• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    কেন দেখবেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট?

    কেন দেখবেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট?    

    এই লেখা যেহেতু পড়ছেন, ধরে নেওয়া যায় আপনি ক্রিকেটটা মোটামুটি অনুসরণ করেন। যেহেতু পরের লাইনও পড়ছেন, তাহলে ধরা যায় আপনি হয়তো বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য দলের খেলাও টুকটাক দেখার চেষ্টা করেন। বিশ্বকাপ কে জিতবে, সেটা নিয়ে হয়তো বিকেলে অফিসে বা বন্ধুদের সঙ্গে বাজিও ধরে এসেছেন। তবে বিশ্বকাপ শুরু হয়ে একটা দিনও যখন পেরিয়ে গেছে, রোমাঞ্চটা কি টের পাচ্ছেন?

    আচ্ছা, এতোটা দ্বিধায় পড়ার দরকার নেই। একটু অন্য দিক দিয়ে ভাবা যাক। ধরে নিচ্ছি আপনার বেশ ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। সেটা এমন, আট ঘণ্টা টানা টিভি সেটের সামনে বসে খেলা দেখার সময় বের করা খুব কঠিন। আসরটা যদিও বিশ্বকাপ, আপনি কি পারবেন প্রতিদিন একটা ম্যাচ পুরোপুরি দেখতে?

     

     

    হ্যাঁ বলাটা হয়তো কঠিন হয়ে যাচ্ছে বোধ হয় আপনার জন্য। আপনার জন্ম যদি নব্বই দশকে হয়, তাহলে হয়তো ভাবছেন সে সময় কত ক্রিকেট ম্যাচ এরকম সারাদিন ধরে রেখেছেন। তখন জীবন এত জটিলতাময় ছিল না, মুঠোফোন-অন্তর্জাল বলে কিছু ছিল না। আপনার অত তাড়াতাড়ি কোথাও যাওয়ার তাড়া ছিল না। এবার হয়তো বাংলাদেশের ম্যাচে অবশ্যই আপনি যেভাবে হোক সময় বের করে নেবেন। কিন্তু ৪৮টি ম্যাচের অন্যগুলো কি আসলেই আপনার দেখার সময় হবে?

     

    তবে এই বিশ্বকাপে এমন কিছু হবে, যা থেকে আপনি কোনোভাবেই বঞ্চিত হতে চাইবেন না। ইংল্যান্ডে সর্বশেষ সেই ১৯৯৯ বিশ্বকাপের কথা ধরুন, আপনার বয়স অন্তত ২৫ পেরিয়ে গেলে সেই রোমাঞ্চ মনে থাকার কথা আপনার। তখন ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে বোলারদেরও কিছু করার ছিল, ২৬০-২৭০ রানেই ম্যাচ হতো জমজমাট। ক্লুজনার, জনসন,  কেয়ার্ন্স, রাজ্জাকদের মতো অলরাউন্ডাররা ছিলেন। শচীন, সৌরভ, ওয়াহদের পাশাপাশি অ্যালট, ম্যাকগ্রা, আকরামদেরও তখন কিছু করার ছিল। এজবাস্টনে ক্লুজনারের পাগুলে দৌড় ছিল, নর্দাম্পটনে বাংলাদেশের রূপকথা ছিল। ‘গুডলাক বাংলাদেশ’ ছিল, আর ছিল একটা স্বপ্নের শুরু। আরেকবার যখন ইংল্যান্ডে ফিরছে বিশ্বকাপ, মনে রাখার মতো কিছু তো আশা করাই যায়!

    এখন অবশ্য দৃশ্যপট বদলে গেছে। স্বাগতিক ইংল্যান্ডই তো বদলে গেছে আমূল। অ্যালেক স্টুয়ার্ট, অ্যাঙ্গাস ফ্রেজার, ইয়ান অস্টিনদের ইংল্যান্ড দল সেবার শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। আর এই দলের বেইরস্টো, মরগান, বাটলাররা খেলেন হেভি মেটাল ক্রিকেট, গত চার বছরে ওয়ানডের ধ্যানধারণাই বদলে দিয়েছেন তারা, বদলে দিয়েছেন ৫০ ওভারের গতিপথ। ওয়ানডের রেকর্ডবুক গত চার বছর রেকর্ডবুক ওলটপালট করে ফেলেছে ইংল্যান্ড। ওয়ানডে খেলতে না জানার যে অপবাদ ছিল, সেটাও ঘুঁচিয়ে দিয়েছে। কে জানে, বিশ্বকাপে হয়তো প্রথম ৫০০ও এই ইংল্যান্ডই করে ফেলবে!

    সেই ৫০০ কোন ম্যাচে হবে, বাজি ধরে ফেলতে পারেন সেটি নিয়েও। ক্রিকেটীয় অনুমান বলে, ব্রিস্টল, টন্টন বা ট্রেন্টব্রিজে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ট্রেন্টব্রিজে তো ইংল্যান্ড পাকিস্তানের সঙ্গে আরেকটু হলে ৫০০ও ছুঁয়ে ফেলেছিল। হয়ে যেতে পারে সাউদাম্পটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড বা ট্রেন্টব্রিজে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা অন্য কোনো ম্যাচেও।

    আরেকটা ব্যাপার হয়তো আপনি ভুলে যেতে পারতেন, ফাফ ডু প্লেসি অবশ্য আজ মনে করিয়ে দিয়েছেন। এই বিশ্বকাপ শেষে অনেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন। তাহির এর মধ্যেই বিশ্বকাপ শেষেই ওয়ানডে থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, আভাস দিয়ে রেখেছেন সতীর্থ ডেল স্টেইনও। ক্রিস গেইলও জানিয়ে রেখেছেন, এই বিশ্বকাপের পর ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আর থাকছেন না। মাশরাফি বিন মুর্তজারও নিশ্চিতভাবে এটিই শেষ বিশ্বকাপ। লাসিথ মালিঙ্গা, এমএস ধোনি, হাশিম আমলারা আরেকটি বিশ্বকাপ খেললে সেটি হবে মহা বিস্ময়ের। শেষ বড় আসরে এঁদের ব্যাটিং-বোলিং নিশ্চয়ই আপনি মিস করতে চাইবেন না!

    আর এসবও যদি আপনার মন টলাতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশের ম্যাচ তো আছেই। শুধু ওয়ানডে অভিজ্ঞতার হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে শুধু ভারত। মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহ- পঞ্চপাণ্ডবের একসঙ্গে কিছু করার এটাই শেষ ও সেরা সুযোগ। ফেবারিটদের তালিকায় কেউ বাংলাদেশকে রাখছে না, একটা একদিক দিয়ে শাপেবর হতে পারে। তবে গত বিশ্বকাপ থেকে ওয়ানডেতে যে জয়যাত্রা শুরু, সেটা মাশরাফিদের নিয়ে স্বপ্নটা ছোটখাটো কিছুতে আটকে রাখতে দিচ্ছে না।

    তবে এত কিছুর মধ্যে বাগড়া দিয়ে দিতে পারে বেরসিক আবহাওয়া। ইংল্যান্ডে এখন গ্রীষ্ম চলছে, তবে তাতে বৃষ্টির যখনতখন হানা দিতে কোনো অসুবিধে নেই। গত বছরের কাঠফাটা গরমের পর এবার বৃষ্টির পূর্বাভাসও আছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া সবচেয়ে বড় পার্শ্বচরিত্রই হয়ে যেতে পারে বিশ্বকাপে। সেটা কার জন্য শাপেবর, আর কার বরেশাপ হয়ে যায়, কে জানে!

    এত কিছুর পরও এটা শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ। নাই বা উড়ল পতাকা, মিছিল তো হতেই পারে টিএসসিতে। মেট্রোরেলজর্জর মনোটোনাস মেট্রোপলিসে সেটাও বা কম কী?