• বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
  • " />

     

    শেষদিনের দুঃস্বপ্নে বাংলাদেশের সেই পুরনো গল্প

    শেষদিনের দুঃস্বপ্নে বাংলাদেশের সেই পুরনো গল্প    

    দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ

    ১ম টেস্ট, ডারবান

    টস-বাংলাদেশ/বোলিং

    দক্ষিণ আফ্রিকা -৩৬৭, ১ম ইনিংস (বাভুমা ৯৩, এলগার ৬৭, আরউই ৪১, খালেদ ৪/৯২, মিরাজ ৩/৯৪, এবাদত ২/৮৬) 

    বাংলাদেশ- ২৯৮, ১ম ইনিংস (জয় ১৩৭, লিটন ৪১, শান্ত, ৩৮, হার্মার ৪/১০৩, উইলিয়ামস ৩/৫৪)

    দক্ষিণ আফ্রিকা- ২০৪, ২য় ইনিংস (এলগার ৬৪, রিকলটন ৩৯, পিটারসেন ৩৬, মিরাজ ৩/৮৫, এবাদত ৩/৪০, তাসকিন ২/২৪) 

    বাংলাদেশ -৫৪, ২য় ইনিংস (শান্ত ২৬, তাসকিন ১৪, কেশভ ৭/৩২, হার্মার ৩/২১) 

    ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ২২০ রানে জয়ী


    চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ২৭৪ রান। ডারবান টেস্টের চতুর্থদিনের শেষ বিকেলে সেই লক্ষ্য তাড়ায় ১১ রানেই তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবুও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল বাংলাদেশ শিবিব। ডারবানে শেষ বিকেলের ভয়ানক হয়ে ওঠা উইকেটের চিন্তা একপাশে রেখে, বাংলাদেশ চেয়েছিল পঞ্চমদিনের প্রথম দুই সেশন কাজে লাগাতে। কিন্তু শেষদিনের সকালের সেশনে দেখা গেল ঠিক উল্টো চিত্র।

    প্রত্যাশার বিপরীতে থাকা বাস্তবতার যে বিশাল ফারাক; সেটা বাংলাদেশকে একদম হাতে কলমে বুঝিয়ে দিলেন কেশভ মহারাজ ও সাইমন হার্মার। তারা এক ঘন্টাও টিকতে দিলেন না বাংলাদেশকে। এই দুই স্পিনারের জাদুতেই বাংলাদেশ থেমেছে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহে। ডারবানের কিংসমিডেরও সর্বনিম্ন টেস্ট ইনিংস এটি। এতদিন ভারতের ৬৬ ছিল সর্বনিম্ন। 

    মাত্র ৫৩ রানেই গুটিয়ে যাওয়া এই ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার নাজমুল হোসেন শান্ত। বাঁহাতি এই ব্যাটার খেলেছেন ২৬ রানের ইনিংস। স্রোতের বিপরীতে যা একটু লড়াইয়ের আভাস কেবল তিনিই দিয়েছিলেন। হার্মারকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে একটা ছক্কাও মেরেছিলেন। সেই শোধটা হার্মার তুলেছেন দারুণ এক ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে। ইন সাইড আউট ড্রাইভ করতে গিয়ে টার্ন আর ফ্লাইটে পরাস্ত হওয়ার পর স্টাম্পিং হন শান্ত। 

    অথচ চতুর্থ ইনিংসে তামিম-সাকিবের অবর্তমানে বাংলাদেশ দলের আশা-ভরসার সবটা ছিল মুশফিককে ঘিরে। কিন্তু অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ফিরেছেন কেশভের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সব মিলিয়ে ৫ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটার। সাদমান, মুমিনুল, আর আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান জয় তো ফিরেছেন আগের দিনই। 

    আজ দলের বাকিরাও ব্যর্থ। লিটন-ইয়াসির দুজনই আউট হয়েছেন সিংগেল ডিজিটে, কেশভের স্পিনে। মিরাজ তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ রানের ইনিংস খেলা তাসকিন আউট হয়েছেন দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। কেশভের সপ্তম শিকার তিনি। 

    ডারবানের উইকেটে বল উঁচু-নিচু হয়েছে, ছোট ছোট টার্নের সাথে দারুণ ফ্লাইটও আদায় করেছেন কেশভ-হার্মার। সেই গোলকধাঁধাতেই যেন আটকা পড়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগারও তা বুঝতে পেরে কেবল এই দুজনকেই দুই প্রান্ত থেকে বল করিয়েছেন। আর তাতে যে অধিনায়ক দারুণ সফল সেটা স্কোরকার্ডই বলে দিচ্ছে। 

    দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের ওয়ানডে ভাগ্য বদলালেও, টেস্ট জয়ের খাতায় এখনো টিক মার্ক পড়েনি। অথচ খালেদ-মিরাজের দারুণ দুটি স্পেল, জয়ের রেকর্ডগড়া দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি, তাসকিন-এবাদতদের আগুনে বোলিংয়ে জয়ের স্বপ্নই দেখছিল বাংলাদেশ। সেই স্বপ্ন হারিয়ে গেল ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিলের মাঝে। লেখা হলো পরাজয়ের সেই পুরনো গল্পই।