• ফুটবল

আমি কেন রিয়াল মাদ্রিদ সাপোর্ট করি?

পোস্টটি ৫৭৭৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

2002_FIFA_World_Cup_logo.svg

 

সাল ২০০২। বয়স ৮ চলছে। ফুটবলের কিছুই বুঝি না কিন্তু পরিবার ফুটবল পাগল (আসলে ব্রাজিল পাগল) তাই ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা প্রচুর। পাগলামির একটা উদাহরণ দেই ১৯৯৮ রাতে মনে আছে বাবা বাজি এনে রেখেছিল। কিন্তু তা আর ওই রাতে ফোটানো হয়নি (পরে জেনেছিলাম ওটা ফাইনালের রাত ছিল)। যাই হোক তো ২০০২ এ বিশ্বকাপের জন্য স্বভাবতই বাসায় বেশ উত্তাপ। আমিও ব্রাজিলের সাপোর্টার কিছু না বুঝেই। ব্রাজিল জিতে গেল বিশ্বকাপ আর বেশি গোল করল রোনালদো। আর কাউকে চিনি আর না চিনি ওই আধটেকো রোনালদোকে ঠিকই চিনে গিয়েছিলাম। পরে খবরের কাগজে দেখলাম সে রিয়াল মাদ্রিদে খেলে। ব্যস হয়ে গেলাম মাদ্রিদ সমর্থক!! এতই পাকা ফুটবলভক্ত ছিলাম যে আর্সেনাল আর বার্সেলোনা নাম দুইটা প্রায়ই উল্টাপাল্টা হয়ে যেত :p । ব্রাজিলের প্রতি আবেগটা পরিবারের কারণে আগেই রক্তে মিশে গিয়েছিল আর সাথে সাথে সাফল্য দেখা মানে বিশ্বকাপ জয় ফলে মনেপ্রানে আমি ব্রাজিল আর সাথে নায়ক রোনালদোর ভক্ত। সেই রোনালদোর কারনেই রিয়ালের ভক্ত। খুঁজতাম প্রায় খবরের কাগজে কিছু আছে কিনা! সেই থেকেই খেলার কিছু না বুঝেই আমি বড় আবেগী রিয়ালের সমর্থক হয়ে গেলাম।

 

 ronaldo-2002_1qq6b6c1hm3c015o5zpofer5eq

 

পরে ধীরে ধীরে খেলা দেখা ও বুঝা শুরু করলাম। সবাই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু করল। কি রিয়াল, কি ব্রাজিল! ২০১০ বিশ্বকাপ পরবর্তী সময় থেকেই রাত জেগে খেলা দেখা নিয়মিতভাবে শুরু করলাম (এর আগে বিশ্বকাপ ছাড়া হাতেগোনা ক্লাব ফুটবল ম্যাচ দেখার সুযোগ হয়েছিল)। হারতেই দেখতাম শুধু মাদ্রিদকে। বারবার ব্যর্থতা। প্রতিনিয়ত নতুন কোচ, নতুন প্লেয়ার কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। অন্যদিকে রাইভাল বার্সার আধিপত্য। শুধু আধিপত্য না, ভয়াবহ আধিপত্য! কিন্তু কখনই মুখ ফিরিয়ে নিতে মন চায়নি। প্রতিনিয়ত হারছিলাম বার্সার বিপক্ষে তাও বড় বড় ব্যবধানে। কিন্তু কখনই মনের অজান্তেও ভাবিনি আর রিয়াল মাদ্রিদ নয়। এরপর মরিনহো আসল যিনি কিনা বার্সাকে আটকে দিতে পারেন আর অনেক শিরোপা জিততে পারেন বলে বিখ্যাত! শুরু হলে ঘুরে দাঁড়ানো। পর পর তিনবার সেমি হারলাম। মনে আছে বায়ার্নের কাছে সেমিতে হেরে মনে বিশাল দুঃখ নিয়ে এইচ এস সি দিতে গেছিলাম। পরে জিতলাম লীগ। মরিনহো চলে গেল। আঞ্চেলোত্তি আনলেন বহু আরাধনার লা ডেসিমা ২০১৪ তে! সৌভাগ্যক্রমে মাদ্রিদ ডার্বি সেবার জিতিয়ে এনেছিল রামোসরা। হেরে যাচ্ছিলামই তো কিন্তু কিভাবে যেন লিসবনে ৯২.৪৮ মিনিটে গোল হয়ে অতিরিক্ত সময়ে চলে গেল খেলাটি! কিভাবে কিভাবে আরও ৩ গোল দিয়ে জিতে গেলাম আমরা!

 

 Satellite (1)

 

ভেবেছিলাম খারাপ দিন চলে যাচ্ছে কিন্তু আসলে যায়নি। যাবে কিনা জানিও না! পেরেজের নিয়মিত কোচ পরিবর্তন, দরকারি জায়গায় খেলোয়ার না কিনে মূল্যবান খেলোয়াড় বেচে অন্য খেলোয়াড় কিনা, দীর্ঘমেয়াদি কোন চিন্তা না করা সবই আমাকে হতাশ করে কিন্তু তবুও আমি এই ক্লাবকে নিয়েই স্বপ্ন দেখি। মৌসুম শুরু করি ট্রেবলের স্বপ্ন নিয়ে শেষ করি মৌসুমের ভুল গুলো খুঁজে আর নতুন স্বপ্ন দেখে। এই চক্রেই আটকে আছি সেই থেকে।

 

 real-madrid-logo-sport-hd-wallpaper-2560x1600-4606

 

জানিনা এবার ১১তম শিরোপা আনতে জিদান পারবে কিনা, আদৌ ভবিষ্যতে ভালো কিছু আসবে কিনা কিংবা জীবদ্দশায় কখনও রিয়াল অধ্যুষিত সময় দেখব কিনা। কিন্তু এটুকু বিশ্বাস আছে ফল যাই আসুক না কেন খেলোয়াড়রা সব সময় সেরাটাই দিবে। আর সাথে এটাও জানি যতদিন বাঁচব একজন প্রকৃত মাদ্রিদিস্তা হিসেবে বুক উঁচিয়ে নিজের পরিচয় দিব।