• বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে
  • " />

     

    সেই সিলেটেই চোখের জলে রাজিনের বিদায়

    সেই সিলেটেই চোখের জলে রাজিনের বিদায়    

    বিদায়টা হতে পারত আরও অনেক জাতীয় ক্রিকেটারের মতো; নিভৃতে, প্রচারমাধ্যমের অন্তরালে। বাংলাদেশ থেকে ঘটা করে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সৌভাগ্য কয়জনের ক্রিকেটারেরই বা হয়েছে? কিন্তু নিয়তিই বোধ হয় সুযোগ করে দিল, একটা মাহেন্দ্রক্ষণে বিদায় বলার। যে সিলেটকে অনেক কিছু দিয়েছেন, সেই সিলেটের হয়েই ১৮ বছরের ক্যারিয়ার শেষে প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটকে বিদায় বলছেন রাজিন। পরিচিত সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে গেলে আজ আটকাতে পারলেন না চোখের জল।

    এই মৌসুম শেষেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে বিদায় দেবেন, বেশ কদিন আগেই সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কাগজে কলমে বয়স তাঁর এখনও ৩৫ হয়নি, তবে আসলে তা অবশ্যই খানিকটা বেশি। ১৮ বছর ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছেন, তারও চার বছর আগ থেকে খেলছেন প্রিমিয়ার লিগ। মেঘে মেঘে তো আর কম বেলা হলো না!

    এমন নয়, ব্যাটে মরচে ধরে গেছে, আর রান পাচ্ছেন না। এই মৌসুমে জাতীয় লিগে যে পাঁচ ইনিংস খেলেছেন, তার দুইটিতেই আছে ফিফটি। একটা ম্যাচে ৯৬ রানে আউট হয়ে গেছেন, একটুর জন্য সেঞ্চুরি পাননি। জাতীয় দলের দরজা অবশ্য বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই, ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেও যা পাওয়ার পেয়ে গেছেন। রাজিন সেজন্যই এবার প্যাড তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সামনের সোমবার জাতীয় লিগে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শেষ হবে তাঁর প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার।

     

    জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময়

    সিলেটে আসার পরিকল্পনা অবশ্য ছিল না সেভাবে। জন্মশহরে টেস্ট ক্রিকেট মাঠে গড়াচ্ছে প্রথমবারের মতো, সেখানে শুরুতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সিলেটের হয়ে জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটারদের। রাজিন শুরুতে আসবেন না বলেছিলেন, পরে অবশ্য মত বদলে এনামুল হক জুনিয়রকে নিয়ে চলে আসেন। এক দিন পরেই আবার খেলা, ফিরে যেতে হবে তড়িঘড়ি করেই। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে পরিচিত অনেক গণমাধ্যমকর্মীকেও পেলেন। তাদের সামনেই বিদায়ের ঘোষণা দিতে দিতে ধরে এলো গলা, শেষও করতে পারলেন না কথা। যে ২২ গজে বেঁধেছেন নিজের গোটা প্রাণ, তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়া কতটা কঠিন, সেটা আসলে না বললেও চলে। এরপর অবশ্য অনেককে আলিঙ্গনে বাঁধলেন, সবার সঙ্গে তাঁর ছবি তোলার হিড়িক।

    তার পরেই নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা শোনালেন। নিজের একাডেমি নিয়ে কাজ করছেন অনেক দিন ধরেই, ইংল্যান্ড থেকে লেভেল টু কোচিংও করে এসেছেন। ক্রিকেট নিয়েই থাকবেন, মন খারাপ করার কিছু নেই- এ কথা বলে একজন সিনিয়র সাংবাদিক সান্ত্বনাও দিলেন তাঁকে। রাজিন অবশ্য ততক্ষণে ধাতস্থ হয়ে উঠেছেন। ক্যারিয়ারে ইস্পাতকঠিন যে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে গেছেন, সেই খোলস ভেঙে রাজিন আজ খুলে দিলেন হৃদয়দুয়ার। হারার আগে কখনো হার মানেননি, উইকেটের মূল্যটা তাঁর চেয়ে ভালোভাবে বুঝেছে বাংলাদেশের খুব ব্যাটসম্যানই। সেই অভিষেক টেস্টেই পাঁচ ঘন্টা ব্যাট করে করেছিলেন ৬০, ওই সময়ের শোয়েব আক্তারকে সামলেছিলেন বুক চিতিয়ে।

    ক্যারিয়ারে অবশ্য কীর্তিও আছে অনেক। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ জুটি, দেশের মাটিতে বাংলাদেশের জয়ের ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গড়- এসব রেকর্ড তো আছেই। সবচেয়ে কম বয়সী আন্তর্জাতিক অধিনায়কের রেকর্ড অনেক দিন ধরেই ছিল তাঁর। কদিন আগেই সেটি ভেঙে দিয়েছেন রশীদ খান। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক টেস্টেও অবদান রেখেছিলেন ব্যাট হাতে। তবে এসব রেকর্ড দিয়ে তো আর রাজিনকে চেনা যাবে না। নিবেদন ও পরিশ্রম থাকলে মানুষ যে নিজের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে, আজকের বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারও রাজিনের কাছ থেকে সেই শিক্ষা নিতে পারেন।

    তবে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে আজ উৎসাহী হলেন না। কথা হলো তাঁর একাডেমি নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে। এসব বলতে বলতেই অবশ্য আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘সিলেট থেকে এখন অনেক ভালো বোলার বের হচ্ছে। এই দলে রাহী, খালেদ আছে। কিন্তু আমাদের সময় অলকদের মতো যেমন ব্যাটসম্যান পাওয়া যেত এখন সেরকম উঠে আসছে না।’

    ব্যাটনটা কাউকে দিয়ে যেতে পারলেন না-নিজের বিদায়ের চাইতে সেই আক্ষেপি যেন রাজিনের গলায় বেশি!