লিভারপুল থেকে লিডস : প্রিমিয়ার লিগে এবার যা যা অপেক্ষা করছে আপনার জন্য
১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের ২০২০-২১ মৌসুম। নতুন মৌসুমের আগে এবার দলগুলো সময় পেয়েছে দুই মাসের কমও। দলবদল অবশ্য চলবে অক্টোবরের ৫ তারিখ পর্যন্ত। এর ভেতর প্রায় সবগুলো দল তিনটি করে ম্যাচ খেলে ফেলবে। শক্তি বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগও থাকবে তাই এবার। প্রতিবারের মতোই এবারও প্রিমিয়ার লিগে লড়াই আরেক প্রস্থ কঠিনই হওয়ার কথা। লিগ শুরুর আগে যে প্রশ্নগুলো ঘুরে-ফিরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, এর জবাবগুলোই হয়ত লিগ শেষে দলগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে।
শিরোপা ধরে রাখতে পারবে লিভারপুল?
“লিভারপুলের অপেক্ষা ঘুচবে এবার?”- প্রায় তিরিশ বছর ঘুরেফিরে এই শিরোনাম বারবার দেখেছে লিভারপুল সমর্থকেরা। এবার অবশ্য ভিন্ন। তিরিশ বছরের খরা লিভারপুল কাটিয়েছে। এবার স্বভাবতই গৎবাঁধা আরেক প্রশ্ন, লিভারপুল শিরোপা ধরে রাখতে পারবে কি না।
প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কিছুদিন পরই ইউর্গেন ক্লপ বলেছিলেন, এবার তারা শিরোপা রক্ষা করতে চান না, শিরোপাকে আক্রমণ করতে চান। ক্লপের কথায় স্পষ্ট, আত্মতৃপ্তি গ্রাস করার সুযোগ পাবে লিভারপুলকে। দলের ভারসাম্যও আছে আগের মতোই। যদিও নামী-দামী নতুন খেলোয়াড় লিভারপুল দলে ভেড়ায়নি। একমাত্র আন্ড্রু রবার্টসনের জায়গায় নতুন ব্যাকআপ এসেছে দলে। গ্রিক ডিফেন্ডার কস্তাস সিমিকাস এখন পর্যন্ত নতুন মৌসুমে লিভারপুলের একমাত্র নতুন খেলোয়াড়। যদিও থিয়াগো আলকান্তারার ব্যাপারে লিভারপুলের আগ্রহের কথা শোনা যাচ্ছে। এর আগে টিমো ভার্নারকেও দলে ভেড়াতে চেষ্টা করেছিলেন ক্লপ। ভার্নারের বেলায় ব্যর্থই হয়েছেন জার্মান কোচ। থিয়াগোর লিভারপুলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনাও কম। লিভারপুলের সঙ্গী তাই পুরনো সারথীরাই।
আরও পড়ুন
প্রিমিয়ার লিগে নতুনদের মাঝে যাদের দিকে থাকবে আলাদা নজর
লিভারপুল গতবার লিগ জিতেছে দাপট দেখিয়ে। মৌসুমের মাঝপথেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল লিভারপুলের লিগ জয়। ৯৯ পয়েন্ট, আর মাত্র ৪ হারে মৌসুম শেষ করা লিভারপুল রক্ষণের দিক দিয়েও ছিল লিগের সেরা। দুই ফুলব্যাক অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ড আর রবার্টসনের চেয়ে লিগে অ্যাসিস্ট বেশি ছিল শুধু ম্যান সিটির কেভিন ডি ব্রুইনের। লিগ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য লিভারপুল খানিকটা খেই হারিয়েছিল। মাঝের অনাকাঙ্ক্ষিত লম্বা বিরতি আর তৃপ্তি হয়ত তখন খানিকটা পেয়ে বসেছিল লিভারপুলকে।
কমিউনিটি শিল্ডে আর্সেনালের বিপক্ষে হার অবশ্য লিভারপুলের জন্য সতর্কবার্তা। লিভারপুলের হেভিমেটাল ফুটবলের বিপক্ষে দলগুলো এবার আরও বেশি রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলার কথা। দুই প্রান্ত যেহেতু লিভারপুলের আক্রমণের মূল উৎস, সেখানেও প্রতিপক্ষ দলগুলো নজর বাড়াবে বেশি। সেক্ষেত্রে থিয়াগোর মতো একজন সৃজনশীল মিডফিল্ডারের অভাব লিভারপুলের অনুভব করারই কথা। শিরোপা ধরে রাখা আর না রাখার মাঝে ফারাক হয়ে যেতে পারে দলবদলে লিভারপুলের নিষ্ক্রিয় থাকাটাই।
প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে লিভারপুলের আক্রমণভাগ নিয়েও। সাদিও মানে আগের মৌসুমে ছিলেন দুর্দান্ত। সে তুলনায় রবার্তো ফিরমিনো আর মোহামেদ সালাহরা তার ছায়াতেই ছিলেন। ক্লপের লিভারপুলে ফিরমিনোর ভূমিকা অবশ্য আলাদা। তবে তিনি চোটের কারণে না থাকলে পুরো ছক বদলে ফেলতে হয় ক্লপকে। ফিরমিনোকে ছাড়া আলাদা কোনো কৌশলও দেখা যায় না লিভারপুলের খেলায়। ডিভক অরিগি গতবার বেশ কয়েকটি ম্যাচে কাজের কাজটা করে দিয়েছিলেন বটে, তবে বেশিরভাগ সময় সাইডবেঞ্চে কাটানো এই স্ট্রাইকারের জাদুমন্ত্রের ওপর ভরসা করা চলে না। সেটা ক্লপও জানেন। সে কারণেই হয়ত ভার্নারকে দলে নিয়ে ধার বাড়াতে চেয়েছিলেন তিনি।
লিভারপুলের মিডফিল্ডে এই মৌসুমে বড় ভরসা হতে পারেন ফাবিনহো আর নাবি কেইতা। ক্লপের কাউন্টার প্রেসিং ফুটবলে দুইজনই বেশ কার্যকর। এই দুইজনের নিজেকে প্রমাণ করারও বাকি আছে অনেককিছুই। মৌসুম শুরুর আগেই অবশ্য একটা ব্যাপার নিশ্চিত, লিভারপুলের রক্ষণে চিড় ধরানো আগের মতোই কঠিন হবে। ভার্জিল ফন ডাইক আরও একবার তার নেতৃত্ব দেবেন, পেছনে অ্যালিসন তো আছেনই।
লিভারপুলের শিরোপা ভাগ্য আদতে নির্ভর করছে সিটির ওপর। গতবার সিটির শিরোপার জন্য লিভারপুলকেই চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেনি। দুইদলের পার্থক্য ছিল ১৮ পয়েন্টের। সেই দূরত্ব সিটি কমিয়ে আনতে পারলে, লিভারপুল চাপে পড়লে কেমন করে সেটাই আসলে এবারের শিরোপা লড়াইয়ের মূল আকর্ষণ।
ইংল্যান্ডে সাম্প্রতিক সময়ে শিরোপা ধরে রাখার রেকর্ড মাত্র দুইটি। ২০০৬-০৭ থেকে ২০০৮-০৯ মৌসুমে টানা তিনবার লিগ জিতেছিল ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এরপর ২০১৭-১৮ আর ২০১৮-১৯ মৌসুমে গার্দিওলার সিটি ধরে রেখেছিল শিরোপা। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা যে কঠিন, সেটা এবার প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে ভালোভাবেই টের পাওয়ার কথা লিভারপুলের।
প্রেডিকশন : দ্বিতীয়
লিভারপুল আর ম্যান সিটি- শেষ পর্যন্ত শিরোপার সমীকরণে থাকবে এই দুইদলই। তবে সিটি এবার ফিরবে ছন্দে, চ্যাম্পিয়ন হবে তারাই।
অরক্ষিত রক্ষণ নিয়েই শুরু করছে সিটি
আপনি বলতে পারেন রক্ষণের পেছনে পেপ গার্দিওলা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করেছেন, কিন্তু এরপরও রক্ষণের দশা বেহাল হলে সেটা কোচেরই দোষ। কিন্তু বাস্তবতা হলো নিকোলাস অটামেন্ডি বা জন স্টোনস- কারও ওপরই গার্দিওলার ভরসা নেই। আয়মেরিক লাপোর্তে গার্দিওলার রক্ষণের মূল ভরসা। চোটের কারণে লম্বা সময় মাঠের বাইরে ছিটকে গিয়ে গতবার তিনিই আসলে সিটিকে পিছিয়ে দিয়েছিলেন অনেকটা। লিগে লিভারপুলের চেয়ে ১৭ গোল বেশি করেও তাই ১৮ পয়েন্ট পিছিয়েই থাকতে হয়েছে সিটিকে। ভিনসেন্ট কোম্পানি দল ছেড়ে যাওয়ার পর তার খালি জায়গাটাই আসলে ভরাট করার ব্যবস্থা করতে পারেননি গার্দিওলা।
বোর্নমাউথ থেকে অবশ্য নাথান আকেকে দলে নিয়েছে এবার সিটি। লাপোর্তার সঙ্গে তার সমন্বয় কেমন হয় সেটি অবশ্য অজানাই। নাপোলি থেকে কালিদু কৌলিবালিকে আনার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে সিটিজেনরা। তাকে দলে ভেড়াতে না পারলে মৌসুমের একটা লম্বা সময় থ্রি-ম্যান ব্যাকলাইনে শিফট করতে পারেন গার্দিওলা। স্কোয়াডে জাত লেফটব্যাকের অভাব সিটিকে আগেও ভুগিয়েছে। মূল সেন্টারব্যাক হিসেবে আকে, লেফট সেন্টারব্যাক লাপোর্তে আর রাইট সেন্টারব্যাক হিসেবে কাইল ওয়াকারকে খেলিয়ে সমাধানের একটা রাস্তা হয়ত গার্দিওলা বের করতে পারেন এক্ষেত্রে।
মৌসুমের শুরুর দিকটায় আক্রমণভাগেও সার্জিও আগুয়েরোকেও পাচ্ছেন না গার্দিওলা। চোটের কারণে থাকবেন না তিনি। গ্যাব্রিয়েল জেসুস আগুয়েরো নন। বড় ম্যাচে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে জেসুসের এখনও নিজেকে প্রমাণ করা বাকি। মিডফিল্ডে কেভিন ডি ব্রুইনদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন ফেরান তোরেস।
সিটি ভালো করেই জানে, একবার পিছিয়ে পড়লে লিভারপুলকে ধরা কঠিন থেকে আরও কঠিনতরই হবে তাদের জন্য। তবে হারানো ছন্দ খুঁজে পেলে এই সিটিই এখনও লিগ জেতার সামর্থ্য রাখে। শিরোপা ফিরে পাওয়ার ক্ষুধাটাও গার্দিওলার এতদিনে বেড়ে যাওয়ার কথা।
প্রেডিকশন : চ্যাম্পিয়ন
পেপ গার্দিওলা সিটির সেরাটা বের করে আনবেন এবার। খেলোয়াড়রাও আগের চেয়ে বেশি সচেষ্ট থাকবেন শিরোপা ফিরে পেতে।
রোমাঞ্চকর চেলসির অপেক্ষায়
ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের প্রথম মৌসুমকে সফলই বলতে হবে। প্রায় তরুণ এক দলকে নিয়ে লিগে চতুর্থ হয়ে শেষ করেছিলেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন কাউকে দলেও ভেড়াতে পারেননি নিষেধাজ্ঞার কারণে। কিন্তু নতুন মৌসুম শুরুর আগে সেই ফাঁড়া কেটেছে। চেলসিও দারুণ সব খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়ে স্বপ্ন দেখছে।
ভার্নার, হাকিম জিয়েখ, কাই হাভার্টজরা নিশ্চিতভাবেই চেলসির আক্রমণে ধার বাড়াবেন। ভার্নার গতবার বুন্দেসলিগার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদয়াতা, হাভার্টজরা উঠতি জার্মান মিডফিল্ডারদের ভেতর আলোচনায় থাকেন শীর্ষে, আর জিয়েখ আয়াক্সেই নিজেকে প্রমাণ করে এসেছেন। এনগোলো কান্তে আর মাতেও কোভাসিচরা তো মিডফিল্ডে আছেনই। এই চেলসিকে নিয়ে বাড়তি উন্মাদনা থাকাই স্বাভাবিক।
চেলসির মূল সমস্যা অবশ্য রক্ষণে। গতবার ৩৮ ম্যাচে ৫৪ গোল হজম করেছিলে ল্যাম্পার্ডের দল। থিয়াগো সিলভা এসেছেন রক্ষণে। ৩৬ বছর বয়সী কিছুদিন আগেও পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলেছেন। তার নেতৃত্বগুণ নিয়ে প্রশ্ন নেই। এক ভ্যান ডাইক যেমন লিভারপুলের রক্ষণকে বদলে দিয়েছিলেন, সিলভাও হয়ত সেটি পারবেন। তবে তার বয়সটা বড় এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিচ্ছে। এই লড়াইটা অবশ্য সিলভার নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। তাতে সিলভা জিতলে চেলসিই লাভবান হবে। নতুন আসা আরেক লেফটব্যাক বেন চিলওয়েলও প্রিমিয়ার লিগে পরীক্ষিত। ফ্রেন্ড ডিফেন্ডার মালাং সারকেও দলে নিয়েছে চেলসি। গোলকিপিং পজিশনটা নিয়ে অবশ্য এখনও নির্ভার হতে পারেননি ল্যাম্পার্ড। সেই সমাধান মিললে বাকিটা আসলে নির্ভর করবে কোচ হিসেবে ল্যাম্পার্ড কতোখানি মুন্সিয়ানা দেখাতে পারেন তার ওপর। গত মৌসুমে ৩-৪-৩, ৩-৫-২, ৪-৩-৩ বহুরকম ফরমেশন পরীক্ষা করে দেখেছেন ল্যাম্পার্ড। এবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ কম। আগের চেয়ে চাপও বাড়বে চেলসির কোচের ওপর। এবার আসলে তার নিজেকে প্রমাণের পালা।
তরুণ দলটা হয়ত এখনই শিরোপার চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে না। তবে সময়টা চেলসির জন্য রোমাঞ্চকরই।
প্রেডিকশন : তৃতীয়
লড়াইয়ে থাকবে ইউনাইটেড?
২০২০ সালে এসে চেহারা বদলে ফেলেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বড় প্রভাবক ছিলেন তাতে ব্রুনো ফার্নান্দেজ। এবার আক্রমণে আরও ধার বাড়িয়েছে ইউনাইটেড। ডাচ তরুণ ডনি ভ্যান ডি বিক নতুন সংযোজন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, পল পগবা, ভ্যান ডি বিক, আর ফার্নান্দেজ একসঙ্গে মিডফিল্ডে খেলবেন কী করে? ওলে গানার সোলশারকে তাই মাথা খাটাতেই হবে। এই তিনজনকে এক সুতোয় গাঁথতে পারলে বাকি কাজ করার জন্য অ্যান্থনি মার্শিয়াল, মার্কস র্যাশফোর্ড, মেসন গ্রিনউডরা আছেন। তরুণ গ্রিনউডের কাঁধে এবার দায়িত্ব আরেকটু বাড়ার কথা। প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারলে গ্রিনউড ইউনাইটেডের জন্য হতে পারে বড় সম্পদ।
তবে সোলশারের দুশ্চিন্তার আরও একটি জায়গা লেফট সেন্টারব্যাক পজিশন। হ্যারি ম্যাগুয়েরের যোগ্য সঙ্গী কে হবেন? ক্রিস স্মলিং, মার্কো রোহোরা ফিরেছেন ধারের মেয়াদ কাটিয়ে। তবে অনুমিতভাবেই তাদেরকে ক্লাব ছাড়া করতে চায় ইউনাইটেড। লেফটব্যাক পজিশনেও অধারাবাহিক লুক শ। স্মলিং, রোহো, ফিল জোনস, সার্জিও রোমেরোদের বিক্রি করে ফান্ড যোগাড় করার সুযোগ ইউনাইটেডের সামনে আছে এখনও। তবে রক্ষণের চেয়ে দলবদলে ইউনাইটেডকে আক্রমণেই আরও বেশি মনোযোগী মনে হচ্ছে। জেডন সানচোর পেছনে বেশ অনেকদিন ধরেই ঘুরছে তারা। সানচোকে কিনলে রক্ষণের ফাঁকফোকড় জোড়াতালি দিয়েই চালাতে হবে ইউনাইটডকে।
সোলশারের দল জয়ের ধারায় থাকলে দারুণ খেলে, ধারা একবার ভেঙে গেলে দিশেহারা হয়ে পড়ে- এই অপবাদ ঘোচাতে পারলে শিরোপা লড়াইয়ে ইউনাইটেডকেও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে এবার।
প্রেডিকশন : চতুর্থ
সোলশারের ট্যাকটিক্যাল দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। মৌসুমের বড় একটা সময় হয়ত সঠিক পথ খুঁজে পেতেই ব্যয় করতে হবে তাকে।
নর্থ লন্ডনে অন্যরকম লড়াই
মিকেল আর্টেটার আর্সেনাল উন্নতি করেছে। এফএ কাপ জয়ের পর কমিউনিটি শিল্ডে লিভারপুলের বিপক্ষে আর্সেনালের খেলাই তার প্রমাণ। তবে শীর্ষ চারের জন্য কি সেটা যথেষ্ট? অভিজ্ঞ উইলিয়ান আক্রমণে যোগ হয়েছেন, পিয়ের এমেরিক অবামেয়াংও নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। হোসে মরিনহোর টটেনহামও দলবদলে তেমন সক্রিয় ছিল না। ডিফেন্ডার ম্যাট ডোহার্টি আর জো হার্ট ছাড়া স্কোয়াডের সবাই পুরোনো। নর্থ লন্ডনের দুইদলই এবার খেলবে ইউরোপা লিগে। শীর্ষ চারের লড়াইয়ের আগে একই শহরের দুইদল কে কার আগে যেতে পারে সেই লড়াইটাই বেশি রোমাঞ্চকর হওয়ার কথা।
প্রেডিকশন: আর্সেনাল ষষ্ঠ, টটেনহাম পঞ্চম।
বিয়েলসার অপেক্ষায় প্রিমিয়ার লিগ
মার্সেলো বিয়েলসা লিডস ইউনাইটেডের ১৭ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়েছেন। লিডস ফিরেছে প্রিমিয়ার লিগে। তাদের জন্য প্রেরণা হয়ে আছে আগেরবার শেফিল্ড ইউনাইটেডের সাফল্য। স্প্যানিশ স্ট্রাইকার রদ্রিগোকে ভ্যালেন্সিয়া থেকে দলে এনে লিডস ইতিবাচক কিছুর ইঙ্গিতই দিয়েছে। তবে লিডসের সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন সেই বিয়েলসাই।
ম্যানেজেরিয়াল ক্যারিয়ারে বিয়েলসার তেমন সাফল্য নেই। কিন্তু তিনি যে ব্রান্ডের ফুটবলে বিশ্বাসী তা প্রশংসা কুড়িয়েছে বরাবারই। ক্লপ, গার্দিওলা, মরিনহো, কার্লো আনচেলোত্তিদের লিগে বিয়েলসা কেমন করেন সেটি এবার বড় প্রশ্ন। প্রিমিয়ার লিগেও কি আক্রমণ নির্ভর প্রেসিং ফুটবলটাই খেলাবেন বিয়েলসা? নাকি অবস্থা বুঝে নিজেদের গুটিয়ে নেবে তার দল? ক্লাবের দর্শনের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় চাকরি ছাড়ার একাধিক রেকর্ড আছে বিয়েলসার। শীর্ষ পর্যায়ে ফিরে লিডস যে আলোড়ন ফেলেছে তা নিমিষেই হারিয়ে যাওয়ার সুযোগও আছে তাই। লম্বা মৌসুমে অবশ্য যে কোনো দলেই ঘটতে পারে যে কোনো কিছু। তবে এসবের আগে আসলে বিয়েলসাকে বরণ করতেই প্রস্তুত প্রিমিয়ার লিগ।
শেষ হইয়াও হয় না শেষ
এভারটন, লেস্টার সিটি বা উলভসকে ভুলে যাওয়ার উপায় নেই। এদের কেউ শিরোপা লড়াইয়ে থাকবে সেটা অবশ্য আকাশ-কুসুম ভাবনা। তবে হামেস রদ্রিগেজ, অ্যালান আর আব্দুলায়ে ডকুরেকে দলে নেওয়া এভারটন এবার ইউরোপা লিগ স্পটের জন্য লড়াই করতে চাইবেই। আনচেলোত্তি এবার দল গোছানোর সময় পেয়েছেন। গতবার এভারটনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মৌসুমের মাঝপথে। প্রিমিয়ার লিগ জয়ের অভিজ্ঞতা তো তার আছেই। দলটাও কাগজে কলমে ষষ্ঠ বা সপ্তম হওয়ার জন্য যথেষ্ট ভালো মানের।
গতবার পঞ্চম হওয়া লেস্টার সিটিকে নিয়ে অবশ্য এবার খুব আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। চিলওয়েলকে হারিয়ে ব্রেন্ডন রজার্সকে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে। তার ৩-৫-২ ফরমেশনও তাই অনেকখানি অকার্যকরী হয়ে পড়তে পারে ভালো ফুলব্যাকের অভাবে।
নুনো এস্পিরিতো গোমেজ ফাবিও সিলভাকে দলে এনে শক্তি বাড়িয়েছেন। উলভসের উন্নতির ধারা অব্যাহতই থাকার কথা। তবে বাকিদের মতো তাদের লড়াইও আরও কঠিন হওয়ার কথা এবার।