আইপিএলে সুপার (ওভার) সানডে : এক ম্যাচে দুই, একদিনে তিন সুপার ওভার
হয়তো একদিনে এক (জোড়া) সুপার ওভারই যথেষ্ট রোমাঞ্চ জাগাতে। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচও যখন সুপার ওভারে, তখন সে রোমাঞ্চের পারদ আরেকটু উঁচুতে ওঠে। সেই সুপার ওভারও যখন টাই হয়, যায় আরেকটি সুপার ওভারে? সেটি চলে যায় আরেক উচ্চতায়। এক ম্যাচে দুই সুপার ওভার প্রথমবার দেখেছে ক্রিকেট, আইপিএলের একদিনে দুই ম্যাচই গেছে সুপার ওভারে। কলকাতা-হায়দরাবাদের সুপার ওভারে শেষ পর্যন্ত সহজ জয় পেয়েছে কলকাতা, তবে পরের ম্যাচে মুম্বাইকে দ্বিতীয় সুপার ওভারে গিয়ে হারিয়েছে পাঞ্জাব।
২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে সুপার ওভারও টাই হওয়ার পর বাউন্ডারিসংখ্যায় জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে বিশ্বকাপের পর সে নিয়ম বদলে ফেলে একাধিক সুপার ওভারের নিয়ম করে আইসিসি, যদিও সেটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে প্রযোজ্য হবে আইসিসি টুর্নামেন্টে। আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও ম্যাচেই সুপার ওভার টাই হলে হবে দ্বিতীয় সুপার ওভার।
দ্বিতীয় ম্যাচে মুম্বাইয়ের দেওয়া ১৭৭ রানের লক্ষ্যে ১৭৬ রানেই আটকে গিয়েছিল পাঞ্জাব। শেষ ওভারে ৯ রানের পর শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ২ রান, তবে ট্রেন্ট বোল্টের করা বলে ডাবলস নিতে গিয়ে রান-আউট হয়েছিলেন ক্রিস জর্ডান। অবশ্য দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় ঘুরতে গিয়ে বেশ একটা চক্কর মেরেছিলেন তিনি, এরপর ডাইভও দেননি। প্রথমটি না করলে বেশ খানিকটা জায়গা বাঁচত তার, পরেরটি করলে হয়তো মিলতে পারতো সুযোগ। তা হয়নি, ম্যাচ গেছে সুপার ওভারে।
পাঞ্জাব ডাগ-আউটের এই অভিব্যক্তিই বলছে হয়তো অনেক কিছু/আইপিএল
সুপার ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহর সুপার বোলিংয়ের কাছে মাত্র ৫ রান তুলতে পেরেছিল পাঞ্জাব, তাও আবার নিকোলাস পুরান ও লোকেশ রাহুলের দুটি উইকেটই হারিয়ে। আরেকবার এতো কাছে এসে এতদূরের ট্র্যাজেডি চোখ রাঙাচ্ছিল তাদের। তবে সে লক্ষ্যই পেরিয়ে যেতে পারেনি মুম্বাই, বুমরাহর মতো মোহাম্মদ শামিও ব্লকহোলে করেছেন দুর্দান্ত সব ডেলিভারি। শেষ বলে দুই রানের জন্য ছুটছিলেন কুইন্টন ডি কক, স্ট্রাইক প্রান্তে থ্রো-টা বেশ দূর থেকে স্টাম্পে ছুঁড়ে রান-আউট করেছেন পাঞ্জাব অধিনায়ক ও উইকেটকিপার লোকেশ রাহুল, ম্যাচ গেছে দ্বিতীয় সুপার ওভারে!
এবার মুম্বাই আগে ব্যাটিং, হারদিক পান্ডিয়াকে সঙ্গী করে নেমেছিলেন কাইরন পোলার্ড। সামি আর বোলিং করতে পারবেন না, এলেন ক্রিস জর্ডান। প্রথম ৫ বলে এক বাউন্ডারিতে ৯ রান তোলার পর শেষ বলটা প্রায় ছয় হয়েই গিয়েছিল… লং অনে ঝাঁপিয়ে উঠে, অভিকর্ষকে প্রায় হার মানিয়ে বলটা আটকে দিয়ে বাউন্ডারির ভেতরে রাখলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। পাঞ্জাবের লক্ষ্যটা সহজেই হতে পারতো ১৬, কিন্তু হলো ১২। আগারওয়াল পাঞ্জাবকে ম্যাচে রাখলেন।
ব্যাটিংয়ে এবার ক্রিস গেইলের সঙ্গী হলেন ওই আগারওয়ালই। ফিরে এলেন মূল ম্যাচে শেষ ওভার করা বোল্ট। প্রথম বলে ফুলটস, গেইল দেখালেন, ‘ইউনিভার্স বস’ কে, বল উড়ে গেল সাইটস্ক্রিন বরাবর। মাঝে নেওয়া সিঙ্গেল পেরিয়ে তৃতীয় বলে গিয়ে মিড-অফ দিয়ে চার আগারওয়ালের, দ্বিতীয় সুপার ওভার হলো টাই। এরপরের বলে সিঙ্গেল, টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪৪তম ওভারে গিয়ে অবশেষে জিতলো পাঞ্জাব, এ টুর্নামেন্টে যারা এর আগেই হেরেছে একটি সুপার ওভার!
দিনের প্রথম নাটক/আইপিএল
দুবাইয়ের এ ম্যাচটার আগে আবুধাবিতে হয়েছে আরেক নাটক। কলকাতার দেওয়া ১৬৪ রানের লক্ষ্যে শেষ ওভারে হায়দরাবাদের প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। অইন মরগান বল তুলে দিয়েছিলেন চোটে পড়া আন্দ্রে রাসেলকে। প্রথম পাঁচ বলে নো, তিন চার, ডাবলসসহ রাসেল দিলেন ১৬ রান। তবে শেষ বলে লেংথ থেকে ফ্লিক করতে গিয়ে মিস করে গেলেন ওয়ার্নার, সিঙ্গেলের বেশি নেওয়া হলো না তার। সে বলে এলবিডব্লিউর আবেদন করতেও ভুলে গেল কলকাতা!
সুপার ওভারে লকি ফার্গুসনের সামনে পড়লো হায়দরাবাদ, যিনি ম্যাচে ১৫ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ওভারে ৩ বল করতে হলো তার। মাঝে একটা ডাবলস দেওয়ার আগে পরে ফেরালেন ওয়ার্নার ও আব্দুল সামাদকে। ৩ রানের লক্ষ্যটা চতুর্থ বলে গিয়ে পেরুলেন মরগান ও দীনেশ কার্তিক।
এদিন আইপিএলে সে ম্যাচটাই রোমাঞ্চের জন্য হয়তো যথেষ্ট ছিল। পাঞ্জাব-মুম্বাই সেটিকে আরেকটু উঁচুতে তুললো, এরপর যা করলো, তা নতুন কিছু।