• ফুটবল

“জাতীয় কলঙ্ক” থেকে “জাতীয় বীর”

পোস্টটি ১৪৪৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আগের বিশ্বকাপের ২য় সেরা খেলোয়াড় হয়ে সিলভার বল জেতা ফুটবলারটিকে যখন পরের বিশ্বকাপের দলে নেয়া হল, তখন এই সিদ্ধান্তে খুশি হবার বদলে ইতালিতে প্রতিবাদ ও বিতর্ক শুরু হয়ে গেল।কারণ এই ফুটবলারটি এখন জাতীয় কলঙ্ক ! ম্যাচ ফিক্সিং এর অভিযোগে এই ফুটবলারটি ২ বছর নিষিদ্ধ ছিলেন,কিছুদিন জেলেও থাকতে হয়েছে তাকে।তাই ১৯৮২ বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সময় ইতালি কোচ এঞ্জো বিয়ারজোত যখন সেই মৌসুম এ “সিরি আ” সর্বোচ্চ গোলস্কোরার রবার্তো প্রজ্জোকে না রেখে সেই “জাতীয় কলঙ্ক” পাওলো রসি কে দলে রাখলেন তখন অনেকেই  অবাক হয়েছিলেন।

১ম রাউন্ডে কোন ম্যাচই জিততে পারলো না ইতালি, ৩ টি ম্যাচই ড্র করে গ্রুপ এ ২য় হয়ে ভাগ্যক্রমে ২য় রাউন্ডে যায় তারা।এই ৩ ম্যাচে কোন গোল করতে পারেন নি রসি, মাঠে তাকে মনে হচ্ছিলো একটা ছায়া।তাকে দল থেকে বাদ দেবার জাতীয় দাবি উঠে গিয়েছিল।কিন্তু ইতালি কোচ এঞ্জো বিয়ারজোত এসব কথাকে পাত্তা দেন নি।

২য় রাউন্ডে ইতালির গ্রুপে ছিল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। শুধু  গ্রুপ এর সেরা দলটিই সেমিফাইনালে খেলবে।ইতালি অবশেষে ১ম জয় পায় আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে।তবে এই ম্যাচেও গোল পান নি রসি।একজন স্ট্রাইকার টানা ৪ ম্যাচে গোলশূণ্য! ঐদিকে ব্রাজিল ৩-১ গোলে হারায়  আর্জেন্টিনাকে ও গোলগড়ে এগিয়ে থাকে।ফলে  সেমিফাইনালে উঠতে হলে ইতালিকে জিততে হত ব্রাজিলের সাথে, যেই ব্রাজিল আগের ৪ ম্যাচে ১৩ গোল করেছে !

আগের ৪ ম্যাচে গোল না পাওয়ায়  পাওলো রসির এক বন্ধু তাকে একটা নেকলেস দেন  রসির গোলখরা দূর করার আশায়।

জুলাই ৫, ১৯৮২। বিশ্বকাপের ক্লাসিক এক ম্যাচ হল।আগের ৪ ম্যাচে গোল না পাওয়া রসি ৫ মিনিটের মাথায় হেড করে দলকে এগিয়ে দেন।ব্রাজিল অধিনায়ক সক্রেটিস ১২ মিনিটের সময় গোলটা শোধ করে দেন।এরপর ২৫ মিনিটে রসি আবার গোল করে দলকে এগিয়ে দেন।প্রথমার্ধে ২-১ গোলে  এগিয়ে থাকে ইতালি।এরপর দ্বিতীয়ার্ধের ৬৮ মিনিটের সময় দুর্দান্ত এক গোল করে ফ্যালকাও  ব্রাজিলকে সমতায় আনেন(২-২)।ম্যাচ ড্র থাকলেই ব্রাজিল সেমিফাইনালে চলে যাবে।আবার এগিয়ে আসলেন রসি।৭৪ মিনিটের মাথায় নিজের ও দলের ৩য় গোলটি করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন। ব্রাজিল আর গোল শোধ করতে পারল না। ঐ ৩-২ স্কোরেই ম্যাচ জেতে ইতালি।টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট ব্রাজিলের বিদায় ঘটে যায়- ব্রাজিলের এই দলটিকে অনেকেই বলে থাকেন-বিশ্বকাপ না জেতা সেরা দল !

সেমিফাইনালে পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ইতালি।ঐ নেকলেস পরেই মাঠে নামেন রসি।এবারও ২-০ গোলের জয়ে ইতালির ২টি গোলই করেন পাওলো রসি।১২ বছর পরে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে যায় ইতালি।

ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির মুখোমুখি হয় ইতালি। প্রথমার্ধে পেনাল্টি পেয়ে যায় ইতালি।কিন্তু অ্যান্তনিও কাবরিনি পেনাল্টিটা মিস করেন। প্রথমার্ধ গোলশূণ্য শেষ হয়।দ্বিতীয়ার্ধে আবারও নায়ক রসি।৫৭ মিনিটে তিনি গোল করে ইতালিকে ১-০তে এগিয়ে দেন।এই নিয়ে সর্বশেষ ৩ ম্যাচে  ইতালির টানা ৬টি গোল রসি করলেন।এরপর ৬৯ ও ৮১ মিনিটে তারদেল্লি ও আলতোবেল্লি স্কোরলাইন ৩-০ করে ফেলেন।পরে পশ্চিম জার্মানি ১ গোল শোধ করলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।৩-১ গোলে জিতে ৪৪ বছর পরে আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ইতালি।

Italy-19821-e1459102362345

আর পাওলো রসি? টুর্নামেন্টের  সর্বোচ্চ ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল আর সেই সাথে বিশ্বকাপও জিতলেন।এমনকি ১৯৮২ সালের বিশ্বসেরা ফুটবলার এর পুরস্কারও পান তিনি। মাত্র ৩ ম্যাচ আগেও যে খেলোয়াড়টি ছিলেন “জাতীয় কলঙ্ক”,তিনিই দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর মূল নায়ক!

এখন তিনি ইতালিতে ” জাতীয় বীর ” এর মর্যাদা পান !