বাংলাদেশের যত জয়!
পোস্টটি ১৭৮০৮ বার পঠিত হয়েছেটেস্টে বরাবরই পেছনের সারিতে থাকা বাংলাদেশ প্রথমবারের মত শীর্ষস্থানীয় দেশের কোন পূর্ণশক্তির দলকে হারিয়েছে! ১৭ বছরে মাত্র ৯৫ টেস্ট খেলা জাতীয় দলের অর্জনের ঝুলিতে আছে মাত্র ৮ জয়। ইংল্যান্ড বধের আগের সেই ৭ স্মৃতিকাব্যকে জয়ের আবীরে রাঙাই আরেকবার!
৬-১০ জানুয়ারি, ২০০৫; এমএ আজিজ স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম। প্রতিপক্ষঃ জিম্বাবুয়ে
টেস্ট নং - ১৭৩৩
নাফিস ইকবাল, হাবিবুল বাশার, রাজিন সালেহ এবং মোহাম্মদ রফিকের অর্ধশতকে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। টাটেন্দা টাইবু আর এল্টন চিগুম্বুরার ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে তুলেও ৩১২ রানে থামে জিম্বাবুইয়ানরা। রফিক মাত্র ৬৫ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট।
১৭৬ রানের বড় লিড পেলেও ২য় ইনিংসে বাশার ছাড়া কেউই ভালো করতে পারেননি। ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ, ছুঁড়ে দেয় ৩৮০ রানের টার্গেট।
তবে এনামুল হক জুনিয়রের স্পিন ঘূর্ণির সামনে মাথাই তুলে দাঁড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। নিজেদের ৩৩তম টেস্টে এসে প্রথম জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ, ম্যাচ জেতে ২২৬ রানে। এনামুল ২ ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা।
৯-১৩ জুলাই, ২০০৯; কিংসটন, সেন্ট ভিনসেন্ট। প্রতিপক্ষঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
টেস্ট নং - ১৯২৩
প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দঘন মুহূর্তের পর কেটে গেছে আরও ৪ বছর। ২৪ ম্যাচে জয়হীন বাংলাদেশ। বোর্ডের সাথে বিবাদে জড়িয়ে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব খেলোয়াড়ই সরে দাঁড়িয়েছেন সিরিজ থেকে, ১২ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা ফ্লয়েড রেইফারের নেতৃত্বে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল টাইগারদের মুখোমুখি।
প্রথম ইনিংসে সবার ছোট ছোট অবদানে ২৩৮ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। বোলিং করতে নেমেই অঘটন। মাশরাফি খেলেন হোঁচট, এক হোঁচটেই সিরিজ শেষ তাঁর। দলের দায়িত্ব নিলেন সাকিব আল হাসান। ফিলিপস এবং বার্নার্ডের দারুণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৬৯ রানের লিড পায় ক্যালিপসোরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। তামিমের ১২৮, জুনায়েদের ৭৮ আর মুশফিক-সাকিবের ভরসায় ৩৪৫ রান করে বাংলাদেশ। ২৭৭ রানের লক্ষ্যে বার্নার্ড ৫২ রান করে অপরাজিত থাকলেও রিয়াদ-সাকিবের বোলিং-এ ৯৫ রানের জয় পায় লাল-সবুজেরা। তামিম ইকবাল হন ম্যাচসেরা।
১৭-২০ জুলাই, ২০০৯; সেন্ট জর্জেস, গ্রেনাডা। প্রতিপক্ষঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
টেস্ট নং - ১৯২৬
প্রথম ইনিংসে সাকিববাহিনী ২৩৭ রানে বেঁধে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। অধিনায়ক নেন ৩ উইকেট। তবে কেমার রোচের ভয়াবহ বোলিং-এ বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে থামে ২৩২-এ। ৬ উইকেট নিয়ে ধ্বস নামান রোচ।
সাকিবের ৫ উইকেট ২য় ইনিংসে ২০৯ রানেই গুটিয়ে যায় ফ্লয়েড রেইফারের দল। ২১৫ রানের লক্ষ্যে এক পর্যায়ে ৬৯ রানে ৪ উইকেট পতন হলেও রাকিবুল-সাকিবের ব্যাটে ভর করে ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার কাউকে হোয়াইট ওয়াশের স্বাদ দেয় বঙ্গ-শার্দূলরা। রাকিবুল ৬৫ করে আউট হলেও সাকিব ৯৬ রানে অপরাজিত থেকে জয়ের বন্দরে ভেড়ান দলকে। সাকিবময় ম্যাচের সেরাটা অনুমিত ভাবেই তিনি ছাড়া আর কে-ই বা হবেন? সামনে থেকে ব্যাটে-বলে নেতৃত্ব দিয়ে সিরিজসেরাও হন তিনি।
১৭-২০ এপ্রিল, ২০১৩; হারারে স্পোর্টস ক্লাব, হারারে। প্রতিপক্ষঃ জিম্বাবুয়ে
টেস্ট নং - ২০৮৭
দুই ইনিংসেই ব্রেন্ডন টেইলরের শতকে ১ম টেস্টে বাংলাদেশকে ৩৩৫ রানে হারিয়ে রীতিমত লজ্জায় ডোবায় জিম্বাবুয়ে। সব মিলিয়ে টানা ১৭ টেস্টে জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ, তার উপর এই ধাক্কা। মুখ-চোখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না দলের কেউ।
২য় টেস্টে আগে ব্যাট করে সাকিব-মুশফিক-নাসিরের মিডল অর্ডারে পা দিয়ে ৩৯১ করে বাংলাদেশ। জবাবে চিগুম্বুরা ৮২ করলেও রবিউল ইসলামের ৫ উইকেটে ১০৯ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে আবারো সাকিব-মুশফিক-নাসির ত্রয়ীর অর্ধশতক, এবার সংগ্রহটা ২৯১। টার্গেট দেয় ৪০০ রানের। মাসাকাদজা শতক হাঁকালেও জিয়া-সাকিবের মাপা বোলিং-এ ১৪৩ রানে ৪ বছরের অধরা জয় পায় বাংলাদেশ। মুশফিক হন ম্যাচসেরা। সিরিজসেরা রবিউল।
২৫-২৭ অক্টোবর, ২০১৪; শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মিরপুর। প্রতিপক্ষঃ জিম্বাবুয়ে
টেস্ট নং - ২১৪১
সাকিবের ৬ উইকেটে ১ম ইনিংসে ২৪০-এ আটকে যায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের ব্যাটিংটাও খুব বেশি ভালো হয়নি, তবুও মমিনুল, রিয়াদ, মুশফিকের দৃঢ়তায় ১৪ রানের লিড পায় টাইগাররা।
দ্বিতীয় ইনিংসটা কেবল তাইজুলের। দেশের ইতিহাসের সেরা বোলিং নৈপুণ্যে (৩৯/৮) ১১৪ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। তবে মাত্র ১০১ রানের টার্গেটে নেমেই ৩ রানে ৩ উইকেট হারায় মুশফিকের দল। পরে চাপ সামাল দিয়ে ৪৬ থেকে ৬২ করতেই আরও ৩ উইকেট হাওয়া। তবে একপ্রান্তে মুশফিক ছিলেন অবিচল, শাহাদাত আর তাইজুলকে সঙ্গী করে ৩ উইকেটের জয় উপহার দেন বাংলাদেশকে। ম্যাচ সেরা হন তাইজুল।
৩-৭ নভেম্বর, ২০১৪; শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, খুলনা। প্রতিপক্ষঃ জিম্বাবুয়ে
টেস্ট নং – ২১৪৩
তামিম-সাকিবের জোড়া শতকে ভর করে ৪৩৩ রানের পাহাড় বানায় টাইগাররা। তবে মাসাকাদজা এবং চাকাভা জোড়া শতক হাঁকিয়ে জবাবটা দেন ভালোই, ৩৬৮ রান করে জিম্বাবুয়ে। সাকিব নেন ৫ উইকেট।
২য় ইনিংসে মমিনুল, রিয়াদ আর শুভাগতর ব্যাটে ২৪৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ৩১৪ রান তাড়া করতে নেমে সাকিবের বলে আর দিশা খুঁজে পায়নি টেইলরের দল। আবারো ৫ উইকেট নেন সাকিব। ম্যাচ জেতে ১৬২ রানে।
ইমরান খান ও ইয়ান বোথামের পর ইতিহাসের ৩য় খেলোয়াড় হিসেবে ১ ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং ১০ উইকেট পাবার রেকর্ড স্পর্শ করেন সাকিব। ম্যাচ সেরা হন তিনি।
১২-১৬ নভেম্বর, ২০১৪; জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম। প্রতিপক্ষঃ জিম্বাবুয়ে
টেস্ট নং – ২১৪৫
তামিম-ইমরুলের রেকর্ড প্রথম উইকেট জুটি আর সাকিবের ৭১-এ পা দিয়ে ৫০৩ রানের পাহাড় বানায় লাল-সবুজ বাহিনী। ব্যাট করতে নেমে ৩৭৪ রান করে জিম্বাবুয়ে, জুবায়র দখল করেন ৫ উইকেট।
২য় ইনিংসে মমিনুলের শতকে চড়ে ৩১৯ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ৪৪৮ রানের লক্ষ্যে নেমে ২৬২ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ম্যাচ হারে ১৮৬ রানে। ম্যাচ সেরা হন মমিনুল, সিরিজ সেরা সাকিব।
একদিন হয়ত আমরা অনেক ম্যাচ জিতবো। জিততে জিততে অগণিত পরাজয়ের ছাইচাপা ভালোবাসার এই জয়গুলোকে ভুলে যাব! তারপরও শিহরণ জাগানো হাসিমাখা স্মৃতিগুলোর প্রতি নৈবদ্য হয়ে থাকুক এই লেখাটি!
- 0 মন্তব্য