• ফুটবল

মেসি-রোনালদো, এবার হবে তো? : শেষ পর্ব

পোস্টটি ৮২৫০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ যখন দ্বারপ্রান্তে, তখন মেসি রোনালদো তাদের ক্যারিয়ারের মধ্যাহ্নে। আরও পরিপক্ব, আরও অভিজ্ঞ। নিজেদের ক্লাবের হয়ে বিশ্ব ফুটবলকে নিজেদের গোলাম করে ফেলেছে তো কত আগেই। কিন্তু দেশের ব্যাটনটা নিয়ে শেষ প্রান্তে যাওয়া এখনো বাকি। 

 

মধ্যাহ্ন

ব্রাজিলে যখন যাচ্ছে মেসি রোনালদো, তখন মেসির ঝুলিতে ৪টি ব্যালন ডি অর আর রোনালদোর জন্য সংখ্যাটি ৩। এর মাঝে আবার ২০১৩, ২০১৪ টানা দুবার জিতেছে রোনালদো। তাই দলে ভারসাম্য খুব বেশি না থাকলেও রোনালদো জাদুর জন্য অন্য সবার থেকে এগিয়ে পর্তুগাল। কিন্তু গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে জার্মানীর সাথে দলের অভিজ্ঞ এক খেলোয়াড়ের বোকামির জন্য ৩৭ মিনিটে ১০ জনের হয়ে যাওয়া পর্তুগাল আর পুরো ম্যাচে ফিরতে পারেনি। আমেরিকার বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে আর ঘানার বিপক্ষে শেষ মুহুর্তে রোনালদোর গোলে ২-১ গোলে জিতে পরের রাউন্ডে যাওয়ার প্রয়োজনীয় পয়েন্ট পায় রোনালদোরা। কিন্তু পেপের সেই ভুলে জার্মানীর কাছে ৪-০ গোলের পরাজয়ের জন্য যে গোল পার্থক্য হয় তা আর পার করতে পারেনি পর্তুগীজরা। তাই তো ঘানার বিপক্ষে ৮০ মিনিটে গোল এনে দেওয়া রোনালদোও কোন সেলিব্রেশন ছাড়াই শেষ করে বিশ্বকাপ। আবারো দেখিয়ে দেয় পর্তুগাল নিজেরা কিভাবে নিজেদের ফুটবলের সর্বনাশ করতে হয়।

২০১১ সালের ব্যর্থতার পরে নতুন ম্যানেজার আলেকজান্দ্রো সাবেলার অধীনে ক্যাপ্টেন মেসির ছায়াতলে আর্জেন্টিনা ২০১৪ বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে। গ্রুপের প্রথম তিন ম্যাচে বসনিয়াকে ২-১, ইরানকে ১-০ আর নাইজেরিয়াকে ৩-২ গোলে হারানো আর্জেন্টিনা নতুন ম্যানেজারের নতুন দর্শনে মেসিকে কেন্দ্র করে দৃষ্টিনন্দন না, কিন্তু জিতে আসার মত ফুটবল দর্শকদের উপহার দেয়। প্রতি ম্যাচেরই স্কোরশিটে মেসি আর প্রতি ম্যাচেই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ মেসি। বিশেষ করে ইরানের বিপক্ষে মেসির ১১ জনকে সামনে রেখে দেওয়া গোলটি তো এখনো আর্জেন্টিনার জার্সি গাঁয়ে মেসির প্রতীক। আর্জেন্টিনা যা চেয়েছিল এবার তাই দিতে পারছিল সাবেলা আর তার অধিনায়ক মেসি। দ্বিতীয় পর্বে ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে সুইজারল্যান্ড, কোয়ার্টার ফাইনালে হিগুয়াইনের একমাত্র গোলে বেলজিয়াম আর সেমিফাইনালে পেনাল্টিতে নেদারল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বজয় থেকে যখন শুধুমাত্র এক ফাইনাল দূরে, তখন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে সেমিফাইনালে ৭-১ গোলে উড়ানো জার্মানরা আর্জেন্টিনার সামনে।

মারাকানায় ফাইনালের শুরুতে আর্জেন্টিনাই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় আর তাই সুযোগও পেয়ে যায়। যে ক্রুসের পাস বিশ্বনন্দিত তারই ব্যাকপাস থেকে বল পেয়ে যায় হিগুয়াইন। সামনে শুধুমাত্র ন্যুয়ারকে পেয়েও পারল না বল জালে দিতে। আর্জেন্টিনা কিংবা মেসিও পারে নাই আর এমন সুযোগ আনতে। বরং মুহুর্মুহু জার্মান আক্রমণ আর্জেন্টিনার রক্ষণ আর গোলপোস্টে বাঁধা পেয়ে ফিরে না আসলে অতিরিক্ত সময়ে খেলা যেত না। যখন মনে হচ্ছিল প্যানাল্টি ছাড়া আর সুযোগ নেই তখনই ম্যাচ শেষ হওয়ার ৭ মিনিট আগে বদলি খেলোয়াড় মারিও গোটজে তার জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গোল দিয়ে আবারো ব্যর্থতার সাগরে নিমজ্জিত করে দেয় মেসিসহ সমগ্র আর্জেন্টিনাকে।

টুর্নামেন্ট শেষে মেসি পেল বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা, হাতে উঠল গোল্ডেন বল। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে তার অবদান সমগ্র আর্জেন্টিনা এমনকি মেসির কাছেও যথেষ্ট ছিল না। কারণ দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেই বিশ্বসেরার মুকুট যে ঘরে এল না। হতে পারে সে বিশ্বসেরা, কিন্তু সে তো আর্জেন্টিনার সেরা নয়।

 

Lionel-Messi-2014-world-cup-final

 

২০১৫ সালের জুনে আবার মেসির সামনে সুযোগ চিলির কোপা আমেরিকাতে। বিশ্বকাপ যেহেতু এত কাছে থেকে চলে গেছে তাই আর্জেন্টাইনদের বিশ্বাস এবার তাদের মেসি শিরোপা আনবে। নতুন ম্যানেজার টাটা মার্টিনোর অধীনে উঠানামার মাধ্যমে যাত্রা শুরু আর্জেন্টিনার। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে শুরু করে ২-২ গোলের ড্র, উরুগুয়েকে ১-০ আর জামাইকাকে ১-০ গোলে হারানো আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনালে সামনে পড়ে কলম্বিয়ার। সেখানে পেনাল্টিতে জিতে সেমিতে প্যারাগুয়েকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে আসে চিলির সামনে। ফাইনালে পেনাল্টি শ্যুট আউটে মেসি পেরেছিল বলকে গন্তব্যে পাঠাতে কিন্তু পারেনি হিগুয়াইন, পারেনি বানেগা। ফলাফল আবারো একই। পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র ১ গোল করে আবারো পুরনো রূপে জাতীয় দলে মেসি। প্রায় এক শতাব্দী পরে বড় কোন শিরোপা জিতল চিলি। আর মেসির স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।



অপরাহ্ণ

মেসিকে আবারো ফুটবল দেবতা সুযোগ দেয় পরের বছরই। ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকা সেন্টেনারিও অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকায়। সেখানে চিলি, পানামা আর বলিভিয়াকে হারিয়ে পরের পর্বে যায় আর্জেন্টিনা। পানামার বিপক্ষে মেসির হ্যাট্রিক আবার আশা দিচ্ছিল সমর্থকদের। কোয়ার্টারে ভেনিজুয়েলাকে ৪-১, সেমিতে আমেরিকাকে ৪-০ গোলে হারানো আর্জেন্টিনার ফাইনাল জেতা এবার সময়ের দাবি। ৫ গোল দিয়ে টুর্নামেন্টকে নিজের করে নেওয়ার ইঙ্গিতও মেসির। গোল মিসের মহড়ায় সেবার ফাইনালে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত আর্জেন্টিনাকে আটকে দিল চিলি। তাই আবারো পেনাল্টি। এবার পারল ম্যাসচেরানো, অ্যাগুয়েরো কিন্তু পারল না বিগলিয়া আর পারল না লিওনেল মেসি। আবারো দ্বিতীয় সেরা আর্জেন্টিনা। যে টুর্নামেন্টে মেসিতে হাসে সমগ্র আর্জেন্টিনা সেবার কাঁদায় তার সতীর্থরা, আবার যেবার হাসে সতীর্থদের হাসিতে সেবার কাঁদায় মেসি নিজেই। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!

এদিকে কোপা সেন্টেরিও ফাইনালে মেসিদের হারের দুই সপ্তাহ আগে  ফ্রান্সে ইউরো ২০১৬ তে নিজেদের যাত্রা শুরু করে রোনালদোর পর্তুগাল। প্রথম ম্যাচে নবাগত আইসল্যান্ডের সাথে ১-১ গোলে আর দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রিয়ার সাথে 0-0 গোলের ড্র বলছিল পর্তুগালের কাছে খুব বেশি আশা করাটা অনুচিত। তৃতীয় ম্যাচে হাঙ্গেরি তিনবার এগিয়ে যায় পর্তুগালের সাথে। রোনালদোর এক অ্যাসিস্ট আর দুই গোলে তিনবারই গোল শোধ করে আবারো ড্র করে পর্তুগাল।

আলাদা আলাদা চার ইউরোতে স্কোরশিটে নাম উঠানোসহ ইউরোতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়া রোনালদোর পর্তুগাল গ্রুপ পর্বে কোন জয়ের স্বাদ না পেয়ে তৃতীয় স্থান পায়। আগের কোন ইউরো হলে সেখান থেকে বাড়ির পথেই পা বাড়াতে হত তাদের। তবে নতুন গড়া ২৪ দলের ইউরোর নিয়ম অনুসারে তৃতীয় স্থান পাওয়া প্রথম চার দলের মধ্যে থাকায় পরের রাউন্ডে যাবার সৌভাগ্য হয় রোনালদোদের অপরাজিত অবস্থায়।

স্পেন, তুরস্ক আর চেক রিপাবলিকের সাথে এক গ্রুপে থাকা ক্রোয়েশিয়ার সাথে এবার পর্তুগালের খেলা দ্বিতীয় রাউন্ডে। বেশির ভাগ ফুটবল বোদ্ধারই ভবিষ্যৎবাণী ছিল রোনালদো নির্ভর পর্তুগাল পেরে উঠবে না উদ্যমী ক্রোয়েটদের সাথে। মনে রাখার মত খেলা দুই দলের কেউই দিতে পারেনি। ৯০ মিনিট পার হয়ে আরও ২৮ মিনিট চলে গেছে। সবাই অপেক্ষা করছে পেনাল্টির। সেই সময় ক্রোয়েশিয়ার বাম উইঙের  এক আক্রমণ থেকে বল কেড়ে নেয় রোনালদো। মাঝখানে থাকা রেনাটো স্যানচেজকে বল পাস দিয়ে একেবারে ডানের লাইন গেসে উপরের দিকে উঠতে থাকে সিয়ারসেভেন। মাঝখানে বল নিয়ে উপরে উঠছে রেনাটো সানচেজ। তার বামে নানি, ডানে কারেশমা, কারেশমার আরও ডানে রোনালদো। বক্সের সামান্য বাইরে থেকে নানির কাছে বল বাড়ায় সানচেজ একেবারে ১৮ গজের কোণায়। ততক্ষণে ক্রোয়েশিয়ান রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে রোনালদো বক্সের ভেতরে ডানে ঢুঁকে গেছে। নানির পাস থেকে গতির উপর বলে শট। টাইট অ্যাঙ্গেল থেকে জোরের উপর শট গোলকিপার ঠেকিয়ে দিলেও হাতবন্দী করতে না পারায় বল পায় কারেশমা। মাথার আলত স্পর্শে বল জালে জড়িয়ে দৌড় দেয় দর্শকদের দিকে রিকার্ডো কারেশমা। সাথে পর্তুগালের স্বস্তি এই রোনালদোই তো তারা চেয়েছিল।

কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের সাথে ম্যাচে মাত্র ২ মিনিটেই লিওয়ানডস্কির গোলে এগিয়ে যায় পোল্যান্ড। কিন্তু মাত্র ৩০ মিনিট পরেই ১৮ বছর বয়সী রেনাটো সানচেজ দলকে এনে দেয় সমতা। এদিন পেনাল্টির আগে পর্যন্ত কোন রোনালদো জাদু দেখা যায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে পেনাল্টিতে জাদু দেখা যায় কিভাবে? দেশের হয়ে প্রথম পেনাল্টি নিতে বল নিয়ে এগিয়ে যায় রোনালদো। এর আগে দলের সবাইকে পেনাল্টি নিয়ে উৎসাহ দিতে থাকে রোনালদো। বিশেষ করে পেনাল্টি নিয়ে খুবই ভয়ে ছিলেন জাও মুটিনহো। কিন্তু অধিনায়ক কাছে ডেকে কাঁধে হাত দিয়ে কি যেন বলেছিল তাকে। কাপ্তানের সেই অনুপ্রেরণায় সকল ভয়কে জয় করে এগিয়ে যায় পর্তুগাল সেমির পথে।

পর্তুগালের থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে স্বপ্নের ফাইনাল। এখনো ৯০ মিনিটে কোন দলকে হারাতে না পারা রোনালদোর এবারের প্রতিপক্ষ তারই রিয়াল মাদ্রিদের তারকা সতীর্থ গ্যারেথ বেলের ওয়েলস। রোনালদোর আকাশ ছোঁয়া লাফ থেকে হেডে ৫০ মিনিটে প্রথম গোল। তিন মিনিটের মাঝে আবারো রোনালদোর পাস থেকে নানির গোল। পর্তুগীজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পর্তুগালের হয়ে জ্বলছে।

ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ফ্রান্স। স্বপ্নের শিরোপার পথে পায়েট, জিরু, পগবা, গ্রিজমেনরা উড়িয়ে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড, আলবানিয়া, রোমানিয়া, আয়ারল্যান্ড, টুর্নামেন্টের চমক আইসল্যান্ড আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানীকে। মাত্র ৯০ মিনিট দূরে ইউরোপ সেরা হওয়ার স্বাদ এ নতুন তারাদের।

দুই দলই খুব সাবধানে শুরু করে ফাইনাল। ভাগ্যদেবীর কৃপায় ফ্রান্স ম্যাচের প্রথম সুবিধাটা পায় ম্যাচের বয়স যখন মাত্র ৮ মিনিট। দূর থেকে দৌড়ে আসা পায়েট রোনালদোর পা থেকে বল নিতে চার্জ করে রোনালদোকে। ব্যথা পেয়ে মাঠে পড়ে যায় ক্রিশ্চিয়ানো। রোনালদোর মত একজন যোদ্ধার মুখের ভাষাই বলে দিচ্ছিল ৩১ বছর বয়সে এসে চোটজর্জরিত শরীর আর পেরে উঠছে না এই ফাউলের পরে। শেষ একটা চেষ্টা দিয়ে মাঠ ছাড়তে হল রোনালদোকে। সেদিন রোনালদোর চোখের জলে মন কাঁদেনি এমন কোন ফুটবল ভক্ত খুঁজে পাওয়া বড় দুষ্কর।

 

Cristiano-Ronaldo-688097

 

আবেগ দূরে সরিয়ে রেখে রেফারির বাঁশিতে আবার খেলা শুরু করল রোনালদোবিহীন পর্তুগাল। ভেতরে না গিয়ে সাইডলাইনে কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের পাশে দাঁড়াল খোঁড়া রোনালদো। যেভাবে পারা যায়, যতভাবে পারা যায় সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে দেশের জন্য গলা ফাটানো শুরু করল সিয়ারসেভেন। ম্যাচের ১০৯ মিনিটে চমক দেখিয়ে এডেরের গোলে এগিয়ে যায় পর্তুগাল। ফ্রান্স মরিয়া হয়েও শেষ পর্যন্ত গোল শোধ দিতে পারে না। ১২০ মিনিট শেষে রেফারির বাঁশির সাথে সাথে ইতিহাসে নাম লেখায় রোনালদোর পর্তুগাল কিন্তু সেখানে ইঞ্জুরির কারণে নাম উঠে না পর্তুগালের রোনালদোর। সে ছিল, পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে সে দেখিয়েছিল কিন্তু ছিল না ফাইনালে, পারেনি নিজের শেষ তুলির আঁচড়টা নিজের মত দিতে।



সায়াহ্ন ও স্বপ্ন

ভিন্ন দেশ, ভিন্ন টুর্নামেন্ট, ভিন্ন সঙ্গী, ভিন্ন খেলার ধরণ নিয়ে পথচলা মেসি আর রোনালদোর এই ২০১৬ পর্যন্ত একটাই মিল ছিল, দেশের জার্সি গাঁয়ে ফাঁকা ট্রফি ক্যাবিনেট। এক দশক ধরে গোটা বিশ্বকে নিজেদের জাদুতে মোহিত করে রাখা এই দুজনের নামের সাথে যা আসলেই যায় না। ২০১৬ সালেই এই একমাত্র মিলকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় রোনালদো কিন্তু দ্বিতীয় সেরা হয়ে থেকে যায় মেসি সেই একই স্থানে।

আতশ কাচের নীচে পরিসংখ্যান রেখে ফুটবলারদের বিশ্লেষণ করা দর্শকদের কাছে বিশ্বকাপ না জেতা খেলোয়াড়দের মূল্য কখনোই বিশ্ববিজেতাদের সমান হয় না। কালের পরিক্রমায় সময়ও চলে গেছে অনেক। সেই ২০০৩ সালে অভিষিক্ত রোনালদোর বয়স আজ ৩৩ আর ২০০৫ সালে অভিষিক্ত মেসির বয়স ৩০। যে গতিতে তারা এখনো ছুটছে তাতে তারা থামবে কবে বা কোথায় তা বলা এখনো অসম্ভব। কিন্তু স্রোতস্বিনী নদীরও যেমন এক সময় স্রোত হারিয়ে যায় তেমনি ফুটবলারদেরও একসময় নিজের বয়সের কাছে হার মানতে হয়। অতি অসাধারণ কিছু না হলে রাশিয়া বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে দুজনের একসাথে শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।

দুজনের সর্বশেষ আন্তজার্তিক টুর্নামেন্ট দুইজনকেই দুই ভিন্ন অনুপ্রেরণা দিয়ে নিয়ে এসেছে রাশিয়ায়। একজনের যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে তা ধরে রাখার আর অপরজনের যে স্বপ্ন এখনো ধরা হয়নি সে স্বপ্নকে ধরার। এই প্রথমবারের মত আধুনিক ফুটবলের সবচেয়ে উজ্জ্বল দুই তারা মনে হয় শেষবারের মত একই সাথে, একই আশা, একই ক্ষুধা নিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ায়, জেতার ক্ষুধা, শিরোপার আশা।

 

untitled-collage-24