পুনেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে খেলছেন কোহলি-জাদেজারা
ভারত ১ম ইনিংস ৬০১/৫ ডিক্লে.
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস ৩৬/৩*
দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেট নিয়ে ১ম ইনিংসে ৫৬৫ রানে পিছিয়ে
বিরাট কোহলির ক্যারিয়ারসেরা অপরাজিত ২৫৪, রবীন্দ্র জাদেজার ৯১ ও আজিঙ্কা রাহানের ৫৯ রানের ইনিংসের পর উমেশ যাদবের আক্রমণে পুনে টেস্টের দ্বিতীয় দিন বিধ্বস্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬০১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর ১৫ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ উইকেট নিয়েছে ভারত। প্রথম ইনিংসে সফরকারিরা পিছিয়ে এখনও ৫৬৫ রানে, ফলো-অন এড়াতেই প্রয়োজন ৩৬৪ রান। এদিন ফিল্ডিংয়ে যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখিয়েছে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তাদের পক্ষে এরকম চ্যালেঞ্জ নেওয়া কতখানি সম্ভব, প্রশ্ন সেটিই।
দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে এতো বড় প্রশ্ন হাজির করার মূল কৃতিত্বটা ভারত অধিনায়ক কোহলির। নিজের ২৬তম টেস্ট সেঞ্চুরিকে তিনি রূপান্তরিত করেছেন ৭ম ডাবল সেঞ্চুরিতে, টেস্টে এদিন ৭০০০ রানও পূর্ণ হয়ে গেছে তার। ডাবল সেঞ্চুরির দিক দিয়ে কোহলির চেয়ে এগিয়ে আছেন শুধু স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (১২), কুমার সাঙ্গাকারা (১১) ও ব্রায়ান লারা (৯)। ৭০০০ রানে কোহলি ম্যাচসংখ্যায় চতুর্থ দ্রুততম।
নিজের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসকে চাইলেই প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারতেন কোহলি, অন্তত এদিন তার ব্যাটিং আধিপত্য বলছিল তেমনই। তবে ইনিংস ঘোষণার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন বরং জাদেজার সেঞ্চুরির জন্যই। ৯১ রানে বল আকাশে তুলে জাদেজা আউট হওয়ার পরই ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছেন কোহলি, এরপর ৩ উইকেট নিয়ে সেটির যথার্থতাও প্রমাণ করেছেন তার পেসাররা। জাদেজার সঙ্গে কোহলির ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে উঠেছে ২২৫ রান। রাহানের সঙ্গে ১৭৮ রানের জুটি ভাঙার পর যদি মনোবল একটু হলেও বেড়ে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকার, তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে এ জুটিতেই।
নিজেদের মধ্যে কলহও শুরু হয়ে গিয়েছিল তাদের। কাগিসো রাবাদার থ্রো ধরার দিকে মনযোগ ছিল না উইকেটকিপার কুইন্টন ডি ককের, সে নিয়েই বাধাবাধি বেঁধে গিয়েছিল দুই সতীর্থের। ওভারের বিরতিতে অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি নিজে এসে থামিয়েছেন দুজনকে। এ ঘটনাই হয়তো প্রকাশ করে, পুনেতে দিনটা কেমন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার।
বোলিং-ফিল্ডিংয়ে এদিন যাচ্ছেতাই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পেসাররা লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে পারেননি, স্পিনাররা পারেননি ধারাবাহিকতা রাখতে। এক কেশব মহারাজ একাই করেছেন ৫০ ওভার, তবে অনেকটা সময় জুড়েই তাকে যেন বোলিং করতে হয়েছে করতে হবে বলেই! তিনবার স্লিপে এজড হয়ে একবারও ধরা পড়েননি কোহলি, একবার আউট হয়েছিলেন, তবে স্পিনার সেনুরান মুথুসামি ওভারস্টেপিং করায় বেঁচে গেছেন তিনি। এ ইনিংসে সব মিলিয়ে ১১টি নো বল করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
সে নো-বলের আগেই অবশ্য ডাবল সেঞ্চুরি পেরিয়ে গেছেন কোহলি, ডাবল সেঞ্চুরি ছোঁয়ার রান দিয়েই টেস্টে ৭ হাজার রান পূর্ণ হয়েছে তার। ৩ উইকেটে ২৭৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারতকে প্রথমে এগিয়ে দিয়েছিল রাহানে-কোহলির জুটি। লাঞ্চের আগে দুজন মিলে তুলেছিলেন ৮৩ রান, রাহানের ফিফটি, কোহলির সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ততক্ষণে।
লাঞ্চের পর ৫ম ওভারে গিয়ে মহারাজের ১০০তম টেস্ট উইকেটে পরিণত হয়েছেন রাহানে, ব্যক্তিগত ৫৯ রান করে। ইনিংস ঘোষণার কথা মাথায় রেখে দ্রুত রান তুলতে আবারও ওপরে উঠে আনা হয়েছে জাদেজাকে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে পড়েছে যেন অসহায়।
দ্বিতীয় সেশনে আর উইকেট হারায়নি ভারত, কোহলির সঙ্গে জাদেজার জুটি ছাড়িয়ে গেছে ১০০। এ সময় জাদেজার রান ছিল মাত্র ২৬, ধীরে ধীরে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ছুরি চালানো শুরু করেছেন তিনিও। ৮০ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছেন তিনি, মহারাজের এক ওভারে কোহলির সঙ্গে তুলেছিলেন ২১ রান। ইনিংস ঘোষণা তখন উঁকি দিয়ে ডাকছিল তাদের।
সেটি হয়ে যাওয়ার পর টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে নিজের প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে তাদেরকে সে লড়াই থেকে ছিটকে দেওয়ার প্রাথমিক কাজটুকু সেরে রেখেছেন যাদব। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই তিনি ফিরিয়েছেন এইডেন মারক্রামকে, যিনি হয়েছেন এলবিডব্লিউ। যাদবের পরের ওভারে এলগার ব্যাট-কোমর-পায়ের পাতা হয়ে হয়েছেন বোল্ড, আর মোহাম্মদ শামির বলে টেমবা বাভুমার উইকেট ভারত পেয়েছে রিভিউ নিয়ে।