• ফুটবল

কালো চিতার হুংকার

পোস্টটি ৭৩৮৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

১৯৬০ সালের অলস একটা দুপুর। পর্তুগালের লিসবনের একটা নাপিতের দোকানে আড্ডা মারছিলেন সাও পাওলো ফেরত এক কোচ। কথাচ্ছলে বন্ধুকে বললেন, “কদিন আগে মোজাম্বিকে গিয়েছিলাম। সেখানে এক রত্নকে দেখে এসেছি। বুঝলে একেবারে কাঁচা সোনা”।


সেই বন্ধুটি ছিল বেনফিকার কিংবদন্তি কোচ বেলা গুটম্যান। কথা শোনার সময় চকচক করে উঠছিল গুটম্যানের চোখ। পরের সপ্তাহে প্রথম ফ্লাইটেই উড়ে গেলেন আফ্রিকার মোজাম্বিকে। একা নয় , ফিরলেন ১৮ বছর বয়সী এক বিস্ময়কে সঙ্গে নিয়ে।

তাঁর নাম ইউসেবিও দা সিলভা ফেরেইরা।

ইউসেবিওকে আনার পাঁচ মাস পর্যন্ত বেনফিকা তাকে লুকিয়ে রাখল। কেন জানেন? আইনি জটিলতার ভয়ে। শেষ পর্যন্ত অনেক দেনদরবার করে হ্যাপাটা তারা চুকাতে পারে। ১৯৬১ সালে বেনফিকার জার্সি গায়ে অভিষেক হয় ইউসেবিওর। অভিষেকেই করেন হ্যাটট্রিক।

এক সপ্তাহ পরেই বেনফিকা মুখোমুখি পেলের সান্তোসের। ইউসেবিও ছিলেন বেঞ্চে। দেখছিলেন কীভাবে একে একে সান্তোসের কাছে চার গোল হজম করল দল। এরপর গুটম্যান নামালেন তুরুপের তাসকে। ইউসেবিও নামলেন। করে ফেললেন হ্যাটট্রিক। যেন রূপকথার পাতা থেকে কোনো এক অতিমানব নেমে এসেছিল পৃথিবীতে।

অর্জনের কথা বললে শেষ করা যাবে না। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সেই ম্যাচ তো ফুটবল পুরাণেরই অংশ হয়ে গেছে। ২৫ মিনিটের মধ্যেই তিন গোলে পিছিয়ে পর্তুগাল। এরপর ইউসেবিওর খেলা শুরু। নিজে চার গোল করে দলকে জেতালেন ৫-৩ গোলে।

সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড, কিন্তু বাজির দর ছিল ইউসেবিওর পর্তুগালের পক্ষে। শুরুতে ভেন্যু ছিল লিভারপুল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ওয়েম্বলিতে। এর আগে লিভারপুলেই দুটি ম্যাচ খেলে জিতেছিল পর্তুগাল। গুঞ্জন আছে, তাদের সেই "সুবিধা" থেকে বঞ্চিত করতেই শেষ মুহূর্তে এই ভেন্যু পরিবর্তন। ইউসেবিওকে সেই ম্যাচে বোতলবন্দিই করে রেখেছিলেন ইংলিশ ডিফেন্ডার নবি স্টাইলস। তারপরও ৮২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ঠিকই করেছিলেন গোল। তারপরও দলকে জেতানোর জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না, ইংল্যান্ড যে তার আগেই দুই গোলে এগিয়ে গিয়েছিল! ব্রাজিলের জন্য যেমন মারাকানাজো হয়ে আছে অনন্ত আক্ষেপের নাম, পর্তুগালের জন্য ওই ম্যাচটাও এখনো গেছে "জোগো দাস লাগ্রিমাস।" বাংলাতে যেটির অর্থ দাঁড়ায়  "অশ্রুতে লেখা ম্যাচ"।   ৯ গোল করে ইউসেবিওই ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা, কিন্তু তাঁর জন্য সেটা সান্ত্বনা হতে পারেনি! 


বলা হয় সময়ের চাইতে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন তিনি । ক্ষিপ্র, দারুণ অ্যাথলেটিক ইউসেবিও সেই যুগে ১১ সেকেন্ডের কমে দৌড় শেষ করেছিলেন।তাও আবার ১৬ বছর বয়সে। ডাকনামই ছিল তার “ব্ল্যাক প্যান্থার"। ২১ শতকের আদর্শ স্ট্রাইকারের সব গুণই ছিল তার মধ্যে। আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া সেরা ফুটবলারও তাঁকে একবাক্যে বলা হয়। এমনি তো পেলে, ম্যারাডোনাদের সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে তার নাম নেওয়া হয় না !