• অন্যান্য

দিন শেষে ফিল্ম নোয়াও ফিরল প্যাভিলিয়নেই

পোস্টটি ৩৫৮৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

না, কিছুতেই কাজ হলো না। ম্যাচের দুই দিন আগে প্রতিপক্ষের হোমগ্রাউন্ডে এসে বলপূর্বক নেট অনুশীলন, ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনের ফটোশপ করা দুর্ধর্ষ সব ছবি আপলোড করে ডিজিটাল রক্তচক্ষু, এমনকি ম্যাচের দিনও একদল অপরিচিত খেলোয়াড়কে এনে জিতে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা- সবই গেল বিফলে। ১৬-১৬ ওভারে প্যাভিলিয়নের কাছে ৮৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে ফিল্ম নোয়া আরও একবার প্রমাণ করল, দিন শেষে সবাইকে ফিরতে হয় প্যাভিলিয়নেই।

অবশ্য বলতে গেলে আসলে সোলায়মান কাওসারের কাছেই একাই হেরে গেছে ফিল্ম নোয়া। দীর্ঘ পেশীবহুল হাতের জন্য মাঠে নামার আগেই ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন প্যাভিলিয়নের এই ওপেনার। কিন্তু মাঠে দেখালেন, নিজের পেশীশক্তিটার ফায়দা রান থেকে নিতেও তাঁর জুড়ি নেই। শুরুতে অবশ্য সদাগোপন রমেশ বা জাভেদ ওমরদের মতো পোড় খাওয়া ওপেনারদের দেখানো পথেই হাঁটছিলেন। সতর্কতার সঙ্গে খেলে মূলত এক বা দুই রান চুরি করে নিচ্ছিলেন। বরং ওপাশের তরুণ ওপেনার শামীম হোসেনই বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। কিন্তু ১৭ রানের মাথায় আম্পায়ারের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে শামীমকে ফিরে যেতে হয় টিম প্যাভিলিয়নেই। যদিও আউটের সময় তাঁর ব্যাটের সঙ্গে উইকেটও ভেঙেছিল কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

কিন্তু সোলায়মান কাওসারের ব্যাট তখন কেবল সোলেমানী তরবারির মতো খাপখোলা হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ওদিকে ওয়ানডাউনে নেমে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান অর্ক সাখাওয়াত কোনো রান না করে আউট হয়ে গেলেও সোলায়মান ছিলেন অবিচল। যদিও তাঁকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দিয়ে যাচ্ছিলেন ফিল্ম নোয়ার বোলার ও উইকেটকিপার। অতিরিক্ত রানের বন্যা বইয়ে দিয়ে তারাই প্যাভিলিয়নের রানের চাকা সবসময় সচল রেখেছেন।

তারপরও ৯ ওভার শেষে প্যাভিলিয়নের রান যখন ২ উইকেটে ৬৯, সেটা ১৫০ পর্যন্ত যাবে কি না, সেটা নিয়ে ছিল সংশয়। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা ১৬০ ছাড়িয়েছে, সোলায়মান কাওসারের সঙ্গে সেখানে বড় অবদান প্যাভিলিয়নের আরেক নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান প্রিয়ম মজুমদারেরও। বলতে গেলে পুরোটা সময়ই আক্ষরিক অর্থেই প্রতিপক্ষ ফিল্ডারদের দৌড়ের ওপরেই রেখেছেন। এর মধ্যে একবার অবশ্য আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে প্রিয়মকে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাবার দশা হয়েছিল। কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে শেষ পর্যন্তই টিকে ছিলেন প্রিয়ম মজুমদার; আর শেষদিকে সোলায়মান কাওসারেরও ব্যাটও কচুকাটা করতে থাকে বোলারদের। এক প্রতিপক্ষ অধিনায়ক সালেহ সোবহান অনীমের এক্সপ্রেস গতির বল ছাড়া বাকি সবাইকেই ঠেঙ্গিয়ে গেছেন কাওসার। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যখন ক্যারি দ্য ব্যাট করেছেন, রান হয়ে গেছে ৭৮। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ১৬ ওভারের ইতিহাসে এই প্রথম কেউ আদ্যন্ত ব্যাট করলেন। বাংলাদেশের হয়ে যে কীর্তি ছিল জাভেদ ওমর বেলিমের, সেখানে এখন নাম লেখালেন সোলায়মান কাওসারও।

কিন্তু ১৬৭ রানের এই বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে প্রথম দুই ওভারেই ফিল্ম নোয়া বুঝিয়ে দিয়েছে, ম্যাচে হারজিত নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা। প্যাভিলিয়নের প্রথম দুই ওভারই ছিল মেডেন, ১৬ ওভারের ইতিহাসে নিশ্চিতভাবেই যেটি প্রথম। এর মধ্যে অবশ্য প্যাভিলিয়নের শামীমকে চাকিংয়ের অভিযোগ শুনতে হয়েছে, কিন্তু সেসবে একটুও মনযোগচ্যুত না হয়েই আগুন ঝরিয়ে গেছেন তিনি।

ফিল্ম নোয়ার বাকি গল্পটা ছিল শুধু “এ শুধু উইকেটের দিন, এ লগন উইকেট পাওয়ার”। এক সাকিব আজিজ ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন আত্মাহুতির মিছিলে। সাকিব আজিজ এক দুইটি চার-ছয় মেরে চাঞ্চল্য সৃষ্টির চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সেটা আখেরে ব্যবধান কমানো ছাড়া কিছু করতে পারেনি। আর প্যাভিলিয়নের বোলাররা “দশে মিলে করি কাজ” নীতিতেই ছিলেন বিশ্বাসী। শামীম, প্রিয়ম, অর্ক, অম্লান, আবির, শিহাবসহ সবাই নিয়েছেন একটি করে উইকেট। কাওসার উইকেট না পেলেও রান আউট করে রেখেছেন অবদান। শেষ দিকে রেহমান সোবহান সনেট ও শাওকি সাঈদের বীরোচিত চেষ্টার পরেও তাই ফিল্ম নোয়ার দলীয় রান শতক ছুঁতে পারেনি। দিন শেষে তারা যখন বিরস বদনে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছিল, শহীদুল্লাহ হল সংলগ্ন মাঠে পৌষের হিমেল হাওয়া নিয়ে আসে অতলান্তিক বিষণ্ণতা। আর প্যাভিলিয়নের জন্য সেই হাওয়া আসে আগামী দিনের গান হয়ে। ২২ গজ নিয়ে শুধু লেখায় নয়, খেলায়ও যে যাওয়ার আছে অনেক দূর!