আত্মহত্যার মিছিলে লাঞ্চের আগে আত্মসমর্পণ মুমিনুলদের
২য় টেস্ট, কায়বেরহা (টস- দ. আফ্রিকা/ ব্যাটিং)
দক্ষিণ আফ্রিকা- ৪৫৩, ১ম ইনিংস (কেশব ৮৪, এলগার ৭০, বাভুমা ৬৭, পিটারসেন, ৬৪, তাইজুল ১৩৫/৬, খালেদ ৩/১০০, মিরাজ ১/৮৫)
বাংলাদেশ- ২১৭, ১ম ইনিংস (মুশফিক ৫৭, তামিম ৪৭, ইয়াসির ৪৬, শান্ত ৩৩, হার্মার ৩/৩৯, মুল্ডার ৩/২৫, অলিভিয়ার ৩৯/২)
দক্ষিণ আফ্রিকা - ১৭৬-৬ (ডি), ২য় ইনিংস (আরউই ৪১, ভেরেইনা ৩৯*, বাভুমা ৩০, তাইজুল ৩/৬৭, মিরাজ ২/৩৪)
বাংলাদেশ- ৮০, ২য় ইনিংস (লিটন ২৭, মিরাজ ২০,তামিম ১৩, মহারাজ ৭/৪০, হার্মার ৩/৩৪)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩২২ রানে জয়ী
কায়বেরহা; পোর্ট এলিজাবেথের আনুষ্ঠানিক পরিবর্তিত নাম। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বদলে গিয়েছিল এই শহরের নাম। কিন্তু এখনো বদলায়নি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট ভাগ্য। প্রথম টেস্টের মতো দুই প্রোটিয়া স্পিনারের ঘূর্ণি জাদুতে কায়বেরহায় দ্বিতীয় টেস্টেও হেরেছে বাংলাদেশ। ঠিক ৫৯ মিনিট স্থায়ী ছিল চতুর্থ ইনিংস। যেন সেই ডারবান টেস্টেরই পুনঃপ্রচার।
স্কোরকার্ডে ২৭/৩ নিয়ে চতুর্থদিন সকালে ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। লক্ষ্য ছিল আকাশছোঁয়া ৪১৩ রান। সেই লক্ষ্যতাড়া দূরে থাক, দলীয় শত রানের কোটাই পেরোতে পারেননি মুশফিক-মুমিনুলরা। চমক দেখিয়েছেন সেই কেশব মহারাজ-সাইমন হার্মারই।
এই দুই স্পিনারই নিয়েছেন বাংলাদেশের দশ উইকেটের সবটি। এর মধ্যে মহারাজ নিয়েছেন ৭টি, আর হার্মার ৩টি। অবশ্য মহারাজ অনন্য একটা রেকর্ডও গড়েছেন খালেদ আহমেদকে ফিরিয়ে। টানা দুই টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সাত উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলার হয়েছেন তিনি। এর আগে ডারবান টেস্টেও সাত উইকেট নিয়ে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে।
তৃতীয়দিনের শেষ সেশনেই বাংলাদেশের টপ অর্ডারে ধ্বস নামিয়েছিলেন দুই স্পিনার মিলে। কার্যত সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। অথচ দেশের ক্রিকেটপাড়ায় প্রচলিত আছে, বাংলাদেশ স্পিনটা ভালো খেলে। যদিও তার উল্টো চিত্রই দেখা গেল দুই টেস্টে। কায়বেরহার উইকেটে স্পিন ধরায়, অন্য কোনো বোলারও ব্যবহার করেননি এলগার।
তাদের বিপক্ষে তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিমদের কেউই তো সুবিধা করতে পারেননি। পারেননি নাজমুল শান্ত, মাহমুদুল জয় কিংবা লিটন দাসও। আউট হওয়ার ধরনের সাথে কাঠগড়ায় তোলা যায় তাদের টেস্ট ব্যাটিংয়ের ইন্টেন্ট আর শট সিলেকশন। ইনিংসের ব্যাপ্তি ছিল মাত্র ২৩.৩ ওভার। অথচ এসব দেখে বোঝার উপায় নেই এই টেস্টে আরও দুদিনের খেলা বাকি।
চতুর্থদিনের সকালের সেশনে মুশফিক টিকেছেন ৮ বল। আগের ৭ বল ঠেকিয়ে দিলেও, মহারাজের ঝুলিয়ে দেয়া ফ্লাইটেড ডেলিভারিটা ইনসাইড আউট খেলতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পা যে নড়েনি ডানহাতি এই ব্যাটারের। টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া সেই বল মুশফিকের ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে স্লিপের এলগারের হাতে। আগের ইনিংসেও ফিফটি করার পর রিভার্স সুইপ করে বোল্ড হয়েছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। সেই মুহূর্তে ভূতুড়ে সেই শট খেলার ব্যাখা হয়তো মুশফিকের নিজের কাছেও নেই।
অধিনায়ক মুমিনুলকেও সেই ভূতে পেয়ে বসেছিল চতুর্থ ইনিংসে। নইলে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানো দলের অধিনায়ক কেন প্রতিপক্ষের সেরা স্পিনারকে স্লগ সুইপ করতে যাবেন? ফলাফলও তেমনই হলো, আরও একবার সিংগেল ডিজিটে আউট বাঁহাতি মুমিনুল। কিংবা ইয়াসির আলী, টার্নিং উইকেটেই হার্মারকে তুলে মারলেন মিড উইকেটে। ধরা পড়েন উইলিয়ামসের হাতে।
লড়াইয়ের আভাস যা একটু দিয়েছিলেন লিটন দাসই। ৫টা চারের মারে করেছেন দলীয় সর্বোচ্চ ২৭। আউটও হয়েছেন মারতে গিয়েই। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আউট হয়েছে নিজেদের চতুর্থ সর্বনিম্ন টেস্ট সংগ্রহে।