• ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ
  • " />

     

    তিন হাজারের ওঁরা তিন জন

    তিন হাজারের ওঁরা তিন জন    

    “বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও”- সাকিব আল হাসানকে এখন মুশফিকুর রহিম কথাটা বলতেই পারেন! পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই গলাগলি করে পেরিয়েছেন সব মাইলফলক। সাকিব তিন হাজার রান পেরুনোর ঠিক এক মাস পরেই মুশফিক সেটি পেরিয়ে যাবেন, সেটা তো আসলে চিত্রনাট্য মেনেই হওয়া। তামিম ইকবাল একটু এগিয়ে না গেলে তিন বন্ধু প্রায় একসঙ্গেই ঢুকতে পারতেন তিন হাজারি ক্লাবে। হাবিবুল বাশার যে পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানে বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত আর হেঁটেছেন এই তিন জনই।

    বয়স, ক্যারিয়ার হিসেব করলে তিন জনের ক্যারিয়ার প্রায় সমান্তরালেই এগিয়েছে। মুশফিকের অভিষেক হয়েছিল বছর তিনেক আগে, তবে সাকিব-তামিমের অভিষেকের আগে তাঁর টেস্টও ছিল সাকুল্যে ছয়টি। এক হাজার রানের মাইলফলকটা তিন জনই অবশ্য প্রায় একই সময়ে ছুঁয়েছিলেন। ২০১০ সালের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে তামিম ও মুশফিকের টেস্ট রান চার অঙ্ক পেরিয়ে গিয়েছিল। ঠিক এক সপ্তাহ পর দুজনের সঙ্গে সেখানে যোগ দিলেন সাকিবও। তবে ইনিংসের হিসেবে তামিমই ছিলেন এগিয়ে। তামিম যখন ৩০তম ইনিংসে সেটি ছুঁয়ে ফেলেছেন, সাকিব (৩৬) ও মুশফিক (৩৯) ছিলেন আরেকটু পিছিয়ে। আর ১ হাজার রান করতে হাবিবুল বাশারের লেগেছিল ৩২ ইনিংস।

     

     

    তিন হাজারি ক্লাবে সবার আগে হাবিবুল বাশার

     

    এরপর তামিম চলার গতিটা একটু দ্রুতই বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাকিবকে মনযোগ দিতে হচ্ছিল বোলিংয়েও। ব্যাটিংয়ে তালটা সেভাবে রাখতে পারেননি। মুশফিকও গেছেন আরেকটু পিছিয়ে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাকি দুই সঙ্গীদের বেশ আগেই তাই দুই হাজার রান পেরিয়ে গেছেন। প্রথম এক হাজার রানের জন্য তামিমের লেগেছিল ৩০ ইনিংস, পরের এক হাজার রান করেছেন ২৪ ইনিংসেই। কাকতালীয়ই বটে, সেই দুই হাজার রান সাকিব-মুশফিক ছুঁয়েছেন একই টেস্টেই। তামিমের ঠিক ছয় মাস পর অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই জনই ঢুকে গেছেন দুই হাজারি ক্লাবে। সেখানে অবশ্য সাকিব একটু এগিয়ে। সাকিবের যখন ৫৯তম ইনিংস লেগেছিল, মুশফিককে খেলতে হয়েছিল ৬৭ ইনিংস। হাবিবুল এখানে আবার সাকিবের সঙ্গে সমতায়, ৫৯ ইনিংস লেগেছিল তাঁর।

    তামিম যে সেই জোর কদমে হাঁটতে শুরু করলেন, এরপর বাকি দুই সঙ্গীর চেয়ে এগিয়ে গেছেন আরও। দুই হাজার রানের ঠিক দুই বছর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ঢুকে গেছেন তিন হাজারি ক্লাবে, এবার লেগেছে মাত্র ২২ ইনিংস। সব মিলে তামিমের ৭৬ ইনিংস বাংলাদেশের পক্ষেই দ্রুততম। পাকিস্তানের সঙ্গে ওই সিরিজেই তো তামিম বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অনেক রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছিলেন।
     

    অভিনন্দনটা সবার আগে সাকিব পেয়েছিলেন মুশফিকের কাছেই

     

    তবে সাকিবও  কাছাকাছিই ছিলেন। গত বছরের প্রায় পুরোটা সাদা পোশাক তুলে রাখার পর ইংল্যান্ডের সঙ্গে পরার সুযোগ পেলেন। শেষ পর্যন্ত সাকিবের সেই মুহূর্ত এলো ওয়েলিংটনে। ২১৭ রানের ইনিংসে ঢুকে গেলেন তিন হাজারি ক্লাবে। সেই অভিনন্দন সবার আগে পেয়েছিলেন মুশফিকের কাছ থেকেই। এবার সাকিবকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৮৪তম ইনিংস পর্যন্ত, ৪৫তম টেস্টে এসে।

    ওয়েলিংটনে ১৫৯ রান করে মুশফিকও চলে গিয়েছিলেন অনেকটা কাছাকাছি। কে জানে, চোট না পেলে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টেই হয়তো সাকিবের সঙ্গী হয়ে যেতেন। এর পর প্রথম সুযোগেই সেই অর্জন হয়ে গেল, হায়দরাবাদে দিনের শেষ ওভারে ইশান্ত শর্মাকে চার মেরেই এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বাকি দুজনের তুলনায় অপেক্ষাটা একটু বেশিই হয়েছে, ৯৫-তম ইনিংসেই মুশফিক ছুঁয়েছেন মাইলফলক। তবে হাবিবুল এখানে মুশফিকেরও পরে, ৯৭-তম ইনিংসে এসে তিন হাজার রান হয়েছিল বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের।

    এই সুযোগে অবশ্য তামিম, সাকিব এগিয়ে গেছেন অনেকটা। তামিম তো সাড়ে তিন হাজার রান ছুঁয়ে ফেলতে পারেন দ্বিতীয় ইনিংসেই। সাকিবের রানও হয়ে গেছে ৩২৯৫। কে বলতে পারে, চার হাজার রানের জন্য তিন জনই হয়তো নিজের সেরা “টাইমিংটাই” করবেন। কে জানে, সেটি হয়ে যাবে এই বছরেই। কিন্তু পাঁচ হাজার রানে পোঁছাতে তিন জনের কতটা সময় লাগবে? সেখানেও কি সবার আগে তামিমই থাকবেন?

    সেই গল্প তোলা থাক অন্য এক দিনের জন্য।