• ফুটবল

সুনীল ছেত্রী; তোমারে সেলাম

পোস্টটি ৭৩৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ভারতীয় ক্রীড়া চক্রটা যেখানে শচীন টেন্ডুলকার-সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা কপিল দেবের অজস্র কৃর্তিগাঁথার কথা বলে সেখানে ছোট বেলা থেকেই 'শচীন' হতে চাওয়া লাখখানেক ভারতীয় শিশুরা এখন 'ছেত্রী' হতে চায়। 'ইডেন গার্ডেন' কিংবা 'ওয়াংখেড়ে' খেলার চেয়ে 'সল্ট লেকে' খেলার স্বপ্ন নিয়ে ভারতীয় শিশুরা বেড়ে উঠে। এ বিরাট পরিবর্তনের কাণ্ডারীরূপে ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনে পা রাখে সুনীল ছেত্রী।

 

পারিবারিকভাবে খেলায় মত্ত থাকা পরিবার থেকে উঠে আসে সুনীল; মা সুশীলা ছেত্রী ও তাঁর দুই জমজ বোন তিনজনেই নেপালের জাতীয় মহিলা ফুটবল টিমে খেলেছেন। ফুটবলকে রক্তে ধারণ করা সুনীল চেয়েছিলেন ভারতের নীলরঙা আকাশে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো অশোকচক্র সংবলিত পতাকাটা উড়ুক, সে স্বপ্ন নিয়েই ক্রিকেট জ্বরে দগ্ধ হওয়া গোটা ভারতীয় ক্রীড়া শিল্পকে পরিবর্তন করে দেওয়া সুনীল ছেত্রী নিজের স্বপ্নকে মাথায় চেপে মফঃস্বলের 'গ্যাংটক বাহাই স্কুল' থেকে কোনোমতে পড়ে, রাতে মিড-ডে মিলের মোটা চালের ভাত খেয়ে, দিনের বেলায় বাবার মুদি দোকান সামলে যখন বোর্ড পরীক্ষায় ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করে সবাইকে চমকে দেয় তখন তাকে আর কোনো সাধারণ মানুষ বলা চলে না ; সে একটা জাতির, একটা সমাজের সবাই অলক্ষ্যে তাঁর কাঁধে চেপে বসে। 

349080-sunilchettriindia

সবাইকে চমকে দেওয়ার অসম্ভব গুন নিয়ে বেড়ে উঠা সুনীল ছেত্রী মাত্র ২০ বছর বয়সেই ভারতীয় ফুটবল দরজায় কড়া নাড়ে। দলের অন্যতম বড় তারকা বাইচুং ভটিয়ার ইঞ্জুরিতে ভাগ্যের দরজা খুলে যায় সুনীলের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান বিপক্ষে সাদা জার্সিতে নেমেই ম্যাচে নিজের জাত চেনান, গোলও করেন, চমকের শুরুটাও এখান থেকে করেন৷ 

 

এরপরের জন্মের সুনীল ছেত্রী তো রীতিমতো ইতিহাসের পাতায় খোদিত হয়েছেন। বিশ্বের সক্রিয় ফুটবলারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোল তথা ৮৪টি গোল করার কৃর্তি নিজের ঝুলিতে ভরেছেন। এ তালিকার অপর দুইজন দুই ফুটবল সম্রাট ক্রিশ্চিয়ান রোনালদো ও লিওনেল মেসি। দুই ফুটবল সম্রাটের পাশে নাম লেখাতে পেরে নিজেকে নিয়ে কি ভাবছেন সুনীল?  কিংবা মেসির সাথে সুনীলকে তুলনার প্রশ্নেও তাঁর ভাবনাটুকু কি?  তাঁর ভাষায়- "এই নিয়ে দেখছি প্রচুর কথা হচ্ছে। এমনকী আমার পরিবারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও! আমি সবাইকে একই জিনিস বলেছি। সত্যিটা এটাই যে, মেসির সঙ্গে আমার কোনও তুলনাই চলে না। বিশ্বের কারোর সঙ্গে নয়। আমি মেসির বিরাট ভক্ত। আর কোনও তুলনা একেবারেই নয়।" 

মেসির সঙ্গে দেখা হলে সুনীল কী করবেন?  উত্তরে তিনি বলেন, "আমি বলব, হায়! আমি সুনীল ছেত্রী। আমি আপনার বিরাট ভক্ত। আমি মেসিকে কোনও সমস্যায় ফেলব না। শুধু মেসি বলেই নয়, আমি যাদের যাদের ফ্যান, তাঁদের কাউকেই খুব একটা সমস্যায় ফেলব না। ওঁর সঙ্গে দেখা হলে আমার ভালো লাগবে, না হলেও আমি ভালোই থাকব। আমার যখন মন খারাপ হয়, আমি মেসির ভিডিও দেখে খুশী হয়ে যাই। তাই যখন দেখা হবে আমাদের, আমি মেসির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে এটাই বলব, আমি আপনার বিরাট ফ্যান।"

 

শচীন-সৌরভ-ভিরাট-ধোনির দেশে ফুটবলকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সুনীল মেসি, রোনালদো কিংবা স্বদেশী বাইচুং ভটিয়ার মতো হতে চাননি, সুনীল হতে চেয়েছেন নিজের মতো, সুনীলের মতো, ছেত্রীর মতো…