• ফুটবল

মারিও কেম্পেসঃ দ্যা এল ম্যাটাডোর

পোস্টটি ১৭৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের নাম নিলেই মাথায় প্রথমে ম্যারাডোনা, রিকুইলমে, বাতিস্তুতা ও হালের লিওনেল মেসির এর নাম আসে। তাদের নিয়ে যত আলোচনা ও লিখালিখি হয় মারিও কেম্পেসকে নিয়ে ততটা লেখালেখি  হয় না বা সেভাবে আলোচনা হয় না।

সবসময়ই আড়ালে থেকে যান আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক "দ্যা এল ম্যাটাডোর" কেম্পেস এর নাম। ম্যারাডোনাদের বিশ্বকাপ জয়ের পথটা প্রথম তিনিই দেখিছিলেন। তারই অধিনে আকাশি-নীলরা নিজদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ ঘরে তুলে। 

ফুটবল এর আবিষ্কারক ইংল্যান্ড হলেও এর স্বর্গরাজ্য হল লাতিন আমেরিকা। ১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বকাপ শুরু এর পর উরুগুয়ে ২ বার ব্রাজিল ১৯৭০ সালের মধ্যেই ৩ বার কাপ জিতলেও, আর্জেন্টিনার তখনো জিতা হয় নাই। ফুটবল বিশ্বকে জানান দেয়ার মত কিছুই করা হয় নি তখনো। অবশেষে ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ের মধ্যে দিয়ে বহু আরাধ্য বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে বিশ্বকে নিজেদের জানান দেয় আলবিসেলস্তরা। এবং এই বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক, যিনি ছিলেন ম্যারাডোনা আসার আগে আর্জেন্টাইনদের ভালোবাসা মণি মারিও কেম্পেস। 

ঝাকড়া চুলের কেম্পেস এর পুরো নাম "মারিও আলবের্তো কেম্পেস ছিয়োডি"। তবে ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন এল ম্যাটাডোর। 

কেম্পেস এর জন্ম ১৫ জুলাই ১৯৫৪ সালে, বুয়েন্স আয়ার্সের বেল ভিন্তের এর দরিদ্র পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই বাকি সব বাকি সব আর্জেন্টাইন বাচ্চাদের মত তারও ফুটবল এর প্রতি নেশা জন্মায়। তাই মাত্র সাত বছর বয়সেই স্থানীয় ক্লাবের জুনিয়র দলে জায়গা পান তিনি। দারুণ গতি, ক্ষীপ্রতা, বলের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং দারুণ ফিনিশিং দিয়ে তিনি নজর কাড়েন বড় ক্লাবগুলোর, ১৯৭৩ সালে যোগ দেন রোজারিও সেন্ট্রালে। 

OIP

কার্টেসীঃ ফিফা


১৯৭৪ বিশ্বকাপে ৩ বার কাপ জয়ী ব্রাজিল, টোটাল ফুটবল এর দেশ ও তারকা জোহান ক্রইফ এর নেদারল্যান্ডস এবং বেকেনবাওয়ারের জার্মানি এর সামনে তখন আর্জেন্টিনা ছোট দল, কিন্তু ২০ বছর এর তরুণ কেম্পেস এর চোখে তখন স্বপ্ন বিশ্বকাপ জয়ের।  কিন্তু তার এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে হতে বেশি সময় লাগে নাই।  রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে গোল করাকে অভ্যাস এ পরিনত করা, মারিও বিস্বকাপে কোন গোলই পান নাই। 

বিশ্বকাপের পরই বুঝতে সময় নেননি যে ক্যারিয়ার কে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে ইউরোপে পাড়ি জমাতে হবে, তাই তিন বছরে  রোজারিওর হয়ে ১০৭ ম্যাচে ৮৫ গোল করার পরার পাড়ি জমান লা লিগার ক্লাব, ভ্যালেন্সিয়াতে, লাতিনদের থেকে ইউরোপ এর খেলার ধরনের ভিন্নতা থাকায় প্রথম দিকে নিজে পড়েন বিপদের, শুনতে হয় অনেক সমালোচনা। কিন্তু দিন যত গিয়েছে এল ম্যাটাডোর হয়েছেন ভয়ংকর।  প্রথম মৌসুমে ৩৪ ম্যাচে ২৪ গোল করে পিচিচি জিতে সমালোচকদের দিয়েছেন জবাব। তার হাত ধরেই রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এর মত জায়ান্টদের পিছনে ফেলে ভ্যালেন্সিয়া জিতে নেয় কোপা দেলরের শিরোপা। 

এর পর ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের স্বাগতিক হয় আর্জেন্টিনা, সামরিক শাসন এর সময়ে কঠিন সময় পার করা আর্জেন্টাইনরা এই ফুটবল নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করে, এইবার ২৪ বছর বয়সী কেম্পেস আরো পরিনত ও ধারালো। 

নিজের ক্যারিয়ার এ তখন চলছে সেরা সময়, কয়েকদিন আগেই জিতে এসেছেন নিজের ২ নাম্বার পিচিচি ট্রফি। 

সে সময় এর আর্জেন্টিনার কোচ লুইস সিজার মেনত্তির দলে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ দলে জাগা পান কেম্পেস। সবাই কে অবাক করে দিয়ে সে সময় এর আরেক সেরা তরুন খেলোয়ার ম্যারাডোনা কে দলে নেননি।  হয়ত ফুটবল বিধাতা চেয়েছিলেন ১৯৭৮ এর বিশ্বকাপটা শুধুই কেম্পেস এর হউক। 

তবে বিশ্বকাপ শুরু হতেই পরেন গোলখরায়, গ্রুপপর্বের ৩ ম্যাচে ছিলেন গোললেস। ম্যাচে তাকে খুজে পাওয়াই কঠিন ছিল। ইতালির বিপক্ষে হেরে গ্রুপ এর ২য় হয়ে পরের রাউন্ডে নাম লিখায় আকাশি- নীলরা। 

নকআউট পর্বে মুখোমুখি হয় পোল্যান্ডের সাথে, প্রথম হাফে তাকে খুজে না পাওয়া গেলেও দ্বিতীয় হাফে কেম্পেস এর আগমন ঘটে,  ড্যানিয়েল প্যাসারেলার বলে হেড থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন, পরে করেন আরও এক গোল। দলও ম্যাচ জিতে ২-০ গোলে। পরের ম্যাচে ব্রাজিল এর সাথে গোলশূন্য ড্র করে। হিসাবে দাঁড়ায় শেষ ম্যাচে পেরু এর বিপক্ষে জিততে হবে ৪-০ গোলের ব্যাবধানে। পেরু তখন ফুটবল এর অন্যতম সেরা দল, সবাই আশা ছেড়ে দিলেও, কেম্পেস ছাড়েননি। বাচামরা এর ম্যাচে নিজে করেন ২ টি করে গোল ও অ্যাসিস্ট। আর্জেন্টিনাও ম্যাচ জিতে ৬-০ গোলে। 

এরপর ফাইনালে মুখোমুখি হয় আগের আসরের ফাইনাল খেলা দল ও টোটাল ফুটবল এর দেশ নেদারল্যান্ডস এর সাথে। বুয়েন্স আয়ার্স স্টেডিয়ামে এর সেই ম্যাচে ৯০ মিনিট ১-১ সমতা থাকার পর অতিরিক্ত সময়ের ১০৫ মিনিটে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন, পরে বার্তনির আরও এক গোলে ৩-১ এ ফাইনাল জিতে আর্জেন্টিনাকে তাদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ দেন। সেবার আসরে সবোচ্চ  ৬ গোল করে প্রথম আর্জেন্টাইন হিসেবে জিতেন গোল্ডেন বল, সাথে জিতেন গোল্ডেন বুট। 

ইতিহাসের মাত্র ৫ জন প্লেয়ার একই আসরে গোল্ডেন বল ও বুট জয় করতে পেরেছেন, কেম্পেস তাদের একজন। 

পরবর্তীতে ভ্যালেন্সিয়া ছেড়ে ফিরে আসেন আর্জেন্টিনাতে, যোগদের রিভারপ্লেটে, তাদের হয়ে ২ মৌসুমে করেন ২৯ ম্যাচে ১৫। ছিলেন ১৯৮২ বিশ্বকাপের দলেও কিন্তু বলার মত সেবার কিছু করতে পারেন নাই। ৮২ এর বিশ্বকাপের পরই তার ক্যারিয়ার শেষের দিকে এসে পরে। ১৯৯০ সালে তিনি খেলা থেকে অবসর নেন। 

ম্যারাডোনা, মেসিদের বিশ্বজয়ের এর দিশারি সবসময় থেকে গেছেন আড়ালেই।