• ফুটবল

দ্য বিউটিফুল গেম

পোস্টটি ৪৩২৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

কাঠের দরজার উপরের অংশটা ‘ও’ থার্টি টু কাচের তৈরি, ঝাপসা। বাইরে থেকে কিছু ঠাহর করার উপায় নেই। দরজা খুলেই জানতে হয় ভেতরের খবর। রুমের লাল রঙের মেঝে- অনেকটা আমাদের দেশের মফস্বল শহরের ঘর-বাড়ির মতোই। দেয়ালের খয়েরি রঙটা খুব বেশিদিন আগের করা নয়। রুমের ভেতর ঢুকলেই চোখে পড়ে কয়েকটা বেঞ্চ। চওড়া একটা তক্তার না। সরু-লম্বা চার তক্তাকে এক করে বানানো; মাঝে মাঝেই ফাঁকা।

এই রুমটা অবশ্য এমন ফাঁকা পড়ে থাকে না। পাক্ষিক ষোল জনের একটা দল আসে এখানে; অতিথি হয়ে ফুটবল খেলতে। তাঁদের একটা সাধারণ নামও আছে। অ্যাওয়ে টিম। দল বদলায়, ওই নাম তো আর বদলায় না। তাই ওই ঘরটার নামও অ্যাওয়ে টিম চেঞ্জিং রুম। দরজার কাচের ওপর সেঁটে থাকা লেমিনেটিং করা একটা কাগজে লেখাও আছে সেই নাম।

খেলোয়াড়দের পরবার জার্সি ঝোলানো থাকে ওই বেঞ্চগুলোর ঠিক উপর বরাবর, হুকের মাথার সাথে। আধুনিক কালের ক্লোসেটের ব্যবহার নেই এখানে। লম্বা হ্যাঙ্গারেই ঝোলে এক, দুই, দশ নম্বর লেখা জার্সিগুলো। খেলা শেষে ঘামে ভেজা জার্সিগুলো কোথাও যায় তার অবশ্য নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। থাকবে কি করে? রুমের সঙ্গেই খেলোয়াড়দের গোসল করার জায়গা। এর মাঝে নেই কোনো দরজা। চারখানা শাওয়ার, আর তিনটে বেসিন সেই বাথরুমে! দেয়ালটা টাইলসের হলেও, মেঝের অবস্থা যাচ্ছেতাই! পানির পাইপগুলো সবই দেয়ালের ওপর। ঘিয়া রঙের চকচকে পেইন্ট করা তাতে। আক্ষরিক অর্থেই ‘ইংরেজ আমলের’ তৈরি।


উপরের বর্ণনায় ষাট বা সত্তর দশকের ফুটবল স্টেডিয়ামের কোনো এক ড্রেসিংরুমের কথা আপনি ভাবতেই পারেন। তখনও ফুটবলারদের চুলে হাল আমলের ‘জেন্টেলম্যানস’ ছাটই শোভা পেত। তফাত হতে পারে সেই আমলে সাদা রঙের চায়ের কাপ আর সিগারেটের অ্যাশ ট্রে ছিল ড্রেসিংরুমের অবিচ্ছেদ্য অংশ; এখন আর নেই।

এবার ওই রুমে কল্পনা করুন ওযিল, সানচেজদের। সাদাকালোর ঘোর থেকে হুট করে রঙিন হয়ে সব ধরা দিচ্ছে আপনার চোখের সামনে। কিন্তু বড্ড বেমানান!

আজ যখন টিম বাস থেকে নামবেন আর্সেনালের খেলোয়াড়রা, ওই দরজাটাই তখন স্বাগত জানাবে তাঁদেরকে। ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম সেরা দল; ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের পাড়া পড়বে দক্ষিণ লন্ডনের ওই শহরে। এক অর্থে তো এফএ কাপ ডার্বিও? এই বুঝি এফএ কাপের মাহাত্ম্য! ধনীকেও নামিয়ে আনে সাধারণের কাতারে। এমিরেটস স্টেডিয়ামের আলোক ঝলমলে ড্রেসিংরুমে দিন কাটে যাদের তাঁদের পুরো দলকে ওই তক্তার ওপরে বসতে দেবার জায়গাটাও নেই সাটনের। মাত্র ষোলজন ধরে ওই রুমটায়।


রীতি মেনেই স্টেডিয়ামের এক কোণায় থাকবেন আর্সেনাল সমর্থকেরা। ঠিক একমাথার বারপোস্টের পেছনে। এখানে অবশ্য ৭০০ জনের জায়গা হয়। তবে নেই কোনো বসার ব্যবস্থা। সিঁড়ির মতো করে একটা স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে দাঁড়িয়ে দেখবার সুবিধার্থে। সাটন সমর্থকদের জন্যে অবশ্য কিছু আসন ব্যবস্থা রয়েছে স্টেডিয়ামটায়, তাও মাত্র ৭০০ জনের মতোই।

নন লিগ সাইড সাটন ইউনাইটেডের সাথে ফিফথ রাউন্ডের খেলাটা পড়বার সাথে সাথেই শিরোনামে চলে আসে এই ড্রেসিংরুমটা। পেশাদার লিগ খেলে না এমন একটা দলের ড্রেসিংরুম এর চেয়ে ভালো আর কিই বা হবে? কিন্তু প্রতিপক্ষ? সে তো আর্সেনাল। এর চেয়ে ভালো আর ক’টা দলই বা আছে ইংল্যান্ডে? প্যারাডক্স বোধ হয় একেই বলে। আর এখানেই সৌন্দর্য্য কাপ প্রতিযোগিতার।

৯০ মিনিটের জন্যে হলেও বাস্তবতাটা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয় সবকিছুই। ১২০ গজের ওই মাঠে সবাই সমান। বিশ্বকাপজয়ী ওযিল, মার্তেসাকাররদের প্রতিপক্ষ এমন এক দল যাদের অধিকাংশ খেলোয়াড়েরই পেশাদার ফুটবলার নন। তবুও ওই ৯০ মিনিট শুরুর আগে একই কাতারে দুই দল, সমানে সমান।

ম্যাচ শেষে হয়ত আর্সেনাল খেলোয়াড়দের জার্সি যোগাড় করতেই ব্যস্ত থাকবেন সাটন খেলোয়াড়েরা। হর্তা কর্তারা হয়ত নজর রাখবেন আর্সেন ওয়েঙ্গার শিষ্যদের ম্যাচ শেষের আপ্যায়নটা ত্রুটিমুক্ত রাখতে, সাধ্যের ভেতর যা সম্ভব আর কি! ফল যাই হোক স্টেডিয়ামে আসা সাড়ে পাঁচ হাজার সাটন সমর্থকরা বাড়ি ফিরবেন খুশি মনেই। হেরেও যে জেতা সম্ভব- সেটা বোধ হয় এই কাপ ফুটবলেই কেবল সম্ভব।