• বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
  • " />

     

    ডারবানে যত ‘ডাকাতি’ ও সাকিবের প্রশ্ন

    ডারবানে যত ‘ডাকাতি’ ও সাকিবের প্রশ্ন    

    ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’

    ঘটনার শুরু চলতি ডারবান টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলার দ্বিতীয় ওভারে। স্ট্রাইকে ছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার। মেহেদী হাসান মিরাজের টার্ন করা ডেলিভারিটা ডিফেন্ড করতে চেয়ে লাইন মিস করে বসেন তিনি। বল সোজা গিয়ে লাগে এলগারের পেছনের পায়ে। 

    জোরালো আবেদনের মুখেও আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস সাড়া না দেওয়ায় হাতে থাকা রিভিউ কাজে লাগান অধিনায়ক মুমিনুল হক। রিপ্লেতে দেখা যায় মিডল স্টাম্পে পিচ করা বল ক্লিপ করেছে অফ স্টাম্পের ওপরের দিকে। আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান তখন ৭ রানে থাকা এলগার। অর্থাৎ এরাসমাস তখন আঙ্গুল তুলে দিলে উইকেট পেত বাংলাদেশ। 


    এবাদতের স্যালুট, কপালপোড়া খালেদ ও এরাসমাস

    ততক্ষণে পুরোদস্তুর সেট হয়ে গেছেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার এলগার ও আরউই। এক প্রান্তে এলগার হাত খুলে খেললেও আরউই ছিলেন নিজের খোলসে বন্দি। সেই আরউইকে ফিরিয়েই ওপেনিং জুটিটা ভাঙেন এবাদত। 

    এবাদতের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারে তৃতীয় ডেলিভারিটা কাট ইন করে ভেতরে ঢুকছিল। বাঁহাতি আরউই লাইন মিস করলে ফুল লেংথের ডেলিভারিটা সোজা গিয়ে লাগে তার প্যাডের নিচের দিকে। আবারো সেই একই দৃশ্য; বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনের পর আম্পায়ারের আঙ্গুল না ওঠা। পার্থক্য এতটুকুই; তখন বোলিং প্রান্তের আম্পায়ার ছিলেন আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক। 

    অথচ সেই ডেলিভারিটা খালি চোখে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, প্যাডে আঘাত হানার আগে আরউইর ব্যাটের সাথে বলের ন্যুনতম কোনো ছোঁয়া লাগেনি। রিভিউতেও দেখা যায় বল লাইনে পিচ করে ক্লিপ করেছে লেগ স্টাম্পে, ইম্প্যাক্ট ছিল ইন লাইন,  আল্ট্রা এজেও দেখা যায়নি কোনো স্পাইক। বদলে যায় সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন এবাদত। উদযাপনটাও করেছেন নিজের ট্রেডমার্ক স্যালুট ঠুকে। 

    দিনের সবচেয়ে সমালোচিত আম্পায়ারিংয়ের উদাহরণ হয়ে রয়েছে ২৬তম ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিটা। ডানহাতি পেসার খালেদ আহমেদের দারুণ এক সুইংগার কিগান পিটারসেনের ডিফেন্স চিড়ে সোজা আঘাত হানে প্যাডে। তুমুল আবেদনের পরও বাংলাদেশের ফিল্ডাররা সাড়া পাননি এরাসমাসের কাছ থেকে। যেন লেগ বিফোরে প্রোটিয়াদের আউট দিতেই তার অনীহা!

    অথচ একটু পর রিপ্লেতেই দেখা গেছে গুড লেংথ সেই ডেলিভারিটার ইম্প্যাক্ট ছিল অফস্টাম্পে, আর সোজা আঘাত হানতো মিডল স্টাম্পে। অন ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দেওয়ায়, খালেদ চাইলেও মুমিনুল তখন আর রিভিউ নেননি। 

     

    বার্থডে বয় ও সপ্তম ডিসিশন ওভারটার্ন্ড

    আজ জন্মদিন তাসকিন আহমেদের। জন্মদিনে ডানহাতি এই পেসার পেলেন এলগারের উইকেট। যিনি দিনের শুরুতেই আম্পায়ার্স কলের বদৌলতে বেঁচে গিয়েছিলেন এলবিডব্লিউ হয়েও। তাসকিনও এলগারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেই বিদায় করেছেন। চিত্রটা অন্যরকমও হতে পারত, যদি না মুমিনুল রিভিউ নিতেন। 

    কারণ তাসকিনের করা অফ স্টাম্প থেকে ভেতরে ঢোকা বল ডিফেন্সের চেষ্টায় এলগার ব্যর্থ হন। প্যাডে লাগার পর তাসকিনসহ বাকি ফিল্ডাররা আবেদন করেন লেগ বিফোরের। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার আম্পায়ার এরাসমাস যেন আজ পণ করে নেমেছিলেন; ‘লেগ বিফোরের আবেদনে আউট দেবই না’

    সেই ধারাবাহিকতায় এরাসমাস আবারো আবেদন নাকচ করে দিলে রিভিউ নিয়ে থার্ড আম্পায়ারের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। যদিও তখন দুটি আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। সেটাতেই হয়তো বিভ্রান্ত হয়েছিলেন এরাসমাস। তবে আল্ট্রা এজে ধরা পড়েনি কোনো স্পাইক। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় ইম্প্যাক্ট ছিল লাইনে। বল ক্লিপ করেছিল একদম মিডল স্টাম্প বরাবর। পাল্টে যায় এরাসমাসের সিদ্ধান্ত।  

    মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসে এলগারের সেই আউট পর্যন্ত রিভিউয়ের পর সাতবার সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে দুই অনফিল্ড আম্পায়ারকে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে দুই দলের ১০টি রিভিউ, যার মধ্যে আছে চারটি আম্পায়ার্স কল। এই চারটির তিনটিই গেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। তাই প্রশ্ন উঠছে ডারবান টেস্টে আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়েও। অথচ মারাইস এরাসমাস আইসিসির এলিট প্যানেলভূক্ত আম্পায়ার। মাস দুয়েক আগে জিতেছেন বর্ষসেরা আম্পায়ারের পুরস্কারও।

    সাকিব আল হাসানও যেন আম্পায়ারিং নিয়ে চাপা ক্ষোভ ঝাড়লেন টুইটারে। পারিবারিক কারণে টেস্ট সিরিজ খেলতে না পারা এই অলরাউন্ডার টুইটারে আইসিসিকে আহ্বান  জানিয়েছেন, যেন নিরপেক্ষ আম্পায়ার দিয়ে খেলা পরিচালনা করা হয়। কারণ করোনা মহামারী পরিস্থিতি এখন প্রায় সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশেই স্বাভাবিক। 

    সাকিবের এই ভাবনার নেপথ্যে ৭১তম টেস্ট পরিচালনা করতে নামা এরাসমাস ও সপ্তম টেস্টে আম্পায়ারিং করতে নামা হোল্ডস্টকের পক্ষপাতিত্ব আছে কিনা, সেই প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যায়।