• ফুটবল

শতবর্ষী কোপার শিরোপা মেসির হাতেই উঠছে...

পোস্টটি ১৮৬৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

এক.

আমি জ্যোতিষী না । জটিল, গরল জ্যোতিষ শাস্ত্রে পান্ডিত্য তো দূরের, আগ্রহও নেই । তাহলে শিরোনামে ভবিষ্যদ্বাণী'র ছোঁয়া কেন ? আসলে এটাকে ভবিষ্যদ্বাণী না বলে, বলতে পারেন কঠিন এক সমর্থকের ভীষণ ভীষণ চাওয়া কিংবা কামনা ।

 

দানে দানে তিন দান ।

 

দুই.

সাল ২০১৪, ব্রাজিল বিশ্বকাপ ।

রোযার মাস, সংযমের মাস চলছে । আমাদের আড্ডাগুলোয় যখন আর্জেন্টিনা-মেসি চলে আসে, তখন কথায় আর কোন সংযম থাকে না । একপক্ষ পারলে তখনই মেসি-আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেন । আর আরেক পক্ষ মানে আমাদের মতো সমর্থকেরা তো পারছেন না কেবল সোনার বিশ্বকাপ ট্রফিটা মেসির হাতে তুলে দিতে, বাকী যা করার সব করছেন ।

জার্মানীর সাথে ফাইনাল । লড়াইটা চলল অনেকক্ষণ, পৌনে দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেছে । মানসিক ভাবে ট্রাইবেকারের প্রস্তুতি তখন আমাদের মধ্যে । সেমি ফাইনালের নেদারল্যান্ড-ম্যাচের পুনরাবৃত্তির আশায় আশান্বিত আমরা, রোমেরো বীরত্বের জন্য আবারো তাকিয়ে ।

কিন্তু অতক্ষণ তাকিয়ে তাকতে দিল না, গোটজে নামের ছটফটে প্রাণোচ্ছল এক জার্মান তরুণ । ক্রুসের দুর্দান্ত পাস থেকে গোটজের ‘অসাধারণ’ ফিনিশে চোখের পলকে রোমেরোকে ফাঁকি দিয়ে গোল বলটার ঠিকানা হলো আকাশী-নীলের চতুষ্কোণ জালে । গোওওওল !

গোল তো নয়, যেন হুল ফোটাল আমাদের মতো আর্জেন্টিনা সমর্থকদের বুকে । বিহ্বল দৃষ্টিতে দেখলাম, লোর জার্মানীর বাঁধনহারা উচ্ছাস । জার্মান-যন্ত্রের উছলে উঠা মানবীয় আবেগ !

আর দেখলাম, এই গ্রহের সময়ের শ্রেষ্ঠতম ফুটবলারটির দূর্বোধ্য এক চাহনি ! সেই চাহনিতে হতাশা ছিল নাকি শূণ্যতা ছিল, নাকি ছিল আক্ষেপ ! নাকি অতৃপ্তির হাহাকার ? কিছুই বোঝা গেল না ।

 

 

তিন.

সাল ২০১৫, কোপা আমেরিকা ।

আবারো সংযমের মাসে প্রিয় দল নিয়ে আমাদের অসংযমীয় আচরণ চলছিল পাল্লা দিয়ে । এবার তো আর্জেন্টিনাই জিতবে । ওরা ছাড়া আর কোন দল জেতার মতো আছে নাকি ? আর্জেন্টিনা-বিরোধীরাও তখন মুখ-চোখ বাংলার পাঁচ বানিয়ে বলতে লাগলেন, 'হুঁ, কোপাতেই জিতবা তোমরা । বিশ্বকাপ তো আর জিতলা না' । হোক, কোপা আমেরিকা । মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর তো ! আমরা বড় আশায় বুক বাঁধি, এবার তাহলে আমাদের আর্জেন্টাইন-রাজপুত্র একটা ট্রফি জিততে চলেছে... ।

ফাইনালে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল চিলি । শক্ত প্রতিপক্ষ কিন্তু আমরাই জিতব, এই বিশ্বাস আমাদের মতো সমর্থকদের গভীরে প্রোথিত হয়ে গেছে তখন । খেলা চলতে থাকল । সেহরি শেষ করে, আমরা অপেক্ষায় । এবারের অপেক্ষাটা 'গোটজে' এর মতো কেউ ধুম করে ঘুচিয়ে দিল না । একশ কুড়ি মিনিট পর এলো 'টাইব্রেক' নামক ভাগ্যের খেল ।

আর সেই ভাগ্যের খেলায় শিঁকে ছিঁড়ল, চিলির । আর্জেন্টিনা পারল না, মেসিরা পারলেন না । হিগুয়েন আর্জেন্টিনায় জাতীয় শত্রু হয়েছিলেন কি না, জানি না । তবে বাংলাদেশে জাতীয় শত্রুতে পরিণত হয়ে গেলেন ।

আকাশী-নীলের বেদনায় আবারো নীল হলো আমাদের মতো সমর্থকেরা । ক্ষুধে জাদুকরের জাদু’র ছোঁয়া পেলো না, লা আলবিসেলেস্তেরা ।

 

চার.

ফুটবল-বিধাতা তাকে দু’হাত ভরে দিয়েছেন । টানা চারবার সহ মোট পাঁচ-পাঁচবার হয়েছেন বিশ্বসেরা ফুটবলার । সাফল্য তাঁর পায়ের তলায় লূটিয়ে পড়েছে পরম আদরের ঐ ফুটবলটির মতোই । তাঁর ক্লাব বার্সালোনা যে গত আট বছর ধরে ইচ্ছেমতো ইউরোপ শাসন করছে, সে তো তাঁর ঐ জাদুকরি 'পা' বলেই । কিন্তু যখন আকাশী সাদা জার্সী গায়ে জড়ান, খেলতে নামেন স্বদেশের হয়ে, কি যেন হয়ে যায় ! গত আট বছরে তাই আর্জেন্টিনার হয়ে কিচ্ছুটি জেতা হয়নি তাঁর ।

কখনো জার্মান-যন্ত্রের মুলার-ক্লোসারা বড় নির্দয় হয়ে ধরা দিয়েছেন । আবার কখনো সতীর্থদের বড্ড ছেলেমানুষী ভুলে 'শিরোপা' জিততে জিততেও জেতা হয়নি তাঁর ।

কি সব সতীর্থ তাঁর ! বছর জুড়ে বিশ্বের শীর্ষ লীগগুলোর শীর্ষ দল মাতিয়ে বেড়ান তাঁরা ! অথচ সে-ই তাঁরাই কি না, গোলকিপার কে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে ভুলে যান । পেনাল্টি শ্যুট আউটে, বল কখনো গোলরক্ষকের হাতে তুলে দেন তো কখনো দূর আকাশ পানে উড়িয়ে মারেন বলটিকে ।

তাই বিহ্বল নেত্রে, শূণ্য হস্তেই আসরগুলো থেকে ফিরে আসেন, সময়ের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার লিওনেল মেসি ।

 

পাঁচ.

সাল ২০১৬, শতবর্ষী কোপা আমেরিকা ।

এবারো সংযমের মাসে মেসিরা পরীক্ষা নিবেন আমাদের সংযমের, ধৈর্য্যের । সারাদিন রোযা আর ভোর রাতে ফুটবল শিল্প, এই নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ।

 

গত দু’বার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে আমরা বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি, যখন ভোরের আকাশ ফর্সা হওয়ার পথে । এবারে হয়তো ফাইনালটাই হবে সূর্যোদয়ের পর । সত্যিকারের সংযমের পরীক্ষাই বুঝি দিতে হবে এবার ।

রোযা রেখেছো বাছা, হিগুয়েনকে উল্টো পাল্টা বকো না ! না, এত জোরে চিৎকার দেয়া চলবে না । মুখটাকে সামলাও, কি যা তা বলছো !

আসলেই আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জন্য এই সংযমের মাসে কঠিন পরীক্ষাই হয়তো অপেক্ষা করছে ।

বন্ধুদের আড্ডায় রসিকতা করে সেদিনও বলেছি, এবার কোপা তো জিতবেই । আগামী বছরের কনফেডারেশন কাপ আর পরের বছরের বিশ্বকাপ দুটোই মেসির হাতেই উঠবে । দেখে নিয়ো... ।

কেউ হেসেছে কেউ 'রসিকতা' ভেবে উড়িয়ে দিয়েছে আর কেউ বা হয়তো মনে মনে বলেছে, তোমার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক ।

থাক, অতদূর না-হয় বাদই দিলাম । সত্যিই মন বলছে, এবার শতবর্ষী ট্রফিটা মেসিই পাবেন । আর্জেন্টিনাই জিতবে । দীর্ঘ অপেক্ষা কিছুটা হলেও ঘুচবে আর্জেন্টাইন-রাজপুত্রের ।

গত দু’বারই ফুটবল বিধাতা তাকে খুব কাছ থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন । মনে হয় না, এবারও তিনি তাকে নত মস্তকে, উদাস-পুরুষ করে মাঠ থেকে বের করে আনবেন !

 

জ্বী হ্যাঁ, দানে দানে তিন দান । তাই তো হওয়ার কথা । হবে না ?