• বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
  • " />

     

    তাসকিন-তান্ডবের পর অধিনায়ক তামিমের ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশের ইতিহাস

    তাসকিন-তান্ডবের পর অধিনায়ক তামিমের ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশের ইতিহাস    

    ৩য় ওয়ানডে, সেঞ্চুরিয়ন (টস-দক্ষিণ আফ্রিকা/ব্যাটিং)
    দক্ষিণ আফ্রিকা- ১৫৪, ৩৭ ওভার (মালান ৩৯, মহারাজ ২৮, প্রিটোরিয়াস ২০, তাসকিন ৫/৩৫, সাকিব ২/২৪, মিরাজ ১/২৭)
    বাংলাদেশ- ১৫৬/১, ২৬.৩ ওভার (তামিম ৮৭*, লিটন ৪৮, সাকিব ১৮*, মহারাজ ১/৩৬)
    ফলাফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী

    ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ! দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে যেকোনো ফরম্যাটে প্রথম সিরিজ জয়ের দেখা পেল তারা। অনেক প্রথমের এই ২০২২ সালে আরও একটি প্রথম এল বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ঝান্ডা বহনকারী এক তরুণের হাত ধরে-যিনি নিজেই প্রতি নিয়ত গেয়ে চলেছেন বদলে যাওয়ার গান; তাসকিন আহমেদের আগুনে ৫-উইকেটে পর্যুদস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে গিয়েছিল ১৫৪ রানে। লিটন দাসের ৪৮ রানের সাথে অধিনায়ক তামিম ইকবালের  ৮৭* রানের  দারুণ ইনিংসে বাংলাদেশ তাই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে দাপুতে এক জয় দিয়ে।

    ১৫৫ রানের লক্ষ্যে বিপদ ঘটতে পারত প্রথমেই। রানের খাতা খোলার আগেই রাবাদার বলে ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে যান লিটন। তবে এরপর আর পেছন ফিরে তাকায়নি তামিম-লিটন জুটি। তামিম তো ছিলেন দারুণ সপ্রতিভ! অসমান বাউন্সের কোনও তোয়াক্কা না করে তামিম মনে করিয়ে দিতে থাকলেন পুরনো সেই তামিমকে। রাবাদার ১০ম ওভারে ৪টি চার মেরে যেন ভেঙে দিলেন প্রোটিয়াদের লড়াইয়ের শেষ আশাটুকুও। কিছুক্ষণ পরেই ৫২ বলে নিজের ৫২তম ওয়ানডে ফিফটি পূর্ণ করেন তামিম। জয় নিশ্চিত করার জন্য যেন তর সইছিল না বাংলাদেশের। সেজন্যই কি না ফিফটির দ্বারপ্রান্তে এসে মহারাজের শিকার হয়ে ফেরেন লিটন। তবে বাকি পথটুকু সাকিবকে নিয়ে তামিম পাড়ি দেন দারুণভাবে। ম্যাচ জয়ী বাউন্ডারিটা সাকিবের ব্যাট থেকে এলেও ৮২ বলে ৮৭* রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে তামিম ম্যাচ শেষ করে আসেন দোর্দণ্ড প্রতাপে। ঐতিহাসিক জয়ের কান্ডারিদের একজন হয়ে সামনে থেকেই তাই নেতৃত্ব দিলেন তামিম।

    অথচ টস জিতে টেম্বা বাভুমা যখন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন তখন কি ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছিলেন এরকম কিছু হতে চলেছে! দক্ষিণ আফ্রিকার পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে শুরু থেকে বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন তৎপর। আগের ম্যাচে শুরুতেই ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে ছিটকে দেওয়া কুইন্টন ডি কককে মোকাবেলায় এদিন মেহেদী হাসান মিরাজকে শুরুতেই  আক্রমণে আনেন তামিম। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে শট খেলতে প্রলুব্ধ করে ৭ম ওভারেই ডি কককে ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। দৃশ্যপটে এরপরেই আবির্ভাব তাসকিনের। শুরুটা দারুণ করলেও উইকেটের দেখা মেলে ১৩তম ওভারে এসে। তার নিরীহ এক বল স্টাম্পে ডেকে এনে ফিরে যান কাইল ভেরেয়েন। এক ওভার পরেই খাটো লেংথের এক বলে স্টাম্পের পেছনে তালুবন্দি করে ৩৯ রানে থাকা ইয়ানেমান মালানকে ফেরান তাসকিন। পরের ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ঘোর বিপদে ফেলে অধিনায়ক বাভুমাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাকিব আল হাসান।

    ৭১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসা প্রোটিয়ারা যখন আরও একবার রাসি ভ্যান ডার ডুসেনের দিকে তাকিয়ে  তখনই অতিরিক্ত বাউন্স আদায় করে পয়েন্টে তালুবন্দি করে তাকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। শিকারের ঘ্রাণ পেয়েই তামিম তাসকিনকে ফেরত আনেন। এক ওভার পরেই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে ২০ রানে থাকা ডোয়েইন প্রিটোরিয়াসকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করে ফেরান তাসকিন। এক ওভার পরে দক্ষিণ আফ্রিকার কফিনে তাসকিন শেষ পেরেক ঠুকে দেন জোড়া আঘাত হেনে। ভয়ঙ্কর মিলারকে ফেরানোর পর শেষ বলে ফেরান রাবাদাকে। সেই অভিষেকে প্রথম ৫-উইকেটের পর পেয়ে যান ২য় ওয়ানডে ৫-উইকেটের দেখা, যা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে কোনও বাংলাদেশী বোলারের প্রথম ও গত ১০ বছরে  যেকোনো সফরকারী পেসারের জন্য প্রথম। লুঙ্গি এনগিডিকে সাকিব এরপর ফেরানোর পর ২৮ রানে থাকা কেশাভ মহারাজ ২৮ রানে রান আউটের শিকার হলে ১৫৪ রানেই থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা; বাংলাদেশ যা পরে টপকে যায় প্রায় অর্ধেক ওভার হাতে রেখেই!