• আইপিএল ২০২২
  • " />

     

    লক্ষ্ণৌর বিস্ময় আয়ুশ

    লক্ষ্ণৌর বিস্ময় আয়ুশ    

    আয়ুশ বাদোনি। আইপিএলে যারা নজর রাখছেন তাদের কাছে নামটা চেনা ঠেকবে। নবাগত দল লখনৌ সুপার জায়ান্টসের হয়ে নিজের অভিষেক ম্যাচেই পেয়েছেন এক দুর্দান্ত ফিফটি। ইনিংস ব্রেকে হার্শা ভোগলে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলে? 

     

     

     

    আয়ুশের এই আড়ালে কিংবা হার্শা ভোগলের এই প্রশ্নের নেপথ্যে আছে দিল্লির ক্রিকেটের অবকাঠামোর কিছু নিয়ম। উঠে এসেছেন দিল্লির বিখ্যাত কোচ তারক সিনহার সনেট একাডেমি থেকে। রিশাভ পান্টের উত্থানও একই একাডেমিতে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আলো ছড়িয়ে ডাক পান ভারতের অনূর্দ্ধ্ব-১৯ দলে। ২০১৮ যুব এশিয়া কাপের পর  যুব টেস্টেও রেখেছিলেন নিজের ব্যাটিংয়ের ছাপ, কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি যুব বিশ্বকাপে।

    তবে গতবছর দিল্লির মূল দলে সুযোগ পান টি-টোয়েন্টিতে। কিন্তু ব্যাটিং করতে পেরেছেন কেবল এক ম্যাচে। ৮ রান করেছিলেন সেই ম্যাচে।  এক ম্যাচের অভিজ্ঞতা দিয়েই আইপিএলে সুযোগ আসে। ভিত্তিমুল্য ২০ লাখ রুপিতে তাকে দলে টানে লখনৌ সুপার জায়ান্টস। 

    আয়ুশের নেই কোনো লিস্ট ‘এ’ কিংবা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা, তবুও তার ব্যাটেই ভরসা রেখেছিল লখনৌ। যার নেপথ্যে ছিলেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর; দিল্লির আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রতিভাদের বের করে আনাই যার কাজ। এবার আইপিএলে তাকে দেখা যাচ্ছে লোকেশ রাহুল-আয়ুশদের মেন্টর হিসেবে। 

    ইনিংস ব্রেকে আয়ুশও বলেছিলেন গৌতম কীভাবে তাকে পুরোটা সময় সাহায্য করেছেন, 'গৌতম ভাইয়া বলেছিলেন নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার জন্য সিনিয়ররা আছে, তুমি কেবল নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিংটা করো’

    আগের তিনবার নিলামে নাম উঠলেও দল পাননি আয়ুশ। দলগুলোর ট্রায়ালে গিয়ে প্রশংসা পেলেও নিলামে ভাগ্য খোলেনি তার। শেষবার গিয়েছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ট্রায়ালে। তবে লখনৌতে ঠিকই সবার মন জিতে নিয়েছেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। প্রস্তুতি ম্যাচেই করেছেন দুই ফিফটি। মূল ম্যাচের পারফর্ম্যান্সে গৌতম গম্ভীর থেকে শুরু করে দলের বাকি সব কোচই তার পারফর্ম্যান্সে খুশি। 

    অভিষেক ম্যাচেই প্রতিপক্ষের রশিদ খানকে  স্লগ সুইপে ছক্কা, কিংবা গতিময় লকি ফার্গুসনের বাউন্সারে দারুণ পুল; তাতে সবাই একটু অবাকও হয়েছেন। এরপর চেন্নাইয়ের বিপক্ষে দারুণ এক ক্যামিওতে ম্যাচ জিতিয়েছেন। কিন্তু এমন দারুণ এক ব্যাটিং প্রতিভার ঝলকানি দেখতে পায়নি ভারতের যুব দল। 

    এর নেপথ্যে সবচেয়ে বড় দায় দিল্লির নির্বাচকদের। স্বয়ং রাহুল দ্রাবিড় দিল্লির ক্রিকেট বিষয়ক কমিটিতে আয়ুশের নাম সুপারিশ করেছিলেন, তবুও আড়ালেই থেকে গেছেন আয়ুশ। 

    দিল্লির প্রধান নির্বাচকদের দিকে গাফিলতি কিংবা পক্ষপাতের অভিযোগ বেশ পুরনো। যুব বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক উন্মুক্ত চাঁদও একই দাবি করেছিলেন। তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য আছে ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি। তবে ক্রিকেটার তুলে আনার কাজ নির্বাচকদেরই করতে হয়। আর সেখানেই পিছিয়ে পড়েছিলেন আয়ুশ, নজরে পড়েননি নির্বাচকদের। তাই খেলা হয়নি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। 

    ক্রিকেটে আয়ুশের সবচেয়ে বড় বন্ধু তার বাবা বিবেক বাদোনি; পেশায় ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার। সিমেন্টের পিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছেলেকে প্র্যাক্টিস করাতেন। বাবার মুখে এখন ফুটেছে বিশ্বজয়ের হাসি। আর হবে নাই বা কেন? সেই ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকারের বারবার উপেক্ষিত ছেলেই তো আইপিএলের মঞ্চে দারুণ ঝলমলে এক রূপকথার গল্প লিখছে