• ক্রিকেট

পথ ভোলা পথিকদের গল্প: পর্ব ২

পোস্টটি ৫১৮১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

প্রথম পর্বে অভিষেক টেস্টে ডবল সেঞ্চুরি করেও ৫০ টেস্টের গণ্ডি পার না হওয়া ৫ ক্রিকেটারের গল্প বলেছিলাম। এই পর্বে বলব অভিষেকে সেরা বোলিং তালিকায় থাকা প্রথম চার জনের গল্প। অবিশ্বাস্য হলেও স্বপ্নের শুরুর পর তারা কেউই ১৭টির বেশি টেস্ট খেলতে পারেন নি। এমন অভিষেকের পর পথ হারানো এসব ক্রিকেটারদের সাথে প্রথম টেস্টে ১১ উইকেট নিয়েও পাঁচ টেস্টের মাঝে থেমে যাওয়া দুজনও থাকছেন এই লেখায়।

 

নরেন্দ্র হিরওয়ানি

১৯৮৮ সালের ১১ জানুয়ারি চেন্নাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয় ১৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার হিরওয়ানির। প্রথম ইনিংসে ভারতের ৩৮২ রানের জবাবে ১৮৪ রানেই শেষ ইন্ডিজের ইনিংস। ১৮.৩ বলে ৬১ রান দিয়ে ৮ উইকেট নিয়ে মূল হন্তারক অভিষিক্ত হিরওয়ানি। চতুর্থ ইনিংসে ৪১৬ রানের লক্ষ্যে নেমে ১৬০ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবারো ১৫.২ ওভারে ৭৫ রানে ৮ উইকেট নেন হিরওয়ানি। দুই ইনিংসে ১৬ উইকেট, অভিষেকে তাঁর এই কীর্তি ২৮ বছরে এখনও অক্ষুণ্ণ। পরের ৩ টেস্টে আরও ২০ উইকেট পেলেও ভারতের বাইরে ঘূর্ণি জাদু দেখাতে পারেন নি এই লেগি। ফলাফল এমন অভিষেকের পর ১৭ টেস্টেই শেষ হিরওয়ানির ক্যারিয়ার। অভিষেকে ১৬ উইকেটের পরের ১৫ টেস্টে নিয়েছেন মোটে ৫০ উইকেট। ১৯৯৬ সালে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ইডেনে দুই ইনিংসেই উইকেট শুন্য থাকার পর আর সুযোগ পাননি। ওই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে অভিষেকে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড স্পর্শ করেন ল্যান্স ক্লুজনার। হিরওয়ানির মত না হলেও ৪৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে তিনি পেয়েছেন মোটে ৮০ উইকেট। তাই তার  ক্ষেত্রেও বলা যায় শুরুটা যতটা উজ্জ্বল শেষটা ততটাই মলিন।

 

 

বব ম্যাসি

১৯৭২ সালের অ্যাসেজে ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম ম্যাচ হেরে আন্ডারডগ হিসাবে লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া। টসে জিতে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নতুন বলে ডেনিস লিলির সঙ্গী অভিষিক্ত ফাস্ট বোলার বব ম্যাসি। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই পেসার মেঘলা দিনে সুইং আর গতিতে শুরুতেই ভাঙেন বয়কটের ডিফেন্স। একে একে ফিরিয়ে দেন ৮ ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে। টেস্টের ৫ম দিনে রানীর মাঠে আসার কথা থাকলেও ম্যাসি তাণ্ডবে চতুর্থ দিনেই ম্যাচ শেষ। ইংলিশরা দ্বিতীয় ইনিংসে অল আউট ১১৬ রানে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৬ উইকেট নিয়ে ম্যাসি গড়েন অভিষেকে সেরা বোলিং রেকর্ড যা পরে ভাঙেন হিরওয়ানি। এই ম্যাচের পর ম্যাসি টেস্ট খেলেছেন ৫টি, উইকেট নিয়েছেন ১৫টি।

 

 

ফ্রেড মার্টিন

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে মার্টিন ১০২ রান খরচে তুলে নেন ১২ উইকেট। কিন্তু পরের ২ বছরে আর টেস্ট খেলার সুযোগই পাননি বাঁহাতি ইংলিশ মিডিয়াম পেসার। পরে আর ১টি টেস্ট খেলেই শেষ তার ক্যারিয়ার। অভিষেকে ১২ উইকেট নেওয়া মার্টিনের ক্যারিয়ার শেষ ২ টেস্টে ১৪ উইকেট নিয়েই।

 

 

জেসন ক্রেজা

অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের তালিকায় চতুর্থ নামটি জেসন ক্রেজা। নাগপুরে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে এই ডানহাতি অফস্পিনার ৩৫৮ রান খরচায় ১২ উইকেট নেন। এমন স্মরণীয় অভিষেকের পর আর একটি টেস্টই খেলেছেন তিনি। ৩৩ বছর বয়সী ক্রেজার ক্যারিয়ার ২ টেস্টে ১৩ উইকেটে শেষ বলাই যায়।

 

 

সিডনি বার্ক

১৯৬২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকে ১১ উইকেট নেন দক্ষিণ আফ্রিকান ডানহাতি মিডিয়াম পেসার বার্ক। মজার বিষয় এমন পারফরম্যান্সের পরও পরের টেস্টে তিনি ছিলেন দ্বাদশ ব্যক্তি। ৩ বছর পর ইংল্যান্ডের সাথে আর একটি ম্যাচেই সুযোগ পান তিনি। সে ম্যাচে কোন উইকেট না পাওয়ায় অভিষেকে নেওয়া ১১ উইকেটেই শেষ তার ক্যারিয়ার। এটিও একটি রেকর্ড।

 

মোহাম্মদ জাহিদ

অভিষেকে ১০ উইকেট নেওয়া একমাত্র পাকিস্তানি মোহাম্মদ জাহিদ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে অভিষেকে পাঞ্জাবী এই ডানহাতি পেসার দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ১১ উইকেট। কিন্তু অফ ফর্ম আর ইনজুরির কারনে ৫ টেস্টে ১৫ উইকেটেই শেষ তার ক্যারিয়ার।

 

 

স্মরণীয় শুরুর পর বিস্মৃতিতে চলে যাওয়া এদের বিপরীতে রয়েছেন মুরালিধরন, ওয়ার্ন বা ওয়াসিম আকরামরা। যাদের শুরুটা এদের মত উজ্জ্বল না হলেও শেষটা স্বপ্নের মত।

প্রথম পর্ব পড়তে চাইলে,

https://pavilion.com.bd/user/feeds/1046/details