রাবাদায় রণভঙ্গ বাংলাদেশের বিপক্ষে সহজ জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা
২য় ওয়ানডে, জোহানেসবার্গ (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ- ১৯৪/৯, ৫০ ওভার (আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, লিটন১৫, রাবাদা ৫/৩৯, শামসি ১/২৬, ভ্যান ডার ডুসেন ১/৩)
দক্ষিণ আফ্রিকা- ১৯৫/৩, ৩৭.২ ওভার (ডি কক ৬২, ভেরেয়েন ৫৮*, মালান ২৬, আফিফ ১/১৫, সাকিব ১/৩৩, মিরাজ ১/৫৬)
ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ ছিল সামনে; তবে দ্বিতীয় ম্যাচে দেখা মিলল পুরোই প্রথম ম্যাচের বিপরীত এক বাংলাদেশের। কাগিসো রাবাদার তোপে বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন আফিফ হোসেন-মেহেদী হাসান মিরাজ জুটি। কুইন্টন ডি ককের ঝড়ো ইনিংসের পর কাইল ভেরেয়েনের অপরাজিত ফিফটিতে অনায়াসেই সেই লক্ষ্য উতরে গিয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ওয়ান্ডারার্সের উইকেটে বাউন্স থাকলেও ক্রমশই হয়ে উঠছিল ব্যাটিং বান্ধব। তারই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশী বোলারদের ওপর চড়াও হন আগের ম্যাচে অনুপস্থিত কুইন্টন ডি কক। অন্য প্রান্তে ইয়ানেমান মালান সপ্রতিভ না হলেও বাংলাদেশের বোলারদের আত্মবিশ্বাসে একাই চিড় ধরিয়ে দেন ডি কক। ১২.৩ ওভারে মালান যখন মিরাজের বলে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন ততক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে উঠে গিয়েছে ৮৬ রান। এর আগেই ফিফটি পূর্ণ করা ডি ককও অবশ্য ফেরেন দুই ওভার পরেই। সাকিব আল হাসানের আঘাতে ৪১ বলে ৬২ রানের দারুণ ইনিংস খেলে ফেরার আগেই অবশ্য ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন বাংলাদেশকে।
বাকি পথটুকু এরপর মসৃণভাবেই পাড়ি দিয়েছেন কাইল ভেরেয়েন। আফিফ এসে টেম্বা বাভুমাকে ফেরালেও ওই ওভারেই ভেরেয়ন পূর্ণ করেন নিজের ৪র্থ ওয়ানডে ফিফটি। ৭৭ বলে ৫৮* রানে থেকে এরপর জয়ে নিয়েই মাঠ ছাড়েন ভেরেয়েন।
অথচ ওয়ান্ডারার্সে পিঙ্ক ওয়ানডেগুলো যেন একেক্টা রানের উৎসব; এর আগে ৪ বার প্রথমে ব্যাট করা দল ৩৫০+ রান তুলেছে। সেসব ভেবেই হয়ত এদিন টস জিতে ব্যাটিং নিলেন তামিম ইকবাল। তবে এই পিচ যে একেবারেই ভিন্ন সেটা টের পেতেও তার সময় লাগেনি। তৃতীয় ওভারেই এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে লুঙ্গি এনগিডির আকস্মিক বাউন্সে বিভ্রান্ত হয়ে কেশাভ মহারাজের কাছে ক্যাচ দিয়ে জন্মদিনে ১ রানেই ফেরেন তামিম। পরের ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই কাগিসো রাবাদার লাফিয়ে ওঠা লেংথ বলে উইকেটের পিছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব আল হাসান। লিটন দাস প্রায় একই কায়দায় ওই রাবাদার কাছেই ফেরেন ১৫ রানে। ১০ ওভারের মধ্যেই ওই ৩ উইকেট খুইয়ে বাংলাদেশ তোলে মোটে ৩০ রান।
ইতোমধ্যে একবার করে জীবন পাওয়া ইয়াসির আলী ও মুশফিকুর রহিমও এরপর উইকেটে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। রাবাদার বাউন্সারে ইয়াসির পরাস্ত হওয়ার পরের ওভারে ওয়েইন পার্নেলের কাছে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফেরেন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গী করে এরপর ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন আফিফ হসেন। পার্নেল ইনজুরির কারণে মাঠ ছেড়ে গেলে বোলারের ঘাটতি কাজে লাগানর সুযোগ পায় বাংলাদেশ; তবে সহায় হয়নি বাউন্সি পিচ। মাঝে অনিয়মিত বোলার বাভুমার ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলেও মাহমুদউল্লাহ ফেরেন নিয়মিত স্পিনার তাব্রেইজ শামসির কাছে। লেগ স্লিপের ফাঁদ পাতা হলে তাতেই ধরা দিয়ে তিনি ফেরেন ২৫ রানে।
বিপদে এরপর আরও একবার ত্রাণকর্তার রুপে এরপর আবির্ভূত হয় আফিফ-মিরাজ জুটি। ৩৬ রানে একবার জীবন পাওয়ার পর ৭৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন আফিফ। মিরাজ তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে নিয়মিত প্রান্ত বদলের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তবে পিচের অতিরিক্ত বাউন্সের সাথে খাপখাইয়ে চলতে বেগ পেতে হচ্ছিল দুজনকেই; দুজনেই এরপর জীবন পেয়েছেন আরও একবার করে। তবে গিয়ার পালটানো প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ালে সেই চেষ্টায় রাবাদার শিকার হয়ে ৭২ রানে থামেন আফিফ। ৮৬ রানের লড়াকু সেই জুটি ভাঙার এক বল পরেই ৩৮ রানে ফেরেন মিরাজও। সেই অভিষেক ওয়ানডেতে এই বাংলাদেশের বিপক্ষেই পেয়েছিলেন ৫-উইকেট; বহু বছর পর সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই এল রাবাদার দ্বিতীয় ওয়ানডে ৫-উইকেট। ৪৯তম ওভারে রাসি ভ্যান ডার ডুসেন এক ওভারের জন্য এরপর হাত ঘোরাতে এসে পেয়ে যান শরিফুল ইসলামের উইকেট। বাংলাদেশ তাই ১৯৪ রানের বেশি করতে পারেনি; দিনশেষে যা অনায়াসেই টপকে গিয়েছে প্রোটিয়ারা।