• বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
  • " />

     

    অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ডারবানের তৃতীয় দিনটা কেবলই জয়ের

    অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ডারবানের তৃতীয় দিনটা কেবলই জয়ের    

    আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ

    দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ

    ডারবান টেস্ট

    ৩য় দিন, স্টাম্পস 

    দক্ষিণ আফ্রিকা -৩৬৭, ১ম ইনিংস (বাভুমা ৯৩, এলগার ৬৭, আরউই ৪১, খালেদ ৪/৯২, মিরাজ ৩/৯৪, এবাদত ২/৮৬) 

    বাংলাদেশ- ২৯৮, ১ম ইনিংস (জয় ১৩৭, লিটন ৪১, শান্ত, ৩৮, হার্মার ৪/১০৩, উইলিয়ামস ৩/৫৪)

    দক্ষিণ আফ্রিকা- ৬/০, ২য় ইনিংস (আরউই ৩*, এলগার ৩*) 


    লিজাড উইলিয়ামসের বলে স্লিপে সাইমন হার্মারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে মাহমুদুল হাসান জয় যখন হাঁটা শুরু করেছেন, ততক্ষণে তার নামের পাশে বসেছে ১৩৭ রান। সঙ্গী হয়েছে আরো একগাদা রেকর্ডস। তার রেকর্ডগড়া অনবদ্য এই সেঞ্চুরিতে ফলো অনের শঙ্কায় পড়া বাংলাদেশ থেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকার করা ৩৬৭-এর চেয়ে ৬৯ রান দূরে থেকে। শেষ বিকেলে প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য চার ওভারের বেশি খেলা হয়নি বৃষ্টির বাগড়ায়। প্রায় ২০ ওভার বাকি রেখেই বন্ধ হয় খেলা। 

    ১ম ইনিংসে সাইমন হার্মারের স্পিন জাদুতে ৯৪ রানেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা জয়। শুধু যে দায়িত্ব নিয়েছেন তাই নয়, দেখিয়েছেন কিংসমিডের এই উইকেটে কীভাবে ব্যাট করতে হয়। ইনিংসজুড়ে ছিলেন ধীর, স্থির আর শান্ত। শট সিলেকশন, ধৈর্য্য আর মানসিক খেলায় দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা।সব মিলিয়ে পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা। 

    সেঞ্চুরির আগে অস্থির মুহূর্ত বলতে ছিল, মিড অফে বল পুশ করে পড়িমড়ি এক সিংগেল। সেখান থেকে ফিরতি থ্রো’তে স্টাম্পে ডিরেক্ট হিট হলেও সেই যাত্রায় বেঁচে যান জয়। তবে ডারবানের এই অপরিচিত কন্ডিশনে দলের ভাঙাচোরা স্কোরকার্ড নিয়ে যেভাবে জয় ব্যাট করেছেন, তাতে তাকে লেটার মার্ক দেয়া যায় অনায়াসে।

    জয়ের রেকর্ড গুলোতে একটু চোখ বুলানো যাক। 

    প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রোটিয়াদের মাটিতে করেছেন টেস্ট সেঞ্চুরি। বলের হিসেবে (৩২৬) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের দীর্ঘতম ইনিংস। এশিয়ার ক্রিকেটারদের তালিকা করলে তা দ্বিতীয় দীর্ঘতম। জয়ের চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবল রাহুল দ্রাবিড় (৩৬২ বল)। 

    সময়ের হিসেবেও জয় সবার চেয়ে এগিয়ে। ৪৪২ মিনিট; প্রোটিয়া বোলারদের বিপক্ষে তার চেয়ে বেশি সময় টিকে থাকতে পারেননি কোনো বাংলাদেশি ব্যাটার।

    জয়ের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সেঞ্চুরি করেছেন কেবল ৫ জন এশিয়ান ওপেনার। নামগুলোও সমীহ জাগানিয়া; সাঈদ আনোয়ার, ওয়াসিম জাফর, তৌফিক ওমর, দিমুথ করুনারত্নে ও লোকেশ রাহুল। 

    টপ অর্ডারের পতনের পর চওড়া হতে থাকে জয়ের ব্যাট। অপর প্রান্তে সঙ্গীরা আসা-যাওয়া করলেও জয়ের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেনি। আগেরদিন নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাসকিন ফিরেন তৃতীয়দিনের তৃতীয় ওভারেই। এরপর জয়ের সঙ্গী হন লিটন দাস। দুইবার জীবন পেলেও লাঞ্চের পর উইকেট এসেই বোল্ড হন ডানহাতি এই ব্যাটার। এরপর ইয়াসির উইকেট এলে তার সাথে ৩৩ রানের জুটি হয় জয়ের। জয়ের কল না শুনে অপর প্রান্তে ছুটে গিয়ে রান আউট হন ইয়াসির। 

    ইনিংসের সুর অন্যমাত্রা পায় মিরাজের আগমনে। দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যোগ হয় মহামূল্যবান ৫০ রান। মুল্ডারের বলে মিরাজ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে জয় শুরু করেন পাল্টা আক্রমণ। মুল্ডারের এক ওভারেই মেরেছেন চারটি চার। 

    এর আগের ওভারে হার্মারকে এক ছক্কা ও এক চার মেরে কিংসমিডের শেষ বিকেলে রীতিমতো টি-টোয়েন্টি শো শুরু করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ৫ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা হার্মারকে খেলতে রীতিমতো খাবি খেয়েছেন মুশফিক-মুমিনুল-শান্তরা। অথচ জয় তাকে যেভাবে সামলেছেন, তা নিঃসন্দেহে দলের বাকি ব্যাটারদের একটা বার্তা দিয়েছে। এছাড়া টেল এন্ডার ও লেট অর্ডারের ব্যাটারদের যেভাবে আড়াল করে রেখেছেন, তা জয়ের মানসিক পরিপক্কতার পরিচায়ক। 

    ৩২৬ বলে ১৩৭ রানের ইনিংসটি জয় সাজিয়েছেন ১৫টি চার ও ২টি ছক্কায়। জয়কে নিজের তৃতীয় শিকার বানিয়েছেন উইলিয়ামস। চার উইকেট নেন হার্মার। 

    ৬৯ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা চার ওভারের বেশি ব্যাট করতে পারেনি। ডারবানের আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামায়, দেখা দেয় গতদিনের মতো আলোকস্বল্পতা। ৭৫ রানের লিড নিয়ে চতুর্থদিনের খেলা শুরু করবেন সারেল আরউই ও ডিন এলগার।