খালেদের অর্জন ম্লান করে হার্মারের হম্বিতম্বিতে দ্বিতীয় দিন প্রোটিয়াদের
১ম টেস্ট, ডারবান (টস- বাংলাদেশ/ ফিল্ডিং)
দক্ষিণ আফ্রিকা- ৩৬৭, ১২১ ওভার (বাভুমা ৯৩, এলগার ৬৭, আরউই ৪১, খালেদ ৪/৯২, মিরাজ ৩/৯৪, এবাদত ২/৮৬)
বাংলাদেশ ৯৮/৪, ২৬ ওভার (জয় ৪৪*, শান্ত ৩৮, হার্মার ৪/৪২)
বাংলাদেশ ২৬৯ রানে পিছিয়ে
২য় দিন, স্টাম্পস
দুজন বোলার পেলেন ৪-উইকেটের দেখা। তবে দুই দলের দুজন বোলারের সেই উইকেট সমুহে দিনশেষে বিস্তর ফারাক। প্রথম বাংলাদেশী পেসার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইনিংসে ৪ উইকেট পেলেন খালেদ আহমেদ। তবে প্রায় পাঁচ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা সাইমন হার্মারের ৪ উইকেটে বাংলাদেশের সেই আনন্দ ম্লান হতে খুব বেশি সময় লাগেনি।
সাদমান ইসলামের সাথে মাহমুদুল হাসান জয় যখন ওপেন করতে নামেন তখন মেঘাছন্ন আবহাওয়ায় পেসারদের নিয়েই ছিল ভয়। সেই অধ্যায় যখন ভালোভাবেই পার করেন দুজন তখন মনে হচ্ছিল বড় কোনও সংগ্রহ আস্তেও পারে এই জুটির কাছ থেকে। তবে আক্রমণে এসে সময় নিলেন না হার্মার; প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে উপড়ে ফেলেন সাদমানের স্টাম্প। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের চেপে বসার সুযোগ না দিয়ে এরপর এসে প্রতি আক্রমণের কাজটা ভালই করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অন্য প্রান্তে জয় ছিলেন শান্তশিষ্ট। শান্তকে যখন উইকেটে থিতু মনে হচ্ছিল তখনই আবারও হন্তারকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হন হার্মার। তীক্ষ্ণ এক অফ ব্রেকে উপড়ে ফেলেন শান্তর অফ স্টাম্পের বেইল। শান্ত ৩৮ রানে ফেরার পর উইকেটে এসে রানের খাতা খোলারও সুযোগ পাননি অধিনায়ক মুমিনুল হক। সেই হার্মারের বলে সিলি মিড অফে কিগান পিটারসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন তিনি। দিনের কয়েক ওভার বাকি থাকতে উইকেটের পিছে হার্মারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিমও। জয় এক প্রান্তে মাটি কামড়ে পরে থেকে ৪৪ রানে দিন শেষ করলেও দিনটি ছিল শুধুই হার্মারের।
এর আগে ২৯৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার ৮ উইকেট ফেলে দেওয়ার পর বাংলাদেশ যখন ৩০০-এর আশেপাশেই তাদের গুটিয়ে দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর তখন ব্যাট হাতে বাঁধ সেধে বসেন হার্মার। লিজাদ উইলিয়ামস ও ডুয়ান অলিভিয়েরকে নিয়ে শেষ দুই উইকেটে তিনি যোগ করেন ৬৯ রান। মিরাজ ও খালেদ শেষ দুটি উইকেট নিলেও হার্মারের ৩৮* রানের ইনিংস মানসিকভাবেও যেন বাংলাদেশকে কাবু করে দেয়।
অথচ দিনটা হতে পারত বাংলাদেশের। নতুন বল হাতে নেওয়ার পর খালেদ আহমেদ যেন পেয়েছিলেন কোনও সঞ্জীবনী শক্তির ছোঁয়া। ৮৩তম ওভারে দারুণ এক ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন কাইল ভেরেইনাকে। পরের বলটা প্রথম স্লিপের দিকে তাক করে গুড লেংথে ফেলার পর সেই স্লিপের রাস্তায়ই পাঠান উইয়ান মুল্ডার। ওঁত পেতে থাকা জয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই তাতে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মুল্ডার। ডাবল উইকেট মেইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডারে কাপন ধরিয়ে দিয়ে খালেদ তখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে।
তবে সেই আত্মবিশ্বাস চূর্ণ করতে অন্য প্রান্তে থাকা বদ্ধপরিকর টেম্বা বাভুমা যে শুধু মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন তা নয়, বরং খারাপ বলকে দিয়েছেন উচিৎ জবাব। কেশাভ মহারাজকে নিয়ে মেরামতের কাজ শুরু করেন; ধীর লয়ে এগিয়ে যান নিজের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির দিকে। তবে মেহেদী হাসান মিরাজের তীক্ষ্ণ ঘূর্ণি কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। ওই ওভারের আগের পাঁচটি বলই ৫ম-৬ষ্ঠ স্টাম্পের রাস্তায় বল ফেলে প্রায় ১.৫-৩ ডিগ্রির মত বাঁক পাচ্ছিলেন মিরাজ। তবে ওভারের শেষ বলটা ওই ৬ষ্ঠ স্টাম্পের লাইনে ফেলে প্রায় ৬ ডিগ্রির মত বাঁক পান মিরাজ। আর তাতেই পরাস্ত হয়ে শেষ হয় বাভুমার ৯৩ রানের দারুণ ইনিংস। তার ঠিক পরের বলেই এবাদত হোসেনের কাছে স্টাম্প খুইয়ে মহারাজ ফেরেন ১৯ রানে। এরপরই টেইলএন্ডারদের নিয়ে হার্মার যেই মহামূল্যবান রান যোগ করেন তা হয়ত বেশ ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে।