ডায়নামাইটসে উড়ে গেল কিংসরা
ঢাকা ২০১/৭, ২০ ওভার (লুইস ৬৫, পোলার্ড ৫২, মিরাজ ২/৩২)
রাজশাহী ১৩৩ অল-আউট, ১৮.২ ওভার (জাকির ৩৬, স্যামি ১৯, আফ্রিদি ৪/২৬, রনি ৩/১১)
ফল : ঢাকা ৬৮ রানে জয়ী
একটা ক্যাচ ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়। আবার দুই দলের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতেও যথেষ্ট হতে পারে একটি ক্যাচই। নাদিফ চৌধুরির ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে এক হাতের ক্যাচটা যেমন। জিজি বুফন বা অন্য কোনও গোলকিপারের মতো লাফিয়ে উঠে নেওয়া নাদিফের ক্যাচে বিদায়ঘন্টা বাজলো মুশফিকুর রহিমের। অথচ এই নাদিফেরই সহজ ক্যাচ ছেড়েছিলেন মুমিনুল হক। এরকম ক্যাচ মিস, এলোমেলো ফিল্ডিং আর বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে ঢাকার স্কোর চলে গিয়েছিল রাজশাহীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেটা আরও কঠিন করে ফেললেন রনি-আফ্রিদিরা। এবারের বিপিএলে প্রথম দল হিসেবে ৮ জন স্থানীয় ক্রিকেটার নিয়ে খেলতে নামা রাজশাহী তাই খেই হারিয়ে ফেলেছে ঢাকার সঙ্গে, এক ম্যাচ জয়ের পরই ফিরেছে পরাজয়ের ধারায়। আর ঢাকা শীর্ষস্থানে থেকে নিজের পয়েন্ট বাড়িয়ে নিয়েছে আরও।
২০১ রানের পুঁজি, আবু হায়দার রনি শুরুটাও করলেন দারুণ। প্রথম ওভারেই দুইটি উইকেট পেতে পারতেন , মুমিনুলের এলবিডাব্লিউটা না দিয়ে আম্পায়ার দিলেন রনি তালুকদারকে আউট। পরের ওভারে রনি উপহার পেলেন স্যামিট প্যাটেলের উইকেট, আফ্রিদি ধরলেন সহজ ক্যাচ। সেই আফ্রিদি বোলিংয়ে এসেই করলেন আঘাত, মুমিনুল দিলেন রনিকে ক্যাচ।
রাজশাহীর অসম্ভব যাত্রায় একটু আলো দেখিয়েছিলেন আগের ম্যাচের নায়ক জাকির হাসান, তিনিও শিকার হলেন দারুণ ফিল্ডিংয়ের। লং-অনে লাফিয়ে উঠে একহাতে ক্যাচ নিলেন পোলার্ড, ২৩ বলে ৩৬ রানের ইনিংসটা ক্ষততে একটু ওষুধ লাগাতে পারলো শুধু। স্যামিও শুধু বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচই দিতে পারলেন সাকিবের বলে। এর আগে ফ্র্যাঙ্কলিনও সহজ ক্যাচ দিয়েছেন সাকিবের বলে। মিরাজকে বোল্ড করে যেন ‘শোধ-বোধ’ করে ফেললেন আফ্রিদি, তিনিও যে আউট হয়েছিলেন ওই মিরাজের বলেই। ফরহাদ রেজাকে বোল্ড করেছেন সাদ্দাম, আর শুরুর মতো শেষটাও করেছেন রনি, হোসেনকে বোল্ড করে।
এর আগে টস হারা ঢাকার ব্যাটিংয়ের চিত্রটা বর্ণনা করা যায় ড্যারেন স্যামিকে দিয়েই। রাজশাহী অধিনায়কের চেহারাটাই বলে দিচ্ছিল সব। ক্যাচের পরও উদযাপনে বাধা দিচ্ছিলেন নিজ ফিল্ডারদেরই, যেতে বলছিলেন নিজ নিজ জায়গায়। রাজশাহী কিংসের ফিল্ডারদের হাতে এদিন পিচ্ছিল কিছু আটকেছিল, আটকাচ্ছিল না শুধু বলটাই। এক মুমিনুলই দুইটি লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দিলেন, স্যামিট প্যাটেল ফেললেন আরেকটি। কাইরন পোলার্ড দুইটি জীবন পেয়ে করলেন ফিফটি, ১১ থেকে ১৫, এই ৫ ওভারে ৩১ রান তুলেও ঢাকা ডায়নামাইটস পেরিয়ে গেল ২০০।
শুরু করেছিলেন এভিন লুইস ও শহীদ আফ্রিদি। ৪ ওভারে ৫৩ রানের ঝড়টা একটু থামিয়ে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাকে অযাচিত পুল করতে গিয়ে বোল্ড আফ্রিদি। তবে পরের ওভারে এসে মিরাজ দেখালেন রাজশাহীর বোলিং ইনিংসের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যটা। জহুরুল ইসলামকে বোল্ড করলেন লেগব্রেকে, হতভম্ব জহুরুল বুঝতে পারেননি কিছুই!
১০ম ওভারের শেষ বলে হোসেন আলির বলে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিলেন লুইস, এর আগে নাদিফ চৌধুরির মিস করা ক্যাচের দায়মোচন করলেন মুমিনুল। পরের বলেই হাবিবুর রহমান পেলেন প্রথম সাফল্য, তার আর্মারের সঙ্গে নাদিফের ‘ব্রেন-ফেড’-এর দায়ও অবশ্য কম না সেখানে। সামিট প্যাটেল বোলিংয়ে এসেই সফল, সাকিব ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ আরেকবার।
পোলার্ড এলেন, এলেন সাঙ্গাকারা। রাজশাহীর বোলার-ফিল্ডাররাও যেন পণ করলেন, ২০০ করিয়েই ছাড়বেন! পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে লেগস্টাম্প দিয়ে একের পর এক বল, পোলার্ড তার ফায়দা তুলতে ভুল করেননি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৫০০তম ছয় ছাড়াও এদিন মেরেছেন আরও দুইটি ছয়। সাঙ্গাকারা কাভার ড্রাইভ ছাড়াও খেলেছেন উদ্ভাবনী শট, যেন কোদাল দিয়ে কোপ মেরেছেন কাদায়! ব্যাটটা কোদাল, বলটা কাদা!
এরকম কাদামাটিতেই বারবার পা আটকে গেছে রাজশাহীর ফিল্ডার আর বোলারদের। ড্যারেন স্যামি তো রাগ করছিলেন, ফরহাদ রেজা হাসছিলেন শুধু!
সেই শুষ্ক হাসিটাও মিলিয়ে গেছে ম্যাচের পর। যে হাসিটা ফুটেছে সাকিবদের মুখে।