• ফুটবল

এক সত্যিকারের কিংবদন্তীর উপাখ্যান

পোস্টটি ৮৮০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

কিংবদন্তী! লিজেন্ড!

আমরা হরহামেশাই এ শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকি। লিজেন্ড বা কিংবদন্তী যেকোনো ক্ষেত্রেই দুটি পরিচিত শব্দ। অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রেই আমরা যে কাউকে কিংবদন্তীর আসনে বসিয়ে দেই, বিশেষভাবে যখন ক্রীড়াক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা আসে।

কিন্তু কিংবদন্তী বা লিজেন্ড আসলে কারা? তাদের কি কোনো বিশেষ সংজ্ঞা আছে?

আসলে কিংবদন্তী বা লিজেন্ডের কোনো স্পেসিফিক সংজ্ঞা নেই। বিভিন্ন কারণে একজনকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিজেন্ড বলে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। আবার সবাই যে তাকে লিজেন্ড হিসেবে মেনে নেবে, তাও কিন্তু না। কারও কারও কাছে সে হতে পারে কিংবদন্তী, আবার কারও কাছে হতে পারে একদমই সাধারণ।

ফুটবল খেলা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলেও ফুটবল খেলার জনপ্রিয়তা মূলত বিস্তার লাভ করেছে ইংলিশদের হাত ধরে। ইংল্যান্ডে লিগ ভিত্তিক জাঁকজমকপূর্ণ ফুটবলের ইতিহাসও দেড়শ বছরের পুরনো। ফলস্বরূপ বহু তারকা, মহাতারকা ও কিংবদন্তীর আবির্ভাব হয়েছে ইংলিশ ফুটবলে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ হারিয়ে গেছেন কালের গর্ভে, কারও কারও কীর্তি আবার উজ্জ্বল ও অমলিন হয়ে রয়েছে চিরকালের জন্য।

এই ইংলিশ কিংবদন্তীদের মধ্যে যদি অল্প কয়েকটা নামও বলা হয়, তাহলে একটা নাম বারবার চোখের সামনে চলে আসে। কিংবদন্তীর যদিও কোনো নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই, তারপরও তিনি নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন কিংবদন্তীর এক সংজ্ঞা হিসেবে। ঠিক যেন সত্যিকারের কিংবদন্তীর ছাঁচে ফেলে গড়ে তোলা হয়েছে তাঁকে।

সাল টা ১৯৭০। আগস্ট মাস চলছে। উত্তর ইংল্যান্ডের ছোট্ট সুন্দর শহর নিউক্যাসলে তখন বইছে শরতের মৃদু হাওয়া। এমন একটা দিনে নিউক্যাসল শহর থেকে একটু দূরে গসফোর্থ নামের এক উপশহরে নিম্ন-মধ্যবিত্ত দম্পতি অ্যালান ও অ্যানি শিয়েরারের ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক শিশু। দ্বিতীয় সন্তানের আগমনে মা বাবা উভয়ই ছিলেন অনেক উৎফুল্ল। বাবা অ্যালান নিজের নামেই রাখেন ছেলের নাম, অ্যালান শিয়েরার।

image_search_1659203667266
বাবা অ্যালান শিয়েরার নিজে ছিলেন ফুটবলের বিরাট ভক্ত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু সময় পেলে সেটুকু ব্যয় করতেন ফুটবলের পেছনে। নিজেও চেয়েছিলেন ফুটবলার হতে। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য ছিলোনা। ফলে অল্প বয়সেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে অর্থ উপার্জনে নেমে পড়তে হয়।

ছোট্ট অ্যালান শিয়েরার বড় হওয়ার সাথে সাথে বাবার থেকে তার মধ্যেও সঞ্চারিত হয় ফুটবল প্রীতি। ফুটবলে ছেলের আগ্রহ দেখে বাবা ভীষণ খুশি। নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন হয়তোবা ছেলেই পারবে পূরণ করতে। আর এ আশায় তিনি নিজেই ছোট্ট অ্যালান কে নানাভাবে ফুটবলের প্রতি উৎসাহী করে তোলেন।

ফুটবলে অল্প বয়সেই বেশ দক্ষ হয়ে ওঠেন অ্যালান। স্কুলে থাকাকালে তাঁর ক্যাপ্টেন্সিতে তাঁদের স্কুলটিম সেইন্ট জেমস পার্কে সাত দলের এক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর তিনি যোগ দেন অ্যামেচার দল ওয়ালসেন্ড বয়েজ ক্লাবে। সেখানে থাকাকালীন তিনি নজরে পড়েন সাউদাম্পটনের স্কাউট জ্যাক হিক্সনের। তাঁর খেলার মধ্যে বিশেষ কিছু নজরে পড়ে হিক্সনের। অবশেষে হিক্সনের হাত ধরে ১৯৮৬ সালে সাউদাম্পটনের বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেন শিয়েরার।

দুবছর বয়সভিত্তিক দলে কাটানোর পর মূল স্কোয়াডে ডাক অ্যালান। ১৯৮৮ সালের ২৬ মার্চ চেলসির বিপক্ষে ফার্স্ট ডিভিশন ম্যাচে বদলি হিসেবে তাঁর অভিষেক ঘটে। এর দু সপ্তাহ পরে সাউদাম্পটনের হোম গ্রাউন্ড দ্য ডেলে আর্সেনালের বিপক্ষে তার পূর্নাঙ্গ অভিষেক ঘটে। অভিষেক ম্যাচেই সারাদেশের সব পত্রিকার হেডলাইন হন তিনি। গানার্সদের ৪-২ গোলে হারানো এ ম্যাচে হ্যাট্রিক করেন অ্যালান। সেই সাথে টপ টায়ারে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাট্রিক করার রেকর্ড গড়েন তিনি।

এরপর নিয়মিত গোল না পেলেও মোটামুটি ভালোভাবেই পারফর্ম করে যাচ্ছিলেন শিয়েরার। তিনি গোল নিজে না করলেও গোল করাতে বা গোলের সুযোগ তৈরিতেও বেশ পারদর্শী ছিলেন। ঠিক সেসময় তাঁর জীবনে এলো নতুন এক অধ্যায়। লাইনিয়া নামের এক সুন্দরীর প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেন অ্যালান। প্রেম থেকে বিয়েতে গড়াতেও সময় লাগলোনা খুব। ১৯৯১ সালেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন অ্যালান ও লাইনিয়া।

image_search_1659203456890
সাউদাম্পটনে ক'বছর দারুণ সময় কাটান শিয়েরার। সেইন্টদের সিনিয়র টিমে চারবছরে ১৫৮ ম্যাচ খেলে করেন ৪৩ গোল। তাঁর অতিমানবীয় পারফর্মেন্স নজর কাড়ে অনেক বড় বড় দলের। সাউদাম্পটন বুঝতে পারে যে তাঁকে আর ধরে রাখা সম্ভব না। অবশেষে ১৯৯২ সালে ইংলিশ ট্রান্সফারের আগের সব রেকর্ড ভেঙে ৩.৬ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় লিগের নতুন শক্তি ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স।

ব্ল্যাকবার্নেও শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করেন অ্যালান। রোভার্সদের হয়ে প্রথম ২১ ম্যাচেই ১৬ গোল করে ফেলেন অ্যালান। কিন্তু এরপরেই এক বড় ইঞ্জুরি হানা দেয় তাঁর ক্যারিয়ারে। সিজনের বাকি সময়টাতে আর মাঠেই নামতে পারেননি তিনি।

সেসময় ইংলিশ জাতীয় দলের জন্যও বেশ কঠিন সময় যাচ্ছিলো। অবসরে চলে গেছেন কিংবদন্তী গ্যারি লিনেকার। তাঁর একদম পার্ফেক্ট রিপ্লেসমেন্ট হওয়ার কথা ছিলো শিয়েরারের। চলছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। আর সেসময়ই ইঞ্জুরির থাবায় পড়ে যান অ্যালান৷ আর তাঁর অভাবটাই যেন জেঁকে বসে ইংল্যান্ড দলকে। ফলাফল, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকেই ছিটকে যায় থ্রি লায়ন্সরা।

অবশেষে একসময় ইঞ্জুরির প্রহর শেষ হয়। আবারও মাঠে ফিরে আসেন অ্যালান শিয়েরার। আবার মেলে ধরতে শুরু করেন নিজেকে। নিয়মিত গোল পেতে থাকেন তিনি। তাঁর দুর্দান্ত ফর্মে এগিয়ে যেতে থাকে দলও। রানার্সআপ হিসেবে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম শেষ করে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। সেই সিজনে ৪০ ম্যাচে ৩১ গোল করেন শিয়েরার। অবিশ্বাস্য পারফর্মেন্সে সেবার এফডব্লিউএ ফুটবলার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন তিনি।

পরের সিজনে রোভার্সে যোগ দেন আরেক ইংলিশ স্ট্রাইকার ক্রিস সাটন। এরপর শিয়েরার আর সাটন মিলে গড়ে তোলেন বিধ্বংসী এক জুটি। এ ভয়ানক জুটির সামনে একে একে ভেঙে পড়তে থাকে লিগের সবকটি ডিফেন্স। অবশেষে তাঁদের ওপর ভর করে ১৯৯৪-৯৫ সিজনে প্রায় আশি বছর পর লিগ শিরোপা ঘরে তোলে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। টানা দুই সিজন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন শিয়েরার। নিজেকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়।

image_search_1659203638982
গল্পের কি শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি? একদম নাহ। গল্প তো মাত্র শুরু হলো।

ধারাবাহিক এমন অভাবনীয় পারফর্মেন্সের পর তাঁকে পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠে ইউরোপের সব বড় বড় জায়ান্টরা। কিন্তু অর্থের পেছনে ছুটে চলা কখনোই শিয়েরারের লক্ষ্য ছিলোনা। তাই বড় ক্লাবের সব বড় বড় অফার, অর্থ, যশ, খ্যাতি কে পাত্তা না দিয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসেন অ্যালান শিয়েরার। যোগ দেন নিজ শহরের ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডে। সেই নিউক্যাসল ইউনাইটেড, যেখানে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই ছোট্টবেলায়।

যেবার শিয়েরার নিউক্যাসলে যোগ দিলেন, সেবার আসর বসেছিলো ইউরোর। জাতীয় দলের হয়ে অবশেষে বড় এক টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ আসে তাঁর সামনে, সেটাও দলের সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে। সেখানে নামের প্রতি সুবিচার করতে সক্ষম হন অ্যালান। গ্রুপ পর্বেই সবকটি ম্যাচেই গোল করেন। কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি গোল পাননি, গোলের দেখা পায়নি ইংল্যান্ডও। অবশেষে টাইব্রেকারে জিতে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় থ্রি লায়ন্সরা। সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষেও শুরুতে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন শিয়েরার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যায় জার্মানরা, সমতা ফেরায় ম্যাচে। শেষে পেনাল্টি শুটআউটে ৬-৫ গোলে জিতে নেয় জার্মানি। তৃতীয় হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় অ্যালান শিয়েরারের ইংল্যান্ড।

নিউক্যাসলেও তার শুরুটা হয় দারুণ ছন্দে। তার ধারাবাহিক গোলের ধারা অব্যাহত থাকে আগের মতোই। একের পর এক গোল করতে থাকেন। গোল করাটা তার কাছে ছিলো ডালভাতের মতো। টানা চার বার নির্বাচিত হন প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ১৯৯৭ সালে আবার জিতে নেন পিএফএ প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার।

এরপর ছন্দপতন ঘটে শিয়েরারের ক্যারিয়ারে। আবারও হানা দেয় ইঞ্জুরি। পরের সিজনে ইঞ্জুরি থেকে ফিরে আর সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। তার সাথে একের পর এক অঘটন ঘটতে থাকে৷ কোচের সাথে মনোমালিন্য দেখা দেয়। কোচ পরিবর্তন হয়, নতুন কোচ আসে। শৃঙ্খলা জনিত বিতর্কে জড়ান অ্যালান। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়টা পার করেন তখন।

এরপর আস্তে আস্তে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে ফ্রান্সে যান বিশ্বকাপে অংশ নিতে। তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারের একমাত্র বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচেই তিউনিসিয়ার বিপক্ষে পেয়ে যান প্রথম বিশ্বকাপ গোল। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গোল করে সমতা ফেরান। অবশেষে সে ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে হেরে বিদায় নিতে হয় টুর্নামেন্ট থেকে।

image_search_1659203804871
নিউক্যাসলের জার্সিতেও তার ধারাবাহিক গোল করা অব্যাহত ছিলো। তার ওপর ভর করে ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে টানা দুইবার এফএ কাপের ফাইনালে ওঠে ম্যাগপাইরা। তবে দুবারই ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। কিন্তু দুবারই সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন অ্যালান শিয়েরার।

২০০০ সালে ওয়েম্বলিতে লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে ইউরো বাছাই পর্বে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাট্রিক করেন অ্যালান। এরপর ইউরোতেও তাঁর স্বাভাবিক খেলাটা বজায় রাখেন। প্রথম ম্যাচে পর্তুগালের বিপক্ষে পরাজয়ের পর তাঁর একমাত্র গোলে জার্মানিকে হারায় ইংলিশরা। এ জয়ের মাধ্যমে ১৯৬৬ সালের পর জার্মানদের প্রথমবারের মতো হারায় ইংল্যান্ড।

পরের ম্যাচে রোমানিয়ার বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় ইংল্যান্ড। এ ম্যাচেও এক গোল করেন শিয়েরার, আর এটি ছিলো ইংল্যান্ডের জার্সিতে তাঁর শেষ ম্যাচ ও শেষ গোল। ইংলিশদের হয়ে ৬৩ ম্যাচে ৩০ গোল করে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ইতি টানেন অ্যালান শিয়েরার।

জাতীয় দলকে বিদায় জানলেও নিউক্যাসলের হয়ে একের পর এক গোল করে যাচ্ছেন তখনও। বয়স ততদিনে হয়ে গেছে বেশ, কিন্তু তখনো নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে মাঠে দলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। দলের হয়ে কিছু জয়ের নেশা তাঁকে পেয়ে বসে। ব্যক্তিগত অর্জন ততদিনে পরিপূর্ণ, এবার নিউক্যাসলের হয়ে দলীয় কিছু জয়ের নেশায় লড়তে থাকেন। কিন্তু তাঁর চেষ্টা বিফলে যেতে থাকে বারংবার। ১৯৯৬-৯৭ সালে জয়ের খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। রানার্সআপ হয়ে লিগ শেষ করতে হয় সেবার। দুবার এফএ কাপ জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসতে হয়। ভাগ্য যেন বারবার তাঁকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলো খালি হাতে।

শেষপর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। ত্রিশের কোটা পেরিয়েছিলেন বহু আগেই, এবার পেরিয়ে যান পঁয়ত্রিশের কোটাও। মন চাইলেও শরীর আর সায় দিতে পারেনা। বয়স তাঁকে জড়িয়ে ধরেছে আষ্টেপৃষ্টে। সেসময় আবার নতুন করে থাবা বসায় অনেক পুরনো এক সঙ্গী - ইঞ্জুরি। এইবার আর পারেননা৷ ছেড়ে দিতে হয় হাল। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দেন। সময় যে হয়ে এলো, এবার তো নবীনদের জায়গা করে দিয়ে ছেড়ে যেতেই হবে।

image_search_1659203755805
তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা স্বরুপ একটি ফেয়ারওয়েল ম্যাচের আয়োজন করে নিউক্যাসল ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইঞ্জুরির কারণে সে ম্যাচ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। ফলে এর আগে ২০০৬ সালের ১৭ এপ্রিল সান্ডারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিলো তাঁর ক্যারিয়ারে সর্বশেষ ম্যাচ। ক্যারিয়ারের সর্বশেষ গোলটিও করেন সে ম্যাচেই। অবশেষে ২০০৬ সালের ১১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল কে বিদায় বলে দেন অ্যালান শিয়েরার।

তবে ততদিনে গড়ে ফেলেছেন সব অবিশ্বাস্য রেকর্ড। প্রিমিয়ার লিগে ২৬০ গোল করে প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে বসিয়েছেন নিজেকে। সেই ২৬০ গোলের মধ্যে ২০৬ টি গোলই করেছেন নিউক্যাসল ইউনাইটেডের হয়ে, হয়েছেন নিউক্যাসল ইউনাইটেডের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

শিয়েরারের অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। তাঁর অর্জন ও অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ক্লাবের সামনে সাড়ে ন' ফুট উচ্চতার ভাষ্কর্য স্থাপন করে ম্যাগপাইরা। তার বিখ্যাত এক আঙুল উঁচিয়ে ধরে গোল সেলেব্রেশনের মূহুর্ত শোভা পাচ্ছে সে ভাষ্কর্যে।

image_search_1659204001028

মাঠ ছাড়লেও ফুটবল ছাড়েননি অ্যালান শিয়েরার। বারবার বিভিন্নরুপে তিনি ফিরে এসেছেন ফুটবলে। কখনো কোচ, কখনো ম্যানেজার, কখনো বিশ্লেষক, কখনো বা ধারাভাষ্যকার। ফুটবল অ্যালানকে ছাড়েনি। অ্যালানও ছাড়তে পারেনি ফুটবল। ফুটবল যে তাঁর রক্তে।

বাবা অ্যালান শিয়েরারের অনুপ্রেরণায় ফুটবল কে তিনি ভালোবাসতে শিখেছিলেন, বাবার হাত ধরেই ফুটবলের জগতে পা রেখেছিলেন। এ ভালোবাসা ছিলো অসীম, অফুরন্ত। ফুটবলকে তিনি নিয়েছিলেন একদম আপন করে। ফুটবল আর শিয়েরার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। আর এ নিবিড় অবিচ্ছেদ্য বন্ধন তাঁকে করেছে এক সত্যিকারের কিংবদন্তী।