সিডনী বার্নসঃ ক্রিকেটের অমর বুড়োদের একজন
পোস্টটি ৫২৫০ বার পঠিত হয়েছেল্যাংকাশায়ার লীগে ভালো করেছিলেন বলে, লেস্টারের সাথে কাউন্টি ম্যাচটাতে অধিনায়ক তাঁকে দলে ডেকেছিলেন। ৭০ রানে ছয় উইকেট নিয়ে বেশ ভালো বোলিংও করেছিলেন। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল অধিনায়ক যখন তাঁকে নেটে ডেকে পাঠালেন। অধিনায়ককে বল করতে গিয়ে যে, বেশ কয়েকবার তাঁর শরীরে আঘাত করা হয়ে গেছে! তিনি তো শুধু ল্যাংকাশায়ারের অধিনায়কই নন, ইংলিশ ক্রিকেটেরও অধিনায়ক। তাই দলপতিকে ‘দুঃখিত’ বলতে গিয়ে শুনেন, অধিনায়ক মুচকি হেসে তাঁকে বলছেন, “তোমার দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই, বার্নস! বরং তোমাকে আমি আমার সাথে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাচ্ছি।”
২৮ বছর বয়সী একজন, যে কি-না সাতটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেট পেয়েছে মাত্র ১৩টি। প্রতিটি উইকেটের জন্য যাকে ব্যয় করতে হয়েছে ৩৭.৩৮ রান, তিনি যাচ্ছেন চিরপ্রতিদ্বন্ধীদের সাথে এ্যাশেজ খেলতে!
ব্যাটসম্যান হিসেবে আর্চি ম্যাকলারেন হয়তো আহামরি কিছু নন, অধিনায়কত্বের রেকর্ডও বলবে, তিনি অসাধারণ কেউ নন, কিন্তু ক্রিকেট-জহুরী হিসেবে নিশ্চয় তাঁকে উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই। বিশ্বক্রিকেটের সাথে সিডনী বার্নসের সেতুবন্ধনের সূচনাটা যে তিনিই করেছিলেন!
***
২৭ টেস্টে বার্নসের উইকেট সংখ্যা ১৮৯, গড় ১৬.৪৩। প্রতি টেস্টে উইকেট পেয়েছেন সাতটি করে। বার্নসের প্রথম টেস্ট থেকে শেষ টেস্ট পর্যন্ত, প্রায় ১৩ বছরে ইংল্যান্ড খেলেছে ৫৮টি টেস্ট। যদি তিনি সব টেস্টে থাকতেন তবে উইকেট সংখ্যা হতো ৪০৬!
সর্বোচ্চ ২৫ টেস্ট খেলেছেন, এমন আর কারো নেই এই কীর্তি। তাঁর চেয়ে বেশী, ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন কেবল চারজন। মুরালিধরণ ২২ বার ১০ উইকেট পেতে খেলেছেন ১৩৩ টেস্ট, শেন ওয়ার্ন (১০) খেলেছেন ১৪৫ টেস্ট, স্যার হ্যাডলি (৯) খেলেছেন ৮৬টি টেস্ট ও অনিল কুম্বলেকে(৮) খেলতে হয়েছে ১৩২ ম্যাচ।
ডেনিস লিলি (৭০ টেস্ট), ক্ল্যারি গ্রিমেট (৩৭ টেস্ট), রবিচন্দ্র অশ্বিন (৪৯ টেস্ট) ও রঙ্গনা হেরাথ (৮০ টেস্ট) পেয়েছেন তাঁর সমান ৭ বার করে ম্যাচে ১০ উইকেট।
শেষ দশ ম্যাচের পারফরম্যান্স বিবেচনায় বা LTTPF(Last Ten Test Performance Factor) এ দেখা গেছে সিডনী বার্নসই ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার, শতকরা হারে যার পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছে দুইশ! কাছাকাছি আছেন, জিম লেকার ১৪৫ পারসেন্ট!
শেষ দশ টেস্টে ১০.৬৮ গড়ে বার্নস উইকেট নিয়েছেন ৮৮টি।
ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী রেটিং (৯৩২) প্রাপ্ত বোলারও সিডনী বার্নসই।
চোখ কচলে উঠছে আপনার? তাহলে চোখকে আপাতত শান্ত করুন। সিডনী বার্নস আপনার জন্য জমিয়ে রেখেছে অবিশ্বাসের আরো অনেক গল্প।
***
শুরুটা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট ভিক্টর ট্রাম্পারকে কট এন্ড বল করে। অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নেয়ার পথে, আরেক গ্রেট ক্লেম হিলকে করেছিলেন বোল্ড। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই উইকেট, এই দু’জন ছিলেন বলেই কি-না, সম্পূর্ণ ক্যারিয়ারে ট্রাম্পারকে ১৩ ও হিলকে আউট করছিলেন ১১ বার।
এর মধ্যে ক্লেম হিল বলেছিলেন, ১৯১১-১২ তে এ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর আউট নিয়ে। চল্লিশের দুয়ারে কড়া নাড়া, বার্নস তখন আরো বিধ্বংসী, আরো আনপ্লেয়েবল। এমসিজিতে সেবার প্রথম দশ ওভার শেষেই অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ১১/৪, সবগুলো উইকেটই গিয়েছিল সিডনীর দখলে। হিল বলেছিলেন, “আমি দেখলাম বলটা লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করেছে। প্যাড সামনে বাড়িয়ে দেয়াটাই নিরাপদ হবে চিন্তা করছিলাম, তখনি শুনলাম আমার অফ স্টাম্পের বেল পতনের আওয়াজ।” সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক ওয়ার্নারের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, জনি ডগলাস। যিনি ছিলেন একজন অলরাউন্ডার। তাই প্রথম ম্যাচে নতুন বল হাতে ফ্র্যাংক ফস্টারের সঙ্গীও হয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে বার্নস নতুন বল হাতে পেয়েই যেন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ফস্টারের সাথে নতুন বল হাতে নেয়ার যোগ্যতা ও সামর্থ্য আছে একমাত্র তাঁরই। তা যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ হচ্ছে ফস্টার-বার্নসকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর বোলিং জুটি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই দু’জন ১১ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১১৮ উইকেট, বার্নস ৭৩ ও ফস্টার ৪৫ উইকেট। সে এ্যাশেজে প্রায় তেইশ গড়ে বার্নস পেয়েছিলেন ৩৪ উইকেট, ফস্টারের ছিল ৩২ উইকেট।
ক্যারিয়ারের প্রথম এ্যাশেজ শেষ হয়ে গিয়েছিল তৃতীয় টেস্টেই, হাঁটুর ইঞ্জুরিতে পড়েছিলেন। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬৫/৫ সহ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৩৯ রানে ছয় উইকেট। তাঁর চেয়ে বেশী উজ্জ্বল ছিলেন, অভিষিক্ত অপর দুই সঙ্গীই। লেন ব্রাউন্ড ১০১ রানে ও কলিন ব্লাইথ ৫৬ রানে নিয়েছিলেন সাতটি করে উইকেট। ম্যাচটাও ইংল্যান্ড জিতে গিয়েছিল ইনিংস ব্যবধানে। পরের ম্যাচে ইংল্যান্ড হারলেও বার্নস ছিলেন দারুণ সপ্রতিভ। প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে ছয় ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১২১ রানে ৭ উইকেট নিলেও, অস্ট্রেলিয়ার হিউ ট্র্যাম্বল ও মন্টি নোবেলের বিধ্বংসী বোলিং, তাঁকে বাধ্য করেছিল পরাজিত দলে থাকতে!
হাঁটুর ইনজুরীটা তাঁকে ভালোই ভুগিয়েছিল সেবার। আবার ক্রিকেটে ফিরতেই অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। যদিও এই সুযোগে বিয়েটা ঠিক সেরে ফেলেছিলেন। বয়সও ত্রিশের কোঠা ছুঁয়ে ফেলেছিল যে!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন প্রায় বছর ছয়েক পর, ১৯০৭-০৮ এ্যাশেজ দিয়ে। প্রত্যাবর্তন সিরিজে নিয়েছিলেন ২৬ গড়ে ২৪ উইকেট। বার্নস-স্ট্যান্ডার্ড থেকে অনেক দূরে নিশ্চয়! পরের এ্যাশেজে কুড়ি গড়ে ১৭ উইকেট নিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন ছন্দে ফেরার। আর ১৯১১-১২ এ্যাশেজেই যেন সেই ছন্দ ফিরে পেয়েছিলেন পরিপূর্ণরুপে। তাই কি?
না, অবিশ্বাসে চমকে উঠার গল্প বাকী আছে আরো।
***
আচ্ছা, এবার একটু শুরুর দিকে যাওয়া যাক। যখন উনিশ বছরের এক লিকলিকে তরুণ ফাস্ট বোলার সিডনী বার্নস। খেলার আনন্দে খেলেন ক্রিকেট। ইংলিশ ক্রিকেটেও শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতামূলক কাউন্টি চ্যম্পিয়নশীপ। তিনি ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে খেলতে শুরু করেছেন। কিন্তু সমস্যা বাঁধালো, ওয়ারউইকশায়ার কর্তৃপক্ষ। তাঁরা এমন একটা চুক্তিপত্র পাঠালো বার্নসকে, যা দেখে তাঁর মনে হলো, কর্তৃপক্ষ তাঁর সাথে স্রেফ উপহাস করেছে! তাঁর সামর্থ্যকে বিদ্রুপ করেছে, তাঁকে ছোটো করেছে।
তিনি তাই সেই চুক্তি তো মানলেনই না, ছেড়ে দিলেন ওয়ারউইকশায়ার দলও। তাঁর আত্নাভিমান আর আত্নমর্যাদাবোধ এত বেশী ছিল যে, তিনি এরপর আর কোনোদিন খেলেননি দলটির হয়ে।
এমন উত্তুঙ্গু আত্নবিশ্বাসের কারণেই হয়তো বলা হয়, বার্নস ছিলেন তাঁর সময় থেকে অন্তত এক শতাব্দী এগিয়ে থাকা একজন ক্রিকেটার!
স্লো মিডিয়াম? ফাস্ট মিডিয়াম? নাকি লেগ স্পিন?
স্লো মিডিয়াম কিংবা ফাস্ট মিডিয়াম বোলার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলেও, অনেকে বলেন, সিডনী ছিলেন এমন একজন বোলার, যিনি একটু দৌড়ে এসে লেগ স্পিন করতেন। তিনি পারতেন অফ স্পিনও। দু’দিক থেকে সুইংয়ে ছিলেন সমান পারদর্শী। আঙ্গুল থেকে তাঁর বল ছোড়ার মুহূর্তে, ব্যাটসম্যান মিড অফ বা মিড অন থেকে সাপের ছোবল মারার মতো একটা শব্দ শুনতে পেতেন। সাপের ছোবলের মতো তাঁর বলগুলোও যে ছিল এক-একটা বিষাক্ত ডেলিভারী। তাই নেভিল কার্ডাস সেই বিশেষ ডেলিভারীর নাম দিয়েছিলেন ‘বার্নস-বল’।
ইতিহাসের একমাত্র ত্রিদেশীয় টেস্ট সিরিজে, ছয় টেস্টে নিয়েছিলেন ৩৯ উইকেট। বার্নস সবচেয়ে বেশী দূর্বোধ্য ছিলেন দক্ষিন আফ্রিকানদের জন্য। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টেস্টে পাঁচ উইকেট পেলেও, আট গড়ে ৩৪ উইকেট পেয়েছিলেন দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে। পরের বছর দক্ষিন আফ্রিকায় গিয়ে, চার টেস্টে প্রায় ১১ গড়ে নিয়েছিলেন ৪৯ উইকেট! তাঁর ক্যারিয়ার সেরা, ম্যাচে ১৫৯ রানে ১৭ উইকেটকে, ১৯৫৬ সালে জিম লেকার (৯০ রানে ১৯ উইকেট) দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দিলেও, সিরিজে ৪৯ উইকেটকে দ্বিতীয় কাতারে ঠেলতে পারেননি। ১৯৫৬ এ্যাশেজে জিম লেকার ৫ টেস্টে নিয়েছিলেন ৪৬ উইকেট।
দক্ষিন আফ্রিকা সফরে, সতীর্থদের সঙ্গে জাহাজে।
দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেননি ৫ম ও শেষ টেস্ট। আর মাত্র একটি উইকেট পেলেই হয়ে যেত ৫০ উইকেটের রেকর্ড। আরে ধুর, সেসব রেকর্ড ফেকর্ডকে সিডনী পাত্তা দিলে তো! এমসিসি(তখনকার ইংলিশ ক্রিকেটের অভিভাবক) কর্তৃপক্ষকে তিনি বলেছিল, তাঁর স্ত্রীর জন্য থাকার ব্যবস্থা করতে, তাঁরা করেনি। তিনিও তাই আর খেলেননি। সেই শেষ। তারপর আর আন্তর্জাতিকে ক্রিকেটে ফেরা হয়নি তাঁর।
আত্নমর্যাদা, আত্নাভিমান বোধহয় একটু বেশীই ছিল তাঁর!
***
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, আবার ক্রিকেট শুরু হলে, ১৯২০-২১ এ্যাশেজের জন্য তাঁকে অস্ট্রেলিয়াগামী দলে ডেকেছিল ইংলিশ ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেছিলেন, তিনি তখনই যাবেন যখন তাঁর সঙ্গী হবে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। কর্তৃপক্ষ রাজী হলো না, তিনিও আর গেলেন না। এরপর আর কখনোই তাকে জাতীয় দলের জন্য ডাকা হয়নি। তাই বলে তাঁর ক্রিকেট থেমে থাকেনি।
তাঁর পুরোটা জুড়ে যারা! ছেলে ও স্ত্রীর সঙ্গে, দক্ষিন আফ্রিকায়।
১৯২৭ থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত ১১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে তিনি ৬০ উইকেট নিয়েছেন, ১৬.৬৮ গড়ে। এই সময়ে ইংল্যান্ডে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ১১৮ রানে, নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। ১৯২৯ এর বিলেতি গ্রীস্মে, প্রস্তুতি ম্যাচে বহুদিন পর প্রিয় প্রতিপক্ষ দক্ষিন আফ্রিকাকে পেয়ে একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
অনুমান করুন তো, তখন তাঁর বয়স কত?
মাত্র ৫৭ বছর!
ঐ বয়সেও তাঁর রান-আপ ছিল ১৫-১৮ গজ। আর গতি? প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্যার এ্যালেক বেডসারের চেয়ে একটু বেশী হবে!
***
সিডনী বার্নস খেলেছেন এরপর আরো প্রায় বছর-আটেক। ১৯৩৮ সালে, ৬৫ বছর বয়সেও তিনি সাতেরও কম গড়ে নিয়েছিলেন, ১২৬ উইকেট। ব্যাট হাতে ২৮ গড়ে রানও করেছিলেন ৩১৪। ১৯৪০ সালে ৬৭ বছর বয়সে যখন তিনি মূলত কোচিংয়েই মনোযোগ দিয়েছিলেন, তখনো মাঝে মধ্যে বল হাতে নেমে পড়তেন। ক্রিকেটের বড্ড নেশা যে তাঁর! তার চেয়েও বিস্ময়কর, ৮ গড়ে ২৮ উইকেট শিকারও করে বসেছিলেন! প্রখ্যাত লেখক, কবি, ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার, ক্রিকেট বিশ্লেষক জন আরলট তাই যথার্থই বলেছেন, “বার্নস ওয়াজ পারফেক্টলি টু বিল্ট এ বোলার।” নেভিল কার্ডাসের মন্তব্যটাও তাই একটা বিশেষ অর্থ বহন করে। “রৌদ্রতপ্ত দিনেও বার্নস, ব্যাটসম্যানদের মনে ভয়ের ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিত।”
ম্যাচের ধরণ |
উইকেট |
গড় |
টেস্ট ক্রিকেট |
১৮৯ |
১৬.৪৩ |
কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ |
২২৬ |
১৯.৭১ |
অন্যান্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট |
৩০৪ |
১৫.১৩ |
স্টেফোর্ডশায়ার |
১৪৪১ |
৮.১৫ |
ক্লাব এবং লীগ ম্যাচ |
৪০৬৯ |
৬.০৩ |
|
|
|
সবমিলিয়ে... |
৬২২৯ |
৮.৩৩ |
মাত্র ৮.৩৩ গড়ে ছয় সহস্রাধিক উইকেটই প্রমাণ করে ব্যাটসম্যানদের জন্য কতটা ভয়ংকর ছিলেন, সিডনী বার্নস।
***
ক্যারিয়ারের বেশীরভাগ সময়ই খেলেছেন মাইনর কাউন্টি, লীগ ইত্যাদি। চাইলে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে যে কোন দলের হয়ে খেলতে পারতেন। একটু আপোষকামী হলে হয়তো আরো বর্নাঢ্য করতে পারতেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারও। তেমনই যদি করবেন, তাহলে তিনি আর সিডনী বার্নস কেন?
হয়তো অবিশ্বাস্য প্রতিভাবানদের একটু অনমনীয়, একটু রুঢ়, কিছুটা ক্ষ্যাপা হতে হয়। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণদের যে অতৃপ্তি যায় না কিছুতেই। ইশ, সিডনী যদি ক্যারিয়ার নিয়ে অমন না করতেন! তাহলে যে কোথায় পৌঁছতেন!
আরো একটু রোমাঞ্চ প্রিয় হলে তাড়া করে আরো বড় আফসোস। ১৯৩০ এর এ্যাশেজে যদি সিডনী খেলতেন! ব্র্যাডম্যান বনাম বার্নস, লড়াইটা কেমন হতো? সিডনীকে যে বোলিংয়ের ব্র্যাডম্যান বলা হয়!
এসব আফসোস-হাহাকার হয়তো আমরা সাধারণ বলেই। নইলে ওসব নিয়ে ভাবতে বয়েই গিয়েছিল বার্নসের। প্রখ্যাত ক্রিকেট লিখিয়ে সি আর এল জেমস বার্নস সম্পর্কে বলেছিলেন, “পৃথিবীর ততটুকুই সে দেখেছে, যতটুকু সে দেখতে চেয়েছে।”
দু'বছর বয়সী নাতির মধ্যে কি শৈশব খুঁজে ফিরছেন?
***
তাঁর মতো করে দেখেছিলেন বলেই কি এখনো তাঁকে নিয়ে এত কথা? নইলে তিনি তো এসব দেখাদেখির অনেক উর্ধ্বে চলে গেছেন সেই কবেই! তবুও এই এত বছর পরও সামান্য এক বঙ্গসন্তানের, তাঁর ক্যারিয়ার কি হতে পারত না-পারত তা-ই নিয়ে এত অতৃপ্তি কেন?
সিডনী ফ্রান্সিস বার্নস, আপনি বোধহয় আর মরলেন না!
আপনাকে জানাই ১৪৪তম জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।
- 0 মন্তব্য