• ফুটবল

খেলাচিত্র -১: ফিভার পিচ

পোস্টটি ১৮৩৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

51W652B1A1L

মুক্তিসালঃ ১৯৯৭

পরিচালকঃ ডেভিড ইভান্স

অভিনয়েঃ কলিন ফার্থ, রুথ গেমেল, মার্ক স্ট্রং

 

আপনি যদি চরম মাত্রার ফুটবল ফ্যান হয়ে থাকেন, আর আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা যদি হয় ঠিক আপনার উল্টো স্বভাবের, অর্থাৎ ফুটবল পছন্দ করেন না মোটেই; তবে এই স্পোর্টস-কমেডি ঘরানার চলচ্চিত্রটির সাথে আপনার জীবনের কিছুটা হলেও মিল খুঁজে পাবেন। আর যদি হয়ে থাকেন, আর্সেনাল ভক্ত, তবে এই চলচ্চিত্র না দেখা মহাপাপের শামিল। তবে যে কোন ফুটবল ফ্যানেরই এই চলচ্চিত্র একবার দেখা উচিৎ।

বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক নিক হর্নবি-র বেস্ট সেলার আত্নজীবনী ‘‘ফিভার পিচঃ আ ফ্যান’স লাইফ (১৯৯২)’’ –কে উপজীব্য করে গড়ে ওঠা চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য লিখেছেন স্বয়ং নিক হর্নবি। নিক হর্নবির আদলে গড়ে ওঠা মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্কার জয়ী ব্রিটিশ তারকা কলিন ফার্থ, সাথে আছেন ‘ডাউনটন অ্যাবে’ খ্যাত রুথ গেমেল।

চলচ্চিত্রটির ট্যাগলাইন – ‘‘Life gets complicated when you love one woman and worship eleven men’’ দেখেই বোঝা যায়, প্রেম আর ফুটবলের সম্পর্কটা কখনো কখনো কতটা জটিল হয়ে দাঁড়ায়! এবার আর দেরী নয়, সংক্ষেপে কাহিনীতে চোখ বুলানো যাক!

 

কাহিনী সংক্ষেপঃ

 

বিচ্ছিন্ন পরিবারের সন্তান পল অ্যাশওয়ার্থ। মায়ের সাথে একমাত্র বোনকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকে পল। শুধু উইকএন্ডে বাবার সাথে কোন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে দুই ভাইবোন।

এই একঘেয়ে উইকএন্ড কাটাতে কাটাতে বিরক্ত পলের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে মরিয়া মিঃ অ্যাশওয়ার্থ ১৯৬৮ সালের এক রবিবার নিজের প্রিয় দল আর্সেনালের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে নিয়ে যান।

সেখানেই ঘটে ম্যাজিক!

ফুটবল খুব একটা পছন্দ না করা পল প্রথমবার খেলা দেখতে এসেই ফুটবলের ভক্ত হয়ে যায়। শৈশবেই বাবার সমর্থন করা দল আর্সেনালের অন্ধভক্ত হয়ে ওঠে পল। ফুটবলই হয়ে ওঠে তার জীবন।

বড় হয়ে উত্তর লন্ডনের স্থানীয় স্কুলে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করতে শুরু করে পল (কলিন ফার্থ)। একই সাথে ফুটবল প্রেম ধরে রেখে স্কুলের ফুটবল টিমের কোচও বটে। আর্সেনাল আর ফুটবলকে সমার্থক ভাবা পল খেলার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে না বলে ‘হেড টিচার’ নামের আকর্ষণীয় বেতন ও সম্মানের পদের প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে নির্দ্বিধায়। তার প্রিয় বন্ধু এবং আর্সেনাল ফ্যান স্টিভও (মার্ক স্ট্রং) তাকে সমর্থন দেয় এই সিদ্ধান্তে।

সেসময় পরিচয় হয় নতুন সহকর্মী সারাহ হিউজেসের (রুথ গেমেল) সাথে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় এবং ভিন্ন ধারার শিক্ষক পল আর বদমেজাজী সারাহর অম্ল-মধুর সম্পর্ক এক সময় রূপ নেয় প্রণয়ে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সংঘর্ষ বাঁধে পলের ফুটবল পাগল মানসিকতা আর প্রিয় দল আর্সেনালের প্রতি ভালোবাসার সাথে ক্যারিয়ারিস্টিক মনোভাবের সারাহর। শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন।

সমর্থন শুরু করার পর পল মাত্র একবারই লীগ জিততে দেখেছে আর্সেনালকে। তাও সেই শৈশবে - ১৯৭০-৭১ মৌসুমে। প্রতিবারই হতাশ হতে হয় তাকে। তারপরও হাইবুরির পুরো মৌসুমের টিকেট কিনতে তার দেরী হয় না। আশায় থাকে সে একদিন আর্সেনাল লীগ শিরোপা জিতবেই।

১৮ বছর আগে শেষ লীগ শিরোপা জেতা আর্সেনালের ফ্যান পলের জীবনে ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমটা অন্যরকম তাৎপর্য নিয়ে আসে। মৌসুম জুড়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানের জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করা লিভারপুল আর আর্সেনাল পরস্পরের মুখোমুখি হয় মৌসুমের শেষ গেমে।

২৬ মে, ১৯৮৯ – আর্সেনাল বনাম লিভারপুল – অল রেডদের হোম ভেন্যু অ্যানফিল্ডে নির্ধারিত হবে শিরোপা।

৩ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা লিভারপুলের ড্র হলেই যথেষ্ট, ১ গোলে হারলেও সমস্যা হবে না আর আর্সেনালের জয় তো লাগবেই, তাও কমপক্ষে ২ গোলের ব্যবধানে! তবেই দেখা মিলবে শিরোপার।

কে জিতবে? অবশেষে পল কি নিজের প্রিয় দলকে আবার লীগ চ্যাম্পিয়ন হতে দেখবে? নিজেদের ভুল বোঝাবুঝি দূর করে আবার কি জোড়া লাগবে পল-সারাহর সম্পর্ক?

জানার জন্য দেখে ফেলতে পারেন কমেডি, প্রেম, ফুটবল, রোমান্স – সবকিছুই পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা এই ১০২ মিনিটের চলচ্চিত্রটি ‘ফিভার পিচ’ নামের চলচ্চিত্রটি।

 93474_full

 

রিভিউঃ

রিলেশনশিপ আর ফুটবল নিয়ে নানারকম ট্রল পোস্ট দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেগুলোর সাথে ভালভাবেই মিলে যাবে বেশ কিছু দৃশ্য।

কলিন ফার্থ, রুথ গেমেল, মার্ক স্ট্রং – এদের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কারোরই প্রশ্ন থাকা উচিৎ না। বেশ ভালভাবেই নিজেদের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন ৩ জনই; বিশেষ করে ফুটবল ফ্যানাটিক চরিত্রের কলিন ফার্থ।

চলচ্চিত্রটির সংগীত আয়োজন করেছেন নেইল ম্যাককোল এবং বু হাওয়ার্ডিন। বেশ ভালভাবেই নিজেদের কাজটা সেরেছেন দুজন। চমৎকার লেগেছে।

ছোট্ট করে রিভিউ দিলাম। একেকজনের কাছে একেকরকম লাগতেই পারে একটি চলচ্চিত্র।

তবে যদি উপভোগ করার জন্য দেখতে চান, নিঃসঙ্কোচে দেখে ফেলতে পারেন।

 

টীকাঃ

 

* একই বইকে ভিত্তি করে ২০০৫ সালে আমেরিকায় মুক্তি পায় ‘ফিভার পিচ’ নামের আরেকটি চলচ্চিত্র। নামের জটিলতা দূর করার জন্য যুক্তরাজ্যে ‘দ্যা পারফেক্ট ক্যাচ’ নামে মুক্তি দেওয়া হয় রিমেকটি। রিমেকে আর্সেনালের স্থানে দেখা যায়, ২০০৪ সালের ওয়ার্ল্ড সিরিজ জয়ী বেসবল দল বোস্টন রেড সক্সকে। ২০০৫ সালের চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য না লিখলেও প্রযোজক হিসেবে ছিলেন নিক হর্নবি।

* যুক্তরাজ্যে এক মিলিয়ন কপির চেয়েও বেশি বিক্রি হওয়া ‘ফিভার পিচঃ আ ফ্যান’স লাইফ’ বইটি ২০০৫-০৬ মৌসুমে আর্সেনালের প্রাক্তন হোমগ্রাউন্ড হাইবুরি স্টেডিয়ামের প্রতি সম্মান জানিয়ে বানানো স্পেশাল ‘আর্সেনাল মেম্বারশিপ প্যাক’ – এর অন্তর্ভুক্ত হয়।

* খেলাধুলা বিষয়ক বইয়ের উপর প্রদান করা প্রেস্টিজিয়াস অ্যাওয়ার্ড ‘উইলিয়াম হিল স্পোর্টস বুক অফ দ্যা ইয়ার – ১৯৯২’ –এ ভূষিত হয় নিক হর্নবির রচিত প্রথম বইটি।

* ফেভার পিচ (১৯৯৭) চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে ক্যামিও রোলে অভিনয় করেছেন ব্রুকলিন (২০১৫) চলচ্চিত্রের জন্য ‘মূল চিত্রনাট্য’ বিভাগে অস্কার নমিনেশন পাওয়া নিক হর্নবি নিজেও।

* প্রখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবল কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের ক্ষুদ্র তালিকাতেও স্থান করে নিয়েছে ফিভার পিচ