• অলিম্পিক

ছোট দেশের অলিম্পিক জয় !

পোস্টটি ১৯৮০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

প্রতিবার অলিম্পিক আসলেই একটা পরিসংখ্যানের দিকে সবার চোখ যায়- ১৬ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ কখনও কোন পদক পায় নি!  পদক না জেতা সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার সেই দেশ অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করা শুরু করে ১৯৮৪ সালে। কিন্তু প্রতিবারই ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে আমাদের খেলোয়াড়রা শুধু অংশগ্রহণ করে ফেরত আসে। অলিম্পিকে আমাদের দেশের ওয়াইল্ড কার্ড ছাড়া সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করা ১ম ব্যক্তি হলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান (২০১৬ সালে)। আর ২য় ব্যক্তি হলেন তীরন্দাজ রোমান সানা- এবারের ২০২০ সালের অলিম্পিকে। অবশ্য  পদকের জন্য এশিয়ান গেমসে শুধু কাবাডি আর কমনওয়েলথ গেমসে শ্যুটিং এর  দিকে তাকিয়ে থাকা দলের অলিম্পিক পদক আশা করাটা একেবারে বাড়াবাড়ি।  সেই সাথে দেশের রুগ্ন ক্রীড়াসংস্কৃতির দিকেও নজর পড়ে। এখানে লেখাপড়ার চেয়ে একটু বেশি সময় খেলাধুলার পেছনে ব্যয় করলে বাবা-মায়েরা সন্তানকে গালমন্দ করেন, ক্ষেত্রবিশেষে মারধর করেন! সেই দেশে খেলাধুলাকে জীবিকা হিসেবে নেওয়া (বিশেষ করে সেই খেলাটার নাম যদি ক্রিকেট না হয়) বিরাট সাহসের কাজ ! তাই খুব দ্রুতই আমাদের  অলিম্পিক পদকের খরা মিটবে-সেই আশা করা আপাতত বাদ দিতে হচ্ছে।

ধান ভানতে গিয়ে অনেক শিবের গীত গাওয়া হলো। এবার আসল কথায় আসা যাক।  কম জনসংখ্যা নিয়ে অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জেতা দেশগুলোর দিকে তাকালে আফসোসটা বেড়ে যায়! সেই দেশগুলোর দিকে তাকানো যাকঃ

বারমুডাঃ

ব্রিটিশ বাবা-মায়ের সন্তান ফ্লোরা ডাফি প্রস্তাব পেয়েছিলেন ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব করার। কিন্তু বারমুডাতে বড় হওয়া ফ্লোরার মন তো পড়ে থাকে বারমুডাতে। তাই মাত্র ৫৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ বারমুডাকে প্রতিনিধিত্ব করার সিদ্ধান্তই নিলেন তিনি। তাঁর এ সিদ্ধান্তের ফলে মাত্র ৭২ হাজার মানুষের দেশ বারমুডা এবারের টোকিও অলিম্পিকে মেয়েদের  ট্রায়াথলন এ ডাফির জয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে কম  জনসংখ্যা নিয়ে অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জেতা দেশ এ পরিণত হলো। নিজের ৪র্থ অলিম্পিকে এসে অবশেষে দেশবাসীকে আনন্দে ভাসালেন ফ্লোরা ডাফি।

Flora Duffy

 

 

গ্রেনাডাঃ

২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ৪০০মিটার দৌড়ে ১৯ বছর বয়সী কিরানি জেমস  যখন স্বর্ণপদক জিতলেন সেটা খুব বিস্ময়ের কিছু ছিলো না, কারণ আগের বছরেই তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। কিন্তু অবাক হবার ব্যাপার হলো তাঁর দেশের হয়ে ১ম(ও এখন পর্যন্ত একমাত্র) স্বর্ণপদক তিনি জিতে ফেললেন!  তাঁর দেশ গ্রেনাডার  জনসংখ্যা- মাত্র  ১লক্ষ ১০ হাজার! পরের অলিম্পিকে তিনি ঐ ইভেন্টে ২য় হয়ে রৌপ্যপদক জিতেন। মাত্র ৩৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের  দেশ গ্রেনাডার অলিম্পিক পদক এই ২টিই ! অবধারিতভাবেই অলিম্পিক স্বর্ণপদক জেতা সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশে পরিণত হয়েছিলো গ্রেনাডা(যে রেকর্ড এবার বারমুডা ভেঙ্গে দিয়েছে)। এবং এই গ্রেনাডারও সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা কিন্তু ক্রিকেট !

Kirani-James-008

 

 

বাহামাঃ

গ্রেনাডার মতই আরেক ক্যারিবিয়ান দেশ বাহামার সাফল্য আরও বেশি। ৪ লাখেরও কম জনসংখ্যার  দেশ বাহামার এথলেটরা অলিম্পিকে ৬টি স্বর্ণপদকসহ মোট  ১৪টি পদক জিতে ফেলেছেন! ১০ লাখের কম জনসংখ্যার দেশগুলোর মধ্যে বাহামার পদকই সবচেয়ে বেশি। ( তুলনা করলে  ১৩০কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের মোট অলিম্পিক পদকসংখ্যা ২৮টি !)

সুরিনামঃ

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনামের জনসংখ্যা ৬ লক্ষেরও কম। সেই দেশের সাঁতারু এন্থনি নেস্টি ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকে  ১ম কালো খেলোয়াড় হিসেবে সাঁতারে স্বর্ণপদক জিতে যান( ১০০ মিটার বাটারফ্লাইতে)। পরের অলিম্পিকে( বার্সেলোনা ১৯৯২) তিনি একই ইভেন্টে ৩য় হয়ে ব্রোঞ্জপদক পান। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ছোট দেশ  সুরিনামের অলিম্পিক পদক এই ২টিই।

Anthony Nesty 

 

লুক্সেমবার্গঃ

ইউরোপের অন্যতম ক্ষুদ্র দেশ লুক্সেমবার্গ  এর  জনসংখ্যা ৬ লক্ষের চেয়ে সামান্য বেশি। সেই দেশের এথলেট জোসেফ বার্থেল ১৯৫২ সালের  হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে ১৫০০ মিটার দৌঁড়ে  ১ম হয়ে সবাইকে(এবং একই সাথে নিজেকেও) অবাক করে দেন। কারণ এর আগের অলিম্পিকেই (১৯৪৮ লন্ডন) ঐ ইভেন্টে তিনি ৯ম হয়েছিলেন! পুরস্কারের মঞ্চে তাঁর কান্নার দৃশ্যটি স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। প্রায় ৭০ বছর আগে তাঁর জেতা এই স্বর্ণপদকটিই এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ লুক্সেমবার্গের একমাত্র অলিম্পিক স্বর্ণপদক হয়ে রয়েছে। 

Josy Barthel 1952Josy Barthel