশেপাশে / মিলিটারি সাইটগুলোতে কোন পাবলিক ফটোগ্রাফ নেয়া যাবে না; শুধুমাত্র কাতারি রিয়াল দিয়ে সকল কেনাকাটা করা যাবে যার জন্য এটিএম বুথেরফাসিলিটি সব জায়গায় পাওয়া যাবে; ড্রাইভিং করতে হবে রাস্তার ডান দিক দিয়ে; কোন প্রকার শুকরের মাংশের খাবার পাওয়া যাবে না বা সংগে আনা যাবে না; কোন প্রকার এলকোহলিক বিভারেজ পাওয়া যাবে না বা সংগে আনা যাবে না; স্মোকিং জোন ছাড়া স্মোক করলে ১০০০-৩০০০ কাতারি রিয়াল পেনাল্টি; ৩০০০ কাতারি রিয়ালের বেশি মূল্যবান কোনবাক্তিগত কোন কিছু সংগে নিতে অনুমতি পাবে না; অনুমোদনের অতিরিক্ত (৫০,০০০ কাতারি রিয়াল)বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে কাতারে প্রবেশ  নিষেধ; ৪০০ টার বেশি সিগারেট সংগে নিয়ে যাওয়া যাবে না;কোন প্রকার পর্ণগ্রাফি সংগে নিয়ে যাওয়া যাবে না; কোন প্রকার তরল পদার্থ মাত্র ১০০ মিলিঃ সংগে নিয়ে যাওয়া যাবে তাও নিতে হবে স্বচ্ছ ও রিসিল-এবল কনটেনারে; পুরুষেরা হাঁটুর উপরে কোনপ্যান্ট হোটেল-ইনডোর ছাড়া ব্যবহার করতে পারবে না তবে ইসলামিক উপাসনালয়গুলোর আশেপাশে ফুলপ্যান্ট পরতেই হবে; মেয়েদের সারা শরীর ঢাকা রাখতে হবে; সমুদ্র বীচে বিকিনি বা সুমিং স্যুট পরে কোন মেয়ে যেতে পারবে না, হোটেল সুমিং পুলেও বিকিনি পরা যাবে না শুধু সুমিং স্যুট পরতে পারবে; কাতারে গে বা লেসবিয়ান বা উভোকামীরা নিষিদ্ধ তাই তারাকাতার ফিফাওয়ার্ল্ড কাপ বর্জন করেছে; অতিরিক্ত হৈহুল্লা চলবেনা; বিয়ার বা মদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তাই লাইসেন্সড বার সীমিত পরিমানে খোলা থাকবে ও প্রতেকে সীমিত পরিমাণের বেশি সারভ করা হবে না; ওপেন স্পেসে এলকোহল বা বিয়ার পান করলে ৬ মাস জেল বা ৮৫০ ইউএস ডলার জরিমানা; এ সময় ওয়ার্ল্ড কাপের কারণে ইউরোপিয়ান লীগের ক্ষতি হবে তাই তাদের বহু কর্মকর্তা চরম অসন্তুষ্ট; কাতারের ফুটবলের গ্রাসরুট লেভেলে ও পাইপ লাইনে ফুটবলারদের উন্নয়ন না করে তাদের (২০০ + ২০)= ২২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারফিফাওয়ার্ল্ড কাপে খরচ করাকে অনেক ফুটবল বোদ্ধারা অর্বাচীনের মত কাজ বলচ্ছে;অদ্যবধিকাতার ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২২ এর প্রিপারেসনের কাজে ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের তথ্যানুসারে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকা,  নেপালসহ অন্যান্য গরীব দেশের প্রায় ৭০০০এর কাছাকাছি শ্রমিক জীবন দিয়েছে(কারণ তাদের সাথে অমানুষিক অত্যাচার  করা হয়েছিল ,পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া, ভিসার আসল কাগজ লুকিয়ে রেখে অবৈধ বোলে জেলের হুমকি  দেওয়া, মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটির অভাব ইত্যাদি) কিন্তু কাতার তাদের পরিবারকে নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়নি-সুতরাং কাতারের কাছে তাদের পরিবাবের পক্ষ থেকে ওয়ার্ল্ড কাপ-বাজেট অনুসারে দাবি ৪৪০ মিলিয়ন ইউএস ডলার কারণ এই টুর্নামেন্টে কাতারের লাভ হবে ১৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার-যা অর্থাৎ এই টুর্নামেন্ট ঐ মৃত বা পঙ্গু শ্রমিকদের রক্তে রঞ্জিত।

আমাদের সকলের কাম্য কাতারফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের আসর ২০২২ সালে সারা পৃথিবীর জন্য বিশাল আনন্দ বয়ে নিয়ে আসুক, নতুন খেলোয়াড়েরা অনুপ্রাণিত হউক সেই সাথে আরবের পবিত্র ভূমিতে কোন মানুষ তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হউক এটা আমাদের কাম্য নয়, সেই সাথে এটাও কাম্য নয় যে কারো আনন্দ-উল্লাস পাশবিকতায় রূপ নেক।